১৯০১ সালে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হলো। পেলেন ফরাসি কবি ও প্রাবন্ধিক সার্লি প্রুদম। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে মনোনীত করার কারণ হিসেবে জানালো—in special recognition of his poetic composition, which gives evidence of lofty idealism , artistic perfection and a rare combination of the qualities of both heart and intellect. কিন্তু প্রথমবারেই বিতর্ক উঠল পুরস্কারপ্রাপ্ত কবিকে নিয়ে। এমনকি সুইডিশ একাডেমির এই সিদ্ধান্তকে রীতিমতো অবিবেচনাপ্রসূত মনে করল সুইডিশ লেখকগণ। কারণ অন্য সবার মতো সুইডেনের লেখকগণও ভেবেছিলেন সবচেয়ে প্রভাবশালী সমসাময়িক লেখক টলস্টয়ই পুরস্কারটি পাবেন। তাই পুরস্কার ঘোষণার পর পরই বিশ্ববাসী প্রথমে বিস্মিত হলো। তারপর ক্ষোভে ফেটে পড়ল। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সুইডেনের লেখকগণ প্রথমে টলস্টয়কে চিঠি লেখে তাদের ক্ষোভের কথা জানালেন। তারপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চিঠি যেতে থাকল। টলস্টয়ও এই মধুর যন্ত্রণা উপভোগ করতে থাকলেন। একসময় বিরক্ত হয়ে গেলেন। ১৯০২ সালের ২২ জানুয়ারি তিনি সবার উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখে জবাব দিলেন, ‘নোবেল পুরস্কার যে আমাকে দেওয়া হয়নি তাতে আমি ভারি খুশি হয়েছি। প্রথমত, এত টাকা দিয়ে আমি কী করতাম , সে-সমস্যা থেকে আমাকে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ আমার বিবেচনায় অর্থ কেবল অশুভের দিকেই নিয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, আমি যাদের চিনি না, জানি না, এমন কত জ্ঞানী-গুণী মানুষের সমবেদনা লাভের সম্মান ও সৌভাগ্য তো আমার হতো না।’
পাওয়ারর যোগ্যতা ছিল কিন্তু নোবেল পাননি এ রকম তালিকায় তাই প্রথমেই উঠে আসে লেভ টলস্টয়ের নাম। নোবেল নিয়ে আরেক মজার ঘটনা ঘটে রাশিয়ান লেখক বারিস পাস্তেরনাকের নাম ঘোষণার পর । ১৯৫৮ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পরই সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে লেখককে চাপ দেওয়া হয় পুরস্কারটি গ্রহণ না করতে। কিন্তু তিনি গ্রহণ করেছিলেন। নোবেলের ইতিহাসে একমাত্র লেখক জ্যঁ পল সাত্রে, যিনি নোবেল পুরস্কারকে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান। কারণ হিসেবে বলেন, যেহেতু তিনি অতীতে কোনো আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্ররস্কার গ্রহণ করেননি এবং এমন সব লেখককে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে যারা এর যোগ্য প্রাপক ছিলেন না, সেহেতু তিনি এ পুরস্কার গ্রহণে একবারেই অপারগ। তাঁকে ১৯৬৪ সালে সাহিত্যে নোবেলের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল।
নোবেলের ইতিহাসে চারবার দেওয়া হয় দু’জন লেখককে। ১৯০৪ সালে প্রথমবার দু’জনকে যৌথভাবে পুরস্কৃত করা হয়। তাঁরা হলেন, ফ্রেডরিক মিস্ত্রাল ও ইয়োসে এশগ্যারে। ফ্রেডরিক মিস্ত্রাল ছিলেন কবি, নাট্যকার ছিলেন ইয়োসে এশগ্যারে। এরপর ১৯১৭, ১৯৬৬ ও ১৯৭৪ সালে এভাবে নোবেল দেওয়া হয়। ১৯১৪, ১৯১৮, ১৯৩৫, ১৯৪০, ১৯৪১, ১৯৪২ ও ১৯৪৩- মোট সাতবার সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয়নি।
এ যাবৎ ফ্রান্স ও আমেরিকার লেখকগণ বেশিবার পুরস্কৃত হয়েছেন। মোট পনের জন। এর পরেই রয়েছে জার্মান। তেরো জন।
এযাবৎ ১১৩ জন লেখক এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাভাষার একমাত্র ও এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সুইডিশ একাডেমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মনোনীত করার কারণ হিসেবে বলেছিল—because of his profoundly sensitive, fresh and beautiful verse, by which, with consummate skill, he has made his poetic thought, expressed in his own English words, a part of the literature of the West.
দুঃখজনক যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পাওয়ার পরই নানারকম বিতর্ক ও নিন্দার ঝড় বইতে থাকে খোদ বাংলায়। রবীন্দ্রনাথ এতে দুঃখ পেয়ে বলেছিলেন, ‘আমার দেশে আমার নিন্দার ব্যবসায় ভালো চলে।’
এবার আসা যাক এমন একটি তালিকায় যেখানে দেখা যাবে প্রাপ্রতার যোগ্যতা ছিল কিন্তু তাঁরা নোবেল পাননি-
লেভ টলস্টয় (১৮২৮-১৯১০)
মার্ক টোয়েন (১৮৩৫-১৯১০)
জেমস্ জয়েস (১৮৮২- ১৯৪১)
মার্শেল প্রাউস্ত (১৮৭১-১৯২২)
হেনরিক ইবসেন (১৮২৬-১৯০৬)
এমিল জোলা (১৮৪০- ১৯০২)
রবার্ট ফ্রস্ট (১৮৭৪-১৯৬৩)
ডাব্লিউ এইচ ওডেন (১৯০৭-১৯৭৩)
ভ্লাদিমির নবোকভ (১৮৯৯-১৯৭৭)
হোর্হে লুইস বোর্হেস (১৮৯৯-১৯৮৬)
মন্তব্য