নদীর নিখোঁজ-সংবাদ
জীবন গিয়েছে চলে জীবনের কুড়ি কুড়ি জোড়া-কুড়ি বছরের পার
তখন আমার মানুষ-জীবন ছিলো, মনুষ্য-শোভন জীবন অপার।
তখন কিশোরকাল, জীবনানন্দনন্দিত ছিল প্রতিদিনকার ভোর
সজনে ফুলের সফেদ চিবুকে কাঁচা রোদ বার্তা দিতো অসীম আলোর।
তখন জীবনে হৃদয়খেলার ভীরু হাতছানি
ভালোলাগা শিহরণ, অচেনা নাম-না-জানা অনুভবে কেঁপে ওঠা
তখন বকুলবেলা, লুকানো আয়না ভাঁজ খুললেই
কার যেন আবছায়া মুখ, চকিত বিদ্যুৎ বুঝি—
বিকেলের সহজ খেলার সাথী, তবু দিনমান আড়ালে আড়ালে
টনটনে ব্যথায় উতল ক্ষণে ক্ষণে অনামা শিহর।
তখন বিস্ময়-ভরা জাদুকাল—
যুবতী ধানের ঘ্রাণ, তার নীরব গোপন গাঢ় গর্ভদুধ,
সদ্য-হেমন্তের মাঠভরা মায়া, কচি ভোর—আমার রঙিন পাঠশালা।
ধান কাটা হয়ে গেলে হু’ হু’ শূন্যতায় খোলাবুক রিক্ত জমি
গোছা গোছা শুষ্ক রুক্ষ মুথা, অগভীর ধানের শেকড়—
সে-ও কিন্তু জীবনের অনুষঙ্গ, শীত-তাড়ানিয়া সুলভ জ্বালানি।
আলপথে দুর্বাঘাস তখনো সবুজ, অমেয় প্রাণের দুরন্ত প্রতীক
ততদিনে চষাক্ষেতে রাইশস্য মেলেছে সবুজ ডানা
তিল তিসি মসুরের ডাল, খেসারির চিরল সবুজ পাতা,
সর্ষেফুল—দিগন্তে হলুদ ঢেউ, সোনা সোনা কাঁচা সোনা ঢেউ।
তখন আমার কিশোর প্রণয়—
বুকের ভেতর ধড়ফড়-করা কচিপাতা ভয়ের বাতাসে কাঁপে
পায়ে পায়ে শাসনের বেড়ি, বাৎসল্যে উদ্বিগ্ন স্বজন
তবু হৃদ-জলে নিবিড় গোপন তার মুখ, তার মুখ, তার মুখ…
মন-যমুনার দু’কূল ভাসিয়ে তরঙ্গ উছল, জলে ভাসে নবীন দু’চোখ
তখন আমার নামায়নহীন কৈশোরিক প্রেম, নিকষিত হেম।
আহা! তখন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ আয়ু—আশাদীপ্ত মানুষ-জীবন,
শালিক চড়ুই টিয়া ফিঙেদের চপল ডানায় উড়ে চলে
তন্ময় মন্ময় আমার প্রতিটা দিন, মানুষ-জীবন।
আহা মানুষ-জীবন! স্বপ্ন আর সম্ভাবনা। বিকাশের পরিপূর্ণ নাম।
আজ এই কুড়ি কুড়ি দুই কুড়ি বছর পেরিয়ে এসে
জরাজীর্ণ মরা শীতে বেঁচে-থাকা লড়াকু পাতার উদ্গ্রীব চোখ
এক সুদূরকালের পলাতক কিশোরের খোঁজে
নিষ্কলুষ হেম-প্রেম, ভরা জোয়ারের নদীটির খোঁজে
তোলপাড় করে ফেলে মাটির পৃথিবী—
দূরে গির্জায়, মন্দিরে সন্ধ্যারতির ঘণ্টায়, আযান-ধ্বনিতে
উচ্ছল সময়-নদীর নিখোঁজ-সংবাদ সোচ্চার ধ্বনিত হতে থাকে।
আদমসুরত
রাত্রি যখন ভোরের গর্ভে আড়মোড়া ভেঙে জাগছে
ঘুমভাঙা ভোর সুবেহ সাদেকে দ্যুতির নকশা আঁকছে,
বোজা পল্লবে চোখ দু’টি তবু ঘুম ঘুম গান গাইছে
শ্রান্ত শরীর রাত পেরিয়েও একটু আয়েশ চাইছে—
কুয়াশা-চাদরে মোড়া চারপাশ অচেনা অচেনা লাগছে
রাত-জেগে-থাকা প্রহরী পাখিরা শেষবার সুরে ডাকছে—
তখন কে যায় পথ ভুলে গিয়ে ভুলপথে ফের হাঁটতে!
টেনে ধরো তাকে, আঘাতে জাগাও অমানিশা-ঘোর কাটতে।
তখন কে আসে, সুরে ভরে দেয় জনপদ, ডাকে—‘আয় রে!
চিতার আগুন জ্বলে নিভে গেছে, সুসময় বয়ে যায় রে!’
আগুনে বাতাসে মাটি আর জলে আদমসুরত হাঁকছে
তোমারি আকাশে উৎসব জুড়ে উদিত সূর্য ডাকছে।
পা্র হয়ে গেছে গ্রহণের কাল, এসো রোদ-মেশা আলোতে
নবান্ন করো—অঘনে জ্বালিয়ো দীপাবলী, ঘন কালোতে।
এই সুসময় চিনে নিতে হবে, বুনে দিতে হবে বীজকে
পলির আদরে পাতারা জাগবে, কুঁড়ি মেলে দেবে নিজকে।
লগ্নভ্রষ্ট
কার মুখ চেয়ে সাজিয়ে রাখছো রুদ্ধ পুষ্পবাণ
কার কাছে চাও শর্তমুক্ত ঠাই—
সব জেনো মিছে, যদি জেনে থাকো
শূন্য অভ্র, চারিপাশ ফাঁকা, প্রিয়জন পাশে নাই।
কার বিপরীতে শানিয়ে রাখছো ক্রুদ্ধ অগ্নিবাণ
কার মুখে চাও কম্প্র নম্র চোখে—
সব সয়ে যাবে ঝড়-জল-খরা
স্বর্ণকুম্ভ মাটি হয়ে যাবে, নিয়তি যদি না-রোখে।
কার স্মৃতি পুষে বাসনা ভুলেছ, পূর্ণ অধিষ্ঠান
কার হাতে চাও দিব্য মুক্তি পেতে—
সে-ই হবে দেখো অজেয় শেকল
পূর্ণস্থিতি কোথাও পাবে না, কোথাও পাবে না যেতে।
কার হাত ছুঁয়ে উড়বে আকাশে স্বপ্নঋদ্ধ প্রাণ
কোন ঘাটে যাবে লগ্নভ্রষ্ট তরী—
বলবে না কেউ, চাঁদ ডুবে যাবে,
স্বপ্নচ্যুত আহা ভুল বিভাবরী! আহা, ভুল বিভাবরী!
উপাসনা-৭
আবার খোয়াব দেখে ঝিলমিল করে কার্তিকের মাটি।
চিত্রময় ধূসর কুয়াশা থেকে আমি তুলি ফলবান আশা—
অনাবাদী মানবজমিনে ফের সুবাতাস বয়ে যাবে,
আন্দোলিত সুখে হাসবে আবার শস্যময় প্রগাঢ় সবুজ
চাষবাস, হেমন্তের গার্হস্থ্য সুদিন, আগামীর শিশু
যেন ফের সত্যিই সেসব হবে সত্য—স্বপ্ন দেখি।
বৈরি জলধারা সবলে সরিয়ে পলিময় চর জেগে উঠবার
দূরাশায় মরা কার্তিকেও জমা রাখি বীজধান—
পরিচর্যা করি তার,
ওমের আশায় যত্ন করে তুলে রাখি অনন্য সীবন।
একদিন আমরা যুগল শয্যা পেতে আকাশ-গঙ্গায়
তরল চাঁদিনী-ছোঁয়া তরুণ রাতের গর্ভে
জমা করে দেবো বিস্ময়ে নীরব লগ্ন
জমা করে দেবো খণ্ড মহাকাল,
যেন ফের সত্যিই তেমন হবে সব—স্বপ্ন দেখি।
নিরুদ্বিগ্ন ঘুম হবে একদিন—দূরাশায় থিতু রাখি মন
আশ্বিনের শেষ ভোরে
নগ্ন পায়ে হেঁটে যাবো ঘাসমোড়া সরু আলপথে।
সহস্র বরষা পার হয়ে আমি তো এসেছি ফিরে
শস্যঋদ্ধ হেমন্তের নিবিড় দুয়ারে
আমি স্বপ্ন, আমি ফলবতী আশা, মেঘ আমি সুদূরের
হাত বাড়ালেই হাতে পাবে—আমি সেই মূর্ত বাস্তবতা,
অগ্নি-জল-মাটি ও বাতাসে আমি চিরন্তন বীজের ধারক।
আমি বারবার স্বপ্ন দেখি, বারবার স্বপ্ন ভেঙে যায়
বারবার সত্য হাতে পাই, বারবার সত্য সরে যায়।
আমি বারবার আলো জ্বালি, ধুলিঝড়ে আলো নিভে যায়
আমি বহুবার মাটি খুঁজে পাই, মত্তজলে মাটি ধু’য়ে যায়।
তবু আজো ধরিত্রী বলেই আমি বীজের সবল মহাজন
হাতখানা ধরেছো সত্যই যদি—পাথর সরাও, পথ হাঁটি।
আমি কার কাছে
আমি কার কাছে আগুন শিখতে যাবো!
আমার আগুনে ঝাঁপ দিয়ে খোলা চোখে
পুড়ে পুড়ে নিভে গেছে লেলিহান অনেক দোজখ।
আমি কার কাছে শিখি বলো অনন্ত শূন্যতা—
অনিত্য আমিই নৈরামণি চলিষ্ণু চর্যায়
আমার শূন্যতা থেকে জন্ম ঘটে অযুত প্রাণের।
কার কাছ থেকে আমি পাঠ নেবো ঘাট-আঘাটার!
আমিই তো পদপিষ্ট মায়াকাড়া ঘাট—
আমাকে মাড়িয়ে সবে উদিত সূর্যের দেশ খুঁজে খুঁজে
স্বজন পড়শি ছেড়ে অন্ধকারে নিরুদ্দেশে যায়।
আমি কার কাছে উষ্ণতা চিনতে যাই, বলো—
আমার উষ্ণতা দিয়ে মোম নয়, গলিয়েছি উষর পাথর
বহুশত বর্ষা যাকে ভিজিয়েছে, ছাই হয়ে যেতে যাকে
প্ররোচনা দিয়েছে হাজারবর্ষী তীব্র অগ্নি আর খরা।
আমি কার ছবি দেখে চিনবো দহন, তৃষ্ণা!
আমার দু’চোখে কালীদহ নদী, বুকে আরবের মরু
পুড়ন্ত দুপুরে নেই একফোঁটা জল কোনো কলসেই।
আমি কাকে পাঠ করে শিখি শীতলতা, অবিচল ক্ষমা!
সহিষ্ণু পশুর নিষ্ঠা পূর্ণমাত্রা আয়ত্ত করেছি আমি
আমাকে চৌকাঠ করে চাঁদ হাতে ছুঁতে
ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেছে স্বনির্ভর সকল স্বজন।
আমি কার অনুবাদে পড়বো মাটিকে সংশয়হীন!
আমিই যে নির্যাতিতা ফসল-সম্ভবা মাটি
নির্বিবাদে সর্বপাপ সকল পুন্যের বোঝা গর্ভে ধারণ করি
নিরুপায় স্বাক্ষী আমি সহস্র খরার
প্রতিবাদহীন আমিই পৃথিবী বোবা, আমিই পৃথিবী।
চিত্রাঙ্গদা যেদিন প্রথম নারী
যাবতীয় মানুষী আড়াল ভেঙে নীরবে নীরবে
তোমার শরীর জুড়ে জেগে ওঠে অনাহারী সাপ,
নিমেষেই তোমাকে আড়াল করে বাসনা তোমার
তোমার মানুষ চেনে অন্যতর তোমাকে এবার।
পাখির শরীর থেকে খুলে ফেলে পাতার পোশাক
পুণ্যময় করে তোলো পৃথিবীর আদিতম পাপ—
বেদনা-বিষাদে ফোটে স্বর্ণময় কোমল বকুল
তুমি বিষাদিত হলে তুমিও বেদনা, গ্লানি, ভুল।
নিথর নদীর বুকে কূলপ্লাবী জলের কাঁপন
পলকে জাগিয়ে তোলো, কুমারী কুঁড়ির ভাঙে ঘুম
বিবশ দু’বাহু সহসা বিভ্রম-মালা গলাতে জড়ায়
প্রবল জড়ায় বুকে, জীবনের অনাদি অমায়।
সময় নিভিয়ে দেয় লেলিহান শরীরী পাবক
সময় ফুরিয়ে এলে দুই চোখে এঁকে দাও লাজ।
কামিনী নিরাবরণ নিরাভরণার দেহে
সবুজ পালক দাও দীপ্ত আবরণ
মুখে মেখে সূর্যরেণু ফিরে আসে অন্য কেউ
ফেরে না সে পাখি—
চার দেয়ালের ঘোরে আকাশ মিলেছে তার
নারী সে যে পূর্ণ আজ, চিত্তে বাঁধা অগ্নিময় রাখী।
প্রতিমা গিয়েছে হেঁটে, কম্প্রহাতে খুলেছে দুয়ার
ফিরেছে মানবী হয়ে পরিপূর্ণ মানবী তোমার।
আঙরা
এমুন বাইস্যা-কালে কুড়া পক্ষী উড়া দিতো চায়,
এমুন বাইস্যা-কালে ভাগ্যবানে লগে সাথী পায়।
ডলকে ভাসায় মাডি, পাড় ভাঙ্গে নিদয়া বানেলা
ত্যাও তো গাঙ্গের মন টানে তারে, বুক রাহে মেলা।
না জানি কেমুন বুলি, কী সুরের জালে বান্ধা মন
প্যাঁক-পানি-আগুনের বাতাসের না মানে শাসন
আতাল পাতাল ভাঙ্গা ঢেউ তোলে, কোমরে মোচড়
রঙ্গিলা গাঙ্গের টানে ছোডে ম্যাঘ, উডে কালি-ঝড়।
আমার পরান-বন্ধু এই দ্যাশো কাডায় জীবন
বাইস্যা কালের এই আসমান, ঘনরঙ্গা বন
পড়ে না কি চোক্ষো তার, মনো তার কে দিলো দুয়ার
জংলি কুড়ার মতো ক্যান মনো উডে না জোয়ার!
ত্যা’ কি তার কানা চোখ—হুঁশ নাই, পড়ন্ত বেইল
না’ হি করে তালিবালি, সুহে খেলে নির্দয়া খেইল!
ডাহি আমি কুড়াপক্ষী, খুঁজি তার পাখনার ছায়া
জগত আমারে বুঝে, হে-ই খালি অচিনা নিমায়া।
কও গো কুডুম কও—দিবা কিনা ফসলি বিছন
না হি দিবা জ্বলা তুষ, আঙরা করবা পুড়া মন।
অহনো চিনো না
আইজ কাইল তুমিও উরাঙ্গি মারো ভাতের বাসুন
বাসুনো যদিবা দেই মোডা ভাত, মিলে না যে নুন—
এই দুষ কারে দিবা, কার দীল ফানা ফানা অয়
বুঝবা না পরাণ-কুডুম মনো কী তুফান বয়!
আগে পিছে খুঁইজ্জা যহন দেহি কুনু গতি নাই,
তহন বে-দীল হৈয়া ‘নাই’ কথা তুমারে জানাই।
তুমারে দিতাম ছায়া রইদের কালে অই ছাতি
তুমার পাষাণ বুহো জ্বলি আমি হাইঞ্জার বাতি।
ত্যাও যে দ্যাহো না চায়া, কেমুন দরদী তুমি কও
সাপেরে চালান দিয়া ক্যারে তুমি কড়ি তুল্ল্যা লও!
নরসুন্দা পাড়ে বান্ধা ছ্যামা ছ্যামা কী মায়ার ঘর
সাকিন ভুইল্লা তুমি ক্যারে খুঁজো আভাইগ্যা চর!
অভাব খাবলা মারে—তুমি খালি এই দু’খ বুঝো
মনো যে কৈতর কান্দে, তারে তুমি কয়বার খুঁজো।
ও কুডুম চতুরাল্ল্যা, কারে তুমি দিতা চাও ফাঁহি
রইদের তাফালেও কালিরঙ্গা ম্যাঘ থাহে বাহি
ম্যাঘের ডলক নামে, মন-গাঙ্গে আলাঝালা ঢেউ
তুমি যদি না-ই বুঝো, এই ভেদ বুঝতো না কেউ।
আমারে বুঝো গো মানু, দ্যাহো এই দুইন্যাই সিধা
আবোলা জৈবন জ্বলে ঝিমিঝিমি, প্যাডো জ্বলে ক্ষিধা
তুমি মহাজন মা’নু , তুমি-ই তো খুদ কুঁড়া দানা
তুমার জিন্দেগি আমি—আমারে অহনো চিনলা না!
করোনা
ভয় ভয় সংশয় দোলাচল মনে
‘হয়েছে কি হয় নাই’—বুঝিব কেমনে!
আপাতত জ্বর আছে, গায়ে জোর ব্যথা
শ্বাসে বে-আরাম আছে, ভার ভার মাথা।
দাঁতে ব্যথা অযাচিত, পিঠে ব্যথা খুব
গায়ের জ্বলুনি বলে জলে দিতে ডুব
গলা বুঝি ছ’ড়ে গেছে, বড়ো জ্বালাপোড়া
কাশিও কিছুটা আছে, হাঁচি থোড়া থোড়া।
পেটে কিছু গোলমাল—দু’দিন আগেও
বরাবরকার মতো ভালো ছিলো সে-ও।
আজ পেটভরা গ্যাস, অ্যাসিডিটি বেশ
এসব কি করোনা-র ভালোবাসা-রেশ?
দাঁড়ালেই মাথা ঘোরে, বসলে বিবশ
জিভে নাই স্বাদ, মুখে নাই রস কষ
কেঁপে কেঁপে ওঠে জ্বর, ছাড়ে ঘাম দিয়ে
আইসোলেশনে আছি ঘটিবাটি নিয়ে।
কাঁথা আছে, কম্বল, আর আদা-লেবু
কাঁদাকাটি আছে, ফাঁকে ফাঁকে আছে ফে বু।
লবঙ্গ, কালোজিরা ছিলো তো আগেই—
তবু কেন ফাঁসলাম, কিছু জানা নেই।
তাপ-ভাপ, আদাজল সাথী দিনরাত
শুয়ে থাকা, উঠা-বসা, যাতনায় কাত।
ধূমায়িত লাল চা-য়ে অনীহ চুমুক
লেবুজল গিলে গিলে জ্বলে গেলো বুক।
শ্বাসের যে বাড়ে চাপ দিন দুই গেলে
শ্বাসের জানালা খোলে বলোতো কী খে’লে?
গলার খিঁচুনি-জ্বালা ছিঁড়ে নিতে চায়
স্বরনালী, বুকে চাপ—দম খাবি খায়।
যন্ত্রণা কী রকম, কত যে অসহ
বোঝানো তা সুকঠিন—ভয়াল আবহ,
নিজের পা-হাতগুলো সহসা অচেনা
জীবন যাতনাভরা, শেষ লেনাদেনা।
ফুড-পয়জন সব খাবার দাবার—
আর নেই আপলোড, কবরে যাবার
এসে বুঝি গেলো ডাক, ফুরিয়েছে দিন
‘কোভিড-উনিশ’ দূত পাঠিয়েছে চীন।
বাঁচলে কপাল-জোরে সকলে জানিয়ো
করোনা-কে মোলাকাত করেছি আমিও!
আইয়ো থাকতে বেলা
উদাম থাহুক বাড়ি, না-থাহুক দেউড়ির বেড়া
না থাহুক চালো ছন—ত্যাও বাড়ি জগতের সেরা
তুমি তো আছো গো মা’নু, কী করবো পাগলা তুফান—
তুমার বুহের ঘরো পাতা আছে আমার বিছান।
না ডাহুক পক্ষী ডালো, না-থাকলো চান্নির পশর
শিসকাডা পক্ষী আমি, তুমি দিবা বাত্তিজ্বলা প’র।
না থাহুক পিতলা কলস আর সোনারঙ্গা বাডি
মাইট্টা কলসো পানি, নুনভাত আর ঘুম খাঁডি
যদি মিলে তা-ই সই, কালিমাডি উডানো মাচান
কুমড়ার ফুল হৈয়া হাসে খেলে আমার পরাণ।
হালের বলদ আছে, জমি আছে মোডে কয় কানি
জো-এর বিহানকালে চাষে নামি, রীতিনীতি জানি।
কয় চাষে তূলা অয়, কয় চাষে ফলে রাঙা মূলা
কয় চাষে ধান পান, কী সোহাগে কোলে হাসে পুলা
শিখছি হগল জাদু, যহন তুমারে দিছি মন—
কালে কালে দুইজনে গোলায় তুলাম দানা, ধন।
ঠোঁডে রাহো জোড়া ঠোঁট, সুখ দ্যাও মা’নু গো আমার
পক্ষীর ছানার মুহো মা যেমুন যোগায় আদার।
দুই চোক্ষে গাঙ ধরি, ডুব দিয়া ঠাই নিয়ো সুহে
মৌয়াল হইলা যদি, মধু-বাডি তুল্ল্যা নিয়ো বুহে
আঙুলে আঙুল বোনা, জোড়া দেই পরাণে পরাণ
আইয়ো থাকতে বেলা, জমা রাহি বিছনের ধান।