অহেতুক খানাতল্লাসি
ভুলে যাওয়া গানের কলিটির কথা ভাবলেই
চোখে ভাসে সাঁতারকাটা জোড়া হাঁস-পানা পুকুর,
মুথাঘাস ছড়িয়ে খড়ের গাদার ওপাশে ধানগোলা
বাতাবি লেবুর গাছতলায় বসে হাই তোলে খেঁকি কুকুর,
ভাঁপাপিঠার চীনেমাটির বর্তনে খুদকুড়া খুঁটে আরশোলা।
মাঝে মাঝে অহেতুক খানাতল্লাসিতে মাতি
নিজের ভেতর পাললিক মৃত্তিকা খুঁড়ে
খুঁজতে খুঁজতে চলে আসি অবশেষে
জায়জরং বিলের পাশে লোহার লাল পুলে,
শুভ্র ঘাসফড়িংয়ের ঝাঁক বাতাসের তোড়ে
আশ্রয় খোঁজে সর্ষের সোনালি গোকুলে।
ক্যানভাসে কেন জানি ফুটে ওঠে
জেলেনৌকার গলুই ছুঁয়ে হৃদয়নীল গোধূলি
খুঁজেছি অনেক, মনে হয় পাবো না
যাকে বলা যায় মুখ ফুটে
কতটা নীলাভ আমার নিজস্ব লাপিজ লাজুলি।
জুঁইঝরা ভোরে
জুঁইঝরা ভোরে নগরীর ফুটপাতে ফুটে ওঠে
অনিকেত এক চিত্রশালা,
রঙরেখার নাটমন্দিরে ভাস্কর্যপ্রতিম কুশীলব
যাদুবলে নীরব হয়েছে অপেরার পালা;
সূর্যমুখীর ফুলের হাসিখুশি পরিসরে
পরাগ মেখে ছুটে বেড়ায় নগ্নিকা,
প্রতিটি কোরক মেখেছে নক্ষত্রের ধুলি
ললাটে জ্বলজ্বলে কসমিক টীকা,
ক্র্যাচ গুটিয়ে কায়ক্লেশে নতজানু হয়
গাল্ফ যুদ্ধের বিকলাঙ্গ সৈনিক,
খড়িমাটিতে আঁকা হয়েছে
মারণাস্ত্রের জলপাই জমিনে শান্তির প্রতীক।
জলের কিনার ঘেঁষে প্রতিবিম্ব ভাসা হ্রদকুটির
পাড়ের পরাক্রান্ত বৃক্ষে খোঁড়ল খুদে কাঠঠোকরা
বাঁধে নীড়,
সরোবরের চিত্রিত কটেজ ঘিরে জমে ওঠে
গৃহহীন মানুষের ভিড়।
চিয়াংমাই দুর্গের গড়খাই
ভাবা যায় গ্রামের কথা; প্রিয়তম প্রহরে
নদী জলে বুঁজকুড়ি কাটে বাগাড় মাছের বৃহৎ ঘাই,
আমকুড়লির ফুলে ফুটে রশ্মিচিহ্ণ ঘুঘুর কামার্ত স্বরে
মনে আছে; চিয়াংমাই দুর্গের আধশুকনো গড়খাই,
চম্পা-নুপুর পায়ে বালিকারা পিদিম ভাসিয়ে ফিরে তাকায়
কাদামাটি ফুঁড়ে বেরিয়েছিল রোহিত মাছের জীবাস্ম পরিখায়।
কখনো মনে হয়, আমি গ্রামে ফিরলেই
মজা দিঘিতে ফুটবে শালুক,
মনে আছে, কাইলাহুনের ওই গ্রামটি
ভোরের মরমি আভায় চশমা চোখে তিমনি গোত্রের বৃদ্ধ
কাঠে খোদাই অজিফাতে খোঁজে ফের বিশ্বাসের তালুক।
ঘাসের সবুজ মজলিসে ছাইরঙের ঘোড়াটি
ভিজে ডানপিটে বৃষ্টিপাতে,
ফিরলে গ্রামে, আলাবামার খামারবাড়ির গোলাঘরে
খড়বিচালি আর্দ্র হবে রূপালি সম্পাতে।
জাদুময় জিয়নকাঠি
মেঘলা দুপুরে ডেকেছিলে তুমি
নাকি আমি তীব্র তালাশে হয়েছিলাম অধীর
উদ্ভিদের উদ্যানে,
বলোনি তেমন কিছু, নিভৃত সংলাপে হয়েছিলাম বধির,
বর্ষা ভেজা সুরভী ছড়িয়েছিল রজনী কান্তের গানে।
আমার জলসায় ছিলো গোলাপ নিঙ্ড়ানো নীলাভ জল
চেয়ে ছিলাম কি তোমাকে,
খুঁজেছি নেশার মর্মরে মোহময় ছল
ঘুরেছি কক্ষপথের বঙ্কিম বাঁকে।
তোমার কাছে ছিল এক জনমের জাদুময় জিয়নকাঠি
মেঘনিশিথে টিনের চালে ঝরে পড়া নিবিড় মোহর,
একটি গল্পের চিত্রময় নকশায় ভরে উঠেছিল শীতলপাটি
ক্রিস্টালের পল্লবিত পুষ্পে বসেছিল রূপালি ভ্রমর।
এসেছিলে খুব কাছে
উপগ্রহের কার্নিশ ছোঁয়া নভোযান…কিন্তু থাকোনি,
টিপছাপ দিয়েছিলে দূরত্বের দলিলে
কানভ্যাস পাতা ছিল, চিত্র কিছু আঁকোনি,
এ বৃত্তান্ত কাসিদা হয়ে বাজে আজো আমার ছন্দ-সলিলে।