আজ ১২ ডিসেম্বর, আজ বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশের ফেব্রুয়ারি’গানটির স্রষ্টা আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্মদিন। ১৯৩৪ সালের আজকেই এই দিনে তিনি বরিশালের জলবেষ্টিত গ্রাম উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় স্থানীয় মাদ্রাসায়। উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসায় ক্লাস সিক্স পর্যন্ত লেখাপড়া করে তিনি হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে এই হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে অনার্স পাস করেন। ১৯৪৬ সালে তাঁর বাবার মৃত্যুর পর তাঁকে চলে আসতে হয় বরিশাল শহরে। ভর্তি হন আসমত আলী খান ইনস্টিটিউটে।
১৯৪৭ সালে তিনি কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত ‘কংগ্রেস হিতৈষী’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। বরিশাল শহরে তিনি কিছুদিন একটি মার্কসবাদী দল আরএসপি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে ‘সওগাত’ পত্রিকায়।
১৯৪৭ সাল থেকে স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করেন। এরপর ১৯৫০ সালেই তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশিত হলে তিনি অনুবাদকের কাজ নেন। ১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন গাফফার চৌধুরী। ১৯৫৬ সালে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে দৈনিক ‘জেহাদ’-এ বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’র সম্পাদক হন। পরের বছর ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামেন এবং ”অনুপম মুদ্রণ’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপাত্র ‘সাপ্তাহিক ‘জয়বাংলা’য় লেখালেখি করেন। এসময় তিনি কলকাতায় ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ ও ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘দৈনিক জনপদ’ বের করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান। এরপর ১৯৭৬ সালে তিনি ‘বাংলার ডাক’ নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সাতজন অংশীদার নিয়ে ‘নতুন দিন’ পত্রিকা বের করেন। এরপর ১৯৯০ সালে ‘নতুন দেশ’ এবং ১৯৯১ সালে ‘পূর্বদেশ’বের করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ নাটক ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’। উল্লেখযোগ্য কথাসাহিত্যের বই চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান (১৯৬০), নাম না জানা ভোর (১৯৬২), নীল যমুনা (১৯৬৪), শেষ রজনীর চাঁদ (১৯৬৭)।
সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৬৭ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। এছাড়া একুশে পদক, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, স্বাধীনতা পদকসহ প্রচুর পুরস্কার-পদক লাভ করেন।
মন্তব্য