শীতের সকালে রোদ্দুরের ওম নেওয়া হয় না বহু দিন। বহু দিন না বলে বহু বছর বলাই ভালো। জীবন-যাপন ও নানা প্রকার গর্তের খাদে যেভাবে সময় চলে যাচ্ছে, তাতে রোদ্দুরের সঙ্গে ব্যক্তিমানসের দূরত্বও ক্রমেই বেড়ে চলছে। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। এরপরও সমুদ্রের দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে রোদ্দুর দেখা কিংবা শরীর-মনে মাখার চেষ্টা। কিন্তু সেটা অনেকটা স্বপ্নে রোদ্দুর মাখার মতোই অস্পষ্ট। ঠিক তেমনই সময় সমীক্ষায় নিজেকে আবিষ্কার! পাঠও তেমন অনেকটাই দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় যেন রোদ্দুরের সঙ্গে দেখা হলো। শীতের এই সকালে অগ্রজ পাঁচ কবির দীর্ঘ কবিতায় ঘ্রাণ মেখে নেওয়ার সুযোগ পেলাম। এ যেন বহু কাঙ্ক্ষিত রোদ্দুর। যার তৃষ্ণায় কেঁপে কেঁপে উঠছিল প্রাণ।
আসুন, অগ্রজ পাঁচ কবি শিমুল মাহমুদ, গোলাম কিবরিয়া পিনু, ফকির ইলয়াস, আমিনুল ইসলাম ও তুহিন তৌহিদের কবিতার সঙ্গে পরিচিত হই। ডুব দিতে চেষ্টা করি তাদের ভাবনার জগতে। যেখানে শস্যসমেত সবুজ আছে। কিংবা শূন্যতা খা-খা করছে নদী-মাঠ-উঠানে।
শিমুল মাহমুদের কবিতা ‘মানুষ এবং মানুষদিগের বচনসমূহ’
‘ইহা গদ্য, পদ্য অথবা আখ্যাননির্ভর কোনো রচনা নহে। ইহা নহে সাধু অথবা চলিত বাকপ্রথা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ইহা হয় অক্ষমতাজনিত লিখনকৌশল, যাহা কেবল কবিপ্রাণ অহঙ্কারীগণ পাঠের প্রয়াস রাখেন।’
কবি যখন কবিতা পাঠের পূর্বে পাঠকের জন্য ব্র্যাকেটে এমন কথা লিখে দেন, তখন পাঠক হিসেবে একটু সতর্ক কিংবা প্রস্তুতি নিয়েই নামতে হয় কবিতার সমুদ্রে। কিছুটা ভয়ও থাকে আবিষ্কার করতে গিয়ে না আবার নিজেকেই হারিয়ে বসি! সে রকম একটা ভয় নিয়ে ‘মানুষ এবং মানুষদিগের বচনসমূহ’ পাঠ শুরু। এক-দুই-তিন এরকম পর্বে ভাগ করে অনেকটা কথা কিংবা সাবলিল গদ্য ঢঙে লেখা শিমুল মাহমুদ ২য় পর্বে বলেন,
‘বচন ক্রমশ আপনাকে অর্থাৎ বস্তুকে নির্দিষ্ট করে। দৃষ্ট করে। অবশেষে সজ্ঞায়িত করে। আদতে আপনি কিছুই নহেন; বচননির্দিষ্ট সজ্ঞায়ন মাত্র। বচন অর্থ আপনি। আপনি হইলেন বস্তু। আর বস্তু হইতেই অস্তি; যাহাকে বলা হয় ‘অহম্’।’
ব্যক্তি অহম মানুষের থাকে। শিল্পির হয়তো আরও বেশি। সেটা কখনো তার কাজের ক্ষেত্রে, কখনো বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে। তবে, সব কিছু ছাপিয়ে কাজের ফাঁদে নিজেকে আটকে রাখা বা আটকে থাকার মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস, সেটাও কখনো অহম হয়ে ওঠে। বিশ্বাসের পাল্লা ভারী করে দেয়।
‘তোমরা আমাদিগের বচনকাঠামো নির্দিষ্ট করিয়া দিতেছ কেন? ভাষাকে নির্দিষ্টকরণক্ষমতা রাষ্ট্রের হয় নাই কোনো কালে। এই হেন চিরায়ত কথা পণ্ডিতগণ না বুঝিলেও তাহারা ভাষাপাঠ বিলিবণ্টন করিবার রাষ্ট্রীয় ইজারা পাইয়া থাকেন। ’
তিনি কাকে প্রশ্ন করেন! নিজেকে? না কি নিজের মধ্যের চিন্তাকে! যার কাছে রাজ্যের হতাশা কিংবা আশার তত্ত্ব গড়ে ওঠে। আবার ভেঙে যায়। এভাবেই যেন কবি নিজেকেও পরতে পরতে ভাঙতে থাকেন। আর সে কারণেই ‘মানুষ এবং মানুষদিগের বচনসমূহ’ কবিতা কি না, সে ডিসিশানে যাওয়া কষ্টকর। আবার সাহসের ব্যাপারও। তবে কবিতা কি না, সে আবিষ্কারে না গিয়ে বলতে পারি, পুরো লেখার মধ্যেই যে ঘোর তৈরি করেছেন তিনি, সেটা একজন পাঠককে ক্রমাগত ভাঙতে থাকবে। একবার। বারবার নিজের কাছেই নিজেকে আবিষ্কার করার প্ররোচনা দেবে, ‘ মানুষ এবং মানুষদিগের বচনসমূহ।’ আর সে কারণেই মনে হয় নবম পর্বে তিনি বলেন,
‘আপনি স্বয়ং মহাজাগতিক রশ্মি। সীমাহীন। সময়হীন। অনন্ত। নীরব। আর বচন হলো এহেন নীরবতার ভেতর বাঘের চোখের কাজলে লুকিয়ে থাকা এক ঝলক প্রশান্তি; যা মনছবি দ্বারা মুক্ত। ডানাওয়ালা মুক্ত পাখি যে কিনা আকাশকে স্বাধীন করেছে নক্ষত্র ও মেঘের সীমানায়। অনন্ত। সময়হীন।’
কবি আমিনুল ইসলামের কবিতা ‘অভিবাসীর গান’
শুরুতেই কবি বলেন-
হে জননী, বিষুবরেখায় হেলান দিয়ে চোখ মেলে দেখো—
নদীর মতো বয়ে চলেছি আমি
কাঁধে নিয়ে নিরন্তর কর্মপ্রবাহের জল
আমার সাথে আছ তুমিও
যতদূর গঙ্গা, ততদূর গঙ্গারিডি
যতদূর উড়ি আমি, ততদূর বিস্তৃত হও তুমিও।
হ্যাঁ দেশকেই আমরা মা-জননী বলি। কবি কি তার প্রিয় মাতৃভূমিকে বিস্তৃত হতে বলেছেন? না তার মাতৃভাষা বাংলাকে। এই প্রশ্নের জবাব নিয়ে এগিয়ে যায় তার কবিতার লাইন। কিন্তু অভিমান না কি সামগ্রিক জয়যাত্রার সঙ্গে সময়ের দৌড় সমীক্ষা আঁকার চেষ্টা করেছেন, সেটা বুঝে ওঠা কষ্টকর। একজন অসহায় পাঠক তাল হারানো ঘুড়ির মতো দোল খেতে থাকে ডানে-বাঁয়ে। ঠিক দিশে করতে পারি না। তবে আবার বাঁক ঘুরে তিনি ফিরে আসেন নিজের কাছে। কবিতার কাছে। দেশের কাছে। প্রিয় মাটির কাছে। অভিমান ঘেরা কুঠুরি থেকে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে চিৎকার:
আমি আনন্দের রাজ্যে অভিবাসী
আমি বেদনার রাজ্যে অভিবাসী
আমি অনুরাগের উঠোনে অভিবাসী
আমি অভিমানের ভূগোলে অভিবাসী
এরপর ক্রমাগত আত্মচিৎকারে এগিয়ে যায়, ‘অভিবাসীর গান’। গতি বাড়তে থাকে উচ্চারণের। যে উচ্চারণের আড়ালে স্থির হয়ে আছে মানুষ ও মানবিক যন্ত্রণার বিষাদময় আবিষ্কার। এই আবিষ্কারে যুক্ত হতে থাকে সবুজ-সতেজ চিন্তার প্রকাশ। তখন কবি হয়ে ওঠেন ত্রিকালদর্শী কথক:
অভিবাসন প্রকৃতিরই ধর্ম
সাইবেরিয়ার হংস-মিথুন এসে ডুডুল-লু
গান গেয়ে যায় তোমার উঠোনে
তুমি তালি দিয়ে উঠো—ওয়ান মোর! ওয়ান মোর !’
আবার যখন তিনি বলেন,
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের সাথে পাল্লা দিয়ে
চারপাশে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধির উঠোন
আর সেই উঠোনের এককোণে
আমার জন্য প্রতীক্ষারত—আধখানা সচ্ছল জীবন, অন্তরঙ্গ দুটি হাত।
তখন তিনি তার কবিতার শরীর ছাপিয়ে ছড়িয়ে যান বিবিধ চিন্তায়। পড়শী গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করেন কবিতার ছবি।
দীর্ঘ কবিতার ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি থাকে, সেটা হলো তাল ঠিক রেখে গতিপথে থাকা। কবি আমিলুল ইসলামের ‘অভিবাসীর গান’ এ সেই ধারাবাহিকতা শুরুর দিকে ঠিক থাকলেও মাঝপথে কিছুটা ঝুলে গেছে। আবার কবিতার শরীরে আরোপিতভাবে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন বিষয়। যেটা কবিতা ধারণ করতে পারেনি বলে মাঝেমধ্যে হোঁচট খেতে হয়েছে।
কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু’র কবিতা ‘অরণ্য’
শুরুতেই পরিচিত এ রকম সাহসী উচ্চারণের সঙ্গ। যেন কানে বাজতে থাকে হাজার-লক্ষ মুষ্টিবদ্ধ হাতযুক্ত কণ্ঠের উচ্চারণ। সমাজের একজন সময় সচেতন প্রতিনিধি হিসেবে সে জন্যই যেন তিনি বলেন:
…বুনোশুয়োর ও খাটাশের রাজত্ব চলে
শজারুর হাঁটাহাঁটি ও ভুজঙ্গ উড়ে
. কাঠবিড়ালী পালায় পালায়
ডানাওয়ালা ঈগল ঈর্ষা নিয়ে দূর থেকে আসে
হিংসা-বিষ নিয়ে দংশন করে কীট
আকাশেও কুড়ুলে ও পেঁজামেঘ নাচে
এইখানে আমি
. —দুমড়েমুচড়ে পড়ি’
চোখের সামনে একটি দ্রোহের স্বর ভেসে ওঠে। মনের কার্নিশে জমা হতে থাকে নিঃসঙ্গ বক্তার স্কেচ। বিপ্লবীদের মতো দলে দলে আগাতে থাকে তার অক্ষরের সৈন্য। পেছনে পেছনে অথবা সমান তালি তিনি এগিয়ে নিয়ে যান পাঠক মন। ছবির মতো করে বলে যান বেদনাহত মানুষের আর্তি। অব্যক্ত তীব্রতা। সময় যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে পাঠক হৃদয়। সবুজ-সতেজ চোখ দেখে সুদূরে নিরাপদ চিন্তা। নিষিদ্ধ চিন্তার দেয়াল টপকে স্বাধীন রাজ্য! তবু, যেন স্বাধীনতা নেই কোথাও। ফিরে আসতে হয় আড়ালের কাছে।
মৃতকল্প-শবযাত্রী ও মুর্দাফরাসের বাণিজ্যনীতি ভালোবাসি
কিসের ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিয়ে ক্ষুৎপিপাসায় ক্ষুদ্র হয়ে যাই
নিজের সঙ্গে সঙ্গে এই সাহসী উদ্যান। উচ্চারণ কিছু প্রশ্নও রেখে যায় পাঠকের কাছে। উন্মুক্ত করে দেয় চিন্তার জানালা। যে জানালা ধরে চিন্তারা পবিত্র হাওয়ার সঙ্গে পৌঁছে যাবে বহুদূর।
শুধু ভয় ও লোভে কতদূর যাবো?
নিজের অর্ন্তমুখিতায় কোনো ফুল ফোটালাম না!
শ্বেতজবা ও কাঠালচাঁপা দেখলাম না!
চামেলি ও সন্ধ্যামণি দেখলাম না!
বনমল্লিকা ও পঞ্চমুখী জবা দেখলাম না
‘অরণ্য’ কবিতার শরীরী ভাষা টানটান। কখনো পাঠে থমকে দাঁড়াতে হয়নি। শুরু হয়ে যেন রেল লাইনের মতো চলতেই থেকেছে। শেষ হয়েও চোখকে উৎসুক করে তুলেছে দেয়ালে ওপারে দেখার।
কবি ফকির ইলিয়াসের কবিতা ‘আখড়া ও আগুন’
অবয়ব হিসেবে অন্য কবিতাগুলো থেকে কিছুটা ছোট। মাটির ঘ্রাণ আছে এই কবিতায়। লোকজ শব্দের কাছে দরদি হয়ে উঠেছেন তিনি। যেমন তিনি বলেন:
মাটির সানকিতে খুব ভোরবেলা, যারা সাজিয়ে রেখেছিল
বিশ্বাসের তন্দ্রাস্বর, তারাও সূর্যের সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসছে
ঘাটে। জল আর শালুকের মিলন দেখে কেউ কেউ ঢেউসূত্রে
আঁকছে প্রার্থনামুখী প্রেমিকার ছায়া।
আর কখনো তিনি স্মৃতি কাতর হয়ে ওঠেন নিজস্বতায়। মগ্ন হতে চান আত্ম-অহমে। বিস্তৃত সবুজে দৌড়াতে চান সাবলিল। তারপর কোথায় যেন দ্বিধা। পরস্পর চেনা-জানার সূত্রটা খুঁজতে থাকেন আড়ালে।
ঘোরের তপস্যাই মানুষের প্রথম এবং শেষ গন্তব্য—
কথাগুলো লেখা ছিল যে পর্দা ও পুরাণে,
নদীগুলো করছে এর অন্বেষণ। পুরাণের অষ্টাদশপর্ব
পাঠ শেষে ঋষি জেনে নিচ্ছেন তার নিয়তি।
আবার যখন তিনি বলেন—‘সম্পর্ক—তৃষ্ণার অন্য নাম’, তখন পাঠকও এক ধরনের দ্বিধায় ডুবে যায়। আসলেই কি তাই? সম্পর্কও এক ধরনের তৃষ্ণা? হতেও পারে। প্রকৃত সত্য বলতে যেমন কোনো কিছু নেই। ঠিক কিংবা স্থির বলেও হয়তো কিছু নেই। জগতের সব কিছুই নাকি আপেক্ষিক। কবিও তৃষ্ণার্ত পাঠককে সেই হেগেলীয় ভাবনায় ফেলে দেন। যেন নিজের মতো করে সাঁতরে ওঠাটাই চান শিল্পি !
ফকির ইলিয়াসের কবিতা ‘আখড়া ও আগুন’ শিরোনামের সঙ্গে কবিতার শরীরের সম্পর্ক খুঁজতে গিয়ে একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে আমার পাঠক চোখ ও মন। আবার ডুবে যাওয়ার চেষ্টাও ডোবাতে পারেনি দীর্ঘক্ষণ। তবে যে ছবি তিনি দেখেতে চেয়েছেন কিংবা এঁকেছেন, সে ছবিতে অনেকক্ষণ চোখ জুড়িয়েছে, সেটা বলাই যায়। আবার দৈর্ঘ্যের হিসেবে ক্ষণআয়ুর এই কবিতায় প্রসঙ্গক্রম অনেকটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। যে কারণে পাঠেও সময় সময় স্থির থাকা যায় না। হয়তো কবি এটাই চেয়েছেন !
তুহিন তৌহিদের কবিতা ‘ আমার পুত্রের প্রতি’
এই কবিতার সবচেয়ে বড় সফলতা কিংবা অর্জন বলা যায় এটাই, এই যে, কবি আমাকে একটানে শেষ পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। যেন ডুবতে ডুবতে ডুবেই গেছি শেষ পর্যন্ত। টানটান দৌড়টা কবিতার পুরো শরীরেই বিদ্যমান ছিল।
তিনি ‘আমার পুত্রের প্রতি, কবিতায় বলেন,
….আশ্চর্য ক্ষমতা নিয়ে তুমি
এসেছ। আমার বুক ভেদ করে বেরিয়ে পড়ছে
কুণ্ডলীপাকানো যত সর্প, যত হতাশার বিষ
মোমের মতোন গলে পড়ে যাচ্ছে। আমি মুগ্ধচিত্ত
চেয়ে থাকি বারবার ছোট্ট মুখপানে অপলক—
অলৌকিক জোছনায় ভরে যায় সমগ্র উঠান !
এখানে আপাত দৃষ্টিতে কবি পুত্রের কথা বললেও আমি যেন অনাগত সকালের জন্য তার প্রতীক্ষাই দেখতে পাই। সে যেন অনাগত সকালের জন্য নিজেকে ও সময়কে প্রস্তুত করছেন। সাজিয়ে-গুছিয়ে তৈরি থাকতে চেষ্টা করছেন। সম্ভাষণ জানাচ্ছেন। তবে কোথায় যেন সন্দেহ থেকে যায় তার। যে কারণে তিনি বলেন,
বাসযোগ্য গ্রহটির নাম যে পৃথিবী আর নয়
সে কথা তোমাকে বলি কী করে বলো তো; বিশেষত
এশিয়া-আফ্রিকা জুড়ে অভাবের বাহারি ছোবল—
কেউ কেউ সম্পদের সুবিশাল পাহাড় গড়ছে
এর নিচে চাপা পড়ে আর্তনাদ করে কতো লোক;
সংশয় যেন তার কাটেই না। বরং আরো ভয় এসে কাবু করে দেয় সরলতাকে।
আমরাই সব পুড়িয়ে ফেলছি—মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে
বেরিয়ে আনছি এর প্রাণটাকে! তোমাদের কথা
কেউ ভাবছি না, শুধু নির্ভেজাল অপচয়ে ধ্বংস
করে দেই সব; উন্মত্ত অশ্বের ন্যায় ছুটে চলি !’
ভয়ের মধ্যমায় আটকে থাকেন না তিনি। তার চিন্তার গতি রোধ করতে পারে না কোনো কিছু। সে তার মতো করেই স্বপ্ন গোছাতে থাকেন ভয় এড়িয়ে। নিজের মতো করেই যেন শাদা ইচ্ছা রোপন করে যান সবুজে। নিরাপদ চিন্তার কিংবা সকালের আভাস দেন নতুনের কাছে। অনাগতের কাছে।
তথাপি, তোমাকে কথা দিলাম, একটা উপযোগী
পৃথিবীর নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাব, যেন
তুমি ও তোমরা সেথা স্বাভাবিক প্রস্ফূটিত হও।
যেভাবে আমার সব রিক্ততা গোছালে তুমি, দেবদূত
সেভাবে আমিও যেন তোমার বিকাশ সাবলীল
করি—পুত্র, পুঁইশাখ ডগার মতোন বেড়ে ওঠো!
লোকজ শব্দের ব্যবহার। পরিমিত শব্দ চয়ন কবি তুহিন তৌহিদের কবিতাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যে কারণে পাঠ শেষেও মাথা ও মনে লেগে থাকে এক নিরাপদ নীরবতা।
অনেক সময়ই কবির ভাবনার কাছে পৌঁছতে পারে না পাঠক। কবি যেটা বলতে চান, তার কাছ দিয়েও যায় না পাঠকের চিন্তা। এর অনেক রকম কারণ হতে পারে। সময়ের ব্যবধান কিংবা চিন্তার দূরত্ব। অথবা এর জবাব খুঁজতে যাওয়াটাই বোকামি! কিন্তু কবিতা পাঠ করতে গিয়ে এই বোকামিটাই যেন পাঠক বারবার করেন। কবিতার মধ্য দিয়ে পাঠ করতে চেষ্টা করেন কবিকে। সেটা হয়তো কখনোই সফলতার মুখ দেখে না। তবে নিজের মতো করে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি পেতে চান পাঠক। আমিও কি তাই করেছি? হয়তো তাই। অথবা না। কিংবা কোনো চরিত্রেই নেই আমি কিংবা পাঠক। নেই দর্শক হিসেবেও। কেবল দূর থেকে কবি কিংবা কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে নিজের প্রকৃত ছায়াকে দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি!
মানুষ এবং মানুষদিগের বচনসমূহ ॥ শিমুল মাহমুদ
আমার পুত্রের প্রতি ॥ তুহিন তৌহিদ
অভিবাসীর গান ॥ আমিনুল ইসলাম
অরণ্য ॥ গোলাম কিবরিয়া পিনু
আখড়া ও আগুন ॥ ফকির ইলিয়াস