জাতীয় সংগীত নিয়ে সঙ্গীতশিল্পী যশপ্রার্থী নোবেলের ‘অজ্ঞতাপ্রসূত মন্তব্য’কে এক শ্রেণী প্রথমে ইনিয়ে-বিনিয়ে সমর্থন দিয়েছে। এই সমর্থকগোষ্ঠীতে যেমন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সুবিধাভোগী শ্রেণী রয়েছে, তেমনি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে মনের ভেতর রবীন্দ্রবিদ্বেষ পুষে রাখা মহলও। তাই যখন নোবেল তার মন্তব্যে দেশকে ‘এক্সপ্লেইন’ প্রশ্নে রবীন্দ্ররচিত জাতীয় সংগীতের চেয়ে প্রিন্স মাহমুদ রচিত তালিকাপ্রধান রচনাটিকে কয়েক হাজার গুণ উঁচুতে বলে দাবি করলেন, তখনই ছদ্মবেশী প্রগতিশীল, সুবিধাভোগী সরকারি চাকরিজীবী ও রবীন্দ্রবিদ্বেষীদের মুখোশটা আস্তে করেই খসে পড়লো। আর বেরিয়ে এলো প্রকৃত ভোল। প্রকাশিত হলো মৌলিক বোলও। তারা বলতে শুরু করলেন, দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, বন্যা, গণপিটুনি ও ধর্ষণের মতো বড় বড় ঘটনা থাকতে জাতীয় সংগীতবিতর্ক নিয়ে আলোচনা করে পণ্ডশ্রমের কোনো মানে নেই। তাদের কেউ কেউ এ-ও বলেছিলেন, একজন অল্পবয়সী তরুণ নিতান্তই ‘ব্যক্তিগত অভিমত’ প্রকাশ করেছেন, ফলে সেটিকে অতটা গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই।
আরেক শ্রেণীর দাবি, রবীন্দ্রপাঠ জরুরি। কিন্তু তার ‘ব্যক্তিগত ভাবালুতার গান’কে জাতীয় সংগীত ‘মানেন না’ তারা। তাদের মতে, এই গানে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাতিসত্তার চিহ্নমাত্র নেই!
আরেক শ্রেণীর দাবি ছিল, ‘চিরকাল কি রবীন্দ্ররচিত গানটিই জাতীয় সংগীত হিসেবে থাকতে হবে? এটি কি পরিবর্তন করা যাবে না? রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশি নয়, মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের অবদান কী’—এমন প্রশ্নও কেউ কেউ তুলেছেন। কেউ কেউ আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, নোবেল সেলিব্রেটি, তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে, তার বক্তব্যের বিরোধিতা করা হচ্ছে। প্রিন্স মাহমুদের রচনাটিকে জাতীয় সংগীত করার প্রশ্নে যারা সহমত পোষণ করেছেন, তাদের প্রায় সবার বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথের প্রতি এক ধরনের বিতৃষ্ণা প্রকাশিত হয়েছে। তারা রবীন্দ্রনাথ ও তার রচিত জাতীয় সংগীতের বর্তমান উপযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নানাভাবে।
কিন্তু দেশপ্রেমিক, রুচিশীল ও সচেতন লেখক-চিন্তক-সাংবাদিক-সংস্কৃতিকর্মীরা যখন নোবেলের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাতে শুরু করলেন, তখনই হঠাৎ করে হাওয়া ঘুরতে শুরু করলো। এতদিন যারা নোবেলকে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন, তারা এখন নোবেল প্রসঙ্গ কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। আবার আগের পক্ষ তুলে ধরছে, কবে থেকে রবীন্দ্রবিরোধিতা ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি উঠেছিল, সেসব তথ্য। অর্থাৎ বিভিন্ন বই-সংবাদপত্র-সাময়িকী-প্রবন্ধ-নিবন্ধ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারা সন-তারিখ উল্লেখপূর্বক ঘটনা পরম্পরা বর্ণনা করছেন।
পাশাপাশি কবে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ ও পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি গঠিত হয়েছে, সেখানে কে কে ছিলেন, কার কী ভূমিকা ছিল এসব ফিরিস্তি দিচ্ছেন। কবে রবীন্দ্রবর্জনের পক্ষে কতজন বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দিয়েছেন, সেসব তুলে ধরছেন। এসব তথ্য তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে তারা বলছেন, পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রবিরোধী হিসেবে যারা পরিচিত ছিলেন, বাংলাদেশ পর্বে এসে তাদের কেউ কেউ বোল-ভোল দুটিই পাল্টে নিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, তাদের ব্যবহার করা হয়েছিল। কেউ কেউ ঘটনার আকস্মিকতা বুঝতে পারেননি কিংবা শাসকশ্রেণীর রক্তচক্ষুর ভয় উপেক্ষা করতে না পেরে পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রবিরোধিতা করেছেন। আর পরবর্তী সময়ে এসে নানা উছিলায় জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের পাঁয়তারা করেছেন। কিন্তু ঘটনা হলো, এসবই তো ইতিহাস। আর এই ইতিহাস অধিকাংশ মানুষেরই জানা। বহুলচর্চিত।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো—নব্য ইতিহাস বর্ণনাকারীরা কেবল এই তথ্যগুলো তুলেই ধরছেন। কিন্তু এসব ঘটনার পেছনে কে নায়ক, কে খল-নায়ক ছিলেন, সে বিষয়ে তারা নীরবতা পালন করছেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজকের রবীন্দ্রবিদ্বেষী ও নোবেলপন্থীদের গত কয়েকদিনের ঘটনা পরম্পরা পর্যালোচনা করলে কয়েকটি বিষয় সামনে আসে। সেগুলো হলো:
১। নোবেলকে সমর্থন করার পেছনে উদ্দেশ্য কী?
২। জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের পাঁয়তারা কেন করা হচ্ছে, কারা করছে?
৩। নোবেলের বক্তব্য প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে যারা তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ পরে নোবেল বিষয়ে চুপ থেকে ইতিহাস বর্ণনা শুরু করলেন কী উদ্দেশ্যে?
বিবেচ্যগুলো আলোচনার আগে দেখা নেওয়া যাক, জাতীয় সংগীত প্রশ্নে নোবেল কী বলেছিলেন? ইউটিউব-ভিত্তিক ছোট্ট একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি যে, আমাদের জাতীয় সংগীত, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ আমাদের দেশটাকে যতটা এক্সপ্লেইন করে, তার থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি এক্সপ্লেইন করে প্রিন্স মাহমুদ স্যারের এই গানটা। আমাদের জাতীয় সংগীত যেটা আছে, সেটা হয়তো অনেক রূপক অর্থে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়, বাট এটা কিন্তু (অস্পষ্ট) আমাদের ইতিহাস, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের আবেগের স্থানটা, সবকিছু কিন্তু প্রপারলি আমাদের কাছে তুলে ধরে।’’
পড়ুন, এ সংক্রান্ত আরও লেখা: জাতীয় সংগীত বিতর্ক বনাম রবীন্দ্রবিদ্বেষ
জাতীয় সংগীতের প্রসঙ্গ টেনে নোবেল আরও বলেছেন, ‘‘ঢাকা ভার্সিটির অনেকে কিন্তু মিছিলও করেছিল এই গানটাকে জাতীয় সংগীত হিসেবে ইয়ে করা হোক।’’ এরপর তিনি আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে যত গান হয়েছে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ গানগুলোর মধ্যে একটা।’
নোবেলের এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, তিনি যা বলেছেন, তার মধ্যে গভীর-ইতিবাচক-মাঙ্গলিক কোনো চিন্তা নেই। যা আছে, তা বিশেষ উদ্দেশ্য মাত্র। চিন্তা, কল্পনা ও আদর্শগতভাবে তার পূর্বসূরিদের দাবিই তিনি নতুন করে তুলেছেন। তার এই বক্তব্যকে কেউ ‘অবিবেচনা প্রসূত’ বলেও এর জন্য তাকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেননি। এমনকী তার বক্তব্য প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানাননি। উল্টো তার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, বয়স কম। তাই বোঝেনি। না বুঝেই এমন মন্তব্য করেছে। যারা এই সাফাই গান, তাদের বক্তব্য দুটি কারণে গ্রহণ করা যায় না। প্রথমত, মন্তব্যের সময়ের শারীরিক ভাষা, বক্তব্যের দৃঢ়তা ও জাতীয় সংগীতের সঙ্গে প্রিন্স মাহমুদের রচনাটির তুলনা করা। এছাড়া দেশকে ‘এক্সপ্লেইন’ করার প্রশ্নে রবীন্দ্ররচিত জাতীয় সংগীতের তুলনায় প্রিন্স মাহমুদের রচনাটির অবস্থান ‘কয়েক হাজার গুণ বেশি’ দাবির মধ্যেই তার বিশ্বাস ও শিল্পবোধের গোঁড়ামি ও দৃঢ়তা প্রকাশিত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, তাহলে নোবেলের ভক্তরা তার এমন ‘অবিবেচনাপ্রসূত বক্তব্য’কে সমর্থন করছেন কেন? এই প্রশ্নের সমাধান করতে গেলে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রকারীদের স্বভাব-কর্মকাণ্ডকে স্মরণ করতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে, এমন দাবি নতুন নয়, পুরনো। যে দাবি পাকিস্তানপ্রেমী থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা বারবারই করে এসেছে। এই দাবি বিষয়ে যাদের চেতনাগত মিল রয়েছে, তারা স্বাভাবিকভাবেই নোবেলকে সমর্থন দেবে।
ইতিহাস সাক্ষী, ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী বন্ধে আয়ুব খান ফরমান জারি করেছিলেন। কিন্তু ওই ফরমান উপেক্ষা করে বাংলাদেশে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালিত হয়। এরপর ৬৭ সালের ২৩ জুন পাকিস্তানি সরকার ঘোষণা দেয়, রবীন্দ্র সংগীত হিন্দু সংগীত। তাই এই গান পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করতে হবে। ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ২৫ জুন ঢাকার ১৯ বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দেন। কিন্তু এই রবীন্দ্রপ্রেমী ও বাঙালি ১৯ বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন সৈয়দ আলী আহসানসহ পাকিস্তানপন্থী ৪০ জন বুদ্ধিজীবী। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যার পর ক্ষমতায় বসেই ২৫ আগস্ট জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয় খন্দকার মোশতাক সরকার। ‘রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় অনুযায়ী জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি’ও গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ‘একমাসের মধ্যে পরিবর্তিত জাতীয় সংগীত’ বাছাই করে নির্বাচিত জাতীয় সংগীতের নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়। তখন নানা কারণে প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি মোশতাক সরকার। এরপর ক্ষমতায় আসেন শামরিকজান্তা জিয়াউর রহমান। তার শাসন আমলে ১৯৭৯ সালের ৩০ এপ্রিল, ‘জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের লক্ষ্যে’ আরও একটি প্রস্তাব করা হয়। তবে, ওই সময় জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করতে না পারলেও রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটিও গাওয়া হতো।
জিয়ার মৃত্যুর পর বিষয়টি নিয়ে আর কেউ কোনো প্রস্তাব তোলেনি। তবে, ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের শাসন আমলে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা—তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের ইসলামি মূল্যবোধ ও চেতনার আলোকে জাতীয় সংগীত সংশোধিত হওয়া প্রয়োজন।’ কিন্তু সংস্কৃতি সচিবের আপত্তির কারণে ওই সময়ও প্রস্তাবটি পাস করাতে পারেননি রবীন্দ্রবিদ্বেষীরা। ওই তিনটি ঘটনার গত দেড়যুগ আর কেউ জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি তুলতে সাহস করেননি। কিন্তু সম্প্রতি নোবেল চেতনাগুরুদের সুপ্ত বাসনাটি আবারও জানালেন। তার প্রস্তাবে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন আয়ুব খান-মোশতাক-জিয়া-মুজাহিদ-নিজামীর উত্তরসূরিরা। এই উত্তরসূরিরাও বলতে শুরু করলেন, রবীন্দ্ররচিত জাতীয় সংগীতে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য-জাতিসত্তার উল্লেখ নেই। তাই জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করতে হবে।
জাতীয় সংগীত পরিবর্তন প্রশ্নে নোবেলের বক্তব্য প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে যারা তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ হঠাৎ করেই বোল পাল্টাতে লাগলেন। তবে, তারা নোবেলের সমালোচনা করলেন না কিংবা তাকে তার বক্তব্য পরিবর্তনেরও পরামর্শ দিলেন না। কিন্তু ইতোপূর্বে কারা জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছিলেন, সেই তালিকা দেওয়া শুরু করলেন। তবে, সেই তালিকার কোথাও ‘জাতীয় সংগীত’ পরিবর্তন প্রস্তাবের কোনো সমালোচনা করলেন না। কেবল বর্ণনাই দিয়ে গেলেন। কিন্তু কেন এই বর্ণনা দিয়ে গেলেন?
এই বর্ণনার দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রথমত, রবীন্দ্রবিদ্বেষীদের মনে করিয়ে দেওয়া যে, নোবেলই প্রথম নন, তার আগেও বহুবার জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে। ফলে নোবেল তার অভিপ্রায় প্রকাশ করে অন্যায় কিছু করেননি। দ্বিতীয়ত, নোবেলের পূর্বসূরিরাও ‘ইসলামি মূল্যবোধ ও সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর স্বার্থে’ জাতীয় সংগীত পরির্তনের দাবি তুলেছিলেন। সুতরাং নোবেলও সময়ের প্রয়োজনে এমন দাবি তুলতে পারেন। এই দুটি উদ্দেশ্যেই নোবেলপন্থীরা প্রথমে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন, পরে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের বিভিন্ন সময়ের দাবিগুলোর প্রসঙ্গ তুলেছেন।
নোবেলের ‘ব্যক্তিগত অভিমত’ প্রকাশ ও তাকে সমর্থনকারীদের বক্তব্য ও ভূমিকার পূর্বাপর ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দুটি গোষ্ঠীর দেখা মেলে। একটি গোষ্ঠী তার অন্ধ সমর্থক। তারা নোবেলের প্রতিটি কথাকেই ধ্রুব ভাবেন। তাই তার বক্তব্যে দোষের কিছুই খুঁজে পান না। বরং এই গোষ্ঠীটি সেখানে যৌক্তিক বিষয় দেখে কিংবা নোবেলকে নিতান্ত অল্পবয়সী দেখিয়ে তাকে দায়মুক্তি দেওয়ার সুপারিশ করছে। দ্বিতীয় গোষ্ঠী বর্ণচোরা। এই গোষ্ঠী শুরুতে নোবেলকে জোরালো সমর্থন দিলেও সোশ্যাল মিডিয়া-গণমাধ্যমে নিন্দার ঝড় দেখে বিপদ আঁচ করতে পেরেছে। ফলে এই গোষ্ঠীটি বোল ও ভোল—দুটি বদলে নিয়েছে। তবে বোল-ভোল পাল্টালেও নোবেলের বিপক্ষে যায়নি। বরং নোবেলের কৃতকর্মকে জায়েজ করার জন্য বিভিন্ন উদাহরণ টেনে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাবনার ধারাবাহিক ঘটনা তুলে ধরে। কিন্তু সেই প্রস্তাবনার কোনো সমালোচনা করে না। উল্টো প্রসঙ্গটি ধামাচাপ দিতে বলছে, দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি, ধর্ষণ, ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনী ও ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি থাকতে জাতীয় সংগীত ইস্যু নিয়ে কথা বলাটা পণ্ডশ্রম। তাদের এমন বক্তব্যে কেউ কেউ ভাবতে পারেন, তারা হয়তো জাতীয় বড় ইস্যু নিয়ে চিন্তা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, যেখানে দেশে মানুষের নিরাপত্তা-স্বাধীনতা নেই, সেখানে জাতীয় সংগীত নিয়ে কথা বলার লজ্জার! যারা এমন বক্তব্য রাখছেন, তাদের পরিচয় নতুন করে দেওয়ার কিছুই নেই। তাদের আচরণ-বক্তব্য-ভূমিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, তারা একেকজন আয়ুব-মোশতাক-জিয়া-মুজাহিদ-নিজামীরই উত্তরসূরি।