একই পরিবারের দু’ভাই যখন শান্তিতে থাকে, তখন বলি, ভাইয়েদের মধ্যে সম্প্রীতি আছে। তেমনই হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ যখন পড়শীজ্ঞানে মিলেমিশে বসবাস করে, তখন বলি, দেশে সম্প্রীতি আছে। এ নিবন্ধে ভারত বর্ষে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতিতে আছে কি না, সেই বিচারের প্রয়াস ও পথের সন্ধান করা হচ্ছে।
ভারতবর্ষ নানা ভাষা-নানা ধর্ম-নানা সংস্কৃতির দেশ, এত বৈচিত্র্য পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। যেখানে সাতটি বড় ধর্ম, ১২২টি ভাষা এবং ১৬০০ উপভাষায় লোকে কথা বলে, তাদের আচার আচরণে, বেশভূষায়, খাদ্যাভাসে এবং সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্য থাকবেই। আবার অনেকে বলে বসেন, হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি কোনো কালেই হওয়ার নয়। হয়নি আর হবেও না। কী ভীষণ কথা! কথাটা মেনে নেওয়া নির্বুদ্ধিতা যদি হয়, তাহলে মিলনের প্রচেষ্টাতে থাকা দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে মঙ্গল। এ কারণেই এ নিবন্ধ রচনার প্রয়োজনীয়তা।
ইসলাম ধর্মের প্রকৃত অর্থ আত্মসমর্পণ। মুসলমানদের নিয়ে হিন্দুদের যত অশান্তি। আমাদের দেশের মুসলমানেরা মূলে হিন্দু, সমাজে অন্ত্যজ। তারা হিন্দুদের অত্যাচারের শিকার। বাধ্য হয়ে তারা ধর্ম বদল করেছেন, হিন্দু এলাকা থেকে সরে গিয়ে অন্যত্র বসবাস করতে শুরু করেছেন। আজও তার চিহ্ন বর্তমান।
ভারতবর্ষের ইতিহাস শুরু যাদের নিয়ে, সেসব জাতির নাম-মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন। এরপর বাইরের থেকে আসা শুরু। উল্লেখযোগ্যরা হলো, পাঠান-মোগল-ইংরেজ। একমাত্র ইংরেজরা চলে গেলো, বাকিরা রয়ে গেলো। ভারতে মোগলরা থেকে যাওয়ায় কোরান পেলো দেশ; মুসলিম সংস্কৃতির শুরু এবং দ্বন্দ্বেরও শুরু। ভারতবর্ষ পেলো মুসলমান সংস্কৃতি ও মুসলিম সংস্কৃতি।
সব শুভ ভাবনা আদর্শ ধর্মে এসে ঠেকে যায়। অন্য পথ চাই, চাইবে কে? বিকল্প চাই, ধর্মের ওপর কথা বলবে কে?
ভারতীয়রা মুসলমান ও মুসলিম দুইই। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মুসলমান জনগণ মুসলমান আর ভারতের বাদবাকি অংশে বসবাসকারীরা মুসলিম। আবার পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মুসলমান জনগণের অন্য পরিচয় যা গর্বের-আমরা আগে বাঙালি, পরে মুসলমান; বাঙালি হিন্দু ও বাঙালি মুসলমান পরিচয়ে। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিপত্তিশালী যারা, জাতীয় জীবনে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষিত, সুপ্রতিষ্ঠিত, পরিচয়ে যারা বিদ্বজ্জন, তারা ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মেনে শান্তিতে আছেন।বাকিরা ভারতের বুকে আছেন বটে কিন্তু চিন্তা ভাবনায় মধ্যপ্রাচ্যেও সংস্কৃতির ধারক-বাহক। তারাই রাজনীতির সহজ শিকার এবং গোঁড়ামিতে বুঁদ হয়ে আছেন। এ-কারণেই তারা বিদ্রূপের শিকার। বলা হয় মুসলমান ও মুসলিম ইসলামে এক, হজ যাত্রায় এক, আত্মীয়বোধে এক। বিদেশে উভয়ে ইন্ডিয়ান পরিচয় দেন এবং গর্ববোধ করেন। আবার ভিন্নতা ভাষায়, আচার-বিচারে, ধর্ম পালনে আরবীয়। মূল কোরান আরবি ভাষায় রচিত, কাজেই মুসলিম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরবি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক। মুসলিম উমরাহদের মতে পৃথিবীর পবিত্র ভাষা হলো আরবি; জীবিতকালে যার ভাষা যাই হোক না কেন মৃত্যুর পর মানুষের ভাষা হবে একমাত্র আরবি। যদিও প্রচার, অ-ভারতীয় চিন্তা-ভাবনা।
প্রশ্ন এখন আমাদের দেশে হিন্দুমুসলমানে সম্প্রীতি কি ছিল? সকালে ছিল বিকালে ছিল না। কিন্তু সম্প্রীতির প্রচেষ্টা সবকালেই চলমান ছিল। ছিল আচারে বিচারে, সংস্কৃতিতে, গানে-কবিতায়-নাটকে; প্রচেষ্টা দানা বাঁধেনি, গতি পায়নি, পথ পায়নি। আন্দোলনও হয়নি। এমনটা হতো অতীতে, বর্তমানে রূপটা বদলে গেছে। দুই সম্প্রদায়ে কোনো ঘটনা ঘটলে, একপক্ষে এসে দাঁড়ান কোনো রাজনৈতিক নেতা, অন্যপক্ষে যদি কোনো ধর্মীয় প্রতিনিধি থাকেন, তাহলে ঘটনার চরিত্র বদলে যায়, জটিল হয়-কুটিল হয়। মিলমিশ দুরাশা।
সম্রাট আকবর মহামতি ছিলেন নিরক্ষর। তবে, পাণ্ডিত্যের আকর ছিলেন। তিনি ইতিহাস, হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি প্রসঙ্গে আজও প্রাসঙ্গিক। তার প্রবর্তিত ধর্মমতের নাম দিন-ই-ইলাহি, ঈশ্বরের ধর্ম; তার ধর্মের বাণী সুলজ-ই-কুলমানে, সর্বজনীন শান্তি। তার শাসন ব্যবস্থার মূল কথা ছিল বহুত্ববাদ ও নৈতিকতা। হিন্দুদের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনে তার নানাবিধ পদক্ষেপ ইতিহাস হয়ে থাকবে। হিন্দু ও মুসলমানরাও তাকে স্মরণ করে যাবে। রাজপুত রমণী যোধাবাইকে পত্নী রূপে গ্রহণ এবং শাসন ব্যবস্থায় হিন্দুদের নিয়োগ, দুটি বড় দৃষ্টান্ত মাত্র।
স্বামী বিবেকানন্দের সরব উক্তি, ‘ভবিষ্যৎ ভারত গড়ে উঠবে ইসলামীয় দেহ ও বৈদান্তিক মস্তিষ্ক নিয়ে।’ নজরুল, হিন্দু না মুসলিম! তিনি দুইই। তারও একটা উক্তি দেখা যাক। নজরুল বলেছেন, ‘আপনারা বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি এসেছিলাম হিন্দু-মুসলমানের শ্যেকহ্যান্ড করিয়ে দিতে।’ তার এই উক্তিতে একটা আর্তি লুকানো আছে, যা আন্তরিক ও বিস্ময়কর।
রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধী যে যার মতো নিজ নিজ চিন্তাধারায়, ভাবনায়-চেতনায়-কর্মকাণ্ডে সারাজীবন একনিষ্ঠ ছিলেন। রূপায়নে ব্রতী থেকেছেন। তারা বিরল উদাহরণ। গান্ধী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘হিন্দু-মুসলিম ইউনিটি হ্যাজবিন মাইপ্যাশন ফ্রম মাই আর্লি ইয়ুথ। আইমেন টলিভ অ্যা সিঙ্গল স্টোন আনটার্নড টু অ্যাচিভ ইট।’ ভাষান্তর দুঃসাহসের পরিচয়।
রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে উক্তিমালা শেষ করা যাক। ‘হিন্দু-মুসলমান’ প্রবন্ধে তিনি লিখছেন, ‘পৃথিবীতে দুটি সম্প্রদায় আছে অন্য সমস্ত ধর্মমতের সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধতা অতুগ্র, সে হচ্ছে খ্রিষ্টান আর মুসলমান ধর্ম। তারা নিজের ধর্মকে পালন করেই সন্তুষ্ট নয়, অন্য ধর্মকে সংহার করতে উদ্যত। এজন্য তাদের ধর্মগ্রহণ করা ছাড়া তাদের সঙ্গে মেলা অন্য কোনো উপায় নেই।’ আর একটি উক্তিতে বলেছেন, ‘খিলাফতের লক্ষ্যে মুসলমান নিজের মসজিদে এবং অন্যত্র হিন্দুকে যত কাছে টেনেছে, হিন্দুরা মুসলমানকে তত কাছে টানতে পারেনি।
আচার হচ্ছে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধের সেতু। সেখানেই পদে পদে হিন্দু নিজের বেড়া তুলে রেখেছে।’ আজ এটা পরীক্ষিত সত্য, আদান-প্রদান হবে কী করে? শহরে গ্রামে আমাদের এই মহান দুই জাতি দগদগে ঘায়ের মতো নিশ্চিত দূরত্ব রেখে বসবাস করে চলেছে, সম্প্রীতি হবে কী করে? কে কাকে দুষবেন?
এ পর্যন্ত এসে বোঝা গেলো সবাই সম্প্রীতি চেয়ে এসেছেন, সম্প্রীতি আসেনি। আদৌ আসবে কি না, ভাবতে বুকটা দুরুদুরু কাঁপে। তাহলে কি বাবরি ভাঙা হতেই থাকবে আবার নতুন করে গড়াও হবে। তবে কি পরমাণু যুদ্ধ নয় ধর্ম যুদ্ধ বর্তমান সভ্যতার শেষ পরিণতি, আর শুরু ভারতে না মধ্যপ্রাচ্যে? মনীষীরা ভাবুন।
সম্রাট আকবরের কাল ধরলে সম্প্রীতি-গীতির বয়স সাড়ে পাঁচশো বছর পেরিয়ে গেছে। সম্প্রীতি আসেনি। বরং সাম্প্রদায়িক বিবাদ বিসংবাদ বেড়েই চলেছে, রক্ত ঝরছে, ঘর পুড়ছে মসজিদ মাটিতে লুটোচ্ছে এখন-তখন।
আশ্চর্যের বিষয় সম্প্রীতি চাই না এমন কথা কেউ বলেননি, হওয়ার না বলেছেন অনেকে, মুখটা নিচু করে আড়ালে। না হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ ছিল। আমাদের ধর্মই সম্প্রীতির প্রধান ও শেষ অন্তরায়। আমরা জন্মেই ধর্মের দ্বারা চিহ্নিত হই (ধনী গরিবের চিহ্ন পড়ে ললাটে); ধর্মের নামে নাম, ধর্মের নামে সব শুভ কাজ; ধর্মের নাম নিয়ে খুন-খারাপি, ধর্মের নামেই নেতা-মন্ত্রী ও রাজ্য শাসনের প্রার্থনা আর সবশেষে ধর্মের নামে চিতায় ওঠা বা কবরে ঘুমানো। এ ছাড়া মানব জীবনের গতি নেই যেন! সব শুভ ভাবনা আদর্শ ধর্মে এসে ঠেকে যায়। অন্য পথ চাই, চাইবে কে? বিকল্প চাই, ধর্মের ওপর কথা বলবে কে?
এই মূল বা বিকল্পপথের পথিক নিচুতলার মানুষ, কৃষক, শ্রমিক আর খেটে খাওয়া মানুষ যারা ধর্ম-রাজনীতি কোনোটাই বোঝে না, বোঝার সময় নেই; এদের কাছে পৌঁছানোর প্রয়োজন ছিল। এরা ধর্মকে ডরায়, শাসককে ভয় পায়। আর ওই বিশাল সংখ্যার ভীরু মধ্যবিত্ত শ্রেণী যারা দাবি-দাওয়া নিয়ে পথে নামেন তাদের কাছে যাওয়া হয়নি বোঝানোও হয়নি; বিরাট সংখ্যক ছাত্র ও যুবসমাজের কাছেও যাওয়া হয়নি। ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটা বিক্ষিপ্ত রূপে থেকেছে সামাজিক বা জাতীয় প্রয়াস হয়ে ওঠেনি।
এরা ধর্মে বিভক্ত থেকেও নিশ্চুপ, ধর্ম বুঝতে চান না, হতভাগ্য। তবে বিস্ফোরক।এদের জন্য সম্প্রীতি চাই না? মানবসভ্যতার কোনো দায় নেই? ভাবুন।
এত দিন ভিন্নমুখী দুটি সম্প্রদায়কে মিলেমিশে থেকে নিজনিজ ধর্ম পালনে সংযত আচরণে জীবন যাপনের কথা বলা হয়েছে। মিলনের কথা বলা হয়েছে বটে স্পষ্ট নয়। এখন সময় হয়েছে স্পষ্টতার। নতুন ডাক, সুস্থ-সবল সাহসী পদক্ষেপ, ধর্মের বাধা সরিয়ে ভালোবেসে বিয়ে-শাদি। প্রেমকে স্বীকৃতি দেওয়া যা নিষ্কলুষ এবং পবিত্র। প্রেমকালের পরীক্ষায় একমাত্র মিলনের পথ; প্রেম জোর করে হয় না, ঘটে যায়। ব্যাখ্যা প্রয়োজন। প্রথমেই ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন। সরকারি সিলমোহর পড়ার পর পুরোহিত বা ঈমামের উপস্থিতি ছাড়া হবে প্রথাগত কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন। যেমন, টোপরমাথায় শুভদৃষ্টি; সাতপাক ঘোরা শেষে ফুলমালা বিনিময়; তারপর কবুলনামায় স্বাক্ষর। সমাজের বিদগ্ধ মানুষেরা মালাবদলে এবং কবুলনামা পড়াতে সাহায্য করবেন।
হ্যাঁ আর্থিক সাহায্যও প্রয়োজন। প্রেমে অর্থ ও ধর্ম কোনোটাই লাগে না। জীবন যাপনে অর্থ লাগে, ধর্মটা স্বেচ্ছানির্ভর। পারিবারিক সমর্থন ছাড়া যে বিবাহ তা হওয়ার উপযুক্ত স্থান গণবিবাহের আসর। দুর্বল প্রার্থীকে অর্থ সাহায্য দিয়ে বল জোগাতে হবে; জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে সরকারি বেসরকারি সাহায্য নিয়ে তহবিল গড়া আবশ্যিক।
স্বনির্ভর দম্পতি সম্প্রীতির আন্দোলনে অগ্রণী যোদ্ধা। সারকথা এই যে হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতি একটি আন্দোলনের নাম। এই আন্দোলন হবে সমাজের মাটির মানুষ থেকে ঊর্ধ্বমুখী। স্থানীয় স্তরে ছোট ছোট কেন্দ্র, শহরাঞ্চলে সংগঠন ও জাতীয় স্তরে মহাসংগঠন গড়ে উঠুক। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কেন্দ্র বা সংগঠনের অধীন হয়ে আন্দোলনে শামিল হোন; বহুমাত্রিক মেলা-মেশায়, আদান-প্রদানে ধর্মের শিকল ভাঙা নয় বাধা দূর হবে।
অর্থ ছাড়া এমন মহাযজ্ঞ সম্ভব না। তাই তহবিল গড়তে ধনীর দান এবং সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য প্রয়োজন। হিন্দু-মুসলিম ভয় সম্প্রদায়ের বিবাহিত অভিবাসী মানুষেরা পুঁজি গড়তে উদার হাতে সাহায্য করবেন। আর দেশের অভ্যন্তরে এমন বিবাহিত মানুষের সংখ্যা কম নয়, এঁরা কি চুপ থাকবেন? আন্দোলনের ধারকবাহক নয় কেন! পরিচালনায় চিন্তকেরা এবং আদর্শে বিশ্বাসী সংগঠকেরা।
কথায় আছে আর্লি ম্যারেজ আর্লি ফ্রুট। নব দম্পতিকে একটি সাবধান বাণী শুনিয়ে রাখা মঙ্গলের। তারা যেন তাদের সন্তানের নাম রাখার ব্যাপারে সজাগ থাকেন এমন নাম সন্তানের যেন হয়, যা ভারতীয়, ধর্ম-বংশ-পদবি বিহীন। সে হবে নতুন পরিচয়ে নতুন দেশের নাগরিক।
সামনে মরূদ্যান। পুষ্পিত হচ্ছে, সবার অগোচরে সবুজে সবুজে। আমার মতো যারা পারের কড়ি হাতে নিয়ে বসে আছি তারা বাদ থাকুন, বেদ-কোরান-বাইবেল পড়তে পড়তে শেষ ঘুমে ঘুমিয়ে পড়ুন। এর বাইরে যারা তিরিশ থেকে আশি, ধর্ম নিয়ে ‘কচাল’ করুক, নতুবা সম্প্রীতির বুদ্বুদ কেটে মহান মানুষ হয়ে যাক। এর বাইরে তিরিশের নিচে যারা, আগামীর ভবিষ্যৎ, আমার নাতি-নাতনি ওরাই সবুজে সবুজে পুষ্পিত মরূদ্যান। এরা বড় উদাসীন। ধর্মের কথা শুনতে চায় না, বুঝতে চায় না ঝকঝকে চকচকে ঝর্ণা, চোখে আগামীর স্বপ্ন, বাধাবন্ধহীন স্বাধীনতা চায়। এরা গোকুলে বাড়ছে, স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গবেষণাগারে; নানান ক্রীড়াঙ্গনে, শিল্পকলা ও সংস্কৃতির শিক্ষাপ্রাঙ্গণে-বড় সম্প্রীতিতে আছে, যেন ভাই-ভাই, যেন ভাই-বোন। এরা লিঙ্গবোধে ভাবিত নয়, জাত-পাত-বর্ণবোধেও পীড়িত নয়-নিষ্কলুষ, পবিত্র। হ্যাঁ, আর যারা দেশ রক্ষার কাজে নিযুক্ত, শ্রমিক-কৃষক-মজুর-দলিত-দরিদ্র, ব্যতিক্রমী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, তারাও একরকম সম্প্রীতিতে চিরকাল থেকে এসেছেন এবং আছেন। এরা ধর্মে বিভক্ত থেকেও নিশ্চুপ, ধর্ম বুঝতে চান না, হতভাগ্য। তবে বিস্ফোরক।এদের জন্য সম্প্রীতি চাই না? মানবসভ্যতার কোনো দায় নেই? ভাবুন।
আরও পড়ুন: সাম্প্রতিক সাহিত্য