মেঘালয় ছুঁয়ে, ধীরপায়ে মেঘ নামে
মেঘে ঢাকা ভোর, ঘুমঘুম চোখ
যাই যদি মেঘেদের বাড়ি,
মেঘালয় ছুঁয়ে দেখা হবে,
কথা হবে ঠিক কতদিন পর বুঝি!
কে জানে? কে রাখে তার খবর?
শারদ প্রভাত খুলে তাকিয়েছে রবি
মেঘ ডাকে, জেগে ওঠে ভোর
দেবী সাজে দেখি তার রূপ।
নাগরিক কোলাহল উবু হয়ে
ঝাঁপ দেয়, নদে সন্ধ্যার ঢেউ।
শিউলির গন্ধে ভেসে বেড়ায়
শারদীয় আনন্দের ভৈরবী সুখ।
কোভিড নাইন্টিন, ভালোবাসায় টানাপড়েন
ফটোসিন্থেসিস নিয়ে প্রতিনিয়ত সবুজ পাতা
কার্বোহাইড্রেট খুঁজে গাছেদের জীবন বাঁচাতে,
কই তারা তো কেউ বলে না অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে,
তুমি বসে বসে খাও।
কানের ধারে ঘ্যান ঘ্যান প্যান প্যান করে,
কিংবা উচ্চস্বরে পাড়ার লোক জড়ো করে না তো!
চাকরিটা আমি হারিয়েছি এই মাস তিনেক হলো!
এই লকডাউন, কী দুঃসময় কোভিড আতঙ্ক
তেরে আসছে এ পাড়ার গলি থেকে
ও পাড়ার গলিতে হাতড়িয়ে।
শুনেছি স্বাস্থ্য বুলেটিনে চল্লিশের ওপরে
আর পঞ্চাশের ওপরে পুরুষের যত ভয়,
বেশি মারা পড়ছে। ডাক্তার
আর নার্স সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত।
খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মুখে মাস্ক নেই,
আমাকে মাস্ক পরা দেখে রিকশাঅলা
মুচকি হেসে বলেই ফেললো,
একখান কতা কই স্যার, আল্লায় যদি নেয়…
আপনার এই মাস্ক কি ঠেকাতে পারবে?
দ্যাশে যে কী আইলো?
আল্লার গজব পড়ছে।
দ্যাশটা বড় বড় সাহেব চোরে ভরে গ্যাছে
খালি গরিবের টেকা খায়, ব্যাংক লুট করে।
পোলাপাইন লইয়া অহন যামু কই?
মোগো তো কিচ্ছু নাই।
তাই করোনা ফরোনা গরিবের ধারে আহে না।
আল্লার দোয়ায় না খাইয়া মরুম কিন্তু করোনায় না।
বেসরকারি টিভি চ্যানেলের এক সাংবাদিক
জরিপে দেখেছে ঢাকার নিম্ন আয়ের মানুষের
মধ্যে ভাইরাস সংক্রমনের হার নেই বললেই চলে।
তাহলে প্রশ্ন সবার মতো আমারও
তাহলে করোনা কী উচ্চ বিলাসী সমাজের
জন্য এসেছে খোদার গজব হয়ে?
পুরো ঢাকা আজ ফাঁকা….
যানজট নেই, নেই ট্রাফিকজ্যাম।
কোভিড নাইন্টিন আর যা হোক,
তোমাকে চিনতে শিখিয়েছে,
যাকে আমি ভালোবেসে বলেছি,
তোমার জন্য সব ছাড়তে পারি।
এমনিতেই কঠিন সময়, তার ওপর
প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর চলছে
ঈদ উৎসব কর্মী ছাটাই।
এতটা পথ একসাথে হেঁটে এসে
আজ এই নিঃসঙ্গ পথে একা…
ক্লান্ত পথে রিকশা থামিয়েছি,
মাস্ক খুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি।
বললাম ওকে, বাকিটা পথ হেঁটে যাবো একা।
রাস্তায় কিছুটা পথ হেঁটে
শাহাবাগ মোড়ে একটা হিজল গাছের
নিচে এসে দাঁড়িয়ে মুক্ত বায়ুতে
ফুসফুস ভরিয়ে নিচ্ছি,
সিএনজি রিজার্ভ ট্যাংকির মতো।
যদি আর নিতে না পারি দু’দিন পর।
শুনেছি জ্বর, সর্দি-কাশি, তারপর ফুসফুস
হয় অকার্যকর। শ্বাস নিতে না পারলে
অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে হয়।
সেখানেও কালোবাজারি।
হিজলের কাছে জিজ্ঞেস করি
পাতা কি কখনো তোমায় কষ্ট দিয়েছে?
আমি সারাদিন গায়ে রোদ চেপে
পারবো না তোমার খাবার জোগাতে
কিংবা তোমার জন্য আমি পুড়ে পুড়ে
কাঠ হতে পারবো না।
কী দিয়েছ তুমি আমায় এই ক’বছরে?
একটি সন্তান ছাড়া। মেটাতে পেরেছো
কি আমার কোনো আবদার? শখের কোনো কিছু!
আমি জানি, এই কোভিড নাইন্টিন
কত যুবকের সংসারে বিচ্ছেদ টানবে
ভালোবাসায় বিশ্বাস হারিয়ে।
টানাপড়েনে হয়তো বিলাসী ভালোবাসা
আত্মহননে শত প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে?
কত সংসারে নেমে আসবে অশান্তির
শনি গ্রহ কালবোশাখী হয়ে।
কত অনাগত ও স্বাগত সন্তান হারাবে
তার নিরাপদ আশ্রয়, ভালোবাসার ঠিকানা।
তারপরও হাসি মুখে বলি,
হ্যালো বাবা, আমি ভালো আছি।
তুমি কেমন আছ?
বাবা-মা তো জানবে না এই দুঃসময়ে
সংসারে ভালোবাসার টানাপড়েন।
অভিনয়ে কেউ সুখী নয়
তোকে কখনো ভালোবাসিনি, আজ বলছি..
এই চিরন্তন সত্য কথাটা বলতে তুমি
কতটা বছর লাগিয়ে দিলে।
এ ক’দিনে আমার সন্তানেরা
তার বাবাকে চিনতে শিখেছে।
মেয়ে তো বেশ বড় হয়ে গেছে,
বলেই ফেলল, বাবা এই আন্টিটা কে রে?
দারুণ লুকস্। আমি উত্তর দিতে পারিনি, সেদিন।
ইনিয়ে বিনিয়ে বললাম, মা তাকে চিনি না।
ইদানিং ডিসটেইন্স বেড়েছে ঠিকই
ইউটিউব, ইনস্টগ্রাম ঘাঁটাঘাঁটি করে
বেশ কিছু ছবি পুরনো কাসুন্দি
হয়ে টকঝাল মিষ্টি, টুপটাপ বৃষ্টি।
এক বন্ধু, গতকাল বলেই ফেললো,
স্ত্রীর মৃত্যুর চেয়ে প্রেমিকার মৃত্যু
বেশি বেদনার। স্ত্রীর মরদেহে অধিকার থাকে
আর প্রেমিকার মরদেহে অধিকার থাকে না।
তাহলে আমাদের মরদেহে আমাদের
কারো কোনো অধিকার থাকবে না। তাই তো!
গতকাল সকালে টুইটার ওপেন করে দেখি,
মর্নিং, হাউ আর ইউ?
আমার মেয়ের ছবি দিয়ে
তুমি টুইট করলে, এই কিউটের ডিব্বাটা
তো আমার হতে পারতো?
আমি সেদিনের টুইটের কোনো অ্যান্সার দেইনি।
দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি।
কারণ মেয়েকে বলেছি, আমি তাকে চিনি না।
আসলেই তাকে আমি কি ভুলতে শিখেছি?
দুঃখ যদি না থাকতো তবে,
সুখকে উপলব্ধি করা যেতো।
দুঃখ আছে বলেই বেচারা সুখের এত কদর।
যেমন বিরহ থাকে বলেই
প্রেমকে উপলব্ধি করা যায়
চিরাচরিত সনাতন নিয়মে।
যে বিরহকে ধারণ করতে পারে না
সে কি প্রেমিক?
যে দুঃখকে বইতে পারে না
সে কি আসলে সুখী?