সাং নালিহুরী
নিজ নামে ডাক দিলে কেঁপে ওঠে অতলান্ত পথের গরিমা। যা কিছু জন্মে পাওয়া…যা কিছু নালিহুরী…যা কিছু নিজনাম…নিজদেশ…নিজস্ব নিয়ম…জেগে ওঠে নিজ কোলাহল।
.
মানুষ কেবলি হাঁটে সীমাবদ্ধ জলে। যদিও বা কেউ কেউ হেঁটে আসে গ্রিস। আরও দূর ছুঁয়ে আসে মাথুউজেলা গাছের বয়স। আমাজান হ্রদের শরীর। অতঃপর স্ট্রবেরি ক্ষেতের পাশে একটু জিরিয়ে নিয়ে যদি বা কেউ নিদ্রামগ্ন হয়, ঠিক তখনি তার নিজনামে ডেকে ওঠে কেউ।
.
মানুষ কেবলি ভুলে নিজ সাং, নিজস্ব আয়াত। তারপর ঘুরেফিরে পঞ্চনদী–নিজের নিকটে এসে ধরা পড়ে যথার্থ নিয়মে। আজ এ-ভোরবেলায় এ বড় সত্য বাণী ভাবিলো ইরমে।
আঁতুড়ভয়
জন্মের আগেই জন্ম হলো ভয়। তাবিজ-কবজ দিয়ে সাজানো পুলি। ভাঙা লাঙ্গল আর ছেঁড়া জাল, ধোঁয়ার কুণ্ডলী হাসে দরজার কাছে। কান্নার কাছেই ছিল পিতার আজান।
.
ছিলাম পরীর ডানা কেন পিতা ঝরালে পালক?
.
ভুলেও থাকিনি একা। শিশু ছিলে, টাকরাটুকরি যদি নেয় তুলে! বটের গভীর কাছে যে শিশুরা প্রেতের দোসর, শীতের হাওর জুড়ে মক্কল আগুন, ছিলো সব নিরাপদ দূরে।
.
রাত হলে বুড়ো সুরে হুতুম! হুতুম!আগুনে দিয়েছে মা শস্যদানা আর সালন হলুদ। তবু ভয় যদি পায় প্রেতিনীর ছায়া!
.
পূর্ণিমা উঠানে মধ্যরাতে আলো খুঁড়ে একপাল অশরীরী ভেড়া। পুবের টিনের চালে ঢিল পড়ে, গাবগাছ দোষের প্রাচীর। এই ভয় ছিল মাগো যদি পায় অশুভ আছর! পিতার বাজার থেকে কালিবাউশ হলো না কিনা। শেওড়া গাছের ভূত যদি সাথে আসে? কাটা হলো তেঁতুলের প্রাচীন ছায়া।
.
কী করে ফেরাবে মাগো! নই শিশু, ঝরে গেছে পরীদের ডানা। শানেবান্ধা ক্ষত নিয়ে সপ্তডিঙ্গা নগরে ভাসে।
স্বল্প মাত্রার দীর্ঘশ্বাস
শৈশবে ফুটবলে হেড দেবার মতো আলোতে হেড দিলাম পড়ে গেলাম অন্ধকারে। কনি আঙুলে নাচাতে নাচাতে অন্ধকার ফেটে পড়লো নগ্ন ত্বকে। মাতৃ জরায়ুতে হেড দেবার প্রথম হাতেখড়ি।
.
আমার ব্যারাম হতো, নগ্ন হতাম। বাড়ির মহিলারা আমার নুনুতে খেলা করতে করতে, সোনামণি ঘুম যাও, চাঁদ মামা টিপ দেবে কপালে, জুলেখা বাদশার মেয়ে তার ভারি অহঙ্কার, কোরাস গাইতো। আমার নগ্নতা বড় পবিত্র ছিল। বড় অবাধ্য সুন্দর ছিল আমার পুরুষাঙ্গ।
.
অমোঘ বিশ্বাসে আমার বাড়তি চামড়া যেদিন কর্তন হলো, এখনো অনুভবে হাত রাখি, বুঝি না উৎসবে কী নৃশংস উল্লাস ছিল! সেদিন রক্তকে বড় ভয়, বড় ঘৃণা, বড় ভালো লেগেছিল। কিশোরীরা হাসছিল, রক্ত ঝরছিল আমার শরমিন্দা ত্বকে।
.
এখনও তো কর্তনমুক্ত রক্ত ঝরে। আমি আলোতে হেড দিতে যেয়ে পড়ে যাই অন্ধকারে। অন্ধকারে বড় ভয়, বড় আনন্দ হয়। আমি নগ্ন হই। একদিন মায়ের কাছে আমার এই নগ্নতা বড় পবিত্র ছিল।