বিস্তর আবেদন-নিবেদনের পর, অনেক টালবাহানায় জীবনানন্দের বাড়ির মাত্র সাত শতাংশ জায়গার ওপর একটি দোতলা ভবন হয়েছে—’জীবনানন্দ অঙ্গন’। ভবনটিতে একটি অডিটরিয়াম ও একটি লাইব্রেরির ব্যবস্থাই কেবল রাখা হয়েছে । জীবনানন্দকে স্মরণের এই দায়সারা কাজটি কবিভক্ত কোনো অনুরাগীকেই তৃপ্ত করতে পারছে না। কারণ, লাইব্রেরিটি মোটেই গবেষণালব্ধ বই সমৃদ্ধ নয়। এতে কবির উল্লেখযোগ্য বইয়ের সংগ্রহটিও তেমন প্রতুল নয় ।তেমনি অডিটরিয়ামটিতেও জীবনানন্দবিষয়ক সভা-সেমিনার খুব একটা হয় না। তবে এটির তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত আছেন, এমন মৌলবাদী কোনও আমলার কারসাজিতে এখানে জামায়াতের ফুলকুঁড়ি শিশু সংগঠনের ব্যানারে জঙ্গিদের গোপন সমন্বয় ঘটছে। সংবাদপত্রে এ নিয়ে লেখালেখিও হয়েছে।
লাইব্রেরিটিতেও সাপ্তাহিক-পাক্ষিক সাহিত্য আড্ডার নামে মৌলবাদীদের আসর বসে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এই আড্ডাটির বীজ রোপিত হলেও এতে মৌলবাদে দীক্ষিতদের অধিক উপস্থিতি টের পেয়ে বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিতাড়িত করে। আর বিতাড়িতরাই কৌশলে জীবনানন্দ অঙ্গনের লাইব্রেরিটি নিয়মিত ব্যবহার করে কলঙ্কিত করছে। আবার এই আঙ্গনে জাতীয় কবিতা পরিষদের যেকোনো অনুষ্ঠানেও বিদ্বেষীদের হামেশাই উপস্থিতি ঘটছে কতিপয় মঞ্চকবির একনায়কত্বে।
তাই, আমার মনে হয়, বরিশালের সচেতন সমাজ ও কবিভক্ত সব লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিকরা কবি জীবনানন্দ দাশের এই পুণ্যস্থানের পবিত্র রক্ষা করতে উদ্যোগী হবেন।
আমি জানি, জীবনানন্দ-ভক্ত প্রত্যেকের হৃদয়ে কবিকে ভালোবাসার বিশাল এক দীর্ঘ জলাধার আছে। আর সেটি বরিশালবাসীর হৃদয়ের ভালোবাসায় আরও অনেক বেশি তীব্র এবং বিবির পুকুরের জলের মতোই স্বচ্ছ।
জীবনানন্দ অঙ্গনের ওই স্বল্প পরিসরে আমরা যেন রূপসীবাংলা’র প্রকৃত জীবনানন্দকে খুঁজে পাচ্ছি না। তাই, যদ্দুর জানি, কবির পৈত্রিক ৫/৬ বিঘা বাড়িটির এখনো অনেকাংশ জায়গা সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দখলে এবং কিছু অংশ সিটি করপোরেশনের পাম্প-হাউজের অধিকারে আছে ।
অতএব, চাইলেই আমরা আন্তত এই জায়গায় একটি পুকুর কেটে, এর চারপাশে বিশাল একটি বাগান করে দেওয়া সম্ভব। যেখানে চালতার, হিজলের, অশ্বত্থের সারি-সারি ছায়ায়—দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে। সেই জলাশয়ের পাড়জুড়ে অনেক শর-কাশ-হোগলার বন-কাঁটা বেতের ঝোপ থাকবে, আর সন্ধ্যায় দাঁড়ালে এই পুকুরের জলে খইরঙা হাঁসটির সাঁতার দেখে ভরে উঠবে হাজারও জীবনানন্দপ্রেমিকের অন্তর। আমরা আন্তত এমন একটি পরিবেশ পরিবেষ্টিত জীবনানন্দ অঙ্গন দেখতে চাই ।
চাই, কবির কাজ সমৃদ্ধ-সফল গবেষণাগার । এখানে এমন একটি স্থাপত্য হোক, যেখানে রেস্টহাউজ থাকবে। যার সামনে কবির একটি মর্মরভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে । লাইব্রেরির সমস্ত দেয়ালজুড়ে থাকবে কবির নানা বিচরণক্ষেত্রের ফটোগ্রাফ।
হয়তো, তুচ্ছ এক কবিভক্ত হিসেবে আমাদের আবদারের পরিমাণ একটু অতিরিক্ত হয়ে গেল । তবু, বর্তমান সরকারের সংস্কৃতিবান্ধব মনোভাবই পারবে, জীবনানন্দ দাশের স্মৃতিকে রক্ষা করতে। এক্ষেত্রে কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতাই যথেষ্ট। এ জন্য জীবনানন্দ-ভক্তদের মাঝে যুগ-যুগ এই সরকারের সুনাম স্মারক হয়ে থাকবে অনন্তকাল । কবিই তো বলেছেন, মানুষের মৃত্যু হলেও মানব থেকে যায়। আর জীবনানন্দের কবিতা, বাংলা আধুনিক কবিতার রাজ্যে আরও হাজার হাজার বছর রাজত্ব করবে এবং কবি অমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন আরও বহুকাল।
পুনশ্চ: বিষয়টিতে আপনি একমত থাকলে, এর ব্যাপকতার জন্য আপনার বন্ধুদেরও জানান।
মন্তব্য