এই গান শেষ হলে
এই গান শেষ হলে বুকের ভেতরে ব্যথা রবে,
পিয়ানোর আঁখিপাতে ভাইরাস থেকে যাবে একা,
রাতের আঁধার চিরে নিয়তির শিরে হবে লেখা
স্মরণের বেয়নেট বসে যাবে বেদনার টবে।
একদা তারার মতো জ্বলেছিলো স্মৃতিগুলো যবে
দেহের আকাশ পথে রক্তাভ ঈভের ছিন্ন রেখা,
প্রেমের মূরতি হয়ে পেয়েছিল আদমের দেখা,
ভাবের বহর ধরে সেইদিন এসে যাবে কবে?
এই গান শেষ হলে অযাচিত বাতাবির গাছে
কেঁদে কেঁদে চলে যাবে মোহিনী অতীত দিনশেষে
নাবালক শিশু হয়ে কেঁদে যাবে আলেয়ার কাছে,
সময়ের কক্ষপথে নিঃসঙ্গ বিহগ তীর ঘেঁষে
চলে যাবে একদিন মমতার ঝরনার পাশে,
এই গান শেষ হলে কিছুই রবে না শান্ত রেশে।
রাগ
প্রতিদিন প্রতিটি কথায় তুমি রাগ করে বসো।
বিনয়ের চোখ বুজে মাঝে মাঝে ফেটে পড়ো ক্রুদ্ধ বিসুভিয়্যস,
কখনো পালাতে চাও মহুয়ার বন ছেড়ে নিজস্ব কৈলাসে,
ধ্যানী অনীকের ভূমি কখনো ফিরিয়ে দাও নির্লেখ দলিলে,
বলো তো এমন করে আমি আর কতদিন
জীবনের প্রতিদ্বারে ভিক্ষা চেয়ে যাবো?
আমার ভেতরে আজ সঘন আষাঢ়ে বয় চৈত্রের হাওয়া,
ফাল্গুনে বুকের বৃক্ষে গান গায় ভয়ার্ত গৃধিনী
আশার গেলাস হাতে প্রত্যহ প্রার্থনা করি হলদেটে মেঘ,
একফোঁটা পানি দাও প্রত্যয়ের ভূর্জবৃক্ষমূলে!
এইভাবে কতোদিন ছুটে গেছি নদীর পাতালে-
সাগরের সফেন কন্দরে এসে বহুবার চেয়ে গেছি এক বুক
পিপাসার জল,
নীরব বেদনা দিয়ে মর্ত্যরে গরাদ খুঁড়ে শেষটাতে লুকিয়েছি
হায়েনার শাপ।
অতঃপর হৃদয়ের নোনাজলে নগ্নস্নান হয়নি এখনো…
তারপর এমনি করেই
রাগের ফসল বুনে প্রতিদিন নিঙ্ড়াও এই স্নায়ু মাঠ,
জরায়ুর জলোচ্ছ্বাসে নীরবে সেচন করো অনাবাদী ক্ষেত
আর আমি কবিতার কাছে বসে কবিতার হেঁয়ালি শোনাই:
‘এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর’
‘ফর গডস সেক হোল্ড ইয়োর টাং
অ্যান্ড লেটমি লাভ’
আর শুধু বলি কিছু দাও জল কিছু দাও অগ্নি
এ রাগের শেষ পুজো করি।
আবার কখনো যদি
আবার কখনো যদি দেখা হয় মতিহার জ্ঞান তপোবনে,
মালিনী নদীর তীরে কন্বাশ্রমে শকুন্তলা-দুষ্মন্তের মতো,
একটি দিবস দাহে বুঝে নিও বিদূষক প্রাণের স্বাগত
অনুসূয়া-প্রিয়ংবদা সখিদের নিস্তরঙ্গ ভাব সম্মিলনে।
সেখানে মন্মথ যদি পঞ্চবাণে বিদ্ধ করে রতি বিস্মরণে,
বসন্ত বন্ধুর সাথে ভঙ্গ করে ধ্যানমগ্ন মহর্ষির ব্রত,
নিদাঘের কোল থেকে লুফে নিয়ে হরিদ্রা প্রাণের ক্ষত,
আমাকে ফিরায়ো সখি হস্তিনার নম্রনীল প্রাসাদ প্রাঙ্গণে।
এরপর কোনো একদিন আসন্ন সম্ভবা কাছে আসো যদি,
দুর্বাশার শাপ নিয়ে অনাগত কোন ভরত জননী হয়ে,
ফিরাবো না কখনোই বিস্মৃতির বুক থেকে প্রাণের অবধি;
লজ্জানত প্রত্যাখ্যান কখনোই বিঁধবে না হিরণ্য হৃদয়ে;
স্বপ্ননীল মতিহারে আবার কখনো বধূ দেখা হয় যদি,
আবার বাসবো ভালো যুগান্তর দীর্ণ করে কাল নিরবধি।
কোনদিকে যাবো
সামনে শ্বাপদ, পেছনে লক্ষ্মীর থাবা, বামে ইবলিশ, ডানে দ্রোণাচার্য
নিম্নে মাটি, ঊর্ধ্বে অথই শূন্যতা আমি কোনদিকে যাবো?
কথা ছিলো চাঁদ ডোবার আগেই পার হলে বৈতরণী
পৌঁছা যাবে সত্যের কৈলাসে;
কথা ছিল ললিতা সধবা হলে শুরু হবে মানুষের রাজনীতি
বর্ষাতি রাতের ছায়া থেকে নিমগ্ন বাতাস সতত দুলিয়ে যাবে
সেবাব্রতী হাতে করিমন ও গিরিবালার বিপন্ন সংসার,
শাসনতন্ত্রেই গৃহবদ্ধ হলে বারোয়ারি বঙ্গাল রমণী
পাবে তার ভাষারীতির অনিন্দ্য অপটিমা,
কোনো কথাই মিথ্যার দরোজা পেরিয়ে নামেনি সিঁড়ির নিচে,
কিংবা ওঠেনি লাফিয়ে কোনো জলজ্যান্ত ঈশ্বরের কোলে
কোনদিকে যাবো? খিন্ন খঞ্জনার আহাজারি সবখানে…
সংবেদনের মালা গেঁথে প্রত্যুষ; প্রদোষ অপেক্ষমাণ থেকেও
কোনলাভ নেই, কোনো অনাবিল পাখি ডাকে না এখন,
শুনেছি কবির মসী এদেশেই রচনা করেছে মহৎ কবিতা
পাখির কূজন, অলির গুঞ্জন, বসন্ত সমীর ছিল সব কবির সহগ
দুধ-ভাতে হানাহানি চরমের পরমার্থে যায়নি কখনো,
অথচ অনিত্য পথ সবখানে; আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা শ্যামলসুমতি,
চারদিকে নাগযুদ্ধ চোখে দেখে কোনদিকে যাবো?
কোন্ অলক্ষিত সত্যের সরণী ধরে
. ফেলে যাবো চামুণ্ডা চরণ?
সময়ের বধিরতা বেড়ে গেছে
বহু আগে আগুন জ্বলেছে চৈতন্যের চাঁদে
বায়ান্নর বীজমন্ত্র থেকে স্বাধীনতা, বর্ধিষ্ণু হাতলে আজ
. অবক্ষয় তুলেছে তিমির, রামের কুঠার
একখণ্ড মানচিত্রে দিনরাত সাপ, নেউলের দ্বান্দ্বিকতা,
সামনে এগুলে অনিবার্য পরিণাম আবারও উন্মাতাল নৃত্যে
চাঙ্গা হয়ে ওঠে, আর সবদিকে নপুংসক ভীরুতার ভাঁজ,
আজ পঁয়ত্রিশ ফাল্গুন শেষে অনিবদ্ধ বাঙলার নাগরিক
প্রেম-ফুল-যুদ্ধের পরেও অনিঃশেষ ভয়াল শূন্যতা নিয়ে
. কোনদিকে যাবো?
জননীর প্রতি
কষ্টের ভেতরে চাঁদ রেখে দুঃখের ভেতরে রাত
অবহেলা করিনি জননী;
যে ভাবে অযত্নে বেড়ে ওঠা আলোকলতার ভারে হলদে মাচান
কুল কিংবা ভেন্নাপত্রে পরগাছা ডাঁটোয়ান
সে ভাবেই অনার্য যুবক সূর্য থেকে আলো নিয়ে
. জ্যোৎস্না থেকে জড়িমাটা নিয়ে সাজিয়েছি অর্ঘ্যরে আসন,
পদ্মার কিনারে থেমে আনন্দের শমীবৃক্ষ পেলাম না হাতে
স্নিগ্ধতার স্বপ্নাবেশ এলো না অনিদ্রা আঁখিপাতে
তবু অবহেলা করিনি জননী…
জন্মের অশেষ ঋণ মানবের যুদ্ধমত্ত জীবনের ক্যানভাসে
কতোটা শোধের চিহ্ন রেখে যেতে পারে?
কতোটা সফল হয় কৃষকের সৃষ্টিশীল কারুকাজ বিমুখ প্রান্তরে?
হলুদ মেঘের দল যদি গর্ভবতী না হয় শ্যামলে,
যদি বজ্রের বিষাণে না ওঠে ঈশানে ভয়াল তাণ্ডব
নতুনের উদ্দামতা কতটা ফুলেল হয় সেবাব্রতী হাতে?
এত মৃত্যুবৃষ্টি! এত বিচ্ছিন্ন বিনয়!
প্রেমে প্রেমে এত খণ্ডাংশ হেলার অপঘাত!
বন্ধুত্ব; বালিশে এত তেল চটচটে বেদনার পঙ্গপাল!
সমস্ত সন্নিধান নিঃশেষিত করছে নিয়ত
তবু অবহেলা করিনি জননী…
দায়বদ্ধ দীক্ষার দেয়ালি নিয়ে পথ হাঁটি একা একা,
নক্ষত্রের নিঃশ্বাস হয়তো বুঝি না বায়স
তবু নিজস্ব পাখার ভাঁজে নীল স্বপ্নের আকাশ
. এখনও দেখে যাই স্তব্ধতার দাবানল চিরে…
জিজ্ঞাসা
বীজের বীজনে বৃক্ষসন্ধি অন্তঃস্রোতে পুষ্পের বাখানি
ক্রমশ বদলে যেতে যেতে ক্ষণ মিশে যায়
. অথৈ কালের সমুদ্রে,
জলের বিবরে স্ফীত বরফী বিন্যাস
ডিমের কুসুমে স্নিগ্ধ জীবনের নিয়ত সঙ্গম
উন্মত্ত কীটের মাঝে পূর্ণতর প্রাণের কোলাজ
দেখেছি স্নায়ুর মাঠে কালবেলা দৌড়ে যায় বোধের হরিণ
শিশুর ভেতর থেকে ক্রমাগত বেড়ে ওঠে ফুলেল রমণী
হায়রে জীবন তুমিও বদলে যেতে যেতে…
. মরণের শিহরণে কতোটা জড়াতে পারো ক্ষয়ের পাথর
তোমার প্রেমের কলি ফুল হয়ে ফুটেও
. বৃক্ষ হয়ে উঠেও
. ফলের সুবাদে বাঁধে সতীন সময়,
এমন কী কথা ছিল? নিঃসঙ্গ পাখির গানে
অনীকের বসন্ত হরিণ বল্গাহীন হয়ে যাবে চন্দ্রিমা সঙ্গমে,
শ্যামলিম স্বেদের বাঁধন ছিঁড়ে ছিঁড়ে
. অরণ্যের নমিত বিবরে বেঁধে দিবে ফেনায়িত শিঙ,
অর্থ-বিত্ত-বিষয় বৈভব ভোগের দরোজা খুলে দিতে পারে নৈঃশব্দ্যের ভ্রূণ,
দিতে পারে রমণীয় জীয়নজঠরে প্রজন্মের প্রাণ
প্রেমের মহিমা মুছে আরো পারে দিতে নৈঃসঙ্গ্যের কালটিপ,
কেবল বদলে যেতে যেতে
. মনের মাধুরী ধরে অহল্যা আরতি
হে নক্ষত্রছায়া, হে সপ্তর্ষি ধ্যানের সহগ,
কুহেলি পাখির সুর শুনে বনচারী কপালকুণ্ডলা
আর কতো বদলাবে নিমগ্ন পিয়াসে?
ইচ্ছে ঠাকুরের গল্প
একদিন ধবল জ্যোৎস্নার অথৈ স্নিগ্ধতায়
বাউরি বাতাসের হাত ধরে
মহান ব্রতের উঠোনে লুটোপুটি খেয়ে
অবশেষে কল্যাণ পুষ্পের বনে পৌঁছে যায় ইচ্ছে ঠাকুর,
দেখে, কাঁটাগুল্মে বেসামাল একটি গোলাপতরু কয়েকটি
ফুলের মওকায় নুইয়ে পড়েছে অক্ষমতার কারিশমায়
তারা বললে:‘ইচেছ ঠাকুর, নিজের জন্য ফুটিনি-
আমাদের দিয়ে ফোটাও অস্ফুটদের’।
বনের কান্নার ভেতর দিয়ে ছুটে এলো হরিণশিশুর মাকে খোঁজার শব্দ,
পেঁচার নিরেট কণ্ঠে তাজা টাটকা এক প্রচ্ছন্ন ফরিয়াদ
ইচ্ছে ঠাকুর রাজপুর থেকে মাধবপুর ছুটে গিয়ে এক বিপন্ন যুবকের হাতে
সঁপে দিলে একটি গোলাপ; বললে,‘মানুষ হও, প্রস্ফুটিত হও গোলাপের মতো’।
একটি ঘুঘুর চঞ্চু আরেকটির কাঁধে লুকিয়ে এলো বিদগ্ধ দুপুর,
একটি শালিক অনিমিখ এগিয়ে গেলো আরেকটির বন্ধনে
মুখে তার ভালোবাসার জাবেদা।
প্রত্যর্পিত গোলাপের সৌরভে যুবকও মানুষ হবার সনদ পেলো:
কিন্তু নয় টানে তিন ডিগ্রি দুই টানে এম.এ.
বিপর্যস্ত চাঁদের আঙিনায় দাঁড়ালো সে তবু
. খুঁজে পেলো আকাশের নীল…
তারপর পদ্মা-মেঘনা-যমুনার জল সময়ের হোলি খেলে
. গড়িয়ে গেলো দিনান্তের ঢেউয়ে ঢেউয়ে সাগরের কাজরি কন্দরে
. ঠাকুরের উত্তরীয় শঠতার আগুনে পুড়িয়ে
. অবিশ্বস্ত বাম হাতের খোঁচায় বিদ্ধ করে তপোবনে বিশ্বাসের হরিণ
যুবকের জিঘাংসা পথ পেলো দুর্বৃত্তের কিংখাবে…
ইচ্ছে ঠাকুর এখনো গোলাপের দিকে-
ভ্রমরবিলাসী চোখে সম্মিলন অন্তর্ভেদী
. -কাঁটা থই থই,
এখনো পাপড়ির দিকে
চোখের কাজলে রঙচটা পোস্টার
. মোসতাকের কীট ভিন্ ভিন্,
তাহলেকি ইচ্ছে ঠাকুর কল্যাণের রোদে স্নান করতে পেরেছিল?
না কি এনেছিল রোদের কল্যাণ?
তবুও সকাল তবুও সায়াহ্ন
অনুরাধা বলেছিল: ‘দেখো, একদিন
আকাশ নদীতে মেঘেদের কনে
রোদের গোপিনী নিয়ে
অযাচিত জলকেলি অভিসারে যাবে,
বিহার বহসে থাকবেনা সন্দেহের সন্দীপন
যমুনা পুলিনে পাবে তারে স্নানের ব্রীড়ায়
কদম্বের শাখে পাবে কালিন্দীর কষ্টেভেজা
নম্রনীল ঢেউয়ের ঝিলে কামিনী হিল্লোল
দানী পাবে বড়ায়ির নষ্ট চালে
স্মৃতিকান্ত মথুরার পথে,
ভারী পাবে গোয়ালিনী দধির পোস্তায়
নিদাঘের দায়ে পাবে ছত্রধারী ভাবের মুরারি,
আরো পাবে দৃষ্টিপাতে জীবনের বৃন্দাবনে
বংশীগ্রাসী জলের গাগরি’।
অনুরাধা বলেছিল আরো: ‘এই দেশে সাঙ্গা হলে
সন্তানের পিপাসায় মাতৃমন্ত্রে বসন্তের হোলি উৎসব হবে,
চাঁদাবাজ সময়ের ক্যাডারেরা সন্ত্রাসের সম্মার্জনী
নিরাবেগে হেনে দেবে গড ফাদারের পৃষ্ঠদেশে,
ঝকমারি বিপাদিকা ক্ষতিগ্রস্ত ফড়িয়ার মতো
নিশ্চুপ খিলানে অর্থশোকে হারাবে যৌবন
মাধবী রাতের গানে কলহান্তরিতা নায়িকার ফল্গুবনে
. উপচে পড়বে চাঁদের ফোয়ারা,
দেখে নিয়ো তখনই ভোরের শিশির মেখে নগ্নহাতে
নিষ্কুটে পড়বে টোকা: ‘খোলো, আমি’।
অনুরাধা কথা রাখেনি, নিষ্ফল মর্গে
. প্রতীক্ষিত ঊষার নির্বেদ
ঝুলে পড়া দরোজার স্বপ্নিল কড়ার খাঁজে
. দগদগে মরচের ফণা
দিনযাপনের দায় ভজে বৃহন্নলা দৌবারিক ঘণ্টাধ্বনি
তবুও সকাল তবুও সায়াহ্ন…
বাড়ির খবর
এই বাড়িটার স্বপ্নলোকে দিগঙ্গনার আগুন ছিল
জ্যোৎস্না রোদের ফাগুন ছিল, কোকিলদাপা কানন ছিল
আমকাঁঠালের বাগ-বাগিচা শানবাঁধানো পুণ্যিপুকুর
তন্দ্রাশীলার ভাতঘুমেরই স্পর্শ ছিলো ধলপহরে
যুবতীদের চিকুরদামে অনঙ্গের গন্ধ ছিল
তমালতলায় কৃষ্ণসখার বাঁশির মোহন কান্না ছিল
আকাশধোয়া বৃষ্টি ছিল নীল গাঙেরই তারার স্রোতে
মেঘের পানসির বহর ছিল
প্রিয়ংবদার অনাঘ্রাত মনপবনের ইচ্ছেবনে
গোলাপ ফোটার সুদিন ছিল
অনসূয়ার চোখের কাজল, দৃষ্টিপুতুল
অনশ্বরের কিঙ্কিনীতে নিরাপত্তার আদল ছিল
কাকতাড়ুয়ার হাতের যষ্ঠি মাদল ছিল
এই বাড়িটার অন্যরকম ভালোবাসার আলো ছিল।
বাদলরাতে দৌবারিকের ঘণ্টাধ্বনি
কোয়াকডাকা শাওন দুপুর ভাদ্রে ঝিলে শাপলা সকাল
কঙ্কাবতীর আলতাপায়ে শালতি নাইয়র
এই বাড়িতে তাও ছিল।
এখন শুধু ইট জির জির নোনার দঙ্গল
প্রতিক্রিয়ার পঙ্গপালে লুঠ করেছে শান্তিলতার সারাসবুজ
ভগ্নপ্রাচীর খানাখন্দক শকুন কাঁদে হন্যে সাঁঝে
চোর ছ্যাঁচড়ের আঁচড় পড়ে নিত্যদিনের ভাঁওতাচালে
আষাঢ়ভরা দহলিজে গল্প-গানের রঙতামাশা কোনসুদূরে
রিমঝিমিয়ে শ্রাবণডাকা মগ্নরাতে বঁধুর সোহাগ
বলাৎকারের মচ্ছবেতে দোররা হানে গাজির কাজী
ঠাকুর মার ঝুলির ভেতর তোমরা কোথায়
নীলকমল আর লালকমলের সাতচম্পা
নিগৃহীতা তোমাদের সেই বোন পারুলকে
খুঁজলে পাবে এই বাড়িতে
পাষাণ টোটা রাক্ষসেরই দাঁত বসেছে তার বিভঙ্গ
পলনাড়িতে
খুঁজলে পাবেই এই বাড়িতে
. এই বাড়িতে
অস্বীকারপর্ব
এখন যন্ত্রণা মগ্ন বক তপস্যার পৌষমাস
হার্মাদ শান্ত্রীর প্রেতচ্ছায়া দিগ-দিগন্তের তক্তোপোষে
বোধের দেয়ালে পিঠ হেলিয়ে বসলে
নাগাল মেলেনা একরত্তি স্বস্তির তকমা
বুকের অলিন্দে শ্যামাঘাসে ওঁৎ পেতে চুপে থাকে
অন্তহীন বিষদাহে বাসুকি দঙ্গল
দিশে দিশে ছেঁড়া রঙধনু, মেঘে মেঘে বৃষ্টির আকাল
উত্তরপুরুষ বীতরাগে উপড়ে নাচায় প্রজন্মের দায়
এখন তিমির গন্ধী সময়ের পোয়াবারো
অস্বীকার বেজন্মার রন্ধ্রে রন্ধ্রে সঙ্গীতের শ্বাপদ কীর্তন
পুণ্যভূমি মাতৃধামে একখানি পতাকার উদগাতা
একটি সূর্যের রাঙা হাতছানি তাও বিতর্ক-জঞ্জালে
বাজপাখি নখরে নখরে যার ছিলো রক্তের তিয়াস
গৃধিণীর চক্ষুপটে যার ছিলো শ্মশানবিলাস
তিরিশ লাখের বক্ষমঞ্চে অভিনীত যমের নাটক
সেইসব কুশীলব দৃশ্যান্তরে ঘুরে ফিরে সম্মুখ বেদীতে
স্বাধীনতা বীজমন্ত্র পুরনো রিজিমে লুটোপুটি খায়
জনকের দায় ভজে হনকের অন্ত অভিসারী
এখন আরূঢ় কল্প নগ্ন অস্বীকার চৈতন্যের সকল দুয়ারে
আজকাল কালো বস্ত্রে জাগেনা কারুর শোকের সমিধ
মিনার হীনার মনুমেন্ট মনোবিকলনে শ্রাদ্ধিক বিকার
নিরাকৃতি নদীর যৌবনে ফিরেনা মাছের বুহিতাল স্বপ্ন
নষ্ট ব্যঞ্জনের ষষ্ঠীপদী মূঢ় রূপকার লাঠি ঠোকে সত্যের দেয়ালে
ব্যাকডেটেড সৃষ্টিরোদ্দুর ঘেমে ঘেমে হারায় প্রহর
. শেষতক যুথবদ্ধ কিউলেক্স মশকেরা
টবে টবে ফুলেল প্রযত্নে বাঁধে এডিস প্রতিমা
আজকাল গোষ্ঠীর শিরানা বিবেকের ঘরানার পাততাড়ি খোঁজে
গুরুজন অধমর্ণ উত্তমর্ণ প্রজন্মের উল্টো শিষ্টাচারে
দিগঙ্গনা মুখভারে ফেরায় নয়ন
আমাদের অস্বীকার পর্বে যুদ্ধংদেহী কতিপয় নেটোগুরু
ঘুরে ফিরে পিকভর্তি কমণ্ডলু হাতে নিয়ে
তাতে কি জন্মাবে কোনো মধুকূপী ঘাস
নাকি পুষ্ট হবে নষ্টরোদে ঘাসেদের হলুদ শরীর?