পর্ব-২
ভারতকে স্বাধীন করার জন্য বাঙালি বিপ্লবীরা বিশ শতকের প্রথম দিকেই সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেন। এ লক্ষ্যেই ১৯০২ সালে গড়ে ওঠে অনুশীলন সমিতি। ১৯০৬ সালে গড়ে ওঠে যুগান্তর সমিতি। এসব আন্দোলনে যুক্ত বিপ্লবীদের প্রধান কর্মই ছিল দেশ-মাতৃকার জন্য আত্মদান। এ আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৯০৮ সালে প্রফুল্ল চাকী (১৮৮৮-১৯০৮) ও ক্ষুদিরাম বসু (১৮৮৯-১৯০৮) মি. কিংসফোর্ড-এর গাড়িতে বোমা মারেন। কিন্তু ভুলক্রমে বোমা লাগে কেনেডির গাড়িতে। এতে মিসেস কেনেডি ও মিস কেনেডি নিহত হন। তৎক্ষণাৎ প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও পরবর্তী সময়ে ক্ষুদিরাম গ্রেফতার হন এবং তাঁকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। প্রফুল্ল চাকী পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ধরা পড়ার সময় বাঙালি এ পুলিশ কর্মকর্তাকে ধিক্কার জানিয়ে নিজের রিভলবারের গুলিতে আত্মহত্যা করেন।
ভারতকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করার জন্য এ সময় গড়ে ওঠে বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় (বিপিন গাঙ্গুলী, ১৮৮৭-১৯৫৪)-এর আত্মোন্নতি সমিতি (১৮৯৭), হরিকুমার চক্রবর্তী (১৮৮২-১৯৬৩)-এর চব্বিশপরগনার চিংড়িপোতা দল (১৯০৬), যতীন রায় (১৮৮৯-১৯৭২)-এর উত্তরবঙ্গ দল, প্রজ্ঞানন্দের বরিশাল দল, হেমেন্দ্রকিশোর আচার্য (১৮৮১-১৯৩৮)-এর মৈমনসিংহ দল ও পূর্ণদাস (১৮৮৯-১৯৫৬)-এর অধীনস্থ ফরিদপুরের মাদারিপুর দল। এরা পরবর্তীতে যুগান্তর সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৃহৎভাবে সশস্ত্র বিপ্লব ঘটানোর পরিকল্পনা করেন। নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য (এম.এন.রায়, ১৮৮৭-১৯৫৪) সশস্ত্র বিপ্লব সংগঠিত করার জন্য দেশে-বিদেশে নিরন্তর পরিশ্রম করেন। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ তৈরি করে অস্ত্র সংগ্রহ করে তিনি বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তথ্য ফাঁস হওয়ায় তা ব্যর্থ হয়ে যায়। পরে তিনি বিদেশে গিয়ে বিপ্লব সংগঠিত করার চেষ্টা করেন।
রাসবিহারী বসু (১৮৮৫-১৯৪৫) বিদেশি শক্তির সহায়তায় দেশ স্বাধীন করার পরিকল্পনা করেন। এ লক্ষ্যে তিনি ১৯১৫ সালে ছদ্মবেশে বিদেশে যান এবং ভারতকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ‘আজাদ হিন্দ্ ফৌজ’ গড়ে তোলেন।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মকভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছিল। আবার কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যেও মতানৈক্যের ফলে কেন্দ্রীয় সরকার কার্যকরিতা প্রায় হারিয়ে ফেলে।
সংঘবদ্ধ উপায়ে সশস্ত্র সংগ্রাম করেন বাঘা যতীন। যুগান্তর সমিতির প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বাঘা যতীনই প্রথম সঙ্গীদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে ব্রিটিশ সৈন্যদের সঙ্গে বালেশ্বরের চাষাখণ্ডে যুদ্ধ করে আত্মাহুতি দেন। ১৯৩০ সালে সূর্যসেন (১৮৯৪-১৯৩৪)-এর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ করা হয় ও বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়। তবে এ সরকার স্বল্পায়ু ছিল।
ব্রিটিশ সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধে তার সরকারের পতন ঘটে। সশস্ত্র সংগ্রামে যুক্ত হয় নারীরাও। আন্দোলনে নতুন মাত্রার সংযোজন ঘটে। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১-১৯৩২), শান্তি, সুনীতি, বীণা দাস সশস্ত্র সংগ্রামে নারী নেতৃত্বের পথিকৃৎ। প্রীতিলতার নেতৃত্বে ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাবে সফল আক্রমণ করা হয়।
আক্রমণের পরে বিজয়িনীর বেশে ফেরার পথে আত্মগোপনকারী ইংরেজ যুবকের গুলিতে আহত হয়ে প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন। ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকারের আস্তানা রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করেন বিনয় (বিনয়কৃষ্ণ বসু, ১৯০৮-১৯৩০), বাদল (বাদল গুপ্ত, ১৯১২-১৯৩০) ও দীনেশ (দীনেশ চন্দ্র গুপ্ত, ১৯১১-১৯৩১)। আক্রমণে কারাধ্যক্ষ কর্নেল সিম্পসন নিহত হয়। ফলে ইংরেজদের মনে ব্যাপক ভীতি তৈরি হয়।
ইংরেজদের শোষণ ও উৎপীড়নের প্রতিবাদে চল্লিশের দশকে হাজং চাষিরা বিদ্রোহ করেন। এতে মুসলমান চাষীরাও যুক্ত হন। হাজংদের এই বিদ্রোহের নেত্রী ছিলেন রাসমণি নামের এক বিধবা মহিলা। ১৯৪৬ সালে সোমেশ্বরী নদীর তীরে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে এক যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাসমণি মারা যান।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন হয়। এ আন্দোলন ‘স্বদেশী আন্দোলন’ নামে পরিচিত। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও এই আন্দোলন অব্যাহত থাকে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ (১৮৭০-১৯২৫) হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে বাঙালির প্রধান সমস্যা দূরীকরণের মাধ্যমে অভ‚তপূর্ব এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। দেশমুক্তির লক্ষ্যে এই ঐক্য গঠন ছিল জরুরি। এটি সম্পন্ন করেই তিনি ‘স্বরাজ দল’ গঠন করেন।
অনেক মুসলমান নেতা তার দলে যোগ দেন। কিন্তু ১৯২৫ সালে ১৬ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করলে তাঁর গঠিত ‘স্বরাজ দল’ অকার্যকর হয়ে পড়ে।
ভারতকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সুভাষচন্দ্র বসু (১৮৯৭-১৯৪৫) ব্যাপকভাবে বিপ্লবী কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তিনি বিদেশে বিপ্লব সংগঠিত করে দেশের মধ্যে সে বিপ্লবের স্রোত তৈরি করে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ভারতকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা করেন। তিনি ১৯৩৮ ও ১৯৩৯-এ পরপর দু’বার সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। শেষেরবার তিনি গান্ধি-সমর্থিত শক্ত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে পরাজিত করেন। দলের ভেতর থেকেই ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’ (১৯৩৯) গঠন করার কারণে তাকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়। ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’কে তিনি আপসবিরোধীদের প্ল্যাটফরমে পরিণত করার চেষ্টা করেন। তাকে দেশের ভেতরে ব্রিটিশ সরকার ও কংগ্রেসের রক্ষণশীল দক্ষিণপন্থী—এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে।
১৯৪১ সালে ২৬ জানুয়ারি তিনি গৃহে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় কৌশলে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশত্যাগ করেন। মূলত জার্মানি ও জাপান এবং প্রবাসী ভারতীয়দের সহায়তায় ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার লক্ষে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু প্রতিষ্ঠিত ‘আজাদ হিন্দ্ ফৌজ’কে পুনর্গঠিত করেন ও পাশাপাশি ১৯৪৩-এ স্বাধীন সরকার গড়ে তোলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ‘আজাদ হিন্দ্ ফৌজ’ উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেলেও শেষপর্যন্ত জাপানের আত্মসমর্পণের পর তার কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ে।
ফরমোজার তাইহোকু বিমান বন্দরে এক বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষচন্দ্র বসুর কথিত মুত্যুর কথা প্রচার করা হয়। আসলে তার মৃত্যু বা অন্তর্ধানের রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি।
এভাবে ধারাবাহিক বিদ্রোহে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যা ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি পরিবর্তনে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ২২ মার্চ ভারতের ভাইসরয় হয়ে এসে ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ওই সময় ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অবস্থা একটা জটিল অবস্থার মধ্যে বিরাজ করছিল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মকভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছিল। আবার কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যেও মতানৈক্যের ফলে কেন্দ্রীয় সরকার কার্যকরিতা প্রায় হারিয়ে ফেলে।
এ রকম পরিস্থিতিতে ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা করা অসম্ভবরকম কঠিন হয়ে পড়ে। এরকম সংকট পরিস্থিতিতে লর্ড মাউন্টব্যাটেন দেশের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার লক্ষ্যে ভারত ভাগ করার পরিকল্পনা তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে পেশ করেন। এই পরিকল্পনা ‘মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা’ নামে পরিচিত।
পশ্চিমা পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব বাংলার দূরত্ব ছিল বহু, ভাষা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিতেও কোনো মিল ছিল না। শুধু ধর্মের ভিত্তিতে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব বাংলাকে যুক্ত করে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করা হয়।
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার মধ্য দিয়ে। চতুর ইংরেজ ভারতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ও হিন্দু-মুসলমানের বিভাজনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অগ্নি পরিস্থিতি তৈরি করে অখণ্ড ভারতকে খণ্ডিত করে ফেলে। খণ্ডিত করে ফেলে বাংলাকেও। পূর্ব বাংলা, পশ্চিমবাংলা, আসাম ও ত্রিপুরা—চার বাংলার তিন বাংলা ভারতের সঙ্গে থেকে যোয়, বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় পূর্ব বাংলাকে।
ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটলেও ভারত ও বাংলা ভাগের মধ্য দিয়ে এখানে চিরকালের জন্য বিয়োগান্তক এক অধ্যায় রচনা করে। পাকিস্তান দুটো অংশে বিভক্ত হয় পশ্চিম পকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান। ট্রাজেডিটা এখানেই। পূর্ব বাংলা যেটাকে পূর্ব পাকিস্তান অভিধা দেয়া হলো ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত করে দেওয়া হলো, তা বাংলার জন্য সবচেয়ে বড় দুভার্গ্যরে মহাকাব্য হয়ে থাকলো। যার চ’ড়ান্ত পরিণতিও ঘটে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
ভারতকে দ্বিখণ্ডিতকরণ ও বাংলার বুকে শাণিত ছুরি চালিয়ে দুভাগ করার কথা বিপ্লবী ও রাজনীতিকরা কখনো ভাবেননি। কিন্তু ইংরেজের চতুরতার ফাঁদে রাজনীতিকরা আটকে যায়—তাদের অদূরদর্শিতার কারণে, কিছু রাজনীতিকের ব্যক্তিক সুবিধার কারণে ভারত ও বাংলা বিভাগ অনিবার্য হয়ে ওঠে। লর্ড মাউন্টব্যাটনের পরিকল্পনার আগেই ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল অবিভক্ত বাংলার শেষ মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দিল্লিতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে আলোচনা করে ‘স্বাধীন বাংলা’ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। এতে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের প্রধান সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ, কংগ্রেস পার্লামেন্টারি দলের বাবু কিরণশঙ্কর রাং এবং ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা শরৎচন্দ্র বসু আশানুরূপ সাড়া দেন। বাংলার হিন্দু-মুসলমান নেতারা যুক্ত বাংলার বিষয়ে ২৮ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত বিভিন্ন বৈঠক করেন। তখন মহাত্মা গান্ধী কলকাতাতেই অবস্থান করছিলেন।
বাংলার হিন্দু-মুসলমান নেতারা পৃথক পৃথকভাবে তার সঙ্গে যুক্ত বাংলা বিষয়ে সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু তিনি যুক্ত বাংলা অর্থাৎ স্বাধীন বাংলার বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে যান। এর ফলে বাংলার হিন্দু-মুসলমান নেতারা হতাশ হন। শরৎচন্দ্র বসু স্বাধীন বাংলার জন্য একটি ছয় দফা নীতিমালা প্রণয়ন করে ঘোষণা করেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল বৃহত্তর বাংলাকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বড় দুর্ভাগ্য এই যে, স্বাধীন বাংলার প্রতি কংগ্রেস হাই কমান্ড কোনো সাড়া বা সমর্থন দেয়নি। এর ফলে যুক্তবাংলার প্রতি শুধু শরৎচন্দ্র বসু ও কিরণশঙ্কর রায় ব্যতিত আর কারোরই সমর্থন থাকলো না। এরসঙ্গে আবার শুরু হয় বাংলা ভাগ করার জন্য মহাসভার আন্দোলন। অমৃতবাজারও মহাসভার আন্দোলনকে সমর্থন করে। মুসলিম লীগও এ প্রশ্নে চুপ থাকে। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের এ রূপ আচণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন লর্ড মাউন্টব্যাটন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে ঐকমত্য সম্ভব হলেই কেবল তিনি বঙ্গভঙ্গ রোধ করবেন। এর বাইরে বঙ্গভঙ্গ রোধ করার আর কোনো সুযোগ বা পথ খোলা নেই। তিনি এও জানিয়ে দেন, কংগ্রেস বা মুসলিম লীগের যেকোনো একটি পক্ষ বাংলা ভাগের পক্ষে মত প্রকাশ করলেই বাংলা দ্বিথণ্ডিত হবে। বাস্তবে হলোও তাই। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের প্রতিনিধিবর্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অখণ্ড বাংলার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করলেও, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের প্রতিনিধিরা বাংলা ভাগের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে দেয়। ফলে পশ্চিম বাংলা ও পূর্ব বাংলা দুই অংশে বিভক্ত হয়ে যায়।
এই বিভক্তির মাধ্যমে অখণ্ড বাংলার স্বপ্ন চিরকালের মতো ধূলিসাৎ হয়ে যায়। পূর্ববাংলার প্রতিনিধিরা পাস্তিানের সাথে, আর পশ্চিমবাংলার প্রতিনিধিরা ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলা দ্বি-খণ্ডিত হয়ে পূর্ব বাংলার ললাটে লেখা হয়ে যায় আর এক খণ্ডনের ইতিহাস। পশ্চিমা পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব বাংলার দূরত্ব ছিল বহু, ভাষা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিতেও কোনো মিল ছিল না। শুধু ধর্মের ভিত্তিতে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব বাংলাকে যুক্ত করে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করা হয়। পূর্ব বাংলা নতুন নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান। পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য আর নিপীড়নের অনিবার্য জায়গা হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তান।
চলবে…
ব্রিটিশ ভারত থেকে বাংলাদেশ : সংগ্রামে-স্বাধীনতায়-০১॥ রকিবুল হাসান