অন্ধ আয়ুষ্কাল-১
আমি আর কৃষ্ণা ছাদে বেড়াতে এসেছি,
কৃষ্ণার গা ছুঁয়ে নেমে যাচ্ছে রাত্রি…
কৃষ্ণাকে বললাম,
তোর গায়ের রঙ আমার খুব পছন্দ,
কোনো দাগ দেখা যায় না।
আমি পেইন্ট মাস্টার হলে
মানুষকে শুধু কালো রঙ দিয়ে আঁকতাম।
মানুষকে যদি একটিমাত্র রঙে আঁকা হয়
তাহলে কি জগতের সকল আনন্দ লুপ্ত হবে?
কৃষ্ণা বললো, হবে।
কারণ বহু বর্ণে মানুষেরা দৃঢ়সংলগ্ন ।
অন্ধ আয়ুষ্কাল-২
প্রতিটি নদীর উৎসমূলে একটি গুপ্ত নদী থাকে।
আমি যে নদীটির ওপর বাস করি,
ভাবলাম—তার উৎসমূলে যাবো;
এর গুপ্ত মন্ত্রটি আমার দরকার।
আজ আর কৃষ্ণাকে নেবো না,
আমি মালতীর হাত ছুঁয়ে আছি…
মালতী এস্কিমোদের বরফবাড়ির মতো।
আমি ইগলোর ভেতর
নিজেকে গুপ্ত করে বললাম,
মালতী এবার আমাকে নিয়ে চলো।
অন্ধ আয়ুষ্কাল-৩
আগত সন্ধ্যার সঙ্গে কিছু দৃশ্য খুব পরিচিত
কিছু ফুল তুলে রাখি অনন্ত মন্দিরে
কিছু ফলে গাঁথা আছে আমার সকাল
বীণাকে বলেছি, আহা এ কেবলই অনুরাগ
পূজার অর্ঘ্যতে আজ ফুটে থাক কৃষ্ণার আকাশ
অন্ধ আয়ুষ্কাল-৪
অনুরাধা প্রকৃত অর্থেই নদী ছিল,
আমি তার গায়ে জলের গন্ধ পাই।
কয়েকটি ফুলের ভেতর
অনুরাধাকে ছুড়ে দিলে
সে একদিন পাখি হয়ে যায়…
আমি জলের সিঁড়ি ধরে
অনুরাধাকে ছুঁতে চেয়েছিলাম;
জল ছেড়ে উঠে এসে দেখি—উড়ে যাচ্ছে মেঘচিল।
অন্ধ আয়ুষ্কাল-৫
সুদীপ্তাকে আমার খুব ভালো লেগেছে
. দুষ্টুমি করলে আমি তাকে
কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখি, তখন
তার ফোলা গালে
মালতী ফুল ফুটে থাকে।
হয়তো মালতী নয় কিংবা
মাধবীলতাও হতে পারে…
সুদীপ্তার অনাঘ্রাত গালে,
দুই টোলে‑ফুটে থাক দুই বোন
মালতী আর মাধবীলতা।
আজ আর ওর দিকে তাকাবো না।
পশ্চিমের সূর্য থেকে একখণ্ড রঙ এনে
কৃষ্ণার কপালে আজ চিহ্ন এঁকে দেবো।
অন্ধ আয়ুষ্কাল-৬
প্রতিদিন জল ভেঙে সুরবালাকে ছুঁতে যাই।
সুরবালা পাশার গুটির ভেতর
. নিজেকে লুকিয়ে রাখে—
আমি জল ভেঙে প্রতিদিন পাশা খেলি।
প্রতিবার চালে ভুল হয়
প্রতিবার জলে ডুবে যাই
সে আমাকে নিয়ে যায় ভুবন ডাঙার বিলে।
ফের আমি সুরবালাকে ছুঁতে যাই
. ফের সে লুকিয়ে পড়ে
চতুরাজি, চারটি রঙের খেলা,
আমার কেন হলুদ ভালো লাগে সুরবালা!
অন্ধ আয়ুষ্কাল-৭
উদিতা তার ভেতর বাড়িতে
একটা ধূসর বরাহের ছবি এঁকে নিলো।
আমাকে দেখিয়ে বললো, দেখো
আমার ভেতর আমি তোমাকে এঁকেছি।
আমি উদিতার ভেতর বাড়িতে কড়া নেড়ে যাচ্ছি…
প্রতিটি খিলান উল্টো করে রাখা,
শব্দ হচ্ছে নিম্নগামী মাদলের…
তার ভেতর বাদ্যযন্ত্র পুরে দিয়ে বললাম।
তোমার ভেতর আমি কি শুধুই বরাহ!
উদিতা বললো, না
বাইরে আমরা যা দেখি
তার সবটুকুই আড়াল।
বাইরে বিস্তৃত নদী,
আমরা হাওয়ার সাথে ঘুরছি…
সমস্ত রাত একা একা শুয়ে আছে রেলের ইঞ্জিন।