ছুঁয়ে আছি ॥ শাহানারা ঝরনা
বিষাদে ব্যথায় বসে নিরালায়
কেউ তো কখনো ভাবে
দুখেরি আগুনে পোড়ানো জীবন
আর কবে পাল্টাবে?
যারা চলে নাকো ভুল পথ ধরে
বোঝে না চাতুরি ধারা
তবুও তাঁদের দিন হয় না তো
সুখ ভরা, ভয় হারা
কে কবে কোথায় বনেদি ব্যথার
সুর তুলে ভেসে যাবে
অভিমানী মন ডেকে শতবার,
তাঁকে আর খুঁজে না পাবে
চুপকথা বেলা আবেশে ফুরোয়
নিয়ে মাধুকরী মায়া
চারপাশজুড়ে অশনির মাঝে
দেখি জাহেলীয় ছায়া
আকুলিত দিন বেদনা বিধুর
শতজ্বালা সয়ে সয়ে
পৃথিবী! তুমিও থমকে দাঁড়াও!
ছুটো না অবক্ষয়ে!
ও চাঁদ হয়ো না জোছনাবিলাসী
বলো নাকো রূপকথা
বনলতা কুঁড়ি হারানোর শোকে
ছুঁয়ে আছি নীরবতা!
নুসরাতের জন্য এলিজি ॥ হাসান ইমাম
বিশ্বাস ছিল মনে—লড়বেন, কিন্তু দগ্ধ শরীর
পারল না, যে শরীরে নজর দিয়েছিলেন শিক্ষাগুরু
বোধ পুরে এসেছিলেন যে শরীরে, তাই ঘৃণা,
বিবমিষা—প্রতিবাদ শুরু
পুরুষের অহম জানতেন কি আপনি? অহম মানে
স্রেফ শরীরী জোর, কাম
কূটকৌশলেও বেহদ পটু পুরুষ—সুবিধামতো
নারীর নামে রটায় বদনাম
জানলেনই না আপনি—পুরুষের ভাবনায়
ভোগ্যপণ্য হয়ে খেলে নারী; তার বেশি কিছু নয়!
তাই পণ্যভোগের খায়েশ পূরণে বাধা হলেন যত
শায়েস্তা করার জেদ চাপে সপারিষদ শিক্ষাগুরুর তত
সুতরাং ছককষা হলো
কেরোসিন জোগাড়
ঘনিয়ে এলো সময়
শিক্ষাগুরুর নজরলাগা আপনার শরীর জ্বললো দাউ দাউ
দেখল না কেউ কিছু; এমনকী দয়াময়!
তবু কী আশ্চর্য! আগুনে পুড়ে ছাই হতে হতেও
হলেন ফিনিক্স পাখি
গড়ে গেলেন প্রতিরোধের ইতিহাস, একা…
এরপর আর কীই বা থাকে বাকি!
আর, আপনি তো দেখেই গেছেন, নুসরাত—
কিভাবে এ পোড়া দেশে দিনমানে ঘনায়
দীঘল কালো রাত!
নুসরাত ॥ শাহানা সিরাজী
নুসরাত অগ্নিগিরি
জ্বালাও পৃথিবীর অভ্যন্তরে
লুকায়িত সব বিকৃত রুচির মানুষকে
যারা নারীকে ভাবে মাংসপিণ্ড
দাঁতালো প্রাণীর মতো কামড়ে কামড়ে
ছিঁড়ে ছিঁড়ে কাঁচা মাংসের স্বাদ গ্রহণ করে।
যারা নিজের লোলুপ বিভৎস রিপুকে দমন না করে
নিজেদের স্বার্থে আইন বানিয়ে মানুষের ঘাড়ে ছাপে!
জাগো নারী জাগো
ধর্ষক পিতা হলেও হত্যা করো
ধর্ষক সন্তান হলেও হত্যা করো
স্বামী কিংবা ভাই হলেও ছেড়ে দিও না
তোমার তিলে তিলে দগ্ধ দেহ থেকে উত্থিত
কালপ্রিটদের বর্জন করো..
যুদ্ধ ঘোষণা করো
মুক্তিযুদ্ধ।
এ যুদ্ধ নিজের বিরুদ্ধে
নিজের স্বজনের বিরুদ্ধে
নিজের বিছানার বিরুদ্ধে
না হয় এসো নারী
সবাই মিলে দগ্ধ হই
নুসরাতের মতো
পৃথিবী নারী শূন্য হোক…