যে পাপ, যে পরিধান
হে পুণ্য, হে পবিত্র আকাশ-বলে শুরু হতে পারতো আমাদের প্রার্থনা।
কিছু জল ছিটিয়ে দিয়ে আমরা কামনা করতে পারতাম ফুলের দীর্ঘ
জীবন। আর উড়িষ্যা থেকে উড়ে আসা পাখির পালক থেকে খুঁজে
নিতে পারতাম নিজেদের বুকের ওম! না-কিছুই পারিনি। কিছুই
সংরক্ষিত হয়নি আমাদের আগামীর জন্য!কোনো ভূগোল থেকেই নিতে
পারিনি জীবনের পাঠ!অথচ একটি সুদীর্ঘ আয়ু আমাদের সকলের জন্যেই
বরাদ্দ ছিল, একটি বাতিঘরকে ভালোবেসে আমরা আলো জ্বালবো বলে
অঙ্গীকার করেছিলাম।
যে পাপ আমাদের পরিধানে ছায়া হয়ে থাকে; শেষ পর্যন্ত আমরা তাকেই
ভালোবেসেছি!আগুনের অলংকারে নিজেদের সাজাতে সাজাতে পাড়ি দিয়েছি
ভূমধ্য-সাগর! সাগর আমাদের কাছে ডেকেছে, আকাশ ডাকেনি।
বজ্র আমাদের কাছে ডেকেছে, বিজলী ডাকেনি।
বিষাদ আমাদের ছায়া দিয়েছে, বন তাড়িয়েছে দূরে!
আর আমরা একাধিক অন্ধকার বুকে নিয়ে ডুবেছি, ঘন কোনো গ্রহের দুপুরে!
পাহাড় বর্ণিত ঘর্ষণ
এই যে ঘর্ষণের ঘ্রাণ পাচ্ছ, তা আমরা ধার নিয়েছি পাহাড়ের কাছ থেকে।
চুল্লিতে যেমন পোড়ে কয়লা, আঁধারের বয়স খুঁজে যেমন দীর্ঘতর হয় রাত
ঠিক তেমনভাবেই পাহাড়ের বলে দেওয়া পথে পথে আমরা খুঁজেছি আলোর
পদচিহ্ন। কিন্তু সকল পা-ই যে চিহ্ন রেখে যায় না, তা জানা ছিল না
আমাদের!আর তাই;নির্ধারিত ভবিষ্যৎ ভেঙে আমরা চেয়েছি উজ্জ্বল বনবাস
যেভাবে সিঁড়ির দুপাশে অনেকগুলো ছায়া পড়ে থাকে, সমাধির বুকে উঁকি দেয়
নবজন্ম নেওয়া সবুজ ঘাস!
অরক্ষিত মোমের শহর
গলে পড়ার কৃতিত্ব সবাই অর্জন করতে পারে না। অনেকেই চিনতে পারে না
ছায়াপথের কাঁটা।তারপরও পরিব্রাজকের পদছাপে ভরে ওঠে শিমুল নগরী,ফুল
কিংবা ভুলের পাপড়িগুলোর রঙ চিনতে চিনতেই কেটে যায় অনেকের প্রেমতপস্যা!
অনেকেই বুকপকেটে জমিয়ে রাখতে পারে না বৃষ্টিবিদ্রোহের স্মৃতিচিহ্ন।অনেকের
ঘরের জানালায় বেজে ওঠে না পাখিদের কলরব। জলের সিন্দুকে অশ্রুর আলো
সাজিয়ে যারা রক্ষা করে অন্যের জীবন,তারাও জানে না কেমন হয় কান্নার রঙ!
অরক্ষিত মোমের শহরে, অনেকেই জানতে পারে না সলতের সঞ্চিত বেদনাকথা।
একদিন শিশিরকাব্যে লিখিত হবে বসন্তরাতের বজ্রবিবরণ, একদিন ঘন ও গভীর
তুষারপাতের আগেই এই ঘাটে ভিড়বে জাহাজ; নিবন্ধিত হয় কালের কম্পাসে!