[পর্ব-২: শেষ পর্ব]
২.খ) গ্রাহামবেল মিউজিয়াম
সেন্ট ফ্রান্সিস জাভিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের তোরণ পেরিয়ে জিয়ার স্টিয়ারিং ক্যাবট ট্রেইলের পথ দিয়ে ধেয়ে চললো। দুই পাশে ম্যাপল ও অ্যাপল গাছের ঘন বন। আপেল ধরে লাল হয়ে আছে বুনো আপেলের গাছে। কেউ পাড়ছে না, কেউ খাচ্ছে না। একসময় অস্থির হয়ে গাড়ি থামাতে বাধ্য করলো রুমি। রাস্তার একপাশে আপেল গাছের ঝাড়ের পেছনে লোকজন বড়শি বাইছে। রুমি গিয়ে গাছ থেকে আপেল পাড়তে লাগলো, কিছু মাটিতে পড়ে থাকা আপেলও কুড়িয়ে নিল। জিয়া বললো, এসব বুনো আপেল স্থানীয়রা এমনিতে খায় না, তবে বেশ কিছু আপেল নিয়ে আচার বানিয়ে খায় কেউ কেউ। যাই হোক, আবার পথ চলা। দুই পাশে গাছের পাতাগুলো লাল হলুদ নানা বর্ণ ধারণ করে এমন এক অভূতপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি করলো যে, মনে হলো যেন চারদিকে আগুন লেগেছে। গাছের পত্রপল্লব যেন আগুনের গনগনে শিখা। রবিঠাকুরকে মনে পড়ে গেল—‘শীতের হাওয়ায় লাগলো নাচন, লাগলো নাচন আমলকীর ওই ডালে ডালে।’ এমন চলতে চলতে আমরা একজায়গায় দেখি স্নিগ্ধ জলাশয়, আর অপরপাশে পাহাড়ি টিলার ওপরে একটি স্থাপনা। দেখলাম, এটা আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল মিউজিয়াম।
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৮৪৭ সালের ৩ মার্চ স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন স্কটিশ-বংশোদ্ভূত উদ্ভাবক, বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী, যিনি টেলিফোন আবিষ্কারের জন্য প্রসিদ্ধ। তিনি ১৮৮৫ সালে আমেরিকান টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ সংস্থা (এটিএন্ডটি)-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
টেলিফোন বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। টেলিফোন বিভিন্ন পথপরিক্রমায় আজকের মোবাইল ফোন। টেলিফোন মানুষের মুখের কথা প্রেরণ ও গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যার মাধ্যমে একে অন্যের কাছ থেকে বহু দূরে অবস্থিত একাধিক ব্যক্তি মৌখিক যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। সারা বিশ্বে শত শত কোটি টেলিফোন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। টেলিফোনের মাধ্যমে হাজার হাজার মাইল দূরের মানুষের সঙ্গেও কথা বলা যায়।
আলেকজান্ডার গ্রাহাম টেলিফোনের অন্যতম আবিষ্কারক। গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করে তিনি প্রথম যে কথাটি বলেন, তা হলো ‘হ্যালো’। সেই থেকেই হ্যালো শব্দটি বিশ্বজুড়ে টেলিফোন ব্যবহারকারীদের কাছে একটি প্রিয় শব্দ। আজকাল আমরা রিসিভার তুলেই ‘হ্যালো’ বলে সম্বোধন করি অন্যপ্রান্তে থাকা বাবা-মা, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রী, বন্ধুদের সঙ্গে। ফোন কানে তুলেই উচ্চারিত Hello শব্দটি প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের মুখেই। হ্যালো তার বান্ধবীর নাম। পুরো নাম মার্গারেট হ্যালো। ১৮৭৬ সালে টেলিফোন আবিষ্কারের পর তিনি তার বান্ধবী হ্যালো কেই প্রথম ফোনটি করেছিলেন। যদিও এ ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেছে। মানুষ গ্রাহাম বেলকে ভুলে গেলেও কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটিকে ভোলেনি। টেলিফোন নামক যন্ত্রটি যতদিন থাকবে ততদিন মার্গারেট হ্যালো বেঁচে থাকবেন মানুষের মুখে মুখে।
গ্রাহাম বেলের মা ও স্ত্রী দু’জনেই ছিলেন বধির। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যই তিনি শ্রবণশক্তি সম্পর্কিত ডিভাইস নিয়ে কাজ করেন। এরই এক পর্যায়ে তিনি টেলিফোন অবিষ্কার করেন। জীবদ্দশায় আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। যা মানব কল্যাণের ইতিহাসে স্মরণীয় থাকবে। পরবর্তী জীবনে বেল আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন যার মধ্যে রয়েছে উড়ো নৌকা এবং বিমানচালনবিদ্যা। ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বেল। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন যে টেলিফোন, সেটিকেই তিনি এক উটকো ঝামেলা জ্ঞান করতেন। এজন্যেই নিজের গবেষণা ও অধ্যয়ন কক্ষে কোন টেলিফোন রাখতেন না। গ্রাহাম বেল ৭৫ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২ আগস্ট নোভা স্কোশিয়ায় মৃত্যু বরণ করেন। বেল মারা যাওয়ার পর আমেরিকার সকল টেলিফোনে এক মিনিটের জন্য অবিরাম রিং বাজানো হয়। মার্কিন প্রশাসনের ভাষ্য মতে যে মহান ব্যক্তি মানুষে-মানুষে যোগাযোগের এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তাকে উপযুক্ত সম্মান দেখানোর জন্যই এমনটি করা হয়েছে।
গ্রাহাম বেলের নানান আবিষ্কারের মডেল, ছবি, এমনকি প্রামাণ্য চিত্র দিয়ে অসামান্য স্থাপত্যের এই মিউজিয়ামটি সাজানো। আমরা যখন মিউজিয়াম দেখে বেরিয়ে এলাম, এর বাইরের অনুপম ঘাসের গালিচায় অরণি অনেকটা সময় ধরে গড়াগড়ি খেল। তারপর আবার বেরিয়ে পড়া।
২ .গ) ইনগনিশ: (৩০/৯/১৯—০১/১০/১৯)
মিউজিয়াম থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যাগগন রক্তিম হয়ে এসেছে। আমরা ছুটলাম আমাদের রাতের আশ্রয়ের দিকে। আরও অনেক দীর্ঘ যাত্রার পরে ছোট একটি গ্রাম ইনগনিশের দেখা মিললো। এখানে রাস্তার একপাশে একটি কটেজ হোটেল স্কাইলাইনের দেখা মিললো। কোনোরকমে লাগেজ রেখে আমরা বেরিয়ে এলাম ডিনারের সন্ধানে। এখানে কটেজে খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই রাস্তার অন্য পারে মেইন স্ট্রিট রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম। এখানের খাবার মানেই নানারকম মাছ। নোভা স্কোশিয়াতে শুধু মাছ আর মাছ। আমরা যে ক’দিন এখানে কাটালাম, এখানে লবস্টার ও হেডক মাছের রাজত্ব। স্যামনও আছে। এখানে ছবি তোলার সময় একটু হাসার জন্যে স্মাইল বা চিজ না বলে লবস্টার বলা হয়। আমরা ডিনার করলাম হেডক, লবস্টার আর স্যামন মাছের বিভিন্ন উপাদেয় পরিবেশনা দিয়ে। খাবার পরে রাতে আর চোখ খুলে রাখা কঠিন ছিল। সারাদিনের ক্লান্তি এসে ভর করলো চোখে। যখন ঘুম ভাঙলো, তখন সকাল ৭টা।
বেশ আয়েশ করে আলসেমী ভেঙে সকাল দেখতে বের হলাম। কটেজের সামনে ছবি তুললাম। তারপর ছুটে গেলাম রাস্তার ওপারের রেস্তোরাঁয়। সকালের নাশতা খেলাম লবস্টার ওমলেট দিয়ে। তারপর কফি খেয়ে আবার ছবি তোলা। তারপর ফের ছুটে চলা ক্যাবট ট্রেইলে।
৩) ইনগনিশ, ন্যাশনাল হেরিটেজ পার্ক, স্কাইলাইন ট্র্যাকিং: (০১.১০.২০১৯)
ইনগনিশের স্কাইলাইন কটেজ থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যেতেই আটলান্টিকের পাড়। বেশ বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পাথুরে পাড়ে। কিন্তু সাগরপাড়ে আয়েশ করে বসার তেমন জুৎসই জায়গা মিললো না। পরে আমরা গাড়ি ঘুরিয়ে আরেক পাশের রাস্তায় গেলে দেখি সেই পথে টিকিট করে ঢুকতে হয়। বিস্তীর্ণ এলাকাটি সরকারীভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে “ন্যাশনাল হেরিটেজ পার্ক” নামে। প্রথমে ছুটে গেলাম সাগরপাড়ের দিকে। সুন্দর পাথরে সাজানো বেড়ীবাঁধ তুল্য পাড়ে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। এখানে আটলান্টিকের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পাথরগুলোর পদপ্রান্তে। উল্টাদ্কে তাকাতেই একটি সবুজ সাজানো বাগানতুল্য এলাকা শিশুদের খেলার আর বয়স্কদের বসার আয়োজনও রয়েছে। আর তার পরে স্থির শীতল মিঠাপানির লেক। কিছুক্ষণ টুলে বসে দুই পাশের দুইরকম জলরাশির বাস্তবতাকে অনুভব করার প্রয়াস পেলাম। তারপর একসময় বাচ্চাদের তাগাদা পেয়ে উঠে পড়ি পরের গন্তব্যের লক্ষ্যে।
এর পরে পাহাড়ের গা বেয়ে সর্পিল রাস্তা ধরে ওঠা আর নামা। কখনো ঘন জঙ্গল, কখনো সাগরের পাড়, এভাবে বিপুল বিস্ময়ের সঙ্গে দেখে যাচ্ছি প্রকৃতির অপরূপ লীলা। মাঝে মাঝে ছবি তোলা চলছে। এদিকে চারপাশের গাছে যেন আগুন লেগেছে দেখে রুমি তো অস্থির হয়ে গেলো। বারবার নেমে নেমে আমরা ছবি তুললাম। একসময় পৌঁছালাম লেকি’স হেড নামের একটি জায়গায়। এখানেও বাতিঘর, সাগর পাড়। যথারীতি ছবি তুলে আবার পথ চলা। ক্যাবট ট্রেইলের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে চলতে চলতে ক্ষুধার্ত হয়ে গেলাম সকলে। পথিমধ্যে একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবারে আবার সেই হেডক আর লবস্টার নিলাম। উদরপূর্তির পর পরই আবার ছুটে চলা ক্যাবট ট্রেইলে। যেন ‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো।’ আর সত্যিই পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ এখানে। যখন গাড়ি থামলো, সর্বোচ্চ পাহাড়টির চূড়ায় এসে পৌঁছালাম। এখান থেকে শুরু হবে হাঁটা, পাহাড়ীপথ ধরে স্কাইলাইন ট্র্যাকিং। ভেবেছিলাম একটা ভয়াবহ পাহাড়ী পথে হাঁটার অভিজ্ঞতা হবে। যেমন সব শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে বান্দরবান অঞ্চলের বিভিন্ন অভিযানে। কিন্তু পরে বুঝলাম, এটা বয়স্ক টুরিস্টদের মনোরন্জনের ট্র্যাকিং, এডভেন্চারের কিছু নয়। তবু চারপাশের বৃক্ষরাজির রংবেরঙের সাজসজ্জায় সুন্দর পাহাড়ী পথে হাঁটতে হাঁটতে কখনো কখনো দূরের সড়কের দৃশ্য, কখনো আবার আটলান্টিকের জলরাশি আমাদের মুগ্ধ করে রেখেছে। চলার পথে বিশ্রামের ব্যবস্থা, শৌচাগার সবই রয়েছে। ট্রেইলের মাঝখানে একটি বেশ বড় এলাকা ঘেরা দিয়ে সংরক্ষিত করে গবেষণা চালানো হচ্ছে বিশালাকৃতি মুজ-এর বিচরণ ব্যাকিরেকে বনায়নে কি প্রাকৃতিক প্রভাব পড়ে তা দেখা হচ্ছে। শুনেছিলাম এখানে চলার পথে কখনো সখনো মুজ দেখা যায়, আমি বোধহয় ততটা পুণ্যবান নই, মুজ দেখার সৌভাগ্য আমার হলো না। যাই হোক ট্র্যাকিং শেষ করে ক্লান্ত সকলে যখন ফিরতি পথে তখন একটু বৃষ্টির ছিটে এসে আমাদের দৌড় করিয়ে ত্রস্ত গাড়িতে পৌঁছে দিলো। এবার সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘুম্ নেতিয়ে পড়লেও জিয়া প্রবল নিষ্ঠার সঙ্গে গাড়ি চালিয়ে গেল। তার চোখে ঝিমুনি আসছে কিনা এই ভেবে আমি বেশ শঙ্কিত ছিলাম, কিন্তু প্রকাশ করার সাহস পেলাম না।
রাত আটটা নাগাদ আমরা একটি গ্যাস স্টেশনে থামলাম। সেখানে রাতের খাবারও খেয়ে নিতে হলো, সেই হেডক মাছ আর লবস্টারের মেনু দিয়ে। তারপর আবার পথ চলা ট্রুরো শহরের দিকে। অবশেষে জিপিএসের কল্যাণে গাড়ি থামলো উইলো বেন্ড মোটেলে। এখানে নেমেই বেশ দ্রুত সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম টিপটিপ বৃষ্টি তাপমাত্রা কমাতে থাকলেও আমরা তা টের পেলাম না। পরেরদিন মোটেলে ফ্রি ব্রেকফাস্ট আছে, তাই আর কোনো চিন্তা নেই।
৪) বার্নকোট হেড পার্ক: (০২.১০.১৯)
সকালে ব্রেকফাস্ট খেয়ে রওনা দিলাম আরেকটি রহস্যময় অঞ্চলের উদ্দেশ্যে। আটলান্টিকের তলদেশ জলশূন্য হয়ে পড়ে ফান্ডি উপসাগর এলাকায়। এখানে ভাটার সময় ৪৫ ফুট পানি নেমে যায়। ফলে সাগরের তলদেশে হাঁটাচলা করা যায়। অনেক সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের দেখা মেলে। এমনকি ছোট ছোট দ্বীপের তলা ও গোঁড়া উন্মুক্ত হয়ে যায়। আবার জোয়ার এলে এই গভীর সমূদ্র চিরচেনা অথৈ জলধিতে পরিণত হয়। এ এক অপরিসীম বিস্ময়!
ফান্ডি বে’র তলদেশ দেখার জন্যে যে জায়গাটা দিয়ে নামতে হয়, সেই স্থানটির নাম বার্নকোট হেড পার্ক। জানা যায়, ১৭৯৫ সালে কোনো নাবিকের কোটে আগুন ধরে গিয়েছিল এই জায়গায়। যাই হোক নামের সঙ্গে এর কাজের কোনো মিল পেলাম না। এখানে ভাটার সময় একটি বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে জল সরে যায়। দেখলাম, জল শূন্য খাঁড়ি, ৪৫ ফুট জল নেমে গেছে; উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে সমূদ্রের তলদেশ। কিন্তু সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদ থেকে যায়। এরা জানে একটু পরেই জোয়ার এলে আবার জলে ভরে যাবে পুরো এলাকা। জল নেমে গেলে ছোট ছোট দ্বীপগুলোর তলা বেরিয়ে পড়ে। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটি ঘটে বলে শুনিনি। জায়গাটার নাম কোটপোড়া না হয়ে কোটভেজা হলেই হয়তো বেশি মানাতো। ১৭৯৬ সাল থেকে এই অঞ্চল দর্শনীয় স্থান হিসেবে প্রসিদ্ধ হওয়ায় এই এলাকা হেরিটেজ প্রপার্টি হিসাবে ঘোষিত হয়েছে।
বলা হয়ে থাকে যে ১৬০ মিলিয়ন টনেরও বেশি জল প্রতিদিন ফান্ডি উপসাগরের বাইরে এবং বাইরে চলে যায়, প্রতিদিন দু’বার। এটি আমাদের গ্রহের স্বাদুপানির সমস্ত মিলিত প্রবাহের চেয়ে বেশি। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে এখানে বিশ্বের ১২টিরও অধিক প্রজাতির তিমি রয়েছে এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ জোয়ারের রেকর্ড ধারণ করা হয়েছে। এই অসাধারণ ঘটনাটি এবং এটি যে অনন্য সিস্কেপ তৈরি করেছে তা না দেখে নোভা স্কটিয়া সফর সম্পূর্ণ হয় না।
ফান্ডির জোয়ার পুরো আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার সুযেগ আমাদের হয়নি। কারণ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছেকে হবে সময়ের আগে। তবে মনে রাখা দরকার বার্নকোট হেড পার্ক এলাকায় অনেক ফসিল পাওয়া গিয়েছে এবং এখনও বিভিন্এন সময় ফসিল মেলে। এখানে একটি মিউজিয়ামও রয়েছে এসব সংরক্ষণের জন্যে।
সাগরের তলদেশে হাঁটার সময় অনেক সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের দেখা মেলে। এমনকি ছোট ছোট দ্বীপের তলা ও গোঁড়া উন্মুক্ত হয়ে যায়। আবার জোয়ার এলে এই গভীর সমূদ্র চিরচেনা অথৈ জলধিতে পরিণত হয়। এ এক অপরিসীম বিস্ময়! নিম্ন জোয়ারে সমুদ্রের তলে হাঁটতে পারা এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ জোয়ারের ঘটনা জানা, ফান্ডি উপসাগরের বার্নকোট হেড পার্কটি ঘুরে দেখতে দেখতে মন চলে যাচ্ছে প্রাগৈতিহীসিক যুগের কোনো কালে, যেখানে জীবাশ্মগুলো জীবন্ত হয়ে যায়। এখানে রয়েছে স্বতন্ত্র পাথর এবং সামুদ্রিক উদ্ভিদ, নানা প্রজাতিক শামুক, জেলিফিশ, আরও কত কী!
সাগরের তলদেশে হেঁটে আসার পরে আর কোনো নতুন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই মনে করি। আর কোনো নতুনের ধাক্কায় এই আপ্লুত অবস্থার ভাব গাম্ভীর্য কমে যাক এ আমি চাই না। তারপরও দুপুরের দিকে হারবার ভিউ রেস্টুরেন্টে থামতে হলো। এখান থেকেও জোয়ারের জল বেড়ে ওঠা দেখা যায়। দেখা যায় নিকটবর্তী একটি বাতিঘর। এখানেও আমরা নানারকম মাছের তৈরি থাবারে রসনাতৃপ্ত করলাম। তারপর সরাসরি ছুটে গেলাম ট্রুরো বিমানবন্দরের দিকে। এবার ফিরতে হবে টরন্টো হয়ে কিচেনার, জিয়ার বাড়িতে।