দীর্ঘ দূরে
না, ভেবো না তোমাকে তো যাই ভুলে যাই,
ভুলে থাকি, ভুলে গেছি
দীর্ঘ দূরে তবু তুমি ভাস্বর যেন।
তুমি আমার সেই বাতিঘর।
তোমার দেওয়া ফুলের তোড়া, গানের ডালি
তোমার দেওয়া কথাগুলো,
বিপদ এলে তোমাকেই তো স্মরণ করি,
যতই লাগুক বুকে ব্যথা।
অস্তিত্ব
শীতের রোদকে নরম মিষ্টি জোছনা মনে হয়,
হলুদ সর্ষে ক্ষেতের ঝিলিমিলি আবির দিয়ে
আমাকে স্পর্শ করে,
কোমলতায় উষ্ণ করে সোনালি নদীর স্রোতের মতো।
যে আলোর বন্যায়,
অনাদিকালের প্রবাহতে আমার মতোই-
সুপ্রাচীন এক সৌন্দর্য-সৌরভ,
সুষমা-জীবন খুঁজে পেতো রাখাল বালক কালো নিষাদ।
আজকের এই প্রণয়, গভীরতা, বিষাদের ইতিহাস
সেই বালকের চোখে, তার বাঁশির সুরে।
তারা গুটি গুটি পায়ে এসেছিল এই বদ্বীপের বালিতে
তাদের পায়ের ছাপ আজো দেখতে পাই।
এই সুবিশাল সমুদ্র যতোই আঘাত হানুক
তার ঢেউয়ে, মুছতে পারে না।
আমি আমার মাঝেই বহন করে চলি তাদের অস্তিত্ব,
তাদের চিহ্ন,
তাদের প্রবৃত্তি,
তাদের প্রাচীনতা।
তারা এ প্রকৃতির অমলধবল সন্তান, আমার পূর্বপুরুষ
আমি কি অস্বীকার করতে পারি আমার অস্তিত্ব?
আমার ইতিহাস!
অনুভূতির ভূত
আমার খুব সেকেলে কিছু অনুভূতি আছে,
একেবারে পুরনো, বস্তাপচা জঞ্জালের মতো দখল করে আছে ঘর।
যেগুলো মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরে,
যেগুলো বহুদিন হলো,
উপযোগিতা হারিয়েছে এই ঝকঝকে সভ্যতায়
ভাবছি সের দরে বেঁচে দেবো ওগুলো,
জঞ্জাল ক্রয়কারী ছোট্ট, মিষ্টি ছেলেটির কাছে।
পুরনো বই, তার ভাঁজে যত্নে লুকানো শুকনো গোলাপ,
কিছু বিবর্ণ সবুজ সতেজ স্বপ্ন..
পাতায় আটকে থাকা নিঃশ্বাস ও দীর্ঘশ্বাস,
আর কিছু পুরনো লোহা লক্কর, প্লাস্টিক
সব নিয়ে যাক।
পারলে বেচুক, না পারলে ফেলে দিক কোন ভাগাড়ে
আমি ঝা তকতকে, হালফ্যাশন কিছু অনুভূতি দিয়ে,
করাব আমার ইন্টেরিয়র।
যারা গৃহকোণে টবে রাখা গাছটির মতো
বিবর্ণ….
রোদের রঙ দেখবে না,
কখনো আকাশ ছোঁবে না,
ঝড়ে নুয়ে পড়বে না, কিন্তু
বাতাসের দোলও মাখবে না গায়ে,
ভাসবে না বৃষ্টির জলে
. দুখ ভাসানোর কোনো সুখে।