যা জানো না বলে চলে গেছ
সে সব আমিও জানিনি আর;
সবুজ টোলের গভীরে ডুবে
ফুটেছি কয়লায়—
আঁকাবাঁকা
রোদ্দুর তাড়ানো সুখে
ভিজে গেছি অসুখ সমান।
আমিও জানিনি তোমার গলায়
দৃশ্যমান ক্ষতের তৃষ্ণা বেঁচে নেই আর,
সন্ধ্যার পাঠ রেখে উদ্দেশ্য চিহ্ন
খুঁজে পাই না তার।
না বলা কথার ভাঁজ
নীল হয়ে ওঠা ড্রয়িংরুম
সচিত্র উৎসব;
গোপন হয়ে আছে অন্ধ কেল্লায়।
যেন শস্যের পিছনে নেই কোনো
বারুদ;
আমি ভিজে যাচ্ছি—
অচ্ছুত যন্ত্রণায়,
কতো দূর গেলে?
কতো দূর যাওয়া যায়!
শীতের গ্রীবায় মদ রেখে
উচ্ছন্নে যাওয়া চোখ থেকে
কত দূর দেখা যায়?
তোমার চলে যাওয়ার গতি থেকে
ফিরে আসা পালক
পুষছি যত্নে,
আদরে মাথায় তুলে রেখেছি
ঘাতকের সহোদর বৃত্তান্ত।
তুমিও অবুঝ পথের পাশ থেকে
তাকিয়ে আছ;
নিষিদ্ধ দেয়াল!
ছোঁয়ার ইচ্ছে জাগে
হাত তুলে এগিয়ে যাই
ফিরে আসি;
হাউমাউ করে কেঁদে ফেলি—
রবি বাবুকে চিঠি লিখি,
জীবনানন্দও বাদ যায় না।
তোমার প্রিয় বিনয়
তাকেও লিখি—
তারপরও শেষ হয় না কোনো ঘুম।
তোমাকেও লেখা হয় না দুপুর;
তুমি চলে গেছ;
কেবল দূরত্ব বাড়াতে
তোমার কসরত!
কিচ্ছু বলিনি আমি
সাহস হয়নি তোমার চোখে তাকাতে।
মাটির মুখে চুমু খাওয়ার ধৈর্য নিয়ে
চুপ হয়ে
তোমার চলে যাওয়া
সহজ যোগাযোগের মাঝে
দেয়াল তুলে দেওয়া
দেখেছি।
দূর থেকে কোথায় তাকাও
ঠিক বুঝতে পারি না;
ভুল করে ভেবে রাখি
তোমার বিন্দাস চোখ
মনে হয় আমাকেই খুঁজছে।
জড়িয়ে ধরে শক্ত করে চুমু খাওয়ার জন্য
পাগল হয়ে আছো তুমি—
হয়তো আমিও এমন রাক্ষস হয়ে যাচ্ছি
দিন দিন…
তামিল সিনেমার অযথা সংলাপের ভিড়ে
ডুবে যাচ্ছি চুপচাপ;
টুপটাপ গড়িয়ে যাচ্ছি সমুদ্রে—
তুমি চলে গেছো
দেয়াল তুলে রেখেছো চোখে;
আমি বিব্রত ভঙ্গিতে ভাষণ সাজাই
কাদামাখা অক্ষরে রঙিন সাহস
দেখা হলেই তোমাকে শোনাবো বিস্তর।
শোনাবো,
মঙ্গলগ্রহের তাজ্জব সবসংবাদ
নাসার নতুন আবিষ্কার
অথবা
আফ্রিকার জঙ্গলে ঋতু বদলের ফল প্রসঙ্গ!
তোমার চোখে তাকিয়ে বলা হয় না কিছুই
তুমি সব জানো
সীমিত ভূগোল ও আমার সংক্রামক পৃথিবী
আমার জানানোর কিছু বাকি নেই আর।
আমি ডুবে যাই স্রোতে
ঘুমের প্রস্তুতি পর্বে ভুলভাল বকতে থাকি
স্কেচ হওয়া জোছনায় তোমাকে আঁকি।
তোমার টোল পড়া গাল
ছুঁয়ে
ছুঁয়ে
হাইব্রিড অন্ধকারে বিশদ আলো খুঁজি…
তুমি চলে গেলে
না জেনেই সব মুছে দিলে….
আমার ব্যালকনিতে তোমার নামে একটা গাছ আছে
নাকহীন সে গাছে ফুটে থাকে
সহস্র জীবন।
প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে তোমার নামে
সে বৃক্ষের সিঁথিতে দৌড়াই
তার মগ্নতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে
গলে যাওয়ার প্রার্থনা করি।
অন্ধকার স্বর হারালে
তোমার জানালায় এক জোড়া চোখ পাঠাই
তোমার চোখ দেখে
পিছিয়ে যাওয়া রেনট্রি গাছ
নিঃসঙ্গ পাখি
. একটি পাখি
. অনেক পাখি !
তোমার মুখে দশমীর ব্যস্ততা
ভ্রূজুড়ে ঈদের সংগ্রাম
পায়ে পায়ে সদ্য শুয়ে যাওয়া ঘড়ি—
আমি ভিজে যাচ্ছি বরষায়
অসংখ্য বর্ষাতি তোমার শরীরে
ডাকছে;
বন্ধ দরজায় আমার খুলে লেখা হাত
খুঁজে চলছে তোমার কলিংবেল!
তুমি নাই
মিশে গেছো ভ্রমে
কোলাহলে—
রঙিন মহব্বাতের ঘোলাটে বিন্যাসে।
গলে গেছো—সাব্বাস বলে পিঠ চাপড়ে দেয়া হাতের ভরসায়
নিত্য চোখে চোখ রেখে মিথ্যা বলা
প্রতারক কাঁথায়।
আমি দেখছি—
পোষাকি টানের অন্তরালে
তোমার
পিছু
পিছু
ছুটে চলা
অসংখ্য কামুক চোখ।
ভদ্রতার চশমায় পিছলে যাওয়া
হায়নার রক্তাক্ত হাত!
স্লোগানের আড়ালে তোমার নগ্ন প্লেকার্ড
পিচঢালা মখমলে তোমার পিষে ফেলা সম্ভ্রম!
লক্ষ মুষ্টিবদ্ধ হাতের ভিড়ে
আমি তোমার গলার ক্ষতটা খুঁজছি
স্বপ্নে অথবা বইয়ের পৃষ্ঠায় তোমার সহজ মুখটা খুঁজছি
ঊরু বেয়ে নেমে আসা জটিল আলিঙ্গনে
তোমার সজ্ঞান স্বদেশ খুঁজছি।
দূরে…
তুমি চলে গেছ—
অন্যান্য রহস্য পুস্তকেও তোমার ঠিকানা নেই আর,
আমি মুছে ফেলেছি নিজের দাগ
চুম্বনের অস্থির বাদ্য
উৎসব মুখর মিলনের দুর্বিষহ স্মৃতি—
তোমার পিছনে ফেরার পথ নেই কোনো
ঢেউ জাগছে কর্ষণে
ধ্বংসযজ্ঞে সয়ে গেছে তোমার ঠোঁট!
আমিও মুছে ফেলছি আমাকে—
তুমিও মুছে ফেলো সব।