বলিউড-মুভি ‘পদ্মাবতী’ ব্যবচ্ছেদের আগে পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানশালীর কাজের ধারাটা একটু বুঝতে হবে। কারণ তিনি যে ছবি নির্মাণ করেন, তার স্ক্রিপ্টও লেখেন নিজে, এমনকি গানও। উপন্যাস ও ঐতিহাসিক ঘটনানির্ভর কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ নতুন নয় মুম্বাইয়ে। সঞ্জয় লীলা বানশালীর এই ধারায় জোয়ার আনেন ১৯৯৯ সালে ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ দিয়ে। ওই ছবির কাহিনী ছিল মির্চা এলিয়েদের ‘লা নুই বেঙ্গলি’ আর বাঙালি সাহিত্যিক মৈত্রী দেবীর আত্মজীবনী ‘ন হন্যতে’ অবলম্বনে। এরপর কাজ করেন বাংলা সাহিত্যের মাস্টারপিস ‘দেবদাস’ নিয়ে। এরপর ‘গলিও কি রাসলীলা-রাম লীলা’ এবং সেটা ছিল সেক্সপিয়রের ‘রোমিও জুলিয়েট’-এর ছায়া অবলম্বনে। পরপর নির্মিত সফল ছবিগুলোর মধ্যে একটি অদ্ভুত মিল আছে। তা হলো—প্রতিটিই উপন্যাসনির্ভর, রোমান্টিক চলচ্চিত্র বটে, কিন্তু তিনি প্রতিটি কাহিনীই চলচ্চিত্রায়ণ করতে গিয়ে মূল কাহিনী থেকে কিছুটা সরে গেছেন বা পরিবর্তন করেছেন। চড়িয়েছেন নিজের মনের রঙ। উপন্যাসগুলো যাদের পড়া আছে এবং পরবর্তী সময়ে যারা ছবিগুলো দেখেছেন, তারা বুঝতে পারবেন এই ফারাকটা সহজে।
এসব ইতিহাস সৃষ্টিকারী মাস্টারপিস নির্মাণ করে যখন তার মন ভরছিল না, ২০০৩ সালে সিদ্ধান্ত নেন, ঐতিহাসিক কাহিনী-নির্ভর ছবি বানাবেন। শুরু করেন তার পরিচালক জীবনের অন্যতম বড় প্রকল্প ‘বাজিরাও মাস্তানি’, যেখানে ঐশ্বরিয়ার নাম ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল, কিন্তু শেষে দীপিকা পাডুকন করেন চরিত্রটি। এই ছবিটি করতে গিয়ে ও নির্মাণ শেষে ইতিহাসবিদ ও মারাঠিদের কম কথা শুনতে হয়নি বানশালীকে। বিতর্ক ছিল, তিনি মিথ্যা উপস্থাপন করেছেন। অন্যভাবে বললে বলা যায়, তিনি সত্য উপস্থাপনে কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন। যাকে রঙ চড়ানোই বলে। সব বিতর্ক সহনীয় পর্যায়ে ছিল এবং ছবিটির সব ধরনের সাফল্যে বিতর্ক স্তিমিত হয়ে যায়। তবে মারাঠি জাত্যভিমানে আঘাত করার অভিযোগ আসেনি ‘বাজিরাও মাস্তানি’ নিয়ে।
কিন্তু তার সাম্প্রতিক প্রকল্প ‘পদ্মাবতী’ এ যাবতকালের সব বিতর্ককে ছাড়িয়ে গেছে। ছবিটি রাজস্থানি কিংবদন্তি রাজপুত রানি পদ্মিনীর কাহিনী অবলম্বনে। হতেই পারে এমন ঘটনা নিয়ে ছবি নির্মাণ। কিন্তু এই ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে পরিচালক ও তার টিমকে রাজস্থানের শ্যুটিংস্পটে মার খেতে হয়েছে। শ্যুটিং বন্ধ রাখতে হয়েছে। সেন্সর বোর্ড থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কাটাছেঁড়া করে। সুপ্রিম কোর্টকে নাক গলাতে হয়েছে। সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো, পরিচালক ও ছবির কলাকুশলীদের মাথার দাম কোটি কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে রাজস্থানের রাজপুত বংশের উত্তরাধিকার ও বিজেপিকর্মীরা। শুধু রাজস্থানই নয়, হরিয়ানা, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও কর্ণাটকে চলচ্চিত্রটি মুক্তির আগেই এসব রাজ্যের খোদ মুখ্যমন্ত্রীরাই এর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন ছবিটি না দেখে এবং প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। অভিযোগ একটিই। বানশালী নাকি এ চলচিত্রের মাধ্যমে রানি পদ্মিনীকে অসম্মান করেছেন এবং তাদের রাজপুত অনুভূতিতে আঘাত করেছেন! এরকম জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিমানসম্পন্ন কলাকুশলীদের মাথার দাম নির্ধারণ করে এবং প্রায় ২০০ কোটি টাকা বাজেটের একটি উন্নত শিল্পকর্মকে নিষিদ্ধ করে যে জাত্যভিমান সন্ত্রাস ছড়ানো হচ্ছে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির ধ্বজাধারী ভারতবর্ষে, তা চলচ্চিত্র নিয়ে বিতর্কের এ যাবতকালের সব ইতিহাসকে ছাড়িয়ে গেছে। আসলে এর শেষ কোথায়, শুরুই বা কেন হয়েছে?
পদ্মাবতী চরিত্র যেভাবে এলো
স্বর্গ হন্তে আসিতে যাইতে মনোরথ ।
সৃজিল অরন্যমাঝে মহাসূক্ষ্ম পথ৷
ভুরুর ভঙ্গিমা হেরি ভুজঙ্গ সকল।
ভাবিয় চিন্তিয়া মনে গেল রসাতল৷
কাননে কুরঙ্গ জলে সফরী লুকিত।
খঞ্জন-গঞ্জন নেত্র অঞ্জন রঞ্জিত ৷
পঙ্ক্তিগুলো মধ্যযুগে বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আলাওলের অনুবাদ ’পদ্মাবতী’ (১৬৪৮) থেকে নেওয়া। মূল কাব্যগ্রন্থটি ১৫৪০ সালে লেখা সুফি কবি মালিক মহম্মদ জয়সিরের। এ কবিতায় রানি পদ্মিনীর এমন কোনো অঙ্গ নেই, যার রূপের বর্ণনা কবি করেননি। আচ্ছা, কবিতার লাইনগুলো একটু বুঝে দেখি, কবি বলছেন, স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আসা-যাওয়ার জন্য সৌন্দর্যের দেবতা অরণ্যের ভেতর দিয়ে একটি পথ নির্মাণ করেছিলেন। রানি পদ্মিনীর সিঁথি সেই পথের মতই নয়নাভিরাম। তার ভ্রূভঙ্গি এতই সুন্দর যে, মৌমাছির দল তার ভ্রূ দেখে গভীর চিন্তায় ডুবে গেলো। পদ্মিনীর কাজল রাঙা চোখ খঞ্জন পাখির চোখকেও হার মানায়, যা দেখে হরিণেরা বনে আর পুঁটিমাছগুলো জলে লুকিয়ে গেলো।
কবিতা কবিতাই। বাস্তবতা থেকে বেশ কিছুটা ‘উন্নত’ এবং কখনো কখনো রহিত। শুনতে তেতো হলেও সত্য—পদ্মাবতী চরিত্রের উদ্ভব এ কবিতার মাধ্যমেই। কারণ এর আগে রাজপুত ইতিহাসের কোথাও রানি পদ্মাবতী বা পদ্মিনীর উল্লেখ পাওয়া যায়নি বলে ঐতিহাসিকদের অনেকেই মত দিয়েছেন।
চিতোরের রাজা রানা রতন সিং ও দিল্লীশ্বর আলাউদ্দিন খিলজি তথা সুলতানদেরর মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল ১৩০৩ সালে। এ যুদ্ধের প্রায় ২০০ বছর পর কবি জয়সির তার ‘পদুমাবৎ’ কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন এবং নানা ভাষায় এটি যুগে যুগে অনূদিত হয়। কালক্রমে এটি জনপ্রিয় হয়ে লোককথায় রূপ নেয়। স্বভাবতই রাজপুত অঞ্চলগুলোয় এই লোককথা দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং শত শত বছর ধরে এই গল্প বা তাদের ভাষায় ‘ইতিহাস’ই তাদের আবেগ, আভিজাত্য ও জাত্যভিমানের প্রতীক হয়ে যায়। জায়সীরের এ কবিতা ছাড়া আরও কিছু উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম পাওয়া যায়; যা মূলত আবর্তিত হয়েছে এ কাব্যগ্রন্থের মূল চরিত্র পদ্মিনী বা পদ্মাবতীকে ঘিরে। যেমন: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজকাহিনী’ (১৯০৯), জেমস টডের ‘Annals and Antiquities of Rajas’han’ (১৮২৯-৩২) ও হেমরতন রচিত ‘গোরা বাদল পদ্মিনী চৌপাই’ (১৫৮৯) সত্য ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়; যা অনেক বেশি প্রভাবিত করে রাজপুত সমাজকে। এরপর আরও কিছু উর্দু সাহিত্য অনুবাদ হতে থাকে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজস্থান-চিতোর অঞ্চলে এই রানি পদ্মিনীর লোককথা বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এর ধারাবাহিকতায় একসময় পাঠ্যপুস্তকেও সংযুক্ত করা হয় এসব কিংবদন্তির গল্প যা রাজপুত জাত্যভিমানকে আরও জোরদার করেছে।
লোককথা বা ছবিতে যা দেখানো হয়েছে
রানি পদ্মিনীর রূপের প্রশংসা গিয়ে পৌঁছায় দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির কানে। ১৩০৩ সালে রানি পদ্মিনীকে জয় করতেই সেনা নিয়ে চিতোর আক্রমণ করেন খিলজি। রাজা রতন সিংকে কারারুদ্ধ করেন তিনি। এরপর রানির কাছে প্রস্তাব পাঠান—যদি তিনি খিলজির সঙ্গে দিল্লিতে যেতে রাজি হন, তবেই রতন সিংকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই খবর এসে পৌঁছতেই কিছুটা কূটনীতির সাহায্য নেন রাজপুতগণ। রানি ও পরিচারিকাদের পালকিতে করে কিছু সৈন্য পাঠানো হয় সুলতান দরবারে। তারা অত্যন্ত দক্ষভাবে রতন সিংকে উদ্ধার করে আনেন। কিন্তু এই ঘটনার পরেই সুলতান ক্ষেপে গিয়ে চিতোর আক্রমণ করেন। চিতোরকে ধরাসায়ী করতে বেছে নিলেন দুর্গ অবরোধ এর পথ। এদিকে রানা রতন সিং শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন রাজপুতদের।
রাজপুতরা সুলতানের বিপুল সংখ্যক সেনার সামনে হেরে গেল ও ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করে মারা যান রানা রতন সিং। খিলজি তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে দুর্গের দরজা ভেঙে ঢুকে পড়েন রানি পদ্মিনীকে অপহরণের উদ্দেশ্যে। খবর পৌঁছে রানির কাছে। তিনি বুঝতে পারেন তার সামনে দুটি মাত্র পথই খোলা আছে। এক. সুলতানের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা। আর দুই. বিষ খেয়ে মৃত্যুবরণ। তিনি বেছে নেন দ্বিতীয়টি। তার এ ত্যাগকে রাজস্থানে বলা হয় জহরব্রত। তিনি জহরব্রত পালন করে অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। রানি পদ্মিনীর সুলতানের কাছে ধরা না দিয়ে সম্ভ্রম বাঁচানোর এই পথকে রাজপুতরা শ্রদ্ধার চোখে দেখে। রানি পদ্মিনী রাজপুত মর্যাদা রক্ষার প্রতীকে রূপান্তরিত হন।
মূল ঘটনা ও ইতিহাসবিদগণ যা বলেছেন
ইতিহাসবিদদের বয়ানে ১২৯৬ সালে নিজ চাচা জালালউদ্দীনকে হত্যা করে সিংহাসনে আরোহণ করেন আলাউদ্দিন খিলজি। তিনি ছিলেন দক্ষ ও পরাক্রমশালী শাসক। ১৩০৩ সালের ২৬ আগস্ট আলাউদ্দিন খিলজি ও মেবারের রাজা রতন সিং যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে মেবার লাভ করেন খিলজি। এ আক্রমণের পিছনে খিলজির ভারত জয়ের নেশা ছাড়া আর কোনো কারণ পাননি ইতিহাসবিদরা। এমনকি পদ্মিনী নামে কোনো চরিত্রের উল্লেখও পাননি তারা। আমির খসরু—যিনি চিতোর আক্রমণের সময় আলাউদ্দিন খিলজির সভাকবি ছিলেন, তার কোনো রচনায় পদ্মিনীর উল্লেখ নেই। যদিও এসময় তিনি ‘খাজা-ই-উল-ফুতুহ’ গ্রন্থ লেখেন, যেখানে তিনি কোরআনে বর্ণিত হুদ হুদ পাখি, রাজা সলোয়ামান ও রানি সেবার গল্প লেখেন। সে গল্প অনুযায়ী রাজা সোলায়মান তার পালিত পাখি হুদ হুদকে প্রাসাদে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। যখন হুদ হুদ প্রাসাদে ফিরে এলো, তখন রাজা জানতে চাইলেন হুদ হুদ কোথায় ছিল। পাখি জানায় সে হিন্দু রানি সেবার প্রাসাদে গিয়েছিল এবং সেখানে দেখলো সবাই সূর্যকে পূজা করছে। তখন রাজা সোলায়মান হুদ হুদের মাধ্যমে রানির কাছে বার্তা পাঠান, যেন তিনি ইসলামের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন। রানি এর উত্তরে কিছু উপহার পাঠান। কিন্তু রাজা তা গ্রহণ করেননি। পরে রানি বাধ্য হয়ে ইসলাম গ্রহণে সম্মত হন। এরপর বিলকিস নাম ধারণ করেন। মোহাম্মদ হাবিব ও দশরথ শর্মার মতো ইতিহাসবেত্তারা এই গল্পের রেফারেন্স টেনে বলেন এই বিলকিসের চরিত্রটি আমীর খসরু তৈরি করেছিলেন রানি পদ্মীনিকে দেখে। কিন্তু তাদের এ যুক্তির পেছনে এক জায়সীর কাব্য ছাড়া আর কোনো শক্তিশালী বাস্তবসম্মত কারণ ছিল না। ইতিহাসবিদ সুবিমল চন্দ্র দত্তের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুদ্ধের মূল কারণ কোনো নারী বা পদ্মিনী নয় বরং দায়ী সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর সমগ্র ভারত জয়ের নেশা।। খিলজির এক অনুচর তাকে জানিয়েছিলেন তিনি যদি উত্তর ভারত দখল করতে চান, তাহলে তাকে অবশ্যই মেবার, গুজরাট, রণ-থম্ভোর এবং মালব জয় করতে হবে। মেবারের রাজা রতন সিংয়ের ওপর সুলতান বেশি ক্ষিপ্ত ছিলেন, কারণ তিনি কর দিচ্ছিলেন না ঠিকমতো। সুলতানের বিরুদ্ধে অন্যান্য যুদ্ধে সৈন্য সরবরাহ করে যাচ্ছিলেন। মূলত এ কারণেই তিনি মেবার আক্রমণ করেন। যুদ্ধে পরাজিত করে রাজপুতদের অপমান করার জন্য খিলজি রানি পদ্মাবতীকে দাবি করেছিলেন বলে তিনি মনে করেন। তবে সেই রানি বাস্তবের না কি কবিতার, সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই কোথাও।
কাহিনী কল্পনাশ্রয়ী হলেও কেন এ বিতর্ক?
খুবই সরল অঙ্ক। যদিও বিজেপির ক্ষমতায় আসার ম্যান্ডেটে ছিল দারিদ্র্য বিমোচন ও ধর্মীয় উদারতাবাদের বিকাশ। কিন্তু কঠোর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি তাদের রাজনৈতিক আদর্শ থেকে সরে আসতে পারেনি। এই ক’বছরে ভারতে হিন্দু মৌলবাদীরা ব্যাপক হাওয়া বাতাস পেয়েছে প্রশাসন ও রাজনৈতিক পরিসর থেকে। যার ফলে হিন্দু রানি পদ্মাবতীর সম্মান রক্ষার্থে হিন্দুত্ব বাদী জঙ্গিরা সোৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ কাহিনী কল্পিত না কি বাস্তব, তা বিশ্লেষণ কিংবা জানার প্রয়োজনবোধ করার অবকাশ কর্ণীসেনাদের নেই। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা অন্ধ জনতার পালে হাওয়া লাগাচ্ছেন। ধর্মীয় নেতারা এই সুযোগে খ্যাতি পাওয়ার আশায় আরও একধাপ এগিয়ে কলাকুশলীদের মাথার দাম গুনছেন। এটাকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইস্যু বানাতে তারা মরিয়া।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বলিউডের সবচেয়ে বেশি বাজেটের ছবি ‘পদ্মাবতী’র গান ও ট্রেলর দেখে ফেলেছে ইউটিউবে রেকর্ড-সংখ্যক দর্শক। অতএব এটিও আরেকটি বক্স অফিস ইতিহাস সৃষ্টিকারী ছবি হতে যাচ্ছে। এ ছবিটি আমেরিকা ও ব্রিটিশ সেন্সর বোর্ড থেকে কাটাছেঁড়াহীন অবস্থায় ছাড় পেয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, এ চলচ্চিত্র প্রদর্শনে কোনো বাধা সৃষ্টি করা যাবে না শিল্প ও শিল্পীর স্বাধীনতা রক্ষার্থে। ভারতীয় সেন্সর বোর্ডের ও কোনো বাধা নেই। অথচ ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে না। মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল চলতি ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর। সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে অনবরত কলাকুশলীদের প্রাণনাশ ও সিনেমা হল জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ৫টি রাজ্যে ছবিটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও সারা দেশের কলাকুশলীরা এই হুমকি ধমকির বিরুদ্ধে একাট্টা এবং সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিবাদ মুখর। মূলত সারা পৃথিবীই ছবিটির পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অশান্তি প্রশমনের লক্ষ্যে মিস্টার বানশালী নমনীয় পথ অবলম্বন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যেসব রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ছবিটির বিরোধিতা করছেন, প্রয়োজনে ছবিটি তিনি আগে তাদের দেখাবেন। কিন্তু তাতেও বরফ গলছে না। অযৌক্তিকভাবে ছবিটি না দেখেই একপাক্ষিক অভিযোগ আনা হচ্ছে ছবিটির বিরুদ্ধে। তাই তিনি প্রহর গুনছেন। সময় নিচ্ছেন ছবিটি মুক্তি দিতে। অপেক্ষা করছেন একটি উপযুক্ত সময়ের যখন মুক্তি দিলে কোনো অশান্তির আগুন জ্বলবে না দেশে। কিন্তু কর্নিসেনারা যেভাবে জাত্যভিমান সন্ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছে, তাতে সেই উপযুক্ত মুহূর্তটি কবে আসবে তা অনুধাবন করা যাচ্ছে না। সব শুভ বোধসম্পন্ন মানুষের প্রত্যাশা—সেই মুহূর্ত দ্রুতই আসুক।