আমি জানি, আমার চেতনা, লেখা কারোই ভালো লাগবে না। না লাগারই কথা। অবাধ্য স্ত্রী, অবাধ্য প্রেমিকা, অবাধ্য কন্যা ও বোনকে সমাজ কিংবা পরিবার কেউই সহ্য করতে পারে না।
আমি যখন স্কুটি চালাই মাঝে-মাঝে হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগল রাস্তার মাঝখানে শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে থাকে। হর্ন দিলেও নড়ে না। ওভার কনফিডেন্সে থাকে। বুঝতে পারি, বুকের মধ্যে কাঁপন ধরায়। এই বুঝি চাকার নিচে চলে গেলো। আমি ভাবি, আমাদের তথাকথিত সিস্টেমের কথা, এদের মতোই অনড়। মননে সমৃদ্ধি আসে না।
পশ্চিমবঙ্গের টালিগঞ্জে যেসব অভিনেত্রী নায়িকার রোলে কাজ করেন, তারাই বয়স হলে বোন, মা, দাদির রোলে কাজ করেন। কারণ এটা তাদের পেশা, আয়ের উৎস। ঢাকাইয়া সিনেমায় একচ্ছত্র আধিপত্য করেছেন যে শাবানা, তিনিও এখন পর্দা করেন। কথায় কথায় তওবা পড়েন। শাবনাজ থেকে শাবনুর সবাই নিজেকে বোরকায় মুড়িয়েছেন। কারণ পুঁজিবাদ তার কৈশোর যৌবন নিংড়ে ব্যবসা করেছে। আজ তাদের নায়িকার রোলে বেমানান। তাই তারা সিনেমা থেকে ছিটকে পড়েছেন।
স্কুলের ডিবেট করা সেই মেধাবী মেয়েটিও রোজ নুন-মশলায় হিসাব কষে। অথচ এই রান্নাও শিল্প, যা সঠিকভাবে জানলে, একটি রেসিপি বানাতে পারলে, আয়ের উৎস হতে পারে।
কিন্তু না পারার ব্যর্থতা কিংবা দোষ কারা?
অবশ্যই বলবেন পরিবারের। নারীকে এতটাই অর্থব ভাবা হয় যে, কলেজ পড়ুয়া, ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে চিন্তার অন্ত থাকে না, কীভাবে তাকে পাত্রস্থ করা যায়। এটা ট্র্যাডিশন হয়ে গেছে বাংলাদেশে। ফরিদপুরের উপমা দত্ত ইন্টারমিডিয়েটে পড়েন, অথচ তিনিই এখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ইউডিক্রাফর্ট-এর কর্নধার। তিনি জেনে গেছেন, এই দেশে গ্রাজুয়েট হলেও মেয়েদের চাকরি মেলে না, সম্মান মেলে না।
ক্ষমতাসীন নারীদের নিকট ধর্ষক যাবে না। কারণ এখানে বিপত্তি সৃষ্টি হয়। সবলের অত্যাচার সবসময় দুর্বলের ওপর হয়। সমাজ নারীকে দুর্বল রাখার পুরিয়া সকাল সন্ধ্যা গেলাতে থাকে।
আসলেই তাই। একজন পোস্ট গ্রাজুয়েট নারী যখন অন্যর বাড়ির বউ হয়ে যান, তখন ছাগল ও ওই সদ্য বিবাহিত নারীর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। আর মেয়েরা এটাকে নিয়তি ভেবে চুপ করে থাকে।
অনন্ত জলিল, যিনি ভুলভাল ইংরেজি বলেন, স্টাইলিশ পোশাক পরেন। অথচ তার দৃষ্টিভঙ্গি পাড়ার মসজিদের ঈমামের মতো। তিনিও নারীর পোশাকে দোষ খোঁজেন। অথচ আমরা জানি ধর্ষক পোশাক দেখে ধর্ষণ করে না। এটা ধর্ষকের দীর্ঘদিনের সাহস। কারণ, সে ছোটখাটো অপরাধ দিয়ে শুরু করে একসময় বড় অপরাধী হয়ে ওঠে। কারণ, সে ছোট বেলা থেকেই তার মাকে বাবার কাছে নিগৃহীত হতে দেখেছে। পড়ে পড়ে মার খেতে দেখেছে। অতএব, সেদিনের সেই ছোট ছেলেটা হয়ে যায় ধর্ষক। ডমেস্টিক ভায়োলেন্সে সে এক পৈচাশিক আনন্দ পেতে শুরু করে। এখানে প্রথাগত শিক্ষা কোনো কাজে আসে না।
আর নারীদের একাংশ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে পুরুষকেই সাপোর্ট করে যায়। তারাও গলা উঁচিয়ে বলে, নারীর পোশাকেই দোষ। এই যে অনন্ত জলিলের পোশাক, বুকের কনস্ট্রাকশন, এটা কি যৌনতার ইঙ্গিত বহন করে না? অথচ তিনিও বলেন পোশাকে দোষ। তো বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামো কিন্তু এভাবেই তৈরি।
সবাই শুধু নিজে ভালো থাকার কথা ভাবে। পুরুষ এই শব্দের মধ্যে ধর্ষক ঢুকে গেছে। ঢালাওভাবে প্রত্যককে সন্দেহ করা হচ্ছে। আসলে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় ধর্ষকদের শাস্তি। না, কোনো ক্রসফায়রে নয়। বরং এমন শাস্তি দেওয়া উচিত, যা দেখলে সব অপরাধীই শিউরে ওঠে। এর মোক্ষম শাস্তি হিসেবে খোজায় পরিণত করা যেতে পারে। কারণ, একজন পুরুষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ওই শিশ্ন। এটার ব্যবহার যথাযথ করতে না পারলে পুরুষ জনমই বৃথা। তাই নিজেদের পৌরষ বোঝাতে বার বার দুর্বল নারীকে বেছে নেওয়া হয়। ধর্ষকরা জানে এদের প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর খুব দুর্বল। ক্ষমতাসীন নারীদের নিকট ধর্ষক যাবে না। কারণ এখানে বিপত্তি সৃষ্টি হয়। সবলের অত্যাচার সবসময় দুর্বলের ওপর হয়। সমাজ নারীকে দুর্বল রাখার পুরিয়া সকাল সন্ধ্যা গেলাতে থাকে।