অন্ধ হয়ে যাওয়া ভালো
অন্ধ না হয়েও
আমরা চোখে দেখি না
অনেক সময়
আমাদের অন্ধ হয়ে যাওয়া ভালো
চোখ আছে
অথচ আমাদের রোদহীন চোখ
হৃদয় আছে
অথচ তা বোধহীন জড়
মুখ আছে
অথচ মুখে কোনো প্রতিবাদ নেই
শ্রবণ ইন্দ্রিয় আছে
শুনি না সত্য কিংবা মিথ্যা কিছুই
ঘ্রাণশক্তি দিয়ে
এড়িয়ে যাই না দুর্গন্ধ-মুখ
শ্বাস টেনে নেই না গোলাপের জ্যোৎস্না-সুরভি
অন্ধ না হয়েও
আমরা চোখে দেখি না
আমাদের অন্ধ হয়ে যাওয়া ভালো!
আমি ফিরে আসি
মাঝেমধ্যে তুমি আমাকে নির্বাসন দাও
নিষ্ঠুরের মতো
আমি সমুদ্রের নোনা কুমিরের পেটে ঢুকে যাই
হয়ে যাই দূর জলবাসী
মাঝেমধ্যে তুমি আমাকে নির্বাসন দাও
না বুঝেই
অন্ধকারের হৃৎপিণ্ডের ভেতর
ঝিঁঝিপোকা
আমি গুহাবাসী
মাঝেমধ্যে তুমি আমাকে দণ্ডিত করো
এমনকি ঘোষণা করো মৃত্যুদণ্ড
তবু তোমার চোখ ভালবেসে
এই ঘাসে
মাঘের শেষে
দিনান্তের নীল কোকিল আমি ফিরে আসি।
বনের ভেতর কোনো শব্দ নেই
বনের ভেতর কোনো শব্দ নেই
শুধু আমাদের
নিঃশ্বাসের শব্দ
বনের ভেতর কেউ নেই আজ
পাখি নেই
বন্যপ্রাণী নেই কোথাও—শব্দহীন বন
এমন নৈঃশব্দ্যের ভেতর
তুমি হরিণ
আমি বাঘ
বনের ভেতর কোনো শব্দ নেই
দুজনের নিঃশ্বাসের
শব্দ কেবল
মনের ভেতরও কোনো শব্দ নেই
ভাষা নেই
আমাদের হৃদয় নির্বাক!
আলাউদ্দিন খাঁ
এখানে দুপুরে নামে অন্ধকার
দিনও রাত্রির মতো তমসায়
ঘন কালো
এখানে গাছের সবুজ—এখানে সব
ঘাসের সবুজ
শুকালো
এখানে অন্ধ যারা
তাদের চোখে আজ সবচেয়ে
দূরদৃষ্টি
আজ তারাই অন্ধ প্রমাণিত
যাদের চোখে আলো—মগজের নিউরন
ধারালো
দিনের সূর্য ঢেকে দেয়
অতীতের গুহা থেকে উঠে আসা কুয়াশা ও
অন্ধকার
এখানে পাতাবাহার
সব রঙ হারায়
সব সুর মরে যায়—আগুনে পোড়ে
আলাউদ্দিন খাঁর মাইহার।
লোকটিও চলে গেছে
এইখানে একটু আগে বসেছিল সে
এখন আর নেই
পড়ে আছে
শেষ সিগরেট-ছাই ভাঙা অ্যাশট্রে
লোকটি চলে গেছে বহুদূর
নিয়ে গেছে
বুকপকেট ভর্তি
জীবনের বিরাগ-বেদনা-অসুর
কার জীবন আর স্থির
কার জীবনে আর
জমে থাকে রাজ্যপাটের সমস্ত সুখ
থাকবেই দুঃখ আর বেদনা গভীর
বুদ্ধও চলে গেছে
নির্বাণ লাভে—অসুখ আর জীর্ণতা নিয়ে
সকলেই চলে যায়
একদিন জীবনের চৌকাঠ পেরিয়ে।