আচ্ছা, কাফকাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ভালোবাসা কাকে বলে, প্রেম কাকে বলে, তখন কাফকা কী উত্তর দেবেন? ঠিক এই প্রশ্নের উত্তরে কাফকা একবার বলেছিলেন, ‘ভালোবাসা তাই, যা আমাদের ভাবনাকে শানিত করে, মনকে প্রশস্ত করে আর জীবনকে নতুন এক মাত্রায় নিয়ে যায়।’ কাফকার সঙ্গে তার বন্ধু ও প্রকাশক গুস্তাভ জ্যানেজের সঙ্গে এক আড্ডায় কাফকা এই উত্তর দিয়েছিলেন। কিন্তু কাফকা যত সহজে উত্তরটি দিয়েছিলেন কাফকার নিজের জীবন ছিল এর চেয়েও বেশি জটিল।
কাফকা তার ব্যক্তিজীবনে প্রেম নিয়ে খুব একটা সুখী ছিলেন না। কারণ এই জটিল বিষয়ে তার ছিল ভয়াবহ রকম সন্দেহ! একবার কাফকার এক বন্ধু (ডায়েরিতে ছদ্মনামে লেখা F.W) প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেন। এই নিয়ে বন্ধু গুস্তাবকে কাফকা তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখেন, ‘প্রেম বিষয়টি মোটর গাড়ির সমস্যার সঙ্গে তুলনা করা যায়। গাড়ির চালক, প্যাসেঞ্জার আর সড়ক এই তিনটিতেই যেকোনো সময় বিস্তর সমস্যা দেখা দিতে পারে।’
কাফকা তার ডায়েরিতেও সে কথা বার কয়েক উল্লেখ করেছেন। কাফকা লিখেছেন, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি (পড়ুন কাফকার ডায়েরি, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১) কথাটির গভীর অর্থ আমি আজ পর্যন্ত জানতেই পারিনি।’ তবে কথাটি সত্য। অন্তত কাফকার জীবনের দিকে তাকালে এ কথাটি নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যায় যে নারী সম্পর্কে তার ভাবনটা বেশ জটিল আর কিছুটা নেগেটিভ ছিল। বন্ধু ম্যাক ব্রডকে লেখা এক চিঠিতে কাফকা বলছেন, ‘মেয়েদের সূক্ষ্মদৃষ্টিশক্তি সত্যিই বিস্ময়কর! তারা কিভাবে তা ধারণ করে বন্ধু! তারা তখনই তোমার দিকে তাকাবে যখন তাদের মন চাইবে। অথবা চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন তারা তোমাক করুণা করবে। নচেৎ কিন্তু নয়! বিষয়টা নিয়ে ভাবো! সত্যি বলতে এটাই তো দিবালোকের মত সত্য কথা!’ (লেটারস ফ্রেন্ডস, পৃ: ২৮০)।
এই চিঠিতে কাফকা যে নারীর কথা ইঙ্গিত করছেন, তা মূলত তার একটি উপন্যাসের চরিত্র। কিন্তু কাফকার জীবনীকারদের বিশ্বাস এখানে কাফকা তার সত্যিকারে জীবনের কোনো নারীর কথাই হয়তো বলে থাকবেন। কাফকা বেশ ভালো করেই জানেন যে প্রেমে পড়া এত সহজ সরল কোনো বিষয় নয়। বরং বিষয়টা একটু জটিল বৈকি! কাফকা যখন রোগে শয্যাশায়ী তখন সে তার প্রেমিকা মিলেনাকে লিখছেন, ‘জীবন এখন আমাকে চোখ পাকিয়ে শাসন করে আর অন্যদিকে আমি জীবনের সংজ্ঞাটাকি খুঁজে বেড় করার চেষ্টা করছি? জীবন মানে কী? বাঁচা না কি মরা? এটিই এখন আমার কাছে বড় একটি বিষয়। কিন্তু বাস্তবে এটাই হলো সত্য কথা। আমি আবারো নিজেকে প্রশ্ন করি। কী তোমার সিদ্ধান্ত! জীবন না কি মৃত্যু? তুমি কেন এত দ্বিধা নিয়ে জীবনকে আলিঙ্গন করবে?’ এদিকে মিলেনা ভাবতো অন্য কথা। তার ধারণা যদি কাফকাকে সে জীবনে পায় তাহলে সে তার ভালোবাসা দিয়ে কাফকার অসুখকে সাড়িয়ে তুলতে পারবে। মিলেনা কাফকার কাছ থেকে তেমন একটি সাড়াই পেতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাফকা মিলেনার সেই আশ্বাসের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি।
মিলেনার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে কাফকা আরেকটি নারীর কথা তার ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন। তাকে নিয়ে কাফকা স্মৃতিচারণ করছেন, ‘ভালোবাসার মিষ্টি দুঃখ (…) এই আকাঙ্ক্ষাটির জন্ম হয় মৃত্যুর জন্যেই। একে কোনোভাবেই ভালোবাসা বলা যায় না (কাফকার ডায়েরি, প্রথম খণ্ড, পৃ ৩০৫)। এসব চিরকুট পড়লে মনে হয় কাফকা কি তাহলে ভালোবাসা শব্দটি নিয়ে অনেক সন্দিহান ছিলেন! আমরা জানি কাফকা বিভিন্ন সময়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন, যক্ষায় ভুগেছেন, স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে। প্রচণ্ড মানসিক সমস্যায় তিনি ভুগতেন। হয়তো এসব কারণেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে জীবনের লম্বা পথ পারি দেওয়া হয়তো তার সম্ভব হবে না। সে জন্যেই কি তার মধ্যে প্রণয় বা প্রেম নিয়ে এত ভাবনা চিন্তা ছিল! অথবা এর থেকে নিজেকে বিযুক্ত করার ব্যর্থ প্রয়াস! সে কারনেই কী কাফকা নারীর সহজাত প্রেমের প্রস্তাব চোখ বুজেই ফিরিয়ে দিতেন? অথচ কাফকা ভালোবাসার সংগীত রচনা করেছেন।
তিনি বলেছেন ‘ভালোবাসাতো সংগীতের মতই। তখন প্রেম আর মৃত্যু পাশাপাশি হাটে।’ কিন্তু কেউ যদি ভাবে প্রেম হলো মৃত্যুর মতই। তাহলে সে কোন প্রেম? প্রেম মানেই সুন্দর আর সুন্দর মানেই মৃত্যু? কাফকার মনেই বা এই ভাবনাটি কেন এলো, কিভাবে এলো?
কাফকা নিয়ে অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন সবসময় থাকে। কাফকা কেন কোনো নারীকে বিয়ে করেননি? কেন করেননি? যুক্তিসঙ্গত প্রশ্নই বটে! যার সঙ্গে এত এত নারীর পরিচয় কিন্তু কোনো নারীর সঙ্গেই তিনি বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হননি। কিন্তু কেন? এই ব্যাখ্যাটি কিছুটা পাওয়া যায় কাফকার তার বাবাকে লেখা এক পত্রে। ‘প্রতিটা মানুষই আলাদা। তাদের ভাবনা চিন্তাও আলাদা। তারা বিভিন্নভাবে তাদের নিজেদের নানা বিষয়ের সঙ্গে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর কথা হল, অবশ্য যদি নিজের কথাই বলি তাহলে বলবো আমি মানসিকভাবে বিয়ে করতে তৈরি নই। আমার এই ভাবনাটি আমাকে সবসময় কুরে-কুরে খায়। যখনই বিয়ের বিষয় নিয়ে ভাবি, তখন আমি কেন জানি ঘুমাতে পারি না, দিবা-রাত্রি এসব ভাবতে গেলে আমার মাথাটা তখন আগুনে পুড়ে যায়।’ (লেটার টু হিস ফাদার পৃ: ১১১)।
তবে কাফকা তার ডায়েরিতে লেখেন অন্য কথা! কাফকা তার ডায়েরিতে লিখছেন, ‘একসঙ্গে থাকা খুব কঠিন। তখন একজন আরেকজনের পেছনে করুণা, লোভ, বোকামি, সৌন্দর্য এসব কিছুই শুধু ভালোবাসার নামে তাড়িয়ে বেড়াবে। তখন এসব সহ্য করা সত্যি কঠিন।(কাফকার ডাইরি ২য় খণ্ড, পৃ: ১৫৭)। কাফকা মনে করতেন লিভ টুগেদার করেও শেষ পর্যন্ত ভালোবাসা স্থায়ী হয় না। কাফকার ধারণা, বিয়ে মানেই ‘একসঙ্গে জোর করে থাকা’। কাফকা মনে করতেন কোনো সম্পর্ক যেভাবে তৈরি হয়, ঠিক সেভাবেই খুব মোলায়েমভাবেই ভেঙে যেতে পারে।
কথায় বলে ছোট এই জীবনে যাই পাওয়া যায়, তাই প্রাণভরে দুহাত পেতে নিতে হয়। অথবা কথাটি এভাবেও বলা যায়, জী্বনে যা পাওয়া যায়, তা-ই বুকে আগলে ধরে রাখা চাই। কিন্তু কাফকার সমস্যা ছিল সেখানেই। আমরা দেখতে পাই, কাফকার জীবনে প্রচুর নারীরা এসেছেন। কিন্তু সেই প্রাপ্তি তার কাছে মূল্যবান কিছু ছিল না। বিয়ের বিষয়ে কাফকা সবসময় ছিলেন সন্দিহান। বন্ধু ম্যাক ব্রডকে লেখা একটি চিঠিতে কাফকা লিখছেন, ‘তুমি সঠিক কথাই বলেছ। সত্যিকারের গভীর স্তরের যৌনজীবনের আকাঙ্ক্ষা আমার জন্যে বন্ধ হয়ে গেছে। আমিও তাই ভাবি।’
অনেকের মতে কোনো প্রেমিকা নয় বরং কাফকার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক হয়েছিল তার ছোট বোন অটলার। কে জানে অটলা হয়তো তার ভাইকে যথাযথভাবেই চিনতে পেরেছিল। কাফকা যখন অসুস্থ, তখন অটলা তার ভাইকে নিজের বাগানবাড়িতে নিয়ে রেখে তার দেখভাল করার সুযোগ পেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে কাফকার মৃত্যুর পর অটলা হিটরার নাৎসি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। কনসেনট্রশন ক্যাম্পেই তার মৃত্যু হয়।
৩ জুলাই কাফকার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন কাফকা।
কাফকা সবসময় ভাবতেন, তার প্রেমিক জীবন বলতে কিছু নেই। সেই জীবন তার সবসময় ব্যর্থ। সে মূলত ছিল একাকী আর নিঃসঙ্গ। মনিকট আত্মীয় স্বজন, বন্ধ-বান্ধবরাও কাফকার মনোজগতে প্রবেশ করতে পারতো না। তারা সবাই তার কাছে ছিল ‘আগন্তক’। নারীসঙ্গ সেদিক থেকে কাফকার জন্যে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করলেও অতিরিক্ত নিঃসঙ্গতা আর সন্দেহ থেকে কোনো নারীর সঙ্গেই তার সম্পর্কটি শেষ পর্যন্ত ভালোবাসায় গড়ায়নি।
কাফকার ‘The night’ লেখাটির ওপর একটু চোখ রাখা যাক। পড়লে মনে হবে কাফকা যেন প্রেম বিষয়ে নিজের মনের কথাটিই সেখানে লিখেছেন। তিনি লিখছেন, ‘তখন আমরা বসবাস করি প্রাগের জেলারগেস শহরতলির এক বাড়িতে। সেখানে আমাদের বাড়িটা থেকে নিচের দিকে তাকালে একটি মনোহরি কাপড়ের দোকান চোখে পড়ে। সেই দোকানে একজন কুড়ি বা কিছু বেশি বয়সি মেয়ে কাপড় কিনতে আসতো। আমি তাকে আমার বাড়ি থেকে দেখতাম আর অনেক উত্তেজনায় সিঁড়ি বেয়ে ওপর-নিচ করতাম। সেটি ছিল গ্রীষ্মকাল। সেদিন বেশ গরম পড়েছে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। মেয়েটির সঙ্গে আমার একদিন চোখাচোখি হলো। সে আমাকে ইশারায় নিচে নামতে বললো। আমি যখন নিচে নামলাম, তখন রাত ৮টা। কিন্তু এ কী! নিচে নেমেই দেখি সেখানে আরেক যুবক আমার আগেই এসে উপস্থিত। মেয়েটি আমার সামনেই সেই ছেলেটির হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো। আমিও গোপনে তাদের পিছু নিলাম। কিছুক্ষণ পের মেয়েটি স্কুইজেন নামের একটি রেস্তোরাঁয় ছেলে বন্ধুটিসহ প্রবেশ করলো। আমিও সেখানে প্রবেশ করে তাদের পাশাপাশি একটা টেবিলে গিয়ে বসলাম। সেখানে খুব সুন্দর একটি সময় কাটালো আমাদের। আমরা আকণ্ঠ বিয়ার পান করে আবার ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করলাম। এরপর একটা বাড়ির সামনে এসে তারা থামলো। সেখানে মেয়েটি তার ছেলে বন্ধুটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার অ্যাপার্টমেন্টের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। দেখতে পেলাম মেয়েটি দ্রুত ওর ঘরে প্রবেশ করলো। আমি এদিকে মেয়েটির জন্যে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকি।’
উল্লেখ্য, এই লেখাটি যখন কাফকা লিখছেন, তখন তার সঙ্গে প্রেম চলছে মিলেনার। তাহলে কথাগুলো কি মিলেনাকে উদ্দেশ করেই ছিল! কে জানে!
কাফকা তখন থাকেন প্রাগে আর লেখক এবং সম্পাদক চেক নারী জেসেনস্কা মিলেনা বিয়ে করে স্বামী পোলাকের সঙ্গে থাকছেন ভিয়েনায়। দুজন দুমেরুর বাসিন্দা। কিন্তু তাদের প্রেমপত্র চলতে থাকে মাঝখানের শত বাধা আর দূরত্বকে তোয়াক্কা না করেই। দুজন দুজনের ভেতর এক নতুন সম্পর্ক আবিষ্কারে ব্যস্ত। সে সম্পর্ক ছিল বন্ধুর, প্রেমিক-প্রেমিকার আবার কখনো কখনো একজন শিল্পীর প্রতি আরেক শিল্পীর সহমর্মিতারও।
মিলেনাকে লেখা এক চিঠিতে কাফকা বলছেন, ‘আমার হৃদয়কে তুমি ছুরির মতো বিদ্ধ করেছ, আর এ ছুরিটি হলো ভালোবাসা। হে প্রিয়, একেই বলে ভালোবাসা।’ আবার এই ভৌগোলিক দূরত্বও কাফকাকে মনেপ্রাণে বিদ্ধ করেছিল নিশ্চয়ই। তিনি লিখেছেন, ‘যদিও আমার ঘরটি খুব ছোট কিন্তু সত্যিকারের মিলেনাকে এখানেই খুঁজে পাই। যে মিলেনা কিছুক্ষণের জন্য আমার এখানে এক রবিবারের চলে এসেছিল। বিশ্বাস করো তার সঙ্গ আমি ভালোবাসি।’
কাফকা তার লেখায় নির্দ্বিধায় কবুল করেছেন যে, তার জীবনের কোনো নারীই তাকে সুখী করতে পারেনি। কেন পারেনি? কী ছিল সেই অন্তরায়! এমন প্রশ্ন আসা খুব স্বাভাবিক। কাফকা নিজেই আবার তা পরিষ্কার করেছেন। কাফকা তাদের কখনো স্মরণ করেছেন তার ডায়েরির পাতায়, কখনো চিঠিপত্রের ভাঁজে ভাঁজে। কাফকার সঙ্গে এক নারীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কাফকা তখন নিতান্তই বালক। কাফকা নিজেই বলছেন সে কথা, ‘তিন ছিলেন একজন বয়স্কা মহিলা আর আমি তখন বালক।’ পরবর্তী সময়ে আমরা জানতে পারি, ১৯০৫ এবং ১৯০৬ সালের বসন্তে কাফকার সঙ্গে এক সুইস নারীর গভীর প্রণয়ের সম্পর্ক হয়েছিল। তার নাম ছিল সিলেসিয়া। ১৯১৩ সালে কাফকার সঙ্গে লেক গার্ডার এক সেনাটোরিয়ামে পরিচয় ঘটে রাইভা নামের আরেক নারীর। রাইভা সম্পর্কে কাফকা লিখেছেন, ‘রাইভার সঙ্গে সম্পর্কের সেই সুখময় স্মৃতি কখনোই ভোলা যায় না।’ রাইভার সঙ্গে কাফকার মাত্র কয়েকবার দেখা হয়েছিল।
চল্লিশ বছর বয়সী লেখক জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজের সম্পর্কে লিখছেন, ‘উপহার হিসেবে যে আনন্দময় সঙ্গম করার শক্তি তুমি তোমার জীবনে সহজেই পেয়েছিলে, তার সঠিক ব্যবহার তুমি করতে পেরেছ? তুমি ব্যর্থ। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এ কথাটিই বলে দেওয়া যায়। অথচ এই সঙ্গমসুখকে তুমি খুব স্বার্থকভাবে জীবনে কাজে লাগাতে পারতে। শারীরিক এই সম্পর্ক আমাকে ভাবিয়েছে, রাত-দিন তাড়িয়ে বেড়েয়েছে।(কাফকার ডায়েরি দ্বিতীয় পর্ব-পৃষ্ঠা-২০৩)।
জীবনে দুই-দুবার কাফকা তার প্রেমিকা ফেলিস বোয়ারের সঙ্গে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। সেটি ছিল ১৯১৭ সালের কথা। পরবর্তী সময়ে তিনি প্রেমে পড়েছিলেন ডোরা ডায়মান্ত নামের এক ইহুদি নারীর। কাফকার জীবনের তখন শেষ সময়। যক্ষায় আক্রান্ত। পাশাপাশি শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য রোগ তো আছেই। ডোরা আর কাফকা দুজনেই চলে আসেন প্রাগে। উদ্দেশ্য যদি তিনি রোগমু্ক্ত হন! কে জানে, কাফকা সে যাত্রায় সেরে উঠলে তিনি হয়তো তার নিজস্ব প্রেমের সংজ্ঞা থেকে ফিরে আসতে পারতেন! হয়তো ডোরাকে নিয়ে কাফকার শুরু হতো সুখের সংসার! কিন্তু সেই সময়টুকু কাফকা আর পেলেন না। ১৯২৪ সালের জুনের ৩ তারিখ তার মৃত্যু হয়। দীর্ঘ প্রেমহীন এক জীবন কাটিয়ে মৃত্যুর পথে তখন কাফকা। ৩ জুলাই কাফকার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন কাফকা।
আরও পড়ুন: মারিয়ানার ৩৫০ বছর আগের প্রেমপত্র: বিরহগাথা ॥ আদনান সৈয়দ