সঙ্গীতের জন্য ‘অনন্যা শীর্ষদশ-২০১৫’ সম্মাননা পাচ্ছেন অণিমা মুক্তি গমেজ। ১৯৯৩ সাল থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশসেরা দশজন সফল নারীকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। এর আগে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে ১৬ জন নারীকে নির্বাচন করা হয়েছে। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সম্মাননা প্রদান করা হবে।
পল্লিগীতির অঙ্গনে অপরিহার্য এক নাম অণিমা মুক্তি গমেজ। সাধিত চর্চায় কণ্ঠের এমনই মহিমা যে, ঢাকায় জন্ম সত্ত্বেও রংপুরের ভাওয়াইয়া, সিলেটের ধামাইল, ময়মনসিংহ-ঢাকা-ফরিদপুরের ভাটিয়ালী, চট্টগ্রামের মাইজভাণ্ডারি, যশোরের বিচ্ছেদী এবং কুষ্টিয়ার বাউল গানের সাবলীল পরিবেশনায় তিনি দক্ষ।
ঢাকা-নবাবগঞ্জের হাসনাবাদে সেন্ট ইউফ্রেজিস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষিকা-শিল্পী মায়া গাঙ্গুলির কাছে তিনি সংগীতের তালিম নেন। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও বাংলাদেশ লোকসঙ্গীত পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর সংস্পর্শে এসে পল্লিগীতির শিক্ষা নেন। দীক্ষা পান শিল্পী নীনা হামিদের কাছেও। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, শিক্ষা ও সঙ্গীত, তিন বিষয়ে স্নাতকোত্তর অণিমার সঙ্গীত-ই সার্বক্ষণিক সাধনা। তাঁর স্বামী রঞ্জিতচন্দ্র দাস ক্রীড়াবিদ। মা আইরিন গমেজ এবং মামা অ্যালবার্ট পরিমল গমেজ সঙ্গীতশিল্পী।
বেতার-টেলিভিশন-মঞ্চের সুধাকণ্ঠী অণিমা লালন, হাসন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, আলেপচান দেওয়ান, রাধারমণ, জালালউদ্দিন, আবদুল লতিফ, আরকুম শাহ, দুরবিন শাহ, সৈয়দ শাহনূর, রমেশ শীল, জসীমউদ্দীন, আবদুল করিম, রজ্জব আলী দেওয়ান, মোহাম্মদ ওসমান খান, কালু শাহ, ভবা পাগলা, বিজয় সরকার, কানাইলাল শীল, পাগলা কানাই, আবদুল হালিম বয়াতী, শাহ আবদুল করিম, আবিদ আনোয়ার, আরিফ দেওয়ান, হাসান মতিউর রহমান, তপন বাগচী প্রমুখের গান পরিবেশন করেন। আবুবকর সিদ্দিকের সঙ্গে ‘ইছামতীর তীরে’ এবং ‘এত রাতে কেন ডাক দিলি’ এবং এককভাবে ‘অপার হয়ে বসে আছি’ নামে অ্যালবাম জনপ্রিয় হয় (২০০১)। অন্য অ্যালবাম ‘সাগর কূলের নাইয়া’ (২০০২), ‘মনের মানুষ’ (২০০২), ‘বন্ধু দয়াময়’ (২০১২) এবং ‘উজান দেশের মাঝি’ (২০১৪)।
শিল্পকলা একাডেমি-র ‘রূপবান’ নৃত্যনাট্যে (১৯৯৬) ‘সাগর কূলের নাইয়া’ গানটির মাধ্যমে তিনি জাতীয় পর্যায়ে নন্দিত ও স্বীকৃত হন। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল, ফিলিপাইন, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, উজবেকিস্তান, ইতালি, মিশর, ভুটান ও সৌদি আরবে তিনি পল্লিগীতি গেয়ে সুনাম অর্জন করেন। সংগীতের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, আসামের বরাক উপত্যকা লোকমঞ্চ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে। বড় মাপের এই দরদি শিল্পী সঙ্গীতমহলে নিরহঙ্কার, বিনয়ী ও সদাচারী হিসেবে আদৃত। বেতারে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার পাশাপাশি কবিতা, ছড়া ও প্রবন্ধ লেখেন। বর্তমানে তিনি ‘সুরস্র্রষ্টা সমর দাস’ নিয়ে গবেষণা করছেন। সংগীতচর্চায় ২৫ বছরের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী পদক (২০১৬), আসাম শিলচর লোকসংগীত উৎসব সম্মাননা, ভারত (২০১৫), বাংলাদেশ বিনোদন সাংবাদিক সংস্থা পদক (২০১৩), ঢাকা কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটি পদক (২০০৯), ত্রিপুরা ফোকলোর একাডেমি প্রদত্ত ‘লোকসঙ্গীত অনন্যা’ পদক, ভারত (২০০৯), বাংলাদেশ মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড (২০০৮), ঢাকা বিভাগীয় লোকসঙ্গীত চ্যাম্পিয়ান পদক (১৯৯১), আন্তঃমহাবিদ্যালয় সঙ্গীত চ্যাম্পিয়ন পদক (১৯৯০) প্রভৃতি।
উল্লেখ্য এর আগে এই পুরস্কার পেয়েছেন দিলরুবা খান (পল্লিগীতি, ১৯৯৩), রুনা লায়লা (আধুনিক গান, ১৯৯৪), কাঙ্গালিনী সুফিয়া (পল্লিগীতি, ১৯৯৫), রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা (আধুনিক গান, ১৯৯৬), সামিনা চৌধুরী (আধুনিক গান, ১৯৯৭), লীনা তাপসী খান (নজরুলগীতি, ১৯৯৮), ফেরদৌস আরা (নজরুলগীতি, ১৯৯৯), মমতাজ বেগম (পল্লিগীতি, ২০০০), মেহরীন ভূঁইয়া মাহমুদ (পপসঙ্গীত, ২০০২), শিমুল ইউসুফ (নাটক ও সঙ্গীত, ২০০৩), অদিতি মহসিন (রবীন্দ্রসঙ্গীত, ২০০৪), আনুশেহ্ আনাদিল (ব্যান্ডসঙ্গীত, ২০০৫), ফরিদা পারভীন (লালনগীতি, ২০০৮), ড. নুসরাত মমতাজ রূপসী (২০০৮, যন্ত্রসঙ্গীত), রীনাত ফওজিয়া (২০০৯, যন্ত্রসঙ্গীত) এবং চন্দনা মজুমদার (পল্লিগীতি, ২০১২)।
মন্তব্য