শব্দ ও চিত্রকল্পের সম্মিলনে এক ভিন্নতর আবেদন সৃষ্টি করেন উদীয়মান কবি কাজী মোহিনী ইসলাম। তার কবিতা পড়লে, সহজেই অনুমেয় হয়, চিত্রকল্প ও বিষয়বস্তুর নিহিতার্থ। তিনি শব্দের সঙ্গে ছন্দ-অলঙ্কারের সমন্বয় সাধনে নিজস্ব মাত্রা যুক্ত করেন। তাই ভাব, ভাষা ও ছন্দের সমন্বয়ে তার বেশিরভাগ কবিতাই মোহনীয় এক আবহ সৃষ্টি করে।
কাজী মোহিনী ইসলামের প্রথম কাব্যের নাম ‘হৃদয়ের ভাঁজে নকশিবোনা মুখ’। এই কাব্যের প্রথম কবিতার নাম ‘আদিম মহত্ত্ব ছুঁয়ে’। মেঘ-বৃষ্টি-বসন্ত বিহঙ্গের মাঝে কবি অতীতকে দেখেছেন কারু বাসনার তৃষ্ণায়। বর্ণহীন পৃথিবীতে আলোর অভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন কবি। কোনো এক প্রাচীন পরিচালকের কাছে নগরীর আবেদন কেবল শরীরকেন্দ্রিক। শরীরের ঘ্রাণে মাতাল হওয়া ছাড়া প্রেমের পারিজাতে আস্থার অভাব লক্ষ করেছেন কবি। তৃষ্ণার বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে কবি আশাহত না হয়ে অপেক্ষা করে আছেন। অপেক্ষার অত্যুত্তম উপমায় মেলে ধরেছেন:
নক্ষত্র নগরী পোড়ে বৃষ্টির অরণ্যে কতকাল
কুমারী মৃত্তিকা তবু নির্ভেজাল ভালোবাসা চায়
প্রগতি ইচ্ছেরা মেলে বর্ণালী স্বপ্নের মায়াজাল
আদিম মহত্ত্ব ছুঁয়ে বিপুল শাশ্বত সুখ পায়।
(আদিম মহত্ত্ব ছুঁয়ে: হৃদয়ের ভাঁজে নকশিবোনা মুখ)
‘বিজয়ের বর্ণময় ইতিহাস’ কবিতায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। কবিতাটির ভাব-বিষয়বস্তু সহজে অনুমেয়। বিজয়ানন্দে আত্মহারা আরতিগুলো শব্দ-স্বপ্নের নকশি কাঁথায় বুনেছেন তিনি। বিজয়ের আনন্দে হারিয়ে যেতে যেতে মৃত্তিকালগ্ন মানুষের উৎপাদন স্মরণ করেছেন কবি। উর্বরা জমিন, উত্তাল নদীর প্রতীকে ষোড়শী কন্যার বুকের ঢেউ উপছে পড়েছে স্বাধীনসত্তায়।
নির্মল শুভ্রতা ছুঁয়ে অবাধ আনন্দে ভাঙা
গ্রহান্তরের পূরণো প্রাচীর, রোদেলা উঠোন জুড়ে
গ্রীষ্মেও উড়ে তাই শীতের পাখি।
(বিজয়ের বর্ণময় ইতিহাস: হৃদয়ের ভাঁজে নকশিবোনা মুখ)
‘গ্রীস্মেও উড়ে তাই শীতের পাখি’ বাক্যটির মধ্যে আপাতবৈরিতার আবহ বক্তব্য বিষয়কে ঋজু-ঋদ্ধ করেছে। অস্তিত্বের সংকটে চাঁদের আলোয় অমাবশ্যার অন্ধকারের মত গ্রীষ্মরূপ মনে যেন শীতের পাখি জড়তা এনেছে। কবি জড়তায় গা এলিয়ে না দিয়ে ‘প্রভাত পাখির গান’ শুনতে পেয়েছেন। অনন্ত সম্ভাবনার নহলি দিনের স্বপ্নজাল বুনেছেন ‘হৃদয়ের ভাঁজে নকশিকাঁথায়’। রূপালী চুমকির চোখে চোখ নিয়ে ভোরের পাখির গানের মুখরতায় কবির দেহ-মনে সত্য সুন্দরের দোলা লেগেছে। গান গেয়ে চলেছেন প্রতীকী প্রতীক্ষার পলল পসরা প্রাণে।
‘শিশির চুম্বনে ভেজাবো হৃদয়’ কবিতাটির নামেই রয়েছে একরাশ শিহরণ। শিরোনামটি পরাবাস্তবতার পরশে সিক্ত করার ইশারা দেয়। ইচ্ছেগুলো উত্তাপে পুড়ছে। সরল রেখায় নয়, ত্রিভূজ ভঙ্গিতে। মায়াবি মোমের মতো গলে যায় মানুষের মনের মতি-গতি। ভালোবাসা গলে-গলে জমাট বাঁধে। অলখ ধরায় ঝরে পড়ে লাল-নীল সময়গুলো। বিবর্ণ কুন্তলের মতো কবির বেদনা অলাতচক্রে ঘুরপাক খায়। পলাতক কোন মনের পাতা পড়তে ক্লান্তি নেই।
ফেরারি ও মনের ভূগোল পড়ি চক্রহীন অহোরাত্র
সেগুন চন্দন রাঙা প্রেমের অদ্ভুত কারুকাজময়
অলৌকিক ভাঁজ খুলে খুলে…।
(শিশির চুম্বনে ভেজাবো হৃদয়: হৃদয়ের ভাঁজে নকশিবোনা মুখ)
অলৌকিক ভাঁজগুলো খুলে অপেক্ষার বেদনাগুলো পবিত্র শিশিরে সিক্ত চুম্বনে পুষিয়ে নিতে চায়। বিরহের যাতনায় বিরহী কবি মন বাউলাবাগিশ হতে চেয়ে মিলনের মদিরায় কণ্ঠ ভিজিয়ে নিতে চান। মিলনের মৌলিক মোহনায় মনোলোভা সুরে হিমসন্ধ্যায় কিশোরীর বিলাসী ঘুঙুর নেচে-গেয়ে জীবনের অগাধ সোনা ফলায়। কাব্যিক কৌশলে রূপায়িত বাসনাগুলো শব্দের সীমা ছাড়িয়ে অনেক আলো ছড়িয়েছে।
‘অলৌকিক বাতিঘর’-এ কবি বসুধার বুকে শেষ পরিব্রাজক হয়ে অসাধারণ এক ব্যক্তি, বস্তু বা অনুভবের অলৌকিক আনন্দে নতুন কোন উদ্ভাবিত দ্বীপ হয়ে গেছেন। অকূল সাগরে আলোকবর্তিকার নিশানা পাওয়ার পর নাবিকের তনু-মনে যেমন অমিত আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যায়, কবির মনে তেমনি আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। সমুদ্র সৈকতের মতো বিশালতায় বিশেষভাবে মুগ্ধ হয়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন।
‘আজকাল দুঃখগুলোকে’ সাদামাটা সহজ সরল ভাষায় কবিতাটির শিরোনাম রেখে কবি বেশ বিসর্পিল গতিতে এগিয়ে গেছেন ভাবনার ভাস্কর্য নির্মাণে। কবি দুঃখে কাতর হয়ে পরাজিত না হয়ে দুঃখকে সুখের আবরণে ঢেকে ইচ্ছেমত রাঙাতে পারেন। যদিও বিরুদ্ধ স্রোতের প্রাবল্য আছে। প্রকৃতির প্রতীকে নিজস্ব দুঃখানুভূতিগুলো ভালোবাসার প্রলেপে ঝালিয়ে নেওয়ার নিশ্চয়তায় ছোট ছোট চিত্রকল্পের রূপময় ভুবন সৃষ্টি করেছে। সে ভুবনে ডুবসাঁতার দিয়ে বেশ কাটানো যায় অপেক্ষায়। প্রতিশ্রুতির পূরণে-অপূরণে কবির কোনো পরিবর্তন হয়নি। নিজে নদী হয়ে কারও জল হওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশে গরমিল থাকলেও তৃষ্ণাগুলো মরেনি। আশ্রয়-আঁধারে সযতনে লালন করেছেন ক্ষয়ে যাওয়া জীবনের স্খলন, পতন। স্মৃতিরা পল্লবিত হতে জানে সংখ্যাহীন সংখ্যার প্রাচুর্যে। চিত্র-রূপের তীর্যক আলো উদ্ভাসিত হয়েছে এভাবে:
জীবনের ত্রিকোণোমিতি অংকের কাল্পনিক সংখ্যার মতো
অসীম চিত্রের বিস্তার করে স্মৃতির নিপুণ হাত জলতরঙ্গ
স্রোতহীন বুকে জাগে তৃষ্ণার চর, সেতো জল হয়নি!
অতঃপর হৃদয়ের গোপন গভীরে জীবনের সমস্ত ক্ষরণ
মাটি ও বীজের বন্ধনে রেখেছি জমা…
(আজকাল দুঃখগুলোকে : হৃদয়ের ভাঁজে নকশিবোনা মুখ)
‘পথের ইতিহাস’ কবিতায় একান্ত ব্যক্তিগত অনুভবের দ্যুতিগুলো শুধু ব্যক্তির কামনা-বাসনার খবর দেয়নি। আবহ, শব্দ-এমনকি মর্মার্থ ও পরাবাস্তবতার দিগন্ত ছোঁয়া ব্যাপ্তিতে ভরে উঠেছে। আধুনিক কবিতার সব বৈশিষ্ট্য এ কবিতায় চমৎকারভাবে উন্মোচিত হয়েছে। প্রেম ও কামের দ্বৈরথ বসবাস জৈবিকতার জিজ্ঞাসায় ঝালিয়ে নিতে চেয়েছেন কবি।বলেছেন:
আজকাল তোমার ঠোঁটের ভাঁজে বড় বেশি বরফ জমেছে
অথচ পাহাড়ের উত্তাপে বৃত্তগামী পথ ভুলে
কত শিলা জলবতী নদী হয়ে যায়।
কিশোরীর বর্ণিল রঙের ফ্রক দেখে ভাঙে
ঋষির প্রার্থনা, বিস্তারিত অনুবাদ।
(পথের ইতিহাস: হৃদয়ের ভাঁজে নকশি বোনা মুখ)
‘খুন’ কবিতায় হিমালয়ের বিশালতার পাশে সমুদ্র, পাহাড়, প্রজাপতি, ফুল, অতিথি পাখির খুন হবার না বোধক প্রত্যয়টি অন্য একটি হ্যাঁ বোধক প্রত্যয়কে নির্দেশ করে। প্রতীকাশ্রয়ী প্রতিটি শব্দের বিপুল আয়োজনে একটি করে প্রতীতির প্রার্থনা প্রকাশ পেয়েছে। সলতে যেমন নিভে যাওয়ার আগে উল্লম্ফিত হয়ে নিভে যায়, তেমনি করে কবির প্রাণের প্রবল ইচ্ছাগুলো মরে যেতে যেতে বিপুল আয়োজনে বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকার ব্যাকুলতা প্রকাশ করে। অমাবস্যার সঙ্গে কালো যুবতীর সমীকরণে কবিতার বক্তব্যকে ঋজুতা দিয়েছে।
শোনো পৃথিবী! আমি আজই জানলাম
একটি গভীর কালো যুবতী অমাবশ্যা রাত
তার গোপন জরায়ুতে জমা রেখেছিল শিশু চাঁদের স্বপ্নভ্রূণ
তারপর একটু একটু করে পরিপূর্ণ এই আমি।
(খুন: হৃদয়ের ভাঁজে নকশি বোনা মুখ)
‘একলা দুপুর’ কবিতায় ব্যক্তির বোধে জারিত তৃষ্ণাগুলো ঈস্পিত সান্নিধ্যের সাহচর্যে তৃপ্ত হতে চায়। পরাধীনতার বাধ্যবাধকতায় শরীর বাঁধা পড়লেও মন মানে না। মনকে বেঁধে রাখা দায়। ‘একলা দুপুরে’ রোদেলা আকাশে আরেকটি নিজস্ব আকাশে কবি বিচরণ করেছেন নির্ভয়ে। ‘সুন্দরের ক্ষুধায় মগজ জ্বলে’ আরাধ্য প্রিয়’র ঠোঁটে সৌন্দর্য সুধার হরেক রূপের ক্রীড়াকলার মূলের সন্ধানে কবি মন শিহরিত। মোহনীয় মোহে মগজে উত্তাপ বাড়ে।
তাঁর দ্বিতীয় কবিতার বই ‘কিছু মৌনতা কিংবদন্তি হয়ে ওঠে’। এই বইয়ে কবি হতাশাবাদী নন, আশাবাদী। একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতার চমৎকার শিল্পরূপ এঁকেছেন ‘নতুন আলোয়’কবিতায়। এ কবিতায় কবি বলছেন, একটি নতুন দিনের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। প্রত্যাশিত বস্তু-ব্যক্তিকেই তিনি পেতে চান, প্রত্যাশিত ব্যক্তির অনুকম্পা কিংবা করুণা নয়। এ কবিতায় তিনি আত্মজিজ্ঞাসাপীড়িত। নিজেকে প্রশ্নের বাণে জর্জরিতও করেছেন। বলেছেন,
যে অভিমান বুকের তলে লুকিয়ে আছে—চুপ
জানি না সে নতুন আলোয় বদলাবে কী রূপ
দিন আসে যায় বছর গড়ায় শতাব্দী হয় পার
জন্ম থেকে অপেক্ষমাণ মানুষ থাকে কার?
দীর্ঘপ্রতীক্ষারত মানুষ কেবল নিজেকেই করে এমন প্রশ্ন। উত্তর কেউ সাজিয়ে রাখে না, নিজের মনে নিজের মতো করেই এর উত্তর সাজাতে হয়। এতে স্বস্তি মেলে না, কিন্তু সান্ত্বনা-আত্মপ্রবোধ মেলে।
একাকিত্বের যাতনাকাতর আরও একটি কবিতার শিরোনাম ‘করতালিতে রুচি নেই’। এটি কেবল একাকিত্বের রূপায়ন নয়, একইসঙ্গে শিল্পের শুদ্ধরূপপ্রত্যাশীর ছবকও। উপস্থিতকালের অবক্ষয়, রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন, সামাজিক-নৈতিক বিচ্যুতির কালে কেবল ঠুনকো নীতিকথা শুনে মনকে প্রবোধ দেওয়ার ঘোর বিরোধী কবি। আবার ‘প্রত্যয়ী জীবনবৃত্তে’কবিতায় জীবন সম্পর্কে মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করেন। প্রত্যাশার সঙ্গে না পাওয়ার বেদনার সম্পর্ক স্থাপন করেন। বলেন, ‘চোখের আকাশজুড়ে তার উদাসীনতার ঘোর/ জমে থাকে প্রৌঢ় মেঘ অহেতুক…’। এই একটি চিত্রকল্পে কবি জীবনের সারাৎসার ফুটিয়ে তোলেন। প্রত্যাশার যে আকাশসমান বিস্তৃতি, তার সঙ্গে প্রাপ্তির সম্পর্ক খুবই ক্ষীন। তাই সে আকাশে প্রৌঢ়মেঘ অর্থাৎ প্রাণচাঞ্চল্যহীনতা এসে ভিড় করে। ফলে মানুষকে হতাশ হতেই হয়।
আবার প্রেমের কবিতায় মোহিনী ইসলামকে দেখি, গভীর অপেক্ষমাণ হিসেবে। ‘ফেরারি প্রেমিক’ কবিতায় নিজেকে সুর হিসেবে দেখান। একইসঙ্গে বিরহের গান জয়গান। থাকেন প্রেমিক পুরুষের অপেক্ষায়, বলেন, মাল্টিকালার আলোর জড়োয়া পরা পণ্যশালার মতো তুমিও কি ভুলে গেছ? চন্দ্রমুখী রাত আর সূর্যমুখী দিনের ব্যবধান?’ কবি তার প্রেমিক পুরুষকে সময় পরিবর্তন ও মানবমনের পরিবর্তনের মধ্যেকার যোগসূত্র মনে করিয়ে দেন। কিন্তু প্রেমিক পুরুষ অনেকটাই উদাসীন, তাই কবি পুনরায় আক্ষেপ করেন, বলেন, ‘তবে কার আমি কাজল বধূ?’ অর্থাৎ কবির সমস্ত আয়োজন একসময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। প্রেমিক পুরুষ তার বাসনার সারথী হয় না। প্রায় সমধর্মী অপেক্ষমাণতার গল্প রয়েছে ‘আঁধার হেঁটে চলে দ্বিধাহীন’, ‘অপরাহ্নের মায়াবী মুগ্ধতায়’, ‘জীবনের সূচিপত্রে তুমি’, ‘থেমে আছি ট্রাফিক সিগন্যালে’, ‘যে আমাকে উর্ধ্বমুখী করে’ ও ‘কিছু মৌনতা কিংবদন্তি হয়ে ওঠে’ কবিতায়। এসব কবিতায় কবি জীবনের নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার ইঙ্গিত যেমন রেখেছেন, তেমনি বুনেছেন হৃদয় আবেগের সুক্ষ্মতম বিষয়ও। একইসঙ্গে নিজেকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ, প্রকাশ করেছেন বিস্ময়, ভাবিয়েছেন মানুষকে।
কবির বিশ্বাস, বিপুল বৈভবের মাঝে শূন্যতার ধারণা আপেক্ষিক। মানুষ নিজের মনের ভেতরই সুখ-দুঃখের জগৎ সৃষ্টি করে। সেখানে আপন মনেই সে নিজেকে সুখী-দুঃখী রূপে প্রায় দেখতে ভালোবাসে। নিজে যেমনটি পছন্দ করে, অন্যকেও সেভাবে দেখতে চায় সে। এ কারণেই ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো কাঁপার পরও সময়ের পরিবর্তন তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে না, দুটি মন এক হলেও কারও গন্তব্য বদলায় না, হয়তো এ কারণে মানুষকে মানুষ বিশ্বাস করেও বারবার ঠকে। কখনো কখনো মানুষের পতন আসে প্রাচীন মুদ্রার মতো। তবু মানুষ বিপুল বৈভবের স্বপ্ন দেখে, চারিদিকে রয়েছেও বিপুল বৈভব।
‘কিছু মৌনতা কিংবদন্তি হয়ে ওঠে’ কাব্যের সিংহভাগ কবিতায় এই কবি স্বপ্ন ও সংসারের সমন্বয়ের বিষয় স্পষ্ট। বিশেষত তাঁর স্বপ্ন এমন যে, তিনি সংসারের যাবতীয় কাজ করার সময়ও প্রতিটি কাজের মধ্যে কবিতাকে খুঁজে চলেন।
এভাবেই কাজী মোহিনী ইসলাম কবিতার রাজ্যে সগর্বে বিচরণ করার সামর্থ্য দেখিয়েছেন। কারও অনুকরণের চেষ্টা না করে নিজস্ব ভুবনের কথামালাগুলো একটি সুতোয় বেঁধে রাখার চেষ্টা করেছেন। কাজী মোহিনী ইসলাম অনেক হেঁটেছেন; আরও হাঁটবেন জীবনের মহাসড়কে, নিজস্ব মহিমায়।