লাল মাটির দেয়ালঘেরা একটি শনের চালাবাড়ি। তার ওপর মাচাং ঘর। চালাবাড়ির এই মাচাং ঘরটি শৈশবকে ঘিরে তৈরি করেছে কৌতূহল ও রহস্য। যেখানে ছিল পুরনো বইপত্রের ভাণ্ডার, ভাঙা কাঠের রাজকীয় চেয়ার, বেতেরডুলা, জাল, ভাঙা তৈজসপত্রের নানা হাড়গোড, দুর্লভ সব প্রত্নচিহ্ন! আমি প্রায় বাঁশের মই ডিঙিয়ে—মেঝ ঘরের মাঝ বরাবর, ওই মাচাং ঘরে উঠতাম। বিচিত্র বইপত্রসহ এইসব বিবিধ জিনিসপত্র ঘেঁটেঘুটে দেখতাম আর অবাক বনে যেতাম—কিন্তু এখন সেই বাড়ি নেই। ইট-সুরকির বড় মঞ্জিল। সম্পূর্ণ পাকা বাড়ি। যে বাড়িতে বসে পুরনো স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসি। স্মৃতি রোমন্থন করি।
কক্সবাজার জেলার দক্ষিণাঞ্চলের, পেকুয়া উপজেলা—পাহাড় আর সাগরের ঠিক মাঝামাঝি টইটং নামক (বর্তমান টইটং ইউনিয়ন) একটি গ্রামে বড় হওয়া আমি। পাহাড়ের নির্জনতা যেমন দেখেছি। দেখেছি সাগরের উত্তাল ঢেউ-তরঙ্গ।
আজ থেকে বিষ বছর আগের কথা। আমাদের বিশাল লাল মাটির দেয়ালঘেরা শনের সেই যে চালাবাড়ি—প্রতিদিন একগুচ্ছ আলো-ছায়া আর অন্ধকার বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতো। ললিতকলার নানা অনুষঙ্গের সুপ্ত কত শিল্প এই বাড়ির মায়াময় অন্ধকারের গোপনকুটরিতে জমা ছিল। সুপ্ত প্রতিভাকে উসকে দেওয়ার শত উপকরণের ডালা যে একটি বাড়িকে ঘিরেও তৈরি হতে পারে; দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বসাহিত্য পাঠ পরবর্তী—পরিণত শিল্প-বয়সেই তা আরও বেশি আঁচ করলাম।
আমার তখন চার-পাঁচ বছর বয়স। শৈশবের প্রথম বানানো সৃজনশীল শিল্পকর্ম ছিল মৃৎশিল্প; মাটির হাঁড়ি-পাতিল-টেলিভিশন-নৌকা এসব। মাটির বানানো জিনিস থেকে খাতার পাতার মসৃণ মাঠে আঁকা শুরু হলো গ্রাম, নদী, ফুল, পাখি মানুষসহ বিচিত্র সব আঁকাঁআঁকির চেষ্টা। ভালো গান করতাম। গলা ছিল ভালো।
ছোটবেলায় প্রাইমারি স্কুল কেটেছে কিছুটা গ্রামে, কিছুটা শহরে। বলা যায় হাইস্কুল থেকেই শহরে থিতু হয়েছি। কিন্তু মনটা পড়ে থাকতো গ্রামে। কখন বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হবে। লম্বা ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাব। খেলাধুলার প্রতিও ছিলাম বেশ পাগল। বিশেষ করে ফুটবল আর ক্রিকেট। খেলাধুলার মধ্যে এই দু’টাতেই কমবেশি পারদর্শী ছিলাম। মজার ব্যাপার হলো ক্রিকেট খেলাটা। ব্যাটিংয়ে আমাকে নামানো হতো চার অথবা পাঁচ নম্বরে। দলের যখন বিপর্যস্ত অবস্থা তখন। বেশ মারমুখী ছিলাম। তাই কয়েক ওভার টিকতে পারলে আমার ব্যাট থেকে চার-ছক্কার মারসহ ভালো রান-স্কোর উঠতো। গ্রামে বছরে ছ’মাসে পাড়া আর থানাভিত্তিক কত টুর্নামেন্ট খেলেছি, তার হিসাব নেই। খেলাধুলাটা মূলত হাইস্কুল থেকে এইচএসসি পর্যন্ত বেশি ধরাবাঁধা ছিল। পরে সক্রিয় হই অন্য সাইডে—বইপড়া, গান, লেখালেখিসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া।
স্কুল জীবনে হামদ, নাত, কেরাত, সহি আজান দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতাগুলোতে প্রথম পুরস্কারটা কমবেশি আমার দখলেই ছিল।ঠিক দশ কি এগারো বছর বয়সে এসেই বইয়ের ছড়ার ছন্দগুণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পদ্য-কবিতা লেখার প্রথম প্রচেষ্টা। ভালো পদ্য আর কবিতা লিখি বলে বেশ নাম হয়। তখন থেকেই কিন্তু গদ্যের হাত ভালো ছিল। ১৯৯৫ সালে ক্লাস সিক্স থেকেই এভাবে আঁকাআঁকি-গান-লেখালেখি চলতেই থাকে। পরিণত বয়সে এসে কেন জানি বইপড়া আর লেখালেখির প্রতিই দুর্বলতা বেড়ে যায়। স্কুল-কলেজ থেকেই গান, নাটক, আবৃত্তি করাসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলোতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। শেষ দিকে এসে এইচএসসি থেকে শুরু করে অনার্স পড়াকালীন গান আর লেখালেখিতে থিতু হই। সাহিত্যের স্টুডেন্ট হওয়াতে লেখালেখির জন্য নানাভাবে একটা বড় সুবিধা ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিকতা—মূলত কবিতা, গদ্য, প্রবন্ধ লিখতাম। আজ থেকে ষোল-সতেরো বছর আগেও, সেই সময়ে চট্টগ্রামের সেরা আঞ্চলিক দৈনিকে বিখ্যাত লেখক, সাংবাদিকদের (যাদের অনেকে বর্তমানে স্বনামধন্য জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতাও করছেন) সঙ্গে আমারও বড় বড় ফিচার, প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। গানটা কিন্তু থেমে ছিলো না।
চট্টগ্রামের বিভিন্নজাতীয় উৎসব, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, সভা, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামেও অনেক গান করেছি। শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু-বান্ধবসহ প্রিয় শিক্ষকের অনেকে, লেখালেখির পাশাপাশি গানটাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিতে বললেন। নজরুল, রবীন্দ্র, আধুনিক, দেশাত্ববোধক গানসহ সব ধরনের গানই তুলতে চেষ্টা করতাম। যদিও গানের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক কোন যোগ্যতাই আমার ছিলো না। শুধুগলার জোরেই যতো চান্স নিতাম। কিছুটা রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান ছিলাম বলে, এই জাতীয় কর্মকাণ্ডের প্রতি উৎসাহ বা উদ্দীপনাওভাবে পাইনি। যা কিঞ্চিত তা অঘোষিত; আর্ট বা লেখালেখিতে।
এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষার পরপরই মারাত্মক জন্ডিস, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হই। চার-পাঁচ মাস বেডরেস্ট। মারাত্মক অসুস্থতায় একটু সুস্থবোধ করলে ভার্সিটি ভর্তির জন্য পড়াশোনা, কোচিংসহ আবার ব্যস্ত হয়ে উঠি (যদিও ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা ছিল)। কিন্তু বিধিবাম, এক সপ্তাহ ক্লাস করতে না করতেই আবারও অসুস্থতা! আবারও বেডরেস্ট। এইচএসসিতে ভালো পাস করেও মারাত্মক অসুস্থতায় কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে না পারাসহ মানসিকভাবে বিশ্রী একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। ওই অসুস্থতা ছিল আরও দীর্ঘমেয়াদি। প্রায় এক বছরের কাছাকাছি। পরে ইয়ার গ্যাপের ঝুঁকি না নিয়ে একদম শেষ দিকে এসে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে পরীক্ষা দিয়ে ওখানে একবারেই চান্স পাই।
এরই মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। খাওয়া-দাওয়া চলাফেরায় খুব সচেতন হয়ে পড়ি। স্বাস্থ্য ভালোরাখাসহ প্রেরণামূলক কত বই, দেশ-বিদেশের কত জার্নাল পড়েছি। এমনকী এই বিষয়ে একটা সময় স্বাস্থ্যবিষয়ক অনেক গদ্যও লিখেছি। তো এদিকে নতুন ক্লাস। নতুন বন্ধু। নতুন শিক্ষক। সবকিছু মিলিয়ে শুরুটা দারুণ ভালো; চমক হিসেবে, অনার্সের ফাস্ট ইয়ারেই সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কারণে ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক আর বন্ধুমহলে ভালো ছাত্র হিসেবে বেশ পরিচিত হয়ে উঠি। ভালো স্পিস দিতে পারি, ভালো লিখি বলে অন্য
ডিপার্টমেন্টেও নাম ছড়িয়ে যায়। এই সুবাধে অন্য ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক মহোদয়রা আমার সম্পর্কে জেনে যায়—তৎকালীন বোটানি বিভাগের (উদ্ভিদ) হেড, মিসেস ঝরনা খানম ম্যাডাম, একই বিভাগের রেজাউল করিম তারেক স্যার, দর্শন বিভাগের প্রয়াত জসিম স্যার, তৎকালীন বাংলা ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ড. হরিশংকর জলদাস প্রফেসর আইয়ুব ভূঁইয়াসহ অনেকের আগ্রহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় পুরো কলেজে একটি পাঠচক্র গড়ে তুলি। আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতি শনিবার ক্লাস শেষে দুপুর একটার পরে আমাদের—সাহিত্যসহ সমকালীন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশদ আলোচনা হতো। বড় আড্ডা হতো।
তাই, বাইরের শতো হাওয়া, বিচ্যুতি ও অন্ধতা দেখেও অভিমানে-অবজ্ঞাতে, নিজেকে নিজের মাটির উৎস থেকে কখনো টলাতে পারি না।
এখানে ইংরেজি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, গণিত ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ থেকেও অনেক আগ্রহী শিক্ষার্থী শ্রোতা হিসেবে আসতো; এদের অনেকেই পাঠচক্রের সদস্য ছিল। এমনকি বিভিন্ন কলেজ থেকেওশিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ওই আয়োজনে সামিল হতেন। এর মধ্যে ক্লাসমেট বন্ধুদের খুবই আস্তাভাজন হই (ফাইনাল পরীক্ষার ক’দিন আগে থেকেই সিরিয়াল দিয়েরাখতো, কে কখন ফোন করবে)। পড়াশোনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে,
বিভিন্ন ধরনের শলা পরামর্শ ও গাইড নিতো।
একটা বিষয় এখনো বেশি মনে পড়ে—অনার্সে থাকাকালীন আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, পহেলা বৈশাখ উদযাপনে (শিক্ষক মহল থেকেই) হঠাৎ আমার ওপর একক গান করার বিশেষ দায়িত্ব পড়ে। তাও হারমোনিয়াম, তবলা-সঙ্গতসহ আমাকে গান করতে হবে। পড়ে যাই মহাধন্ধে। প্রতিষ্ঠানে ভাল গান করে, হারমোনিয়াম বাজায়, মৌরীনাগ নামের এক বড় আপুর স্মরণাপন্ন হলাম। তাকে বললাম, আমি রবীন্দ্রসংগীত করতে চাই। আমাকে হারমোনিয়াম বাজিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি রাজি হন। কিন্তু রিহার্সেলের জন্য সময় দিতে পারছিলেন না। তাও পরে, শুধু দু’দিনের দ্রুত রিহার্সেলে গান শেষ করি। এদিকে তবলার জন্য ঠিক করি পাভেল নামে ডিপার্টমেন্টের এক ছোটভাইকে। বাঁশির জন্য রয়েল বড়ুয়াকে। মূল অনুষ্ঠানে—হারমোনিয়ামের তাল, লয় ঠিকভাবে ধরতে না পারায়, গানটা ভালো করে শেষ করতে পারিনি। অনুষ্ঠান শেষে মৌরি দি বেশ বকলেন। নিজে হারমোনিয়াম বাজাতে জানি না। কেন আমি গান করতে গেলাম? কেন এত বড় রিস্ক নিলাম।
সেই বেলায়, অনেক প্রোগ্রামে গান করতে গেলে, এরকম অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম—কেননা সহায় ছিল শুধু গানের গলা। গলাটা ভালো ছিল, এই যা; পরে মনে একটা জিদ চেপে বসে যে, আমিও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শিখবো। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারমোনিয়াম কিনলাম। ওই বয়সে, ঘরে হঠাৎ করে হারমোনিয়াম দেখে বিষয়টা কেউ ভালো চোখে দেখেনি; পরে, নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রায় বার বছর আমি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শিখলাম। প্রথম ওস্তাদ ছিলেন দীপংকর দেবনাথ। তার প্রতিষ্ঠিত ‘নবকুঁড়ি সংগীত একাডেমি’ চট্টগ্রাম থেকে গানের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিসহ তার কাছেই প্রথম স্বরলিপি—পল্লী, আধুনিক, রবীন্দ্র, নজরুল, লালনসহ সব ধরনের গান করার সমর্থন ও যোগ্যতা অর্জন করি। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানে (বছর দু’এক) নিজেও সপ্তাহে একদিন পার্টটাইম গানের শিক্ষকতা করার সুযোগ অর্জন করি। এটা যেহেতু গুরুমুখী বিদ্যা, পরে আবার নিজ আগ্রহে, ভালো ধ্রুপদি ও নজরুল করেন (ইন্ডিয়া থেকে নাম করা ওস্তাদের প্রশিক্ষণে) চট্টগ্রামের আর এক গুণি শিল্পী, ওস্তাদ রাজেশ সাহা’র অধীনে (বছর তিনেক) নজরুলসংগীতের ওপর তালিম নেই। এখানে একটা ব্যাপার হয়ে গেলো! নজরুল সংগীত সরাসরি গলায় ধারণ করতে গিয়ে, এ-যেন অন্য এক নজরুলকে আবিষ্কার করি। ওস্তাদজি স্বরলিপি ও তাল তুলতে গিয়ে, নিজেই নজরুলের বিভিন্ন গানের ভাব ও গানের পেছনের ইতিহাস ব্যাখ্যা করতেন। পরে অনুভব করলাম—নজরুলের ধ্রুপদি ঘরানার সুরবৈচিত্র্য এবং ভাবসম্পদ এতই অমূল্য—যা পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রকৃতি ও প্রাণের গভীর অন্তরাত্মাকে, স্বতন্ত্র মহিমায় একেবারে নিংড়ে নিয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও আজ থেকে পাঁচ বছর আগে বান্দরবান জেলা থেকে নজরুল সংগীতে বেতার শিল্পী হিসেবে এনলিস্টেড হয়েছিলাম। প্রশ্ন থাকতে পারে বান্দরবান কেন? কেননা ইতোমধ্যে (দু’মাস আগেই) চট্টগ্রামের অডিশন শেষ। আর আমি এপ্লিকেশন করে রেখেছিলাম অডিশনের পাঁচ বছর আগে। অথচ দৈবকারণে! আমার দরখাস্তটি খুব সম্ভবত হারিয়ে গিয়েছিল। পরে ওস্তাদ বললেন, বান্দরবানে জেলা বেতার কেন্দ্রে ট্রাই করতে। বছর কয়েক পর কারণ দেখিয়ে ট্রান্সফার নিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসা যাবে। আমিও রাজি হয়ে যাই। চট্টগ্রাম থেকে আমরা দু’জন অডিশন দিয়েছিলাম। আধুনিক সংগীতে শিল্পী হাসান জাহাঙ্গীর (চট্টগ্রামের একজন প্রতিষ্ঠিত সংগীত ও বাচিকশিল্পী)আর আমি নজরুলে। অনুষ্ঠানের আগের দিন দু’জনই বিশিষ্ট তবলাবাদক ঝুলন দা’র (ঝুলন দত্ত) নেতৃত্বে ভালো একটি শেষ রিহার্সেল সম্পন্ন করি। পরে দু’জনেই দুই ক্যাটাগরিতে টিকে যাই।
আমি কিছুটা চাপা স্বভাবের বলে (কাছের বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষী ছাড়া) অনেকেই জানে না আমি গান করি। যদিও পেশাগত ব্যস্ততা, লেখালেখির প্রতি ব্যগ্র আগ্রহ সবমিলিয়ে গানকে আর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নেওয়া হয়নি। কালেভদ্রে অফিস ছুটিতে বন্ধের দিন, সপ্তাহে দুই-একদিন ঘরে বসেই মনের আনন্দে কিছুটা চর্চা করি। যদিও প্রফেশনালি শিক্ষকতায় নিবেদিত হওয়ার পর, ম্যাগাজিন সম্পাদনাসহ (বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানসহ প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে) প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও মাঝেমধ্যে সহযোগিতামূলক অংশগ্রহণ থাকে।
সুতরাং শিশু বয়সের মাটির তৈজসপত্র বানানো, আঁকাআঁকি-গানসহ বিবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকায় আমি মানুষটি—জীবনের নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে, নিজের শিক্ষকতা পেশা আর লেখালেখিই আমার আরাধ্য বিষয়—ললিতকলার নানা অনুষঙ্গের নানাজারক রস আকণ্ঠ পান করে, এই লেখক হওয়ার বাসনাটাই চেতনে-অবচেতনে মজ্জাগত হয়ে গেছে। ওখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারিনি। যদিও সেইসব সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ আমার পেশাগত জীবনে আর লেখক জীবনে উপকারদিয়েছে। আমার বাবার বংশ এবং মায়ের বংশের সবাই গৌরববোধ করে। আমাকে নিয়ে তাদের যথেষ্ট আগ্রহ আছে। নিজের মজ্জাগত অভ্যাস আর ব্যগ্র ইচ্ছাশক্তি এই দু’য়ের সম্মিলনে আজও আমি লিখি। ইতোমধ্যে কবিতা আর প্রবন্ধ লিখে অঞ্চল ছাড়িয়ে দেশ, দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরের বাঙালি লেখক শিবিরে, বোদ্ধা মহলে বেশ সাড়া পেয়েছি।
আমার সৃজনশীল নানা কর্ম আর লেখালেখির বিষয়বৈচিত্র্যের আত্মায় বড় প্রেরণা যোগ করেছে, বাংলা সাহিত্যের তিন ক্লাসিক শিল্পী; তিন বন্দ্যোপাধ্যায়—মানিক, তারা আর বিভূতি। আমার লেখার অস্তিত্বজুড়ে তারা অন্যতম এবং নানাভাবে বিরাজমান। ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্ট প্রভাবিত (ঢেউ-তরঙ্গের বিপরীতে) এক রোখা সাহিত্যের ভাষা-কাঠামোর শরীর ভেঙে এই উপমহাদেশের মানুষ, প্রকৃতিও প্রাণের (হৃদস্পন্দনের) ভেতরের যে গূঢ় শ্বাস ও আঁশ—এই তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ে তা নানাভাবে পাওয়া যায়। নানা পারস্পেক্টিভে তাদের নন্দন নিংডে নিলেই সেই বৃহত্তর অনুভূতির মর্ম স্পর্শটুকু সহজেই ধরা যাবে; ধরা যাবে কোথায় আমাদের স্বজাত অস্তিত্ব? আমিও সবসময় তাদের শিল্প-সামর্থের, হৃদ-স্পন্দনের ভেতরের অনুভবটুকু বুঝার ব্যগ্র চেষ্টা করি। এবং তাদের অনুপ্রেরণায় নিজেদের কথাই যুগোপযোগী করে বলতে চেয়েছি। হোক সে কবিতায়, গদ্যে, প্রবন্ধে গল্পে অথবা নানা-কথনের শত ডালায়। আমার কাছে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা মহাদেশ তথা আমাজনের দুর্ভেদ্য রহস্যের চেয়ে অজন্তা, ইলোরাও কম রহস্যঘন নয়। সত্যি বলতে আমরা আমাদের প্রাণভোমরা, মরমি সাধক লালন, খনা, বুদ্ধসহ শত পণ্ডিত-মনীষীর প্রজ্ঞাময় হিরকখণ্ডকে এখনো অন্যরকম গর্ব করতে পারি।ঘরের পাশের আরশি নগরের খবর অথবা কেশেরআঁড়ে কী পাহাড় লুকায়? অথবা আট কুটুরি নয় দরোজার ভাবসম্পদ কী? এ থেকেও কত নতুন সৃজন ও মনন আমরা ধারণ করতে পারি। শুধু অনুভব ও প্রজ্ঞার সঠিক দরোজা-জানালা খোলা রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেই হয়। তাই, বাইরের শতো হাওয়া, বিচ্যুতি ও অন্ধতা দেখেও অভিমানে-অবজ্ঞাতে, নিজেকে নিজের মাটির উৎস থেকে কখনো টলাতে পারি না।
যে বিষয়টি না বলেই নয়, জীবনের এতদূর আসার পেছনে যিনি বড় ছায়া ছিলেন তিনি হচ্ছেন আমার মা। পরিবারের বড় অভিভাবক।যার নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা আর আগ্রহে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন একটি পরিবারের সুন্দর ইমারত। খুবই ধৈর্যশীল একজন মানুষ। আমারবেড়ে ওঠা এবং অভিভাবক হিসেবে আমার মা-ই ছিলেন জীবনের বড় শিক্ষক। পরবর্তী জীবনে যে দু’জনের কথা না বললেই নয়, তিনিহচ্ছেন আমার শ্রদ্ধেয় জ্যেষ্ঠ সমাজ সেবক নুরুল আবছার (পিতৃতুল্য তিনিই, বর্তমানে বয়স্ক মায়ের পর, পুরো পরিবারের হাল ধরেছেন।পরিবারের খুঁটিএখনো আগলে রেখেছেন), আমেরিকা প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার মামা, সৈয়দুল আলম। ছোটবেলা থেকেই মা, বড় ভাই আর মামা—আমার জীবন গঠনে এরা বড় ভূমিকা পালন করেছেন। এর মধ্যে সংসার পেতেছি চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ—ইয়াছমিন মৃত্তিকা। সেও কবিতা লিখে। আবৃত্তিসহ ভাল ফটোগ্রাফি করে। স্বপরিবারে, আমরা ছোট এক সন্তানসহ তিন সদস্যের পরিবার। লেখালেখির জায়গায় আমার প্রতি তার বিশেষ সাপোর্ট আছে বলে বর্তমানে তার ভূমিকাও অনস্বিকার্য।
নিজের ধ্যান ও কর্ম বলতে, চট্টগ্রামের একটি স্বনামধন্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে (সাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ক্যামব্রিজ, চট্টগ্রাম) শিক্ষকতা। পাশাপাশি নিজের স্বপ্ন আর আগ্রহ বলতে বই পড়া, লেখালেখি করে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা।
পৃথিবীতে কিছু জিনিসের মূল্য এতই উঁচু আর দামি যে, সত্যি যার কোনো অর্থমূল্য হয় না। আরও বড় সত্য হলো যাপিত জীবনে প্রচুর ঐশ্বর্য বা অর্থোপার্জনের অনেক মোহ হাতছানি দিয়ে ডাকলেও ও-পথে কেন জানি পা বাড়ানো হয়নি। অনেকটা আমার বাবার মতোই। তিনি ছিলেন জমিদার, ভূ-স্বামীর ছেলে। ব্রিটিশ সময়ের এন্ট্রান্স পাশ করা পণ্ডিত মানুষ। পুরো পাড়া জুড়ে হাতে গুনা দু’একজন শিক্ষিতের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।
জীবনে লোভনীয় অনেক অফার ও কর্ম ছেড়ে নিজের ঘরেই থিতু হয়েছেন। ঘর-কামলা করেছেন। কৃষকগীরী করেছেন। যদিও খণ্ডকালীন শিক্ষকতা পেশার সাথেও যুক্ত ছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, এটা তার নিজ মেজাজ মর্জি ও ইচ্ছার ওপর। অনেকটা রেসপনসিবিলিটি বা দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে। স্কুলে কোন অনিয়ম অভিযোগ থাকলে পাড়ার স্কুল কমিটি থেকে বাবাকে পাঠানো হতো বা তিনিও স্বেচ্ছায় যেতেন। প্রায় মাস-চারেক স্কুলের হেডমাস্টারসহ সবাইকেই মোটামুটি তার দীক্ষা/নির্দেশনায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে স্কুলের পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে আসলে আবার সেই
চিরাচরিত গৃহবাস। নিজের বাপ-দাদার ভিটা জমিতে ফসল ফলানো, মাছ ধরাসহ গৃহের নিত্যকর্ম ছিল তার সঙ্গী। ভাল বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু জানতেন। শিক্ষাদীক্ষায় একটি অনগ্রসরগ্রামে, তিনি ছিলেন সত্যি আমার কাছে বিস্ময়পুরুষ! বলা যায় তার জ্ঞান, স্বভাব ও হিউমার আমারও কিছুটা মজ্জাগত।
জীবনের এই পর্যন্ত এসে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি; কেননা শিল্প-সাহিত্য জগতে আসতে গিয়ে,সেই স্কুল লাইফ থেকেই অনেক বড় জ্ঞানীগুণী মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। একসময় চট্টগ্রামের পুরনো বাতিঘর, বলাকা প্রকাশন, শৈলি প্রকাশন, আবির প্রকাশন, নন্দন বইঘর প্রথমা প্রকাশনসহ (প্রাক্তন), চট্টগ্রাম চেরাগী পাহাড়ে সাহিত্য বিষয়ে নানা আড্ডা চলতো। এছাড়াও চট্টগ্রামের যে ৩টিপ্রতিনিধিত্বশীল লিটলম্যাগ ও প্রকাশনার কথা না বললেই নয়—কবি মনিরুল মনির সম্পাদিত লিটলম্যাগ ‘খড়িমাটি’ ও ‘খড়িমাটি’ প্রকাশন। কবি আলী প্রয়াস সম্পাদিত ‘তৃতীয় চোখ’ লিটলম্যাগ ও ‘তৃতীয় চোখ’ প্রকাশন। কবি মঈন ফারুক ও কবি চৌধুরী ফাহাদ এর ‘চন্দ্রবিন্দু’ লিটলম্যাগ ও ‘চন্দ্রবিন্দু’ প্রকাশন। লিটলম্যাগ’র পাশাপাশি চট্টগ্রামের প্রকাশনা জগতে এই চার কবি ও লেখক, চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে বাংলাদেশেও এখন বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেছেন। চট্টগ্রামের বর্তমান সাংস্কৃতিক অঙ্গনে, নিজেরা নিজেদের অবস্থানে স্বতন্ত্র ও সাংগঠনিক দক্ষতায় অনন্য।
স্কুল জীবন থেকেই আজাদী পাড়ার স্বনামধন্য মানুষ—শ্রদ্ধেয় অরুণ দাশ গুপ্ত, প্রয়াত সিদ্দিক আহমেদ, প্রয়াত অরুণ সেন, রাশেদ রউফ, প্রদীপ দেওয়ানজি, কামরুল হাসান বাদল, জাহেদ মোতালেব, শুকলাল দাশসহ বড় বড় অগ্রজদের সাথে ওঠা বসা ছিল (আজওঅব্দি)। অবশেষে অনেক পরে, অনার্স থার্ড ইয়ার থেকে চট্টগ্রামের গুলজার সবুজ হোটেলে, শুক্রবার নিয়মিত সাপ্তাহিক আড্ডাসহ চমৎকার জ্ঞানগর্ভ আড্ডায় সামিল হতে
শুরু করি। এখানে এসেই জানতে পাই, সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা, এজাজ ইউসুফী সম্পাদিত লিটলম্যাগ ‘লিরিক’-এর কথা। তিনিসহ সবুজ হোটেলকেন্দ্রিক (সবুজ আড্ডা নামে) আরও কিছু জ্ঞানী, তাত্ত্বিকদের সমন্বয়ে এক বড়সড় আন্দোলনের কথা। সেই আশির পর থেকেই এজাজ ইউসুফীসহ তাদের অদম্য যাত্রা এখনো চলমান আছে।
তাদের প্রভাবে সেই সময় থেকে নিজেও এই সাহিত্য আন্দোলন সম্পর্কে নানা খোঁজখবর নেওয়া ছাড়াও পড়াশোনা করি। তাদের দর্শন, আইডিওলজি বুঝার চেষ্টা করি। এই সবুজ হোটেল থেকেই ‘সবুজ আড্ডা’ (সম্পাদক, কবি ও প্রাবন্ধিক সাজিদুল হক), ‘পুষ্পকরথ’ (সম্পাদক, কবি ও প্রাবন্ধিক হাফিজ রশিদ খান) ‘যদিও উত্তরমেঘ’ (সম্পাদক, কবি ও প্রাবন্ধিক জিললুর রহমান), ‘দুপুরলতা’ (সম্পাদক, কবি রিজোয়ান মাহমুদ) ‘শাঁখ’সহ (সম্পাদক, কবি শেখর দেব) আরও কিছু লিটলম্যাগের যাত্রা শুরু হয়। যদিও এখানে বিভিন্ন মতাদর্শের, বিভিন্ন পেশার মানুষের উদার সহাবস্থান ও আগমন আছে। যেখানে সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজনীতি অর্থনীতি থেকে শুরু করে অনেক বিষয়েই তুমুল আড্ডা, আলোচনা হয়। অগ্রজদের পাণ্ডিত্য, সরব উপস্থিতি দেখে সেই থেকে নিজেও ওই আড্ডায় সামিল হয়েছিলাম। বর্তমানে খুব নিয়মিত না হলেও মাঝেমধ্যে এখনো ঠিকই যাই; আড্ডায় সামিল হতে। পুরনো মানুষগুলোর সাক্ষাৎ ও সান্নিধ্য পেতে।
সক্রিয়ভাবে প্রায় দুই যুগের কাছাকাছি লেখালেখির সুবাদে আঞ্চলিকভাবে বিভিন্ন সম্মাননাসহ লেখক পুরস্কার পেয়েছি। ঠিক এরই মধ্যে ২০২০ এ পেয়েছি—নিজ অঞ্চল ছাড়িয়ে, দেশের বাইরের একটি বড় সাহিত্য সম্মাননা—মধ্যযুগের একজন পুঁথিসাহিত্যিক ও কবি’র নামে প্রবর্তিত—‘চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি দোনাগাজি সাহিত্য পদক-২০২০’। যেখানে বাংলাদেশের নিবেদিত প্রাণ ও শুদ্ধতম শিল্পীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।
বছর কয়েকের ভেতর বাংলাদেশের কিছু ওয়েবম্যাগ ও সাহিত্য পত্রিকায় কবিতার পাশাপাশি গবেষণা ও অনুসন্ধানীমূলক প্রচুর গদ্য ও প্রবন্ধ লিখেছি। তার মধ্যে খুব সম্প্রতি বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য শক্তিমান চিন্তক, কবি ও প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ নূরুল হক, কবি, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক কাজী মহম্মদ আশরাফ, কবি ও প্রাবন্ধিক মামুন রশিদ—এই ত্রয়ী শিল্পীকে নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধসহ করোনা বিষয়ে অনুসন্ধানীমূলক প্রায় ২০টি প্রবন্ধ রয়েছে। ‘চিন্তাসূত্র’, ‘সংক্রান্তি’, ‘কাব্যশীলন’, ‘বুনন’, ‘যোগসূত্র’সহ দেশের কয়েকটি প্রতিনিধিত্বশীল ওয়েবম্যাগ, লিটলম্যাগ ও দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতা উল্লেখযোগ্য।
এভাবে স্কুল জীবন, কলেজ জীবন, ভার্সিটি জীবন—সবক্ষেত্রেই পড়াশোনার সঙ্গে উল্লিখিত নানাবিধ সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞসহ এই লেখালেখিটাই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ছিল। আমি ভাগ্যবান এই জন্য যে, আমার পড়াশোনার বিষয় (সাবজেক্ট), আমার বর্তমান পেশা, আর লেখালেখি—এই তিনটার দারুণ একটি সমন্বয় বা মিল আছে; যা অনেকের ভাগ্যে হয় না। এইটা আমার লেখক জীবন ছাড়িয়ে পেশাগত জীবনেও অনেক সমৃদ্ধি দিয়েছে। নিজের ধ্যান ও কর্ম বলতে, চট্টগ্রামের একটি স্বনামধন্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে (সাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ক্যামব্রিজ, চট্টগ্রাম) শিক্ষকতা। পাশাপাশি নিজের স্বপ্ন আর আগ্রহ বলতে বই পড়া, লেখালেখি করে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা।