ডিনার টাইম। ডায়নিং টেবিলের ওপর আলো। টেবিলে প্রয়োজনীয় যা যা থাকার, আছে। টেবিল ছাড়া আপাতত কিছু দেখা যাবে না। পুরুষটির পেছনের দিকটা দর্শক দেখতে পাবে আর নারীটিকে একপাশ থেকে। পুরুষের নাম, তমাল; নারীটি যামিনী। তারা খাচ্ছে আর কিছু একটা নিয়ে সিরিয়াসলি কথা বলছে। ধীরে ধীরে তা দর্শকরা শুনতে পাবে।
যামিনী: কাল তাহলে কী রান্না করবো? (তমালের দিকে তাকায়, তমালের মনোযোগ প্লেটে।)
তমাল: (মাথা না তুলেই) করো একটা।
যামিনী: তাহলে কী রান্না করবো? (তমালের দিকে তাকায়, তমালের মনোযোগ প্লেটে)
তমাল: (মাথা না তুলেই) করো একটা। তোমার যা খুশি।
যামিনী: ফ্রিজে মাছ আছে।
তমাল: তাহলে তাই করো। (মাথা না তুলেই)
যামিনী: কই মাছ আছে। চিংড়ি আছে। আর ওই মাছটা, কী নাম যেন?
তমাল: বুড়োর বরশিতে ধরা পড়েছিল যেটা?
যামিনী: আরে না না, হেমিংওয়ের না, তুমি না আনলে?
তমাল: কই চিংড়িও তো আমি এনেছিলাম।
যামিনী: দেখতে দেখতে (মনে করার চেষ্টা)
তমাল: কালোর মধ্যে হলুদ ছোপছোপ।
যামিনী: হতে পারে ভুলে গেছি। ওটা রাঁধতে বলি?
তমাল: বলো।
যামিনী: নাকি কই মাছ খেতে চাও?
তমাল: করতে পারো।
যামিনী: চিংড়ি দিয়ে লাউ না, পেঁপে (কিছুক্ষণ ভেবে) না কি মাংস খাবে? একটু গরুর মাংস আছে আর ওদের জন্য চিকেন।
তমাল: গরুই হোক।
যামিনী: কাল না গরু খেলে?
তমাল: তাহলে করো একটা।
যামিনী: মুরগি পেঁপে দিয়ে করতে বলবো?
তমাল: বলো।
যামিনী: তাহলে মুরগি দিয়ে পেঁপে। আর (ভেবে) আলু, ফুলকপি, গাজর দিয়ে একটা সবজি করি?
তমাল: করো।
যামিনী: না কি আলু দিয়েই মাছ ভুনা। আর পাতলা ডাল?
তমাল: করো।
যামিনী: অনেকদিন চিংড়ি খাওয়া হয় না। আমি বলি কি, চিংড়ি দিয়ে পেঁপে রান্না করি আর, মাছ ভাজা…কী বলো?
তমাল: হ্যাঁ, ভালোই হয়।
যামিনী: ফুলকপি দিয়েও কিন্তু কই মাছ খেতে মজা লাগবে। (কৌতূহলী হয়ে) জানো জানো শীতের সবজি উঠেছে বাজারে।
তমাল: এখন তো নভেম্বর।
যামিনী: না কি ফুলকপি বেসনে ভাজা, আলু ভাজা আর ডাল ভুনা। শীতের একটা ঘ্রাণও পাচ্ছি এই মেনুতে।
তমাল: করতে পারো।
(দুজনের খাওয়া শেষ। দুজন মিলে ডায়নিং টেবিল থেকে খাবার জিনিসপত্র কিচেনে রেখে আসে। আসা যাওয়ার পথে তা কথা বলে)
যামিনী: (কিচেন থেকে, তাকে দেখা যাবে না) আমি বলি কী, চিংড়ি ভর্তা হোক, কী বলো?
তমাল: (তমাল টেবিলের কাছে) হতে পারে।
যামিনী: (যামিনী টেবিলের কাছে) না কি সব সবজি দিয়ে কই মাছ?
তমাল: (কিচেন থেকে, তাকে দেখা যাবে না) করো।
(ডায়নিং টেবিল থেকে আলো সরে যাবে। দুজন সোফায় বসে।)
যামিনী:(আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ফিসফিস করে) আমি বলি কী, একটু মাংস আছে তাই রাঁধি। ফ্রিজে বেশিদিন মাংস থাকলে পাথর হয়ে যায়।
তমাল: রাঁধো।
যামিনী: আলু দেবো?
তমাল: দাও।
যামিনী: না কি কসানো খাবে?
তমাল: করো।
যামিনী: লুচি?
তমাল: করো।
যামিনী: এত সকালে দিলারা বানাতে পারবে? পারবে না কেন? ও তো সকালেই আসে।
তমাল: তবু।
যামিনী: তুমি কখন বেরোবে?
তমাল: বেরোবো।
যামিনী: সকালে?
তমাল: হ্যাঁ।
যামিনী: খুব সকালে?
তমাল: না।
যামিনী: তাহলে কী রাঁধবো?
তমাল: রাঁধো একটা কিছু।
যামিনী: কী রাঁধবো?
তমাল: যা খুশি।
যামিনী: কাল আমাদের মিটিং।
তমাল: বেশ তো।
যামিনী: মিটিং না ঠিক, আমাদের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের (হেসে) বলতে পারো….কিন্তু?
তমাল: রাঁধো একটা।
যামিনী: খিচুরি করতে বলি?
তমাল: করো?
যামিনী: খুচুরির সঙ্গে মাংস খাবে?
তমাল: খাবো।
যামিনী: খিচুরির সঙ্গে মাছভাজাও মন্দ নয়।
তমাল: (সিগারেট ধরায়) মন্দ নয়।
যামিনী: (তমালের ঠোঁট থেকে সিগারেট কেড়ে নেয়) কিন্তু খিচুরির সঙ্গে তেলাপিয়া মাছ খেতে বেশি ভালো।
তমাল: হ্যাঁ
যামিনী: তাহলে তাই করি?
তমাল: করো
যামিনী: (ফ্রিজে আলো পড়বে। নাড়াচাড়ার শব্দ) নাহ্ নেই। (নীরবতা) ছিল তো।
তমাল: তাহলে?
যামিনী: ডিম করি?
তমাল: করো। কিন্তু…
যামিনী: কিন্তু…(মুখের দিকে চেয়ে) কী রান্না করবো?
তমাল: কিছু একটা তো রাঁধতেই হবে।
যামিনী: আচ্ছা দাঁড়াও (যামিনী ভেতরে যায়, তমা সোফায় ঘুমিয়ে পড়ে, যামিনী ফিরে এসে তমালকে ওঠায়) এই দেখো।
তমাল: কী?
যামিনী: লটারি
তমাল: লটারি?
যামিনী: হ্যাঁ লটারি। (চার-পাঁচটি কাগজের ভঁজ করা টুকরো মেঝেয় ফেলে) একটা তোলো।
তমাল: (সোফায় বসে নিচু হয়ে তোলে) এই তো।
যামিনী: (কেড়ে নিয়ে) দেখি দেখি। কই মাছ ভুনা, মিক্সড সবজি, ডাল। (চিন্তিত হয়ে) না, না, আরেক বার (আবার ফ্লোরে কাজচের টুকরোগুলো ফেলো)।
তমাল:(সোফায় বসে নিচু হয়ে তোলে) এই তো।
যামিনী: (কেড়ে নিয়ে) দেখি দেখি…চিংড়ি মাছ ভর্তা, আলু ভাজি, ডাল। (চিন্তিত হয়ে) না, না, আরেক বার (আবার ফ্লোরে কাগজের টুকরোগুলো ফেলো)।
তমাল: (সোফায় বসে নিচু হয়ে তোলে) এই তো।
যামিনী: (কেড়ে নিয়ে) দেখি দেখি…গরুর মাংস, ডাল। (চিন্তিত হয়ে) না, না, আরেক বার (আবার ফ্লোরে কাজচের টুকরোগুলো ফেলো)।
তমাল: (সোফায় বসে নিচু হয়ে তোলে) এই তো।
যামিনী: (ভ্রূক্ষেপ নেই) দাঁড়াও নিত্রাকে ফোন করি, না মাকে (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) সবে ১০টা ২০ (কাল্পনিক টেলিফোন সেটে ডায়াল করে কানে রিসিভার রেখে) নাহ্ ধরছে না। মাকে ফোন করবো?
তমাল: করো।
যামিনী: (কাল্পনিক টেলিফোন সেটে ডায়াল করে কানে রিসিভার রেখে) নাহ্ ধরছে না
তমাল: রাশেদকে করো।
যামিনী: ক্যাম্পাসের?
তমাল: জানি না।
যামিনী: আমিও কখনো দেখেনি (হেসে) একদিন টি-স্টলে এসে বলে আমি হিস্ট্রির।
তমাল: হতে পারে।
যামিনী: (বিরক্ত হয়ে) না, ক্যাম্পাসের বলে বিশ্বাস হয় না। (সমাধান পেয়েছে ভেবে) দাঁড়াও পৌষালীকে ফোন করি, চিত্রাকেও করতে পারি।
তমাল: করো।
যামিনী: কিন্তু ওরা তো আমার হলের না।
তমাল: তাও ঠিক। তাহলে?
যামিনী: (উৎফুল্ল হয়ে) উপায় কিছু পেয়েছ?
তমাল: শুধু ভাত আর ডিম ভাজি।
যামিনী: (উৎফুল্ল হয়ে) রাইট।
তমাল: বেশ চলো শুতে যাই।
যামিনী: একটু ডাল হলে ভালো হয় না?
তমাল: হয়।
যামিনী: আলুভর্তা করবো?
তমাল: করো।
যামিনী: চিংড়িভর্তা?
তমাল: করতে পারো।
যামিনী: (বিরক্ত হয়ে টি-টেবিলের ফুলদানি ফ্লোরে ছুড়ে মারে)ওহ্ কখনোই তোমার হেল্প পাই না। তুমি…তুমি..একটা খচ্চর।
তমাল: (চুপ)।
যামিনী: তুমি কি আমাদের ক্যাম্পাসের?
তমাল: না।
যামিনী: কলোনির?
তমাল: না।
যামিনী: তাহলে তুমি কে?
তমাল: লিটারারি…হাসবেন্ড।
যামিনী:(অগ্রাহ্য করে) ইশ্ আসছে স্বামী ফলাতে। আমি স্বামী-টামি মানি না।
তমাল: বেশ (স্বগত) তাহলে আমি কী?
যামিনী: (চিৎকার করে) পেয়েছি পেয়েছি। মানিক ভাই (কাল্পনিক টেলিফোন সেটে ডায়াল করে কানে রিসিভার রেখে) মানিক ভাই, তাহলে কী রান্না করবো?
তমাল: (গলা অন্যরকম করে) ডাল-ভাত আর ডিম করো।
যামিনী: মানিক ভাই, মাছ ভুনা করি আর ডাল?
তমাল: (গলা অন্যরকম করে) করো।
যামিনী: মানিক ভাই, মাংস ভুনা করি আর সবজি?
তমাল: (গলা অন্যরকম করে) করো।
যামিনী: মানিক ভাই, চিংড়ি আর সবজি?
তমাল: (গলা অন্যরকম করে) করো।
যামিনী: মানিক ভাই, কই মাছ আর সবজি? (বিরক্ত হয়ে) লাইন কেটে গেলো। যাবেই তো মানিক কি প্রপদ করতো? করতো না। ছাত্রলীগের…(তমালকে ধমক দিয়ে) তাহলে কী রান্না করবো?
তমাল: করো একটা।
যামিনী: (ভেতরে যেতে যেতে) কাল আমাদের ফিন্যানশিয়াল কমিটির সঙ্গে মিটিং (নীরবতা) এখন ঘুমাতে হবে।
তমাল: আচ্ছা ঘুমাও।
(তারা দুজর বেড রুমের দিকে যায়, আলো নেই)
যামিনী: তাহলে কী রান্না করবো?
তমাল: করো একটা (কিছুক্ষণ পর নাক ডাকার শব্দ পাওয়া যাবে)।
যামিনী: (মৃদু আলো, যামিনী উঠে দাঁড়ায়। হতাশ হয়ে) ভাইয়া কী সুন্দর আপুকে হেল্প করে, দীপন লিলিকে (হতাশ হয়ে) আমার হয়েছে মরণ। (উৎফুল্ল হয়ে) একবার ভাইয়া করেছে কী শেনো।
তমাল: (জেগে) ঘুমাওনি?
যামিনী: না।
তমাল: ঘুমাও।
যামিনী: কিন্তু কী রান্না করবো?
তমাল: (আধো ঘুমের ভেতর) ডালভাত।
যামিনী: আলু ভর্তা করি?
তমাল: করো।
যামিনী: মাছ যে অনেকদিন হলো ফ্রিজে…মাছ করবো?
তমাল: করো।
যামিনী: সবজি করি?
(তমালের নাক ডাকার শব্দ)