০১.
জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক হুমায়ূন কবীর ঢালীর সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে বলার আগে, তার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি, সাক্ষাৎ ও হৃদ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি; সে-সবের আলোছায়া কাব্যভাষ্য এখানে গাঁথতে চাই। এতে করে কিছুটা হলেও ব্যক্তি হুমায়ূন কবীর ঢালীকে চেনা যাবে, জানা যাবে। সেই জানাটা হয়তো জোনাকী আলোর মতো খুবই কম, চোখে পড়ে পড়ে-না। তবুও তো আলো, হোক একটু। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে শুধু নয় সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তার গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ রয়েছে। সাহিত্য সংগঠক হিসেবেও তার কৃতিত্ব রয়েছে। দেশ-বিদেশে সম্মানিত হয়েছেন, পুরস্কৃত হয়েছেন, লেখালেখির কারণে, সাহিত্যে অবদানস্বরূপ। সেই মানুষটিকে এই স্বল্প পরিসরে মূল্যায়নের প্রয়াস গ্রহণ বড় ধরনের দুঃসাহস। আমি সেদিকে একদমই যেতে চাই না, যাচ্ছিও না। বরং তাঁর প্রতি আমার আগ্রহের ব্যাপারটি, পরবর্তী সময়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠা, তার প্রতি আমার মুগ্ধতা ও শ্রদ্ধাবোধ তৈরি; সে-সব কথাই বলার চেষ্টা করি।
হুমায়ূন কবীর ঢালী। নামটা অনেক আগে থেকে জানতাম। বিশেষ করে ‘মহীয়সী সুফিয়া কামাল’ গ্রন্থের কারণে। এটি তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ। কবি সুফিয়া কামালকে নিয়ে ওরকম আকর কোনো গ্রন্থ আমার চোখে পড়েনি, এই বইটির আগে। কবি সুফিয়া কামালকে নিয়ে কোনো গ্রন্থ বের হয়েছে কি না, এটি জানা ও সংগ্রহ করা জরুরি হয়ে পড়ে, বিশেষ কারণে। তখন শুধু এ বইটির খোঁজ পাই এবং যথারীতি সংগ্রহ করি। হুমায়ূন কবীর ঢালী নামটিও আমার কাছে তখন গুরুত্বপূণ হয়ে ওঠে। যদিও আগে তাঁর সঙ্গে আমার কখনো দেখা বা পরিচয় ঘটেনি। যা কিছু ঘটলো ‘মহীয়সী সুফিয়া কামাল’ গ্রন্থটির মাধ্যমে। গ্রন্থটিও আমাকে মুগ্ধ করে।
বিখ্যাত অনেক কবি-সাহিত্যিক-শিক্ষাবিদের লেখা সংবলিত সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থ। এ গ্রন্থে সুফিয়া কামালের জীবন-রাজনীতি-সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে মোটামুটি একটা ভালো ধারণা লাভ করা যায়। আবদুল গাফফার চৌধুরী, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, আনিসুজ্জামান, ওয়াহিদুল হক, রাহাত খান, মহাদেব সাহা, সেলিনা হোসেন, শামসুজ্জামান খান সহ কীর্তিমান অনেক মনীষীদের লেখা রয়েছে এ গ্রন্থে। এ গ্রন্থের কারণেই তাঁর প্রতি আমারা বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁর সঙ্গে যখন প্রথম পরিচয় ও আলাপ হয়, তখন তাঁকে এ বিষয়টি আমি জানিয়েছি। তিনি খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু খুব বেশি কথা বাড়াননি। এও বলেছিলেন, ‘বইটি আর পাওয়া যায় না। শেষ হয়ে গেছে।’
সেদিনই আমি ছুটে গিয়েছিলাম তাঁর কাছে। তাঁর অকৃত্রিম আন্তরিকতায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।
ততদিনে বইটি আমার কাছেও আর ছিল না। বিভিন্ন সময় আমি বিভিন্ন পাঠাগারে নিজের সংগৃহীত বই থেকে বই উপহার দিয়ে থাকি। ‘মহীয়সী সুফিয়া কামাল’ গ্রন্থটিও কোন এক পাঠাগারকে অন্য আরও বইয়ের সঙ্গে দিয়ে দিয়েছি, যাতে অধিক সংখ্যক পাঠকের কাছে বইটি পৌঁছে। সে কথা ভুলে গেছি। ভাবছি, বইটি আমার সংগ্রহে ঠিকই আছে। আমার পড়ার ঘরে সব বইয়ের ভেতর তন্ন তন্ন করে খুঁজি বইটি। হতাশ। নেই। কোথাও নেই। মনটা খারাপ হয়ে যায়। কিনতেও পাওয়া যায় না। মাথার ভেতর ঘুরছে ৩০ অক্টোবর, ঢালী ভাইয়ের জন্মদিন। এই বইটি কাছে থাকলে ভালো লাগতো। তাঁকে চিনেছি এই বইটির মাধ্যমে। কিন্তু কি আর করা!
হতাশ মনে সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হয়েছি। ভাবছি, হাঁটতে হাঁটতে ‘দি সান স্কুলে’র অধ্যক্ষ স্নেহভাজন আলমগীর হেলালের অফিসে গিয়ে আড্ডা দেবো, মন ভালো করার জন্য। এ সময় হুট করে ফোন করলেন উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। তিনি এলেন। তাঁর সঙ্গে আড্ডা শেষে মনে হলো, থাক, আজ আর আলমগীর হেলালের সঙ্গে আড্ডা দিতে না যাই। রাতও হয়েছে বেশ। কী ভেবে তাঁকে ফোন দেই, অফিসে আছেন কি না, জানার জন্য। তিনি আছেন, একা একা পিঠা খাচ্ছেন। বললেন, ‘চলে আসেন তেলের পিঠা আছে।’ আমার পা-টা যেন সেদিকে টানছে, নাকি হুমায়ূন কবীর ঢালী ভাই টানছেন, বুঝতে পারছি না। ঢালী ভাইয়ের নামটা এখন কেন বললাম! কারণ আছে। একটু পরে বলি।
আলমগীর হেলালের অফিস রুমে চমৎকার একটা লাইব্রেরি আছে। গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্লভ অনেক বই আছে। একটা স্কুলের প্রধানের রুমে এতো বই! এ সময়কালে বিরল ঘটনা বলেই ধারণা করি। আমি প্রথমে যেখানে বসলাম, এবং পিঠা নিয়ে খেতে শুরু করি, কী ভেবে বললাম, ভাই, ঐ পাশে বসি, বইগুলো চোখের সামনে থাকুক। বলামাত্রই আমি বসলামও তাই। আমার চোখ দুটো বিভিন্ন বই দেখতে থাকে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘আনোয়ারা’, ‘সাম্যবাদী’, ‘প্রলয়-শিখা’, ‘সঞ্চয়িতা’, ‘বোবাকাহিনী’ থেকে শুরু করে দেখি রকিবুল হাসানের ‘কবিতাসংগ্রহ’ ও ‘অগ্নিকা আঁধার’ও শোভা পাচ্ছে। নিজের বই দেখে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। কিন্তু আমার জন্য যে আরও চমক অপেক্ষা করছিল, তা একটুও বুঝিনি। আরও বই খুঁজতে থাকে আমার চোখ, কিন্তু কি বই খুঁজছে তা নিজেও জানি না।
আশ্চর্যরকমভাবে আমার চোখ একটা বইয়ে আটকে যায়, ‘মহীয়সী সুফিয়া কামাল’। যে বইটি আজ বাসায় নিজের ব্যক্তিগত পাঠাগারে কতবার খুঁজেছি, সেই বইটি এভাবে এখানে পাবো, এ এক অতি আশ্চর্য ঘটনা। হুমায়ূন কবীর ঢালী কি কোনো এক জাদুকর! তিনি আমাকে অলৌকিক কোনো জাদু দেখিয়ে, আমার মনোবাসনা অনুসারে বইটি কোনে উসিলায় আমার কাছে পৌঁছে দিলেন! ঘটনা যে তা নয়, এই বাস্তবতাটুকুও বুঝি। তারপরও ওরকম করে কেন যেন ভাবতে ভালো লাগছে। বলতে ইচ্ছে করছে, ভালোবাসা শ্রদ্ধা সম্মান সত্যিকারের হলে, এভাবেও অনেক কিছু পাওয়া যায়, যা কল্পনাতীত, কিন্তু কোন না-ভাবে বাস্তব হয়ে আসে পরম প্রাপ্তিতে।
‘মহীয়সী সুফিয়া কামাল’ বইটি বের করে যখন গভীর আগ্রহে দেখছি, তখন হেলাল ভাই বললেন, ‘বইটি আপনি নিয়ে যান।’ এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। বললাম, ‘দুই তিনদিন পরে ফেরত দিয়ে দেবো।’ তিনি হাসলেন। বললেন, ‘আপনার কাছেই থাকুক।’ আসলে ভালোবাসার ব্যাপারটিই কেমন যেন! ঠিকঠাক বোঝা যায় যায় না। কোথায় কখন কিভাবে যে ভালোবাসা পেয়ে যাই। আরও আশ্চর্য, বইটি খুঁজলাম নিজের বাসায়, পেলাম দূরে এক স্কুলের পাঠাগারে। একে আমি কী বলবো! সে জন্য বলছি, হুমায়ূন কবীর ঢালী ভাই কি যাদুকর! আমাকে কি তিনি দূর থেকে জাদুটা দেখালেন!
০২.
হূমায়ূন কবীর ঢালী। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে দেশে-বিদেশে সুপরিচিত লেখক। লেখকসমাজে প্রিয় মুখ। লেখকসমাজে আমি ওরকম পরিচিত কেউ নই। ঢালী ভাইও আমাকে চিনতেন না প্রথম পরিচয়ের আগ পর্যন্ত। নামও শোনেননি কখনো। বেশ কয়েক বছর আগে তাও ৬/৭ বছর হবে। একুশে বইমেলায় দেখা ও পরিচয়। আমি আগ্রহ একটু বেশি দেখালেও তিনি তাঁর শিষ্যদের দ্বারা পরিবেষ্ঠিত হয়ে ঘুরছেন মেলার মাঠে। কোনরকমে একটু কথা বলেই দ্রুতপায়ে হেঁটে চলে গেলেন অন্যদিকে। একটু মন খারাপই হলো। তবুও ভালো লাগলো, তাঁর সঙ্গে অন্তত দেখা তো হলো। তবে ওটুকু সময়ের ভেতরেই তাঁকে জানাই, ‘মহীয়সী সুফিয়া কামাল’ গ্রন্থের প্রতি আমার ভালোলাগার কথা। তিনি খুশি হন। কিন্তু আলাপ দীর্ঘ করেন নি। শুধু বলেছেন, ‘বইটি এখন আর মার্কেটে নেই।’ এর পর বহুদিন আর দেখা নেই আমাদের।
০৩.
বিশ্বসাহিত্য ভবনের কর্ণধার তোফাজ্জেল হোসেন আমার শ্রদ্ধাভাজন। তাঁর অফিসে একদিন আকস্মিকভাবে দেখা হয়ে গেলো ঢালী ভাইয়ের সঙ্গে। দীর্ঘসময় তাঁর সঙ্গে গল্প। এদিন গল্পগুলো প্রাণ পায়। সাধারণ প্রাণবন্ত এক সাহিত্যিকের স্বরূপ ফুটে ওঠে তার কথা ও গল্পে। মুগ্ধ হওয়ার মতো সময়। আরও অনেক কবি-সাহিত্যিক ছিলেন তখন। তোফাজ্জেল ভাই নিজেও সে আড্ডায় যুক্ত ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম ফেলে। এরপর অনেকবার দেখা হয়েছে আমাদের, কথা হয়েছে, গল্প হয়েছে। সাদাসিধে একজন মানুষ, সরল প্রাণ। একদিন আমার একটা গল্প চাইলেন, থ্রিলার গল্প সংকলনের জন্য। তার নিজের সম্পাদনায় ও নিজেরই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরুবে। আমি এত খুশি হয়েছি, ঢালী ভাই নিজের থেকে আমার লেখা চেয়েছেন, নিজের কাছে নিজে অনেক সম্মানিতবোধ করেছি। দ্রুত আমার গল্প ‘নীল রমণীর প্রেম’ পাঠিয়ে দেই। একুশে বইমেলা ২০২৩ সালে বইটি প্রকাশিত হয়।
একদিন ফোন করলেন, জানালেন, ‘বইটি প্রকাশিত হয়েছে। একদিন আমার স্টলে আসেন, একসঙ্গে দুই ভাই চা খাবো। বইটিও নিয়ে যাবেন।’ তাঁর আন্তরিকতা সহজ সরল ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করে। সেদিনই আমি ছুটে গিয়েছিলাম তাঁর কাছে। তাঁর অকৃত্রিম আন্তরিকতায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।
০৪.
চাঁদপুরে ‘চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার ২০২২’র অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়। আর একটা বড় সৌভাগ্য হয়েছিল সেদিনই তাঁর সঙ্গে ‘চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার’ গ্রহণের সময়। এ জন্য চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমিকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই, এমন একটি সৌভাগ্যময় মুহূর্ত তারা আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক, কথাশিল্পী মনি হায়দারসহ আরও অনেক গুণীজন ঢাকা থেকে লঞ্চে সবাই একসঙ্গে চাঁদপুরে গিয়েছিলেন, চর্যাপদের অনুষ্ঠানে। তাঁদের সঙ্গে আমার যাওয়া হয়নি। আমি সরাসরি সড়কপথে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে হলরুমে ঢুকতেই ঢালী ভাই আমাকে দেখে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। সঙ্গে থাকা তাঁর পুত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন, আমি যা নই, তাঁর থেকে অনেক বেশি করে।
তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি ‘বাংলাদেশ শিশুসাহিত্যিক ফোরামে’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ‘ঢাকা সাহিত্য পরিষদে’র উপদেষ্টাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাঠাগার নির্মাণে ভূমিকা পালন করছেন।
চাঁদপুর তাঁর নিজের শহর, পৈত্রিক নিবাস। শোনালেন তাঁর বেড়ে ওঠা শৈশব যৌবনের কথা, বললেন লেখক হয়ে-ওঠার গল্প। চাঁদপুরের মোহনার বাঁক-খাওয়া স্রোতের মতো তাঁর জীবনের গল্প অভিভূত করে আমাকে। ফেরার সময় বললাম, ‘বড় ভাই, চলেন আমার গাড়িতে একসঙ্গে যাই। আপনার গল্প শুনতে শুনতে যেতে পারবো।’ কী সুন্দর বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘আমারও যেতে ইচ্ছে করছে আপনার সঙ্গে। কিন্তু ছেলেটা সঙ্গে আসছে। ওর সঙ্গে আজ থেকে যেতে চাই বাড়িতে। অনেকদিন আসা হয় না।’ আর একটুও জোর করি না। নিজের বাড়িতে নিজের মাটিতে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো এমন মধুর আর কিসে হয়! নিজের মাটির প্রতি তাঁর এই টান, এই টানের গভীর স্রোত তাঁর লেখুনির মধ্যে প্রবাহিত হয়ে আছে, কান পাতলেই শোনা যায় মোহনার সুর।
০৫.
খ্যাতিমান এই মানুষটির জন্ম ৩০ অক্টোবর, নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে, ১৯৬৪ সালে। পৈতৃক নিবাস চাঁদপুর জেলার সিকিরচর গ্রামে। তিনি কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি শুরু করেন। মূলত প্রেমের গল্প-উপন্যাস দিয়ে সাহিত্যে পদার্পণ করলেও পরবর্তীতে শিশুসাহিত্যকেই সাহিত্যচর্চার প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। বর্তমানে শিশুসাহিত্যিক হিসেবে সমধিক পরিচিত। তার লেখা শিশুসাহিত্য পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিদেশের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাঁর একাধিক গ্রন্থ। গ্রিসের স্কুল পাঠ্যসূচিতে তার লেখা A Cowboy And A Magic Mango Tree I The Birthday Gift শিশুতোষ বইদুটো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও ওডিশা ভাষায় তাঁর একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে । এছাড়া অসমীয় ও হিন্দি ভাষার একাধিক পত্রিকায় তার গল্প প্রকাশ হয়েছে।
তিনি একটি শক্তিশালী রিডিং সোসাইটি গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন থেকে পাঠাগার আন্দোলনের সাথে জড়িত রয়েছেন। নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন ‘আমাদের পাঠাগার’ নামে একটি পাঠাগার। যেখানে সবাই বিনামূল্য বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। বইপাঠে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষে শিশুদের মাঝে নিয়মিত বিনামূল্যে বই বিতরণ করে আসছেন। একজন সংগঠক হিসেবেও রয়েছে তার বিশেষ পরিচিতি। তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি ‘বাংলাদেশ শিশুসাহিত্যিক ফোরামে’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ‘ঢাকা সাহিত্য পরিষদে’র উপদেষ্টাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাঠাগার নির্মাণে ভূমিকা পালন করছেন।
তার লেখা প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো, একাত্তরের মিলিটারি ভূত, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের গল্প, পিতাপুত্র, বিশটি কিশোর গল্প, ক্লাসমেট, লজিংবাড়ি, এক যে ছিল হাঙ্গর, কালোমূর্তি রহস্য, কাব্য ও অ্যাঞ্জেলের বন্ধুরা, আলাভোলা ছেলেবেলা, ডিয়াওয়ালা, দুষ্ট ছেলের গল্প, কাকের ছা কঙ্কাবতী, সব লেখা ছোটদের, কিশোরসমগ্র ১, ২, টিয়া পাখির জন্মদিনে, The birthday gift, A cowboy & a magic mango tree, নীলগ্রহের রহস্য, নীলচরের ভূত, পারিকন্যা, বিলাইসমগ্র, আয় ফিরে যাই, জার্নি টু তাজমহল (ভ্রমণকাহিনি), বাঙালের আমেরিকা দর্শন (ভ্রমণকাহিনি), ব্রিজ টু কানাডা (ভ্রমণকাহিনি), উড়ে যাই দূরে যাই (ভ্রমণগল্প), যুদ্ধরোদন (গল্পগ্রন্থ)।
শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন দেশ এবং দেশের বাইরে অসংখ্য পুরস্কার। এরমধ্যে উল্লেযোগ্য, সালেহীন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড (২০০৬), অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক [২] (২০০৬), সালেহীন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড (২০০৬), কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ স্মৃতি স্বর্ণপদক (২০০৭), চিলড্রেন অ্যান্ড উইমেন ভিশন ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড (২০০৭), নওবাব ফয়জুন্নেসা স্বর্ণপদক (২০০৮), পদক্ষেপ শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০১১), মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড (২০১২), এম নূরুল কাদের ফাউন্ডেশন শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০১৩), লোকছড়া ফাউন্ডেশন কলম সৈনিক পুরস্কার (২০১৩), কবি সংসদ বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০১৩), বিশাল বাংলা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৬), এবিটিভি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড সম্মাননা (২০১৬), সাহিত্য দিগন্ত লেখক পুরস্কার (২০১৭), ঝুমঝুমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০১৮), লিটল ম্যাগ পথিক শিশুসাহিত্যিক পুরস্কার, রংপুর বিভাগীয় সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা (২০১৯), সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা (২০১৮) চাঁদপুর, চোখ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩) পশ্চিমবঙ্গ, তোরষা সাহিত্য সম্মাননা (২০২০) কোচবিহার, লেখালেখি সাংস্কৃতিক সংস্থা সাহিত্য সম্মাননা (২০১৯) ওডিশা, চর্যাপদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২, চাঁদপুর, স্রোত সাহিত্য পুরস্কার (২০২৩) ত্রিপুরা।
০৬.
বহুমাত্রিক প্রতিভা হুমায়ূন কবীর ঢালী। আমাদের প্রিয় ঢালী ভাই। আপনার ৬০ তম জন্মদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনি শতায়ু হোন। বাংলা সাহিত্যে যুক্ত হোক আপনার সৃজনশীল গুরুত্বপূর্ণ বহুবিধ সাহিত্যকর্ম।