এবারের বইমেলায় আপনার বই প্রকাশিত হচ্ছে? প্রকাশক কে? প্রচ্ছদ কে করেছেন? প্রকাশিত বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমার তিনটি বই বের হবে বলে আশা করছি। সাহিত্য-শিল্প বিষয়ক প্রবন্ধের বই ‘সাহিত্যের শিল্পঋণ’ বের হচ্ছে অনুপ্রাণন থেকে। প্রচ্ছদ করেছেন এই সময়ের নান্দনিক শিল্পী তৌহিন হাসান।
৭১-এর ৭১ উপন্যাস নামে একটা সিরিজ করছে ‘বেহুলা বাংলা’। এই সিরিজে আমার একটি উপন্যাস থাকছে। এবারই আমি লিখলাম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি উপন্যাস। আর একটি কবিতার বই বের হবে দেশ পাবলিকেশনস থেকে। এই দুটির প্রচ্ছদ কে করছেন এখনও জানি না।
সারাবছর লেখক-প্রকাশক বই প্রকাশ না করে এই একুশের বইমেলা এলেই বই প্রকাশের প্রতিযোগিতায় নামেন। বইমেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশকে আপনি কিভাবে দেখেন?
আমি মনে করি, বছরজুড়েই বই প্রকাশিত হওয়া দরকার। ইউরোপ আমেরিকায় সেটাই হয়। তাড়াহুড়োর মাঝে ভালো বই পাঠক বাছাই করতে পারেন না। এর জন্য সময় দরকার। আলোচনাবহুল রিভিউ দরকার। মেলার একমাসে কি সেই সুযোগ হয়? না হয় না। হয়তো কিছু ব্যবসা হয়। ব্যবসা আর পরিশুদ্ধ সাহিত্যের প্রসার কিন্তু এক নয়।
একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?
বইমেলা কিছু হুজুগে লেখক তৈরি করছে। এটা মারাত্মক দিক। ভালো কিছু বই দিচ্ছে—এটা ভালো দিক। ভালো বইগুলোর লেখকরা তা সময় নিয়ে লেখেন। তা পড়লেই বুঝা যায়। ফেসবুককেন্দ্রিক কবি হয়ে, শত-শত ‘লাইক’ নিয়ে যারা বই বের করেন, ওই লাইক যারা দিয়েছিল, তারাই কিন্তু বইটি কেনে না। সাহিত্যে প্রভাবের বিষয়টি একটি স্থায়ী শক্তি। একমাস, তা ফেলতে পারে না। যেকোনো সময় বের হওয়া একটি বই-ই কিন্তু একটি ভাষার সাহিত্যে মাইলফলক হয়ে যেতে পারে।
একুশে বইমেলা প্রকাশনা শিল্পে তরুণদের উৎসাহিত করার ব্যাপারে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
ওই যে বললাম, সবাই সস্তা লেখক-কবি হতে চায়। সাধনা ছাড়াই সিদ্ধি লাভ করতে চায়। সাধক হয়ে যেতে চায়। একটি উদাহরণ দিই। একজন তরুণ আমার কাছে প্রশ্ন করলেন—’ভাই ভালো কবিতা পড়তে চাই। কার কার কবিতা পড়ব?’ আমি অনেকের নাম বললাম। এক পর্যায়ে বললাম, শ্রীজাতের কবিতা পড়েছেন? তিনি বললেন, না ভাই। আমি অনেক জাতের কবিতা পড়েছি। কিন্তু শ্রীজাতের কবিতা পড়িনি।দেখুন, উনি কিন্তু এই কবির নামই শোনেননি! একুশের বইমেলা কিছু আবর্জনাও আমাদের জন্য রেখে যায়। লেখালেখির এই আবর্জনা কোনো কোনো সময় ভালো বইকেও ম্লান করে দিতে পারে। দেয়ও।
প্রকাশনা উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বই প্রকাশ করতে পারেন। এতে বছর বছর বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে মান বৃদ্ধি ঘটছে না বলে অনেকেরই অভিযোগ; বিষযটাকে আপনি কিভাবে দেখেন। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন আছে কি?
আংশিক উত্তর আমি আগেই দিয়েছি। নীতিমালা করে বাজে বই বের করা বন্ধ করা যাবে না। উপকরণ এখন সহজলভ্য। আর কিছুদিন পর দেখবেন ‘প্রিন্ট অন ডিমান্ড’ চালু হয়ে গেছে। তাই কম খরচেই অনেকে বই করবে। কিন্তু তা কি পাঠযোগ্য হচ্ছে? না হচ্ছে না। পাঠক আগেও বেছে বেছে পড়েছেন। আগামী দিনেও পড়বেন। বাজে বই পড়লে মানুষের মননও বিনষ্ট হয়। তা আমরা সবাই জানি। অন্যদিকে, একটি ভালো বই বদলে দিতে পারে একটি জীবন। সেই সিদ্ধান্ত পাঠককেই নিতে হবে।
বাংলাসাহিত্য কালে-কালে ধীশক্তি সম্পন্ন লেখক-কবি তৈরি করে গেছে। আমাদের মূল ভরসা তারাই। তাই আগাছা নিয়ে আমার কোনো ভাবনাই নেই।