অস্তিত্ব আখ্যান
আমি তো কোঁচা মেরে নাও বেয়েছি মধুমতির মিষ্টি জলে
তারপর ইছামতির জলে ধুয়েছি শ্যামল নাভী
আমারই বাবা, দাদা, পরদাদা বা তারও আগের কেউ
সাঁওতাল শরীরে তীক্ষ্ম বুনন দিয়েছে এই পলিমাটি গায়।
আমারই গণ্ড ধরে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র জলে
লোনাজলে বাধাবন মেলেছে উপকূলে।
তুমি কোন উপকূলে বেড়াও তোমার পিতামহের নাও?
কোন আ’লে হেঁটে চল বাহাদুর শাহ পার্ক—
অথবা রেসকোর্স ময়দানের দিকে?
কোন হাটে বেসাতি কর পানতাভাত, আর পোড়া মরিচ?
লাঠিয়াল ছিল যারা কৃষজ রক্তের গোটা গোটা মানুষ
তেলচিটে উস্তু উদোম শরীরে গোয়াল ঘর গড়েছে যারা
তাদের হাতে স্টেনগান বেমানান ঠেকেনি তখন।
এখন নিথর সৌধ তাদের, বড় বেখাপ্পা লাগে-
প্রস্তরঅস্ত্র ফলা, বাণ।
ইছামতি এখনও বয়, বয়সে শুকিয়েছে তাঁর নেত্রনালী
মেঘনার কালো জলে ইঞ্জিনের সে কী দাপট!
স্টেনগান এখনো আছে,
আমাদের গোয়ালের দুধ আর ক্ষেতের মরিচ চলে গেছে শুধু হাটে।
রেসকোর্সও ভরে থাকে গোট গোটা মানুষে
শুধু কোঁচা মেরে চলি না আর উপকূলের দিকে
শ্যামল নাভী চিনেছে সুগন্ধী প্রসাধনী যদিও
ইছামতি হারিয়েছে তার রূপসী যৌবন।
আদরের বাংলো
এরপর আমাদের বাংলোটি খালি পড়ে থাকবে অনন্তকাল
সন্ধ্যামালতি, জুঁই বা হাসনাহেনা ফুটবে না সেখানে
পথ ভুলে যাত্রাবিরতি দেবে না রঙচঙে ফড়িং বা আটপৌরে ঘুঘু,
ইতিহাসের প্রথম যৌবনে ভেঙেছিল যে মাটির কলস
সেখানে আর ঠাঁই হবে না ঠাণ্ডা এবং শান্ত জলের।
কোটি কোটি বছরের ক্লান্তি সেরে আকণ্ঠ ডুবে তৃষ্ণা মেটাতে যাবো না
সূর্য কপালে আঁকবো না কোন ফুল, ফল বা বাগানবিলাসি চিত্র।
আমরাও ভাঙ্গতে শুরু করেছি মাটির কলসের মতো।
পৌরাণিক কুমারের কত যত্নে আঁকা কলস—
আদর করে আর ঠাঁই দেবে না কোন জলের
নদীর কিংবা সমুদ্রের, চোখের কিংবা ঔরসের।
বাংলোটি খালি পড়ে থাকবে বছরের পর বছর
কেউ ডাকবে না, কেউ ছুঁবে না—এত আদরের বাংলোটি!
দোহাই
সবুজ বুক বেয়ে তবুও নামে নদী
নাভীপথে আরও নাব্যতার দিকে—
জল-স্থল সঙ্গম করে কুলুকুলু স্রোতে।
দোহাই তোমার!
এনে দাও নৌকা বাইচ
এনে দাও ডুবসাঁতার
এক চুমুকে ঠোঁটোপকূলে গড়ি—ম্যানগ্রোভ।
আনো অনার্য বসন
ইছামতি, মধুমতি
চুমুকে চুমুকে বানাই নাব্যতার বাংলাদেশ।
বহু দীর্ঘশ্বাসের পর পালতোলা নাও আনো
আনো পানকৌড়ির ডানা ঝাপটানো ঢেউ।
জেলের হাসি আনো, মাঝির সারি গান
দোহাই তোমার!
সেই ইছামতি আনো
আনো বাধাযৌবন আর ডাকাতিয়ার ঘ্রাণ।