মানতে দ্বিধা নেই—বাংলাদেশে সাহিত্যচর্চায় জাতীয় দৈনিকের সাহিত্যপাতার প্রভাব প্রান্তবিস্তারী। প্রায় প্রতিটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিক পত্রিকার সঙ্গেই প্রতি সপ্তাহে একটি সাহিত্য সাময়িকী বের হয় । এই সাহিত্য সাময়িকীগুলো ঘাঁটলে এটুকু অনুমান করা যায়—বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের চলমান ধারা। দৈনিকের সাহিত্যপাতাগুলোর প্রতি লেখক-পাঠকের আগ্রহ সাহিত্যমাসিক, পাক্ষিক বা সাপ্তাহিকের চেয়ে বেশি। কিন্তু কী লেখা হচ্ছে দৈনিকের এই সাহিত্যপাতাগুলোয়? কারা লিখছেন? কেমন লিখছেন—এমন পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা নিয়ে প্রতি সপ্তাহে হাজির হচ্ছে ‘দৈনিকের একমাস’।
৪ সেপ্টেম্বর। মাসের প্রথম শুক্রবার। এই সপ্তাহে প্রকাশিত জনপ্রিয় ছয়টি দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীকে নির্বাচন করা হয়েছে। এগুলো হলো— সাহিত্য সাময়িকী (প্রথম আলো), কালের খেয়া (দৈনিক সমকাল), সাহিত্য সাময়িকী (যায়যায়দিন), সাহিত্য সাময়িকী (দৈনিক জনকণ্ঠ), যুগান্তর সাহিত্য, সাহিত্য সাময়িকী (দৈনিক ইত্তেফাক)।
এক কবি আরেক কবিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকীতে। এই আলোচ্য কবি আর কেউ নন, ‘শুদ্ধতম কবি’র প্রণেতা প্রয়াত আবদুল মান্নান সৈয়দ। ৫ সেপ্টেম্বর ছিল তার মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে তিনিও চলে যান শুদ্ধতম কবির কাছে, না ফেরার দেশে। বেলাল চৌধুরীর ‘মান্নানের জন্য কুড়িয়ে-বাড়িয়ে’ স্মৃতিচারণমূলক লেখায় উঠে এসেছে মান্নান সৈয়দের লেখক জীবনের শুরুর কথা, বেলাল-মান্নানের বন্ধুত্বের কথা, সমসাময়িক লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হুমায়ুন কবির, শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরীর মতো প্রভাবশালী লেখকদের কথাও।
‘গোর’ নামে গল্প লিখেছেন সাদিয়া মাহজাবিন ইমাম। জাহিদ রেজা নূর ‘নানান বরণ ঈদ’ নামে আলোচনা করেছেন মঈনুস সুলতানের ভ্রমণবিষয়ক বই ‘ঈদের সোনালী ঈগল’ নিয়ে। আসলে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণকালে ঈদকে নিয়ে বিভিন্ন দেশের যে কালচার দেখেছেন, তাই-ই মূলত তুলে ধরেছেন। আরেকটি বই আলোচনা লিখেছেন রাসেল মাহমুদ। বইটি মাহফুজুর রহমানের লেখা ‘বদি মিয়ার রাজাকারের ডাইরি’।
সেলিনা হোসেন লিখেছেন ’বঙ্গ সম্মেলন ও বাংলা সাহিত্য’। সেলিনা হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টন শহরে ৩৫ তম উত্তর অ্যামেরিকা বঙ্গ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। আলোচ্য লেখায় সেই সম্মেলনে যোগদানের কথাই তুলে ধরেছেন। দূর নাসার হিউস্টন শহরেও যে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তি স্থাপিত, তা দেখে লেখক বিস্মিত হয়েছেন। এই বিস্ময়ের কথাই মূলত তুলে ধরেছেন।
কবিতা লিখেছেন আবিদ আনোয়ার, হেনরী স্বপন, মাহবুব কবির ও তানিম কবির । হেনরী স্বপনের কবিতা ‘সংহার ভুলে যাওয়া’। অসাধারণ একটি কবিতা। কয়েকটি পংক্তি তুলে ধরা হলো—
দাহ্য ছিলাম শিয়রে সেই পোড়া কাঠ।
আগুনের স্মৃতি ঠুকেছি কেবল; যদি
কখনো ফায়ার স্টেশনে সাইরেন
বেজে ওঠে। যদি কখনো আগুন নেভাতে
বৃষ্টির ফোঁটা নেমে আসে উদোম
প্রান্তরে।
মহাবিশ্বের প্রতিটি নক্ষত্রের (যেমন সূর্য) মুখে অত্যুজ্জ্বল মায়াজাল-বিস্তারি হাসিই বলে দেয়, অক্সিজেন ঘেরা মাটিলগ্ন মানুষের মুখে হাসির ফোয়ারা কতখানি গুরুত্ববহ। আসলে মানুষের আজন্মের লক্ষ্যই হলো— পিউর হাসির উৎসভূমে পৌঁছানো। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘Humour’—বাংলায় হাস্যরস। পৃথিবীতে বোধ হয় মানুষই একমাত্র প্রাণী, যাদের রয়েছে দীপ্ত চূর্ণিকা ছড়ানো সতেজ সবুজ হাস্যরস বোধ। এ সপ্তাহের ‘কালের খেয়া’র ৪৬২তম সংখ্যার প্রচ্ছদ ও অন্তানুষঙ্গ নির্মিত হয়েছে এই হিউমারের ওপর। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়—দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীগুলোর মধ্যে ‘কালের খেয়া’ অন্যতম। বরাবরই এর বিষয়ভিত্তিক নির্বাচিত লেখা পাঠককে মুগ্ধ করে আসছে। স্মৃতিচারণ মূলক লেখা, গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা প্রভৃতির বিষয়বস্তু যদি একই হয়, তাহলে পাঠক বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের অতলান্তে ডুবে সহজেই ওই বিষয়ে পরিপূর্ণ স্বাদ আস্বাদন করতে পারে।
‘কালের খেয়া’র আলোচ্য সংখ্যার প্রচ্ছদ শিরোনাম ‘সরস কথকতা’। এ সংখ্যায় আতাউর রহমান লিখেছেন, ‘হাস্যরসজীবনের অমৃত-সুধা’, আনিসুল হক ‘কৌতুকবোধ আর প্রতিভা সমার্থক’। দু’জন লেখকই অভিজ্ঞানপূর্ণ। প্রচ্ছদ রচনা দুটিতে ফুটে উঠেছে বাঙালির রসবোধ এবং হাস্যরসাত্মক কার্যকলাপ। আতাউর রহমান তাঁর লেখার শুরুতেই আত্মস্মৃতিচারণের মাধ্যমে হিউমারের উদাহরণ টেনেছেন। কোনও বিষয় ভাষান্তরের মাধ্যমেও যে চমৎকার সব হাস্যরসাত্মক শব্দ, বাক্য বা ধ্বনি উৎপন্ন করা যায়, তারও দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন শেক্সপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’ নাট্যাংশের অনুবাদের উদাহরণ টেনে। তার লেখায় অসকার ওয়াইল্ড, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র প্রমুখের হাস্যরসবোধও উঠে এসেছে।
‘কৌতুকবোধ আর প্রতিভা সমার্থক’ শীর্ষক ” শিরোনামের রচনায় আনিসুল হক স্পষ্টভাবেই বলে দিলেন, ‘বেশিরভাগ প্রতিভাবান মানুষই রসিক মানুষ। …তাদের সৃষ্টির পরতে পরতে পাই হাস্যরসের হীরকদ্যুতি।’ তার লেখায় তুলে এনেছেন প্রতিভাবান ক’জন দিকপাল সাহিত্যিকের হাস্যরস বোধের উদাহরণ। তিনি প্যারিচাঁদ-বঙ্কিমচন্দ্র-শরৎচন্দ-রবীন্দ্রনাথ-আক্তারুজ্জামান ইলিয়াসের বইয়ের হাস্যরস বোধাত্মক উদ্ধৃতি দিয়েছেন, এমনকি নির্মলেন্দু গুণ ও আনিসুজ্জামানের সঙ্গে ঘটা হাস্যরসাত্মক স্মৃতিও উল্লেখ করছেন। নির্মলেন্দু গুণ একদিন আনিসুল হককে বললেন, ‘এই আনিস, আমাকে লেখা দিও, আমরা তো ভালো লেখাও ছাপি।’ এছাড়া উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি বইয়ের সামান্য অংশও লেখাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর যদি রয়েছে, প্যারিচাঁদ মিত্রের ‘আলালের ঘরে দুলাল’, বঙ্কিমের ‘কমলা কান্তের দপ্তর’, শতৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’, রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্প ইত্যাদি।
‘অ-সুখের মৌসুম’—নিম্ন জলাভূমিলগ্ন ও শেকড় থেকে শিখরে অর্থাৎ শহরে ওঠে আসা মানুষের জীবন ও পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে লেখা এগল্প। লেখক অভীক সোবহান। গল্পটি শুরু হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র মবিন ও তার স্ত্রী সুলতানার ব্যস্ততাপূর্ণ-বিরক্তিকর জীবনের একটা জায়গা থেকে। লেখক গল্পের শুরুতেই মবিনের অসারতাকে, তার ক্লান্ত মানসিকতাকে ফোটানোর জন্যে লেখেন, ‘এই স্পাইডার অয়েবের যে কোন প্রান্তের সুতোয় কম্পন খেলে গেলেই পোকাটি কোথায় কী ঘটছে তা সে বুঝে নেয়।’ কিন্তু…ক্লান্তিকর অলস মবিন নিঃস্পৃহই থেকে যায়। সে মাঝে মাঝেই গ্রাম্য-স্মৃতিকাতরতায় ভোগে। পরাণ মন্ডল, শাকুর গ্রামের প্রান্তিকজন। ওদের মাধ্যমে লেখক চমৎকারভাবে আঞ্চলিক ভাষা তুলে ধরেছেন, ‘বর্ষাকাল তো শেষ। তা ছ্যার কলি কতে পারেন । তয় পানি টান দিলে এনে যত কষ্ট, তামাম চিংড়ির ঘেরমে ঘুরেফিরি যাকায়াত করা লাগবিনে। তার সাথে জ্বরজারি, ম্যালেরিয়া আর খানাখাদ্যেও কষ্ট।’
জনপ্রিয় কথাশিল্পী ইমদাদুল হকের জন্মদিন উপলক্ষে ‘কালের খেয়া’য় লিখেছেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তাঁর লেখার শিরোনাম, ‘নূরজাহান সময়কে ছাড়িয়ে যায় যে গল্প’। লেখাটিতে মনজুরুল ইসলাম তুলে ধরেছেন ‘নূরজাহান’-এর চরিত্র চিত্রায়ণ, ভাষাশৈলী ও ক্ল্যাসিকধর্মী বৈশিষ্ট্যকে। এ সংখ্যায় আরও স্থান পেয়েছে সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আমার ভান্ডার আছে ভরে’। এতে লেখক একটি দেশের ভাষা শক্তি যে তার শব্দপ্রাচুর্যের ওপর নির্ভর করে, তা ইংরেজি-ফরাসি ভাষার উদাহরণ নানা দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করেছেন। ইংরেজি ভাষার শব্দ-ভান্ডার যে এত প্রাচুর্যপূর্ণ, তা শুধু ইংরেজদের শত্রু-মিত্রু সব দেশের কাছ থেকে বেহায়ার মতো শব্দ কুঁড়িয়ে আনাই প্রধান কারণ। বাংলা ভাষার শব্দ-ভান্ডার যে নতুন নতুন শব্দপ্রাচুর্যে পরিপূর্ণ করা যায়, সে কথাই লেখক সুচারুভাবে বুঝিয়েছেন। কালের খেয়ায় প্রাচীনগন্ধী একটি শব্দ ‘পদাবলি’ নামে একটি বিভাগ আছে। যা পরিপূর্ণ থাকে নবীন-প্রবীণের রচনায়। এ সংখ্যায় কবিতা লিখেছেন: বেলাল চৌধুরী ‘ঋতুর প্রহারেও ঋজু উন্নত শির’, তুষার কবির ‘ভগ্ন’, টোকন ঠাকুর ‘পাতাবাহার’। কার না ভালো লাগবে যখন টোকন ঠাকুর বলবেন, ‘কবিতা লেখামাত্রই আমি সেই কবিতার মা/ কয়েকদিন পর, নতুন আরেকটি কবিতা লেখামাত্রই / আমি সেই আগের কবিতার খালা।’ সংখ্যাটিতে ধ্রুব এষের গল্পকাব্য ‘কমরেড কার এপিটাফ দেখতে ফিরবেন’ও স্থান পেয়েছে। এছাড়া প্রদর্শনী সংক্রান্ত ‘মাধ্যমের অভিক্রিয়া’ নামে দীপ্তি দত্তের একটি লেখাও প্রকাশিত হয়েছে।
শেষ পাতায় যে আছে মাহবুব আজিজের আত্মজৈবনিক লেখা জর্নাল ‘ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি’। এক আলাদা ভাষাশৈলীর মাধ্যমে মাহবুব আজিজের জর্নাল নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে আলাদা-আলাদা উপশিরোনামে। এই জর্নালের নাম ‘আশ্চর্য সুন্দর বেঁচে থাকা’। মাহবুব আজিজ বিচিত্র সব স্মৃতিকথা তুলে ধেরেছেন, যা পাঠককে নানা অভিজ্ঞতায় প্লাবিত করবে।
দৈনিক ইত্তেফাক একটি প্রাচীন পত্রিকা। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওতোপ্রোতভাবে । ১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে যাত্রারম্ভ করে নানা চড়াইউৎরা পেরিয়ে এখনো বটবৃক্ষের মতো টিকে আছে কাগজটি। পত্রিকাটির সাহিত্য পাতার নাম ‘সাহিত্য সাময়িকী’। এ সংখ্যায় আবদুন নুরের লেখা ‘সমাদৃত নাট্যকার’ । ‘লেখকের সাম্প্রতিক’ বিভাগে স্থান পেয়েছে কবি ও অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিনের সাম্প্রতিক লেখালেখির খবর। ‘পথিক পরান’ বিভাগে ছাপা হয়েছে কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘মধুপল্লীর সাগরদাঁড়িতে এক দুপুর’। কবিতা লিখেছেন চৌধুরী ফেরদৌস ‘স্টোন গার্ল’, মিলটন রহমান ‘অন্ধকার’, শারদুল সজল ‘ভৌগোলিক থিয়েটার’, আনোয়ার কবির ‘মানব জনম’ ও অমর্ত্য আতিক ‘কুটুমপাখি’। এছাড়া রয়েছে জনপ্রিয় কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলনের একটি সাক্ষাৎকার। পাতার নিম্নভাঁজে রয়েছে ফজল হাসানের অনুবাদে ক্লারিস লিসপেক্তরের গল্প ‘প্রথম চুম্বন’। ইমদাদুল হক মিলনের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর সাহিত্যচর্চা সম্পর্কিত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিল্টন বিশ্বাস। সাক্ষাৎকারটিতে উঠে এসেছে মিলনের লেখক-সূচনার অনুপ্রাণকদের কথা, প্রথম গল্প লেখার গল্প, প্রথম গল্পগ্রন্থের প্রকাশ-স্মৃতি, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ধারা সম্পর্কে।
বাংলা নাট্যসাহিত্য সমৃদ্ধ ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মূলত পাঁচ নাট্যকারের অবদানে। মুণীর চৌধুরী, আসকার ইবনে শাইখ, নূরুল মোমেন, সেলিম আল দীন—এই দীপ্তিমান পাঁচ নাট্যকারকে নিয়েই আবদুন্ নূরের ’সমাদৃত নাট্যকার’।
বিশিষ্ট হাস্যরসাত্মক লেখক আবুল মনসুর আহমদকে নিয়ে ইমরান মাহফুজের লেখা ‘আবুল মনসুর আহমদ দুর্লভ কথক’কে হাইলাইট করে যায়যায়দিনের সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যে, সাংবাদিকতায় , রাজনীতিতে আবুল মনসুর আহমদের নানা অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে এতে। বাংলার কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মনসুর আহমদের রম্যলেখা ‘আয়না’, ‘হুজুর কেবলা’, ‘নায়েবে নবী’ থেকে উদ্ধৃতিসহযোগে ব্যাখ্যা করেছেন লেখক।
এ সংখ্যার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা মনিরুজ্জামানের ‘হুমায়ুন আজাদ বাংলা সাহিত্য এবং একটি ভিন্নতর সমীক্ষা’। লেখায় সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হয়েছে জন্ম, জন্মস্থান, জীবনদর্শন, ব্যক্তিত্ব ও তার লেখা সম্পর্কিত ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। যায়যায়দিনের সাময়িকীটিতে নয়জন কবির কবিতা স্থান পেয়েছে। তারা হলেন, মাকিদ হায়দার ‘প্রিয় রোকোনালী’, কুমার দীপ ‘গুপ্তপ্রণয়’, মনসুর আজিজ ‘মেঘের আকাশে’, আইউব সৈয়দ ‘যতিহীন উপসংহার’, আলমগীর রেজা চৌধুরী ‘নামাঙ্কিত অঙ্গুরী’, সোহরাব পাশা –‘ভ্রমণের চারুপাঠ’, তমিজ উদ্দিন লোদী ‘তাড়া আছে, চলি’, বদরুল হায়দার ‘শরতের ঘুম’ ও রাগিব রেকিশি ‘তবুও শতায়ু হয়’। গদ্যছন্দাশ্রিত কবিতাগুলো পাঠকালে পাঠক বিচিত্র স্বাদের তৃপ্তি এছাড়া সাময়িকীটিতে স্থান পেয়েছে মোবারক হোসেন খানের অনুবাদে জোয়ান ভেটসেকের বিখ্যাত গল্প ‘শহরের বিতর্কিত উত্তম পুরুষ’।
জনকণ্ঠের সাহিত্য সাময়িকীটি চোখে পড়ার মতো, হৃদয়ে দাগ কাটার মতো। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, বই আলোচনায় ঋদ্ধ সাময়িকীটি। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে লিখেছেন অঞ্জন আচার্য। তাঁর লেখার শিরোনাম ‘মুক্তবুদ্ধি চর্চার পথিকৃৎ’ । লেখাটিতে উঠে এসেছে মোতাহার হোসেনের শিক্ষা-কর্ম-সাহিত্য জীবন, মুক্তবুদ্ধির আন্দোলন, রবীন্দ্রসঙ্গীতে অনুরাগ ও পুরস্কার সম্মাননাসহ সংক্ষিপ্ত জীবন।
ইতিহাসবিদ অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় সম্পর্কে জাফর ওয়াজেদ লিখেছেন, ‘স্বরুপ অন্বেষায় অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়’। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বকবি। তাকে আমরা চিনি কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার হিসেবে। কিন্তু তার আরেকটি পরিচয়ে আছে, তা হলো পরিচালক। এ পরিচয় স্পষ্ট করে জোবায়ের আলী জুয়েল লিখেছেন, ‘চলচ্চিত্র পরিচালক রবীন্দ্রনাথ’। সাময়িকীটিতে দীপক চৌধুরীর লেখা গল্প ‘কুসুম কুমারীর ছাত্রী’ প্রকাশ পেয়েছে। গল্পটির প্রধান চরিত্র বীরাবতী । বীরাবতী স্কুলে যায়, তাকে ইভটিজাররা ইভটিজিং করে, সন্ত্রাসীরা হুমকি দেয়ে। এভাবেই গল্পটির শুরু। শেষ হয় ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে।
এছাড়া মোফাজ্জল হোসেনের ‘কবি কঙ্কাবতী ও মৈমনসংহ গীতিকা’য় পাঠক ঐতিহ্যাক্রান্ত হয়ে ভাসান দেয় সুদূর অতীতে।
কবিতা বিভাগে রয়েছেন মাকিদ হায়দার, কামাল মাহমুদ, বদরুল হায়দার, আহমদ সাইফ ও রহমান ওয়াহিদ। প্রতিটি কবিতাই ভিন্নতর মাধুর্য ছড়ায়, বিচিত্র কল্পচিত্র পাঠককে প্রখর কল্পনায় প্লাবিত করে।
ইমদাদুল হক মিলনের ষাটতম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যুগান্তর সাহিত্য প্রকাশ করেছে মিল্টন বিশ্বাসের নেওয়া সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারটিতে উঠে এসেছে তার শৈশব কৈশোর, স্কুল জীবনের কথা। সাময়িকীটিতে প্রকাশিত হয়েছে খুশবন্ত সিং-এর গল্প—‘ ভারত একটি আজব দেশ’। অনুবাদ করেছেন আন্দালিব রাশদী। এছাড়া সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেছেন, ‘পুঁথি সাহিত্যে নারী ও নৈতিকতা’। মধ্যযুগের পুঁথি সাহিত্যে বাঙালি যে পরকীয়া প্রেমে পারদর্শী ছিল, তা উদ্ধৃতির মাধ্যমে লেখক বিশ্লেষণ করছেন। পরকীয়া প্রেম সংক্রান্ত তার দেওয়া উদ্ধতিটুকুই তুলে ধরছি—
স্বকীয়ার সঙ্গে নহে অতি প্রেম রস
পরকীয়ার সঙ্গে যোগ্য প্রেমের মানস।
যুগান্তর সাহিত্যে কবিতা লিখেছেন, খালেদ হোসাইন, হাইকেল হাসম ও শারদুল সজল। মানুষও যে পথের মতো বিবাগী সন্ন্যাসী, তা খালেদ হোসাইনের কবিতা ‘দুপুর নিয়ে’ তে প্রকাশিত। তাই তো কবি বলেন, ‘তুমি হয়তো পথে, আর পথ তো স্বেচ্ছাচারী। ‘