অঙ্কে শূন্য
সেই কবেকার কথা মহিতোষ স্যার বলতেন-
তুই অঙ্কে ভালো;
পরীক্ষার খাতাতেও তা প্রমাণ ছিল বরাবরই
লেটার মার্ক সহজেই পেয়ে যেতাম সব পরীক্ষাতেই
মহিতোষ স্যার গত হয়েছেন বহুদিন।
জীবনের খাতায় একটা অঙ্কও মেলাতে পারিনি
মেলে না কিছুতেই
সব অঙ্ক ভুল হয়ে গেছে
সব অঙ্ক ভুল হয়ে যায়
জীবন খাতায় জীবনভর শুধুই বড় বড় শূন্য।
বুকের গোপন ব্যথায়
চোখের গহীন জলে চোখ অন্ধ
আমি যে সব অঙ্কেই শূন্য পেয়েছি জীবন খাতায়;
স্যার আপনাকে এখন খুব মনে পড়ছে।
মহিতোষ স্যার আপনি কি দূরের কোনো স্বর্গ থেকে
দেখতে পাচ্ছেন আপনার ধারণা কত বেশি ভুল ছিল;
আপনার ছাত্র জীবনভর জীবন খাতায় কোনোদিন
পাস করেনি; শূন্যতেই তাকে খুশি থাকতে হয়।
আপনি তো স্যার জীবনের অঙ্কটা কিভাবে মেলাতে হয়
সেই সূত্র সেই নিয়ম একবারও শেখাননি…
শেকড়ের ছবি
তোমার সুখের প্রত্যেকটি চাবুকের ঘা এসে আমার বুকে লাগে
আমি হাসি;
নরম মাটির মতো পেতে দেই নিজেকে; তোমাকে ভালোবাসি।
কবিতায় অবজ্ঞা ও অবহেলা সযত্নে বাঁধাই করে রাখি
শব্দ খুলে খুলে তোমাকে দেখি;
নির্ঘুম জীবন ক্যানভাসে তোমার ছবিই আঁকি।
তোমার উপেক্ষা কখনো আমাকে করেনি উজান ঢেউ
একটুও জমিন নেই: নিঃস্ব আমি;
শুধু বুকটুকু আছে; তার সবটুকু সুবাসিত ঘ্রাণ তুমি।
ভালোবাসার আদরে দারুণ কৌশলে যতবার দাও
বিষের পেয়ালা;
গহিন তৃষ্ণায় পান করি আশ্চর্য সমুদ্রসুখ জীবনবেলা।
কতটা ভালোবাসলে ভালোবাসা হয়; অঙ্কটা জানিনি
শেকড়টা ধরে রাখি;
শেকড়ই যে বুকে; পিঠে শৈল্পিক ছবি অবজ্ঞা ও অপমানের।
শুনুন মহাশয়
মহারথি মহাশয় শুনুন আমার শীতের শীতল কথা
তেল মেরে মেরে এ শহরে জীবনের স্বপ্ন দেখিনি।
শ্রমিকের মতো খেটেছি শৈশব যৌবন; শক্ত মাটির সাথে
দিনদুপুরে নির্মাণ করেছি কঠিন দৃঢ়তা-রাত্রির কাছ থেকে
শিখেছি আঁধার ভাঙা-শ্রম বেচে খাই- শিখিনি তেলের গল্প।
মহারথি মহাশয় শুনুন উদ্ভট এত কথা কেন কন!
কিসের হুমকি ধামকি মারেন; কৃষক পিতার পুত্র আমি
শাণিত ফলায় কঠিন মাটির বুকে ফলিয়েছি সোনার ফসল
রোদ বৃষ্টি ঝড়ঝাপটা আহার অনাহার এসব জীবনের গান;
তেলবাজি করা চকচকে চেয়ারে যে লাথি মারি; বোঝেন না বুঝি!
মহারথি মহাশয় শুনুন গড়াইয়ের যৌবনমাখা যুবকের কথা
রোদে পোড়া নদীর শুকনো বুকে হাঁটা কয়া কুষ্টিয়া প্রতিদিন
বুকপোড়া কবিতার খাতা আমি। নকলবাজি আর তৈলমর্দন
ওসব থাকে না এখানে; তেলমাখা পদ পদবি পদক চেয়ার
কৃষকের শাণিত ফলায় ক্ষুধার্ত মাটিতে ফলে না ওসবের জয়গান।
আরও পড়ুন: দালির ঘড়ি ॥ রুমা মোদক