কৃষকের মুখ
মাটির খাতায় লাঙলের আঁকা জ্যামিতি, লাঙলসারথি তোমার আঙুলগুলো
একদিনের জন্য ধার দিলে আমিও শিখে নিতাম, কাঠ কিভাবে ডেবে যায় মাটিতে
আর বোবা মাটি পায় ভাষা…তার রঙ, রূপ, অশ্রু, আনন্দ সোনার ফসলে ফসলে
কিভাবে ছেয়ে যায়!
কেন মনে হয় প্রতিটি ফসল সরে যেতেই সরে যায় একটু করে মাটি?
যে ধানগুচ্ছ ফেরে না—তার জন্য আমি আঁকতে পারি না একটি সম্পূর্ণ কৃষকের মুখ!
মা বিষয়ক-প্রতিদ্বন্দ্বিতা
আমার বোন , কোকিলের ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার মৌসুমে যে বছর
তার জন্ম হলো, তার পরের বছরই অমার জন্ম। আমরা পিঠাপিঠি বলে
মায়ের হৃদয় নিয়ে, ভ্রমণ ও স্নানে খুশির বাবলগাম ছড়ানোতে—
কোল-বিষয়ক আকর্ষণে—এমনকি পৃষ্ঠপোষকতায় আচ্ছন্ন মায়ের বুক ঘেঁষে
শোয়ার বায়না উভয়ের ছিল প্রবাদতুল্য।
মা বিপদেই পড়েছে বরাবর; কারণ তার একটাই হৃদয়। পৃষ্ঠপোষকতা
করতে গিয়ে মনে মনে অপরাধী হয়েই থেকেছে মা!
বোন এখন মা; মায়ের মাতৃত্ব নিয়েই সে আরেক মা। তার ভেতর ফেলে আসা
নদী ও সবুজ মাঠের স্মৃতি। উড়ে রঙিন বাবলগাম। তারও পিঠাপিঠি
ছেলেমেয়ে। একজনকে ডাকলে আরেকজন তাকায়!
আমি বোনের কোলের দিকে তাকাতে পারি না। কোল থেকে আমি কবে
বালুর মতো ঝরে গিয়েছিলাম! কোনো কোলের দিকেই আর তাকাতে পারি না
আমি, শীতের কুয়াশা ধরে হেঁটে যায় মা; কোলের ঠিকানায় এসেছে মাটির কলস!
শৈশবেই আমাকে বয়ে নেয়ার কোলে পড়েছে খিল। সবুজ মেঘের কুরিয়ার প্রাপকের
ঠিকানা না পেয়ে বারবার ফিরে গেছে…
বোনের সঙ্গে এখন আমার মা-বিষয়ক আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই
কারণ বোন এখন নিজেই মা
শ্রমিক
তুমি চেনো বারান্দা, এক চিলতে ছাদ, ড্র্রয়িংরুমে এক কাপ চা। আমি প্রতিদিন
বারান্দায় পাখিদের পায়ের দাগে খুঁজি ব্যথা! ক্ষুধার্ত পাখিগুলো আত্মহত্যাকারীর মতো
ঝুলে থাকে রেলিংয়ে। ছাদের ওপর বুক ভাসিয়ে চলা মেঘগুলো রাজহাঁস হলে এখানেও
আকাশ তাঁতশিল্পীদের শাড়ির নকশা হবে—টকটকে লাল রঙে…ড্রয়িংরুমে উড়ে আসা
একটি দোয়েল শোকেসের মারবেল দোয়েলটির কানে কানে বলে যাবে—
এক বৃহৎ টি-গার্ডেনের আত্মজীবনী বা নিহত বাঘের মতো মানুষের চোখ—সবুজ পাতা
কাফনের গল্প! তোমার হাতে চায়ের কাপ তখনো থাকবে অনবদ্য…
চুমুকে চুমুকে ফুরিয়ে আসবে কেটলির তিনভাগ জল!
কবিতার বই ও যুদ্ধ
আমার ঘরের বইগুলো এলোমেলো বড়। শিয়রে আহমদ ছফা
আর ওইদিকে ভিক্তর মাৎসুলেনকো-র ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ’
কবিতার বই আর বিশ্বযুদ্ধ পাশাপাশি!
আমার ঘরের জানালা দিয়ে একদিন একটি বই পড়ে গিয়েছিল
ওই বই আমি আর কোনোদিন খুঁজে পাইনি। হয়ত বইটি পাখি
হয়ে গেছে—সবুজ মলাটের ডানায় উড়তে উড়তে
বা সেও পড়তে গেছে পাশাপাশি দুই মানুষ একজন ‘কবিতা’
আরেকজন ‘যুদ্ধ’
রংধনু
কবিতার বই খুলে বসে আছি, কবিতার ওপর মুদ্রিত হচ্ছে
অন্য—কবিতা অগোচরে! তোমার চোখ ভিজে ওঠার দৃশ্য থেকে
সরাতে পারছি না আজও আমার চোখ…
চেখের সংসারে আমি এক টুকরো বরফকুচির মেঘ হয়ে ভেসে গিয়েছিলাম
যেথানে সন্ধ্যা লবণের ঘনত্ব নিয়ে অপেক্ষায়। দূরত্ব কাছাকাছি
কোনো ফুলের লতায় আটকে গেছে
জানলাম চোখেও আনন্দ আর কান্নায় একধরনের রংধনু ওঠে!