‘তুমি পুত্র কবিবংশের লোক…ধরিও বংশের খুঁটি—জন্মভিটা যেন আর না থাকে বিরান। তোমার তরিকা যেন সত্য হয় প্রেম—দ্বিধাহীন করে যেও বংশের বয়ান…পুত্র তুমি, পিতা তুমি, তুমি বংশের মান— তোমাকে স্বাগত বলি, জানাই সেলাম!’
কবিতা নিয়ে কথা বলার মতো সাধ ও সাধ্য কোনোটাই আমি রাখতে চাই না। এই বাক্য ‘আমি’ দিয়ে শুরু করতে হলো। আমি দিয়ে শুরু করা যেকোনো বাক্যই বিপজ্জনক ঠেকে। মনে হয়, সক্রেটিস বা বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি পাঠ করছি! তবু কিছু বলতে চাওয়া নিজ কিংবা অন্যের সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞানের জানান দেওয়া—এ তো দোষণীয় না। ফলে অজ্ঞ লোকের বেলায় অন্যের বয়ান তুলে ধরা যেমন কঠিন, আবার অনেকটা সহজও বটে। স্বর্ণলতার উদাহরণ টানা যায়। অন্যের ওপর ভর দিয়ে সে কেমন লতিয়ে-লতিয়ে মগডালেও চড়ে বেড়ায় কী অপরূপ অনায়াসে। মূল-কাণ্ডে এমনকি রস আস্বাদনেও অন্যের কর্মযজ্ঞেই ভরসা। নাইবা হলাম রাঁধুনী কিন্তু অন্যের রান্নার স্বাদ তো পরখ করে দেখা যায়!
এই গল্প যেহেতু কবিতার, ফলে কবিতা সংক্রান্ত উদ্ধৃতি যেকারও কাছ থেকেই চেয়ে নেওয়া যায়, যায় তো! যতীন সরকারের আলোচনা সভায় যারা মনোযোগী ছিলেন বা এখনো আছেন, তাদের মনে থাকার কথা। প্রমথ চৌধুরীর অতি নিরীক্ষাধর্মী একটি উদ্ধৃতি মহাজন যতীন সরকার প্রায়শই আওড়াতেন। কঠিন অথচ কী চমৎকার শ্রুতিমধুর সে কথাগুলো―সমাজের অধিক সংখ্যক মানুষের মনোরঞ্জন করতে হলে সাহিত্য তার স্বধর্মচ্যুত হবে। কানে এখননো ওই সুর বাজে। স্যার কত দরাজ আর ক্ষিপ্ততার সঙ্গেই না কথাগুলো শোনাতেন। এমন কিছু কথা গুণীজনেরা বলে রেখে গেছেন যা কখনো পুরনো হওয়ার নয়। বলে রাখা ভালো, এক্ষেত্রে জীবনানন্দ দাসের কবি বিষয়ক পর্যবেক্ষণটির সঙ্গে প্রমথ চৌধুরীর চিন্তাটির অন্তর্গত মিল খুঁজে পাওয়া গেলে তা নিছক কাকতালীয় নয়, বরং উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গিগত অভিন্ন দর্শন বলাটাই শ্রেয়।
তার সঙ্গে একবারই দেখা―কবি তিনি। আজিজ সুপার মার্কেটের নিচতলায় জনান্তিক আর পাঠক সমাবেশের মাঝ বরাবর, কবি ওবায়েদ আকাশ আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। ওই সন্ধ্যার পরে আর কখনো দেখা হয়নি। তাই বলে কি আর তার সঙ্গে দেখা হয় না? কথা হয় না? হয়ই তো! অক্ষরে-অক্ষরে সাজানো বাগানের শীতল ছায়ায় কত কথাই তো তিনি বলে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। মুগ্ধ শ্রোতার মতো কান পেতে শুনে যাচ্ছি কেবল। মুজিব ইরমের শক্তির উৎসটা মনে হয় এখানেই, তার কথা জলাঞ্জলি দেওয়ার সুযোগ থাকে না। কান পেতে অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষা করাতে জানেন তিনি। ইনবক্সে একবার বলতে ইচ্ছে হয়েছিল খুব, আপনি গল্প লিখছেন না কেন? কিন্তু পরোক্ষণেই আবার মনে হলো, তিনি তো কবি! একটি কবিতার মধ্যেদিয়ে কত জোরালো ও নিখুঁতভাবে দীর্ঘ কোনো গল্প-উপন্যাসের ছবি আঁকা হয়ে যেতে পারে অনায়াসে! ওই যে ‘বেণীমাধব’! জয় গোস্বামী কেমন গেঁথে দিয়েছিলেন বুকের মধ্যে, একটা চিনচিনে ব্যথার উপ্যাখ্যান। মুজিব ইরমের কবিতাও একেকেটি গল্পের পটভূমি। যা কখনো বা নেহায়েৎ মা-মাটি-দেশের প্রতি পরম প্রণতি কখনো বা প্রেয়সীর বুকে বেজে ওঠা আরোগ্য বিউগলের সবিনয় আর্জি!
ভাবতে ভালো লাগে, নালিহুরী গ্রামটি হয়তো বাংলাদেশের আর পাঁচটি গ্রামের মতোই। কিন্তু মুজিবের বহুমাত্রিক চিন্তার প্রকরণে নালিহুরী দিনে দিনে তার কলেবরটি দীর্ঘ আর বর্ণিল হয়ে উঠছে। এ যেন এক অনবদ্য কাব্য সুষমা। হয়তো অবসন্ন কোনো রাতের প্রহরে টেমসের তীরেও বুকের ভাঁজ খুলে আছড়ে পড়ছে সেই প্রিয় অনুরণন-অবিরল―সাং নালিহুরী! সাং নালিহুরী…
নিজ নামে ডাক দিলে কেঁপে ওঠে অতলান্ত পথের গরিমা। যা কিছু জন্মে পাওয়া…যা কিছু নালিহুরী…যা কিছু নিজনাম…নিজদেশ…নিজস্ব নিয়ম…জেগে ওঠে নিজ কোলাহল।
মানুষ কেবলি হাঁটে সীমাবদ্ধ জলে। যদিও বা কেউ কেউ হেঁটে আসে গ্রিস। আরও দূর ছুঁয়ে আসে মাথুউজেলা গাছের বয়স। আমাজান হ্রদের শরীর। অতপর স্ট্রবেরি ক্ষেতের পাশে একটু জিরিয়ে নিয়ে যদি বা কেউ নিদ্রামগ্ন হয়, ঠিক তখনই তার নিজনামে ডেকে ওঠে কেউ।
‘মানুষ কেবলি ভুলে নিজ সাং, নিজস্ব আয়াত। তারপর ঘুরেফিরে পঞ্চনদী— নিজের নিকটে এসে ধরা পড়ে যথার্থ নিয়মে। আজ এ-ভোরবেলায় এ বড় সত্য বাণী ভাবিলো ইরমে।’
কায়িক অর্থে মুজিব ইরম লন্ডনের প্রবাস জীবনকে বেছে নিয়েছেন। হলে কী হবে, তার সৃষ্টিশীল অন্তরাত্মায় ধ্যানস্থ রাখাল বালকের মতোই তিনি তার প্রতিটা শব্দ-বাক্যে বাংলার তথা জন্মভূমি সিলেটের মাটির সুরেই কথা বলেন। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই হোক, কিছু মানুষ কোথায় অবস্থান করছেন তার তোয়াক্কা না করে, মাতৃভূমির তর্পণ করাকেই আরাধ্য করে তুলতে জানেন। এ কোনো পারদর্শিতা মূলক জ্ঞান নয়, নয় কোনো কৌশল। এ আত্মযোগ, পরম প্রার্থীর ন্যায় প্রাণের আকুল আবেদন। পার্ল বাক-এর কথা স্মরণে রাখা যায়।। এই সুসাহিত্যক লেখক জীবনের প্রায় পুরোটাই অতিবাহিত করেছেন চীন দেশে। লিখেছেন বিস্তর ও ইংরেজি ভাষাতেই। মাতৃভূমিকে নিবেদিতই প্রায় তার সব আয়োজন। বলতে দ্বিধা নেই, মুজিব ইরম আমাদের কালের এমনই একজন কবিতার কারিগর। কেবল কবি বলাতেই তার প্রতি সুবিচার হয় না। বরং কবিতার মধ্যে দিয়ে মুজিব তার মা-মাটি শেকড়ের সন্ধান করে চলেছেন নিরন্তর। অক্ষরের পর অক্ষরের গাঁথুনি দিয়ে সেই দৃশ্যেরই চিত্রায়ণ করেন তিনি। মাতৃতুল্য নালিহুরী গ্রামটিকে তাই করে তুলেছেন বিচিত্র এক মমতাময়ী ক্যানভাস, যার পরতে পরতে অপরূপ আঁচড় কেটে চলেছেন এই চিত্রকর, মননে মায়াবী তুলির পরশে।
মুজিব স্বল্পভাষী। বাতচিতে পটু নন। বলার চেয়ে অক্ষর সাজানোতেই অধিক মনোযোগ তার। সম্ভবত জাত কবিদের এই স্বভাবই হয়। আড্ডায় বেশ প্রাঞ্জল থাকেন—এই অভিধাগুলো বানোয়াট। মানে, বানিয়ে বলছি। এসবের কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই, কোনো কিছু না জেনে বলাটা সমীচীন দেখায় না যদিও। তবে খানিকটা বুঝতে পারি, দ্বিমত করার মতো পরিসর তো উন্মুক্ত রইলোই। জীবনানন্দ দাশের ছাতা দিয়ে মুখ ঢাকার গল্প মনে পড়ছে, গল্পের এ অংশটি স্মৃতি থেকে নিচ্ছি। শাহাদুজ্জামানের কোনো নিবন্ধ থেকে পাঠ—বুদ্ধদেব বসু জীবনান্দর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে পত্রিকায় লিখছিলেন অথচ পথিমধ্যে বুদ্ধদেবকে দেখে জীবনানন্দ ছাতা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতেন। গত পঞ্চাশ বছরে কত অসংখ্য লেখক, কত অসংখ্য বই লিখলেন, পুরস্কার জিতলেন, সাক্ষাৎকার দিলেন। সাহিত্যসভার সভাপতিত্ব করলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে সবাইকে ম্লান করে একটি মাত্র মুখ স্থান করে নিলো পাঠকের মনে। সেটি জীবনানন্দের—যে মুখটি তিনি ঢেকে রাখতেন ছাতার আড়ালে!
বাংলাদেশের নদী-নালা বিল-ঝিল মাঝিমাল্লা ধানপাট জল-কাদা গাঁয়ের পথে বেহুলা বাতাসে উড়ে যাওয়া কিশোরীর সলাজ ওড়ানা কিংবা পুকুর ঘাটে কলসী ভাঙ্গা যুবতী বধূ। এ সব কিছুই মুজিবের কবিতায় ছন্দে ছন্দে অকপট হয়ে ওঠে।
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম ধারায় অর্থাৎ যে পথ ধরে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে এগিয়েছে বাংলা ভাষা, যে পথের একেকটি মাইল ফলক রচনা করে গেছেন চণ্ডীদাস, আলাওল আব্দুল হাকিম, সেই পথকেই যেন আরও দীর্ঘ আরও সুগম করে তোলার অক্লান্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এ যাত্রার পথিক হয়েছেন আজকের মুজিব ইরম। ধারাটিকে অবশ্যই পুরনো বা প্রাচীনজ্ঞান করা তুমুল রকমের ভুল হবে। বরং বলা চলে বিচিত্র আধুনিক ও অপরিবর্তনীয় ধারা। প্রতিদিনের নতুনকে সঙ্গী করে অবিরল এক স্বর্ণখচিত পথকে আবিষ্কার করে চলাই এই যাত্রার গন্তব্য। মাথার ওপরে চিরদিনের নীল আকাশ যেমন, যা প্রতিদিনই নতুন! প্রশ্ন হলো, পথের কি শেষ আছে? সহজ উত্তর, ‘না’। তবু যেতে হবে বহু দূর। মুজিব সেই বহু দূরের স্বর্ণখচিত পথের যাত্রী হয়েছেন, সন্দেহ নেই।
কবিতা তো সেই নক্ষত্রালোকে ফোটা একেকটি আলোর ফুল যা ধরা এবং ছোঁয়া অসম্ভব। তবু এই যে চিরায়ত বাসনা, তারে ধরি ধরি, যায়না ধরা। এই যে অবিরল, অবিরত ধরার বাসনা—এই হয়তো কবিতা!
কাঞ্চন ফকির কোনো দিন কবিতা লেখেনি। পদ রচনার বিদ্যা বোধও তার ছিল না কোনোকালে। মাইলের পর মাইল পোষা বানর কাঁধে নিয়ে গাঁয়ের পথে কাঞ্চন ঘুরে বেড়াতো। ডুগডুগি আর বাঁশের লাঠি থাকতো আর হাতে। বান্দর খেলা’ দেখাতে দেখাতে কাঞ্চন কয়েক ছত্র পঙ্ক্তি রচনা করে নিয়েছিল। তবে তার কণ্ঠে সুর ছিল খুব পোক্ত, মধ্যরাতে রোজ সে গানের ডালা খুলে বসতো। কিছু গান মহল্লায় তার নামে ব্র্যান্ডিং হয়ে গেলো। ডালে তে লড়ি চড়ি কিংবা আমার হার কালা করলাম রে।
সে বছর খরা হলো খুব। বৃষ্টি-বাদলের দেখা নেই বললেই চলে। পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে গেলো। মহল্লার চাপকলগুলো একের পর এক পানিশূন্য হয়ে পড়ছিল। দিনক্ষণ ঠিক করে মাদ্রাসার মোহতামেম সাহেব বৃষ্টির জন্যে গ্রামবাসীকে নিয়ে ডাঙার মধ্যে বিশেষ নামাজ আদায় করলেন। তাতে যদি রহমত নাজিল হয়।
বান্দার তৃষ্ণা মেটাতে মেঘরাজ সদয় হলেন বলে মনে হলো না। স্থানীয়রা কূপ খননের সিদ্ধান্ত নিলেন। রাতভর মাটি খননের পর তীক্ষ্ণ বালির স্তর ভেদ করে বের হয়ে এলো স্বচ্ছ জলের ধারা ।
এর কয়েকদিন পরে, ফজর ওয়াক্তে মুয়াজ্জিনের চোখে পড়লো গর্হিত এক ‘নাপাকি’ কারবার! কূপের পাড়ে বসে আছে কাঞ্চনের বানর। একটা অ্যালুমিনিয়ামের বাটিভর্তি পানি নিয়ে বানরের মুখে ধরে আছে কাঞ্চন। পুনরায় সেই বাটিতে পানি তুলে আনাই তার অপরাধ। মুয়াজ্জিনের এমনই অভিযোগ।
জুম্মাবারে এ নিয়ে একটা হৈচৈ-এর আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। বয়স্ক দুই-চার জন মুসল্লির সঙ্গে ঈমাম সাহেব বাতচিত করে একটা সমাধান আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন। ঈমাম সাহেব নিজে মুখ খুললেন না। মুরব্বি একজনকে দিয়ে মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করালেন।
খালি কাঁধের ওজন যেন ভারী পাথরের চেয়েও বেশি! এই ওজোন কেবল কাঁধেই না, আজ কাঞ্চনের বুকেও ভর করেছে। পাষাণতুল্য এক পাথর চেপে বসেছে বুকের বাম-দিকের রাস্তাটায়। নদীর ঘাট থেকে বাড়ি ফেরার তিন মাইলের পথ আজ ত্রিশ মাইলেও শেষ হতে চাইছে না। বহু দিনের রুটি-রুজির সঙ্গি বানরটাকে বিসর্জন দিতে হলো। অন্যথায় গ্রাম ছাড়া হতে হবে যে!
থেমে গেলো শিশুভোলানো বান্দরখেলার কবিতা, থেমে গেলো মধ্যরাতের নীরবতা ভাঙার বিরহকাতর গানের আসর। কিছু নীরবতার শক্তি যেন গগনবিদারী সংলাপের চেয়েও রুদ্র কঠিন। বহুদিন পরে কাঞ্চনের সেই নীরবতাকে মনে হয়েছিল অস্ফুট বেদনার অনবদ্য কবিতা!
মুজিব ইরম তার কবিতায় কখনো ছায়া দিয়ে কায়াকে ঢেকে দেখানোর জাদু দেখান। যা তার অনবদ্য কাব্যবোধের গহিনতম প্রকাশ বলেই ধারণা হয়। অর্থাৎ আক্ষরিক কবিতা দিয়েই মুজিব পাঠককে আচ্ছন্ন করে তোলেন এক অদ্ভুত নীরবতায়। যে নীরবতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায় যা কিছু কবিতার প্রকরণ।
তার কবিতা অন্তর্গত বোধের এক গভীর টানাপড়েনের সুতোয় গাঁথা। কখনো তা ফিকশন আবার ননফিকশন। ছন্দের অন্ত্যমিলে নির্মিত অনবদ্য সব পদ্যভাণ্ডার। পাঠকের সঙ্গে যেকোনো সৃষ্টির আদিতে একরকম দ্বান্দ্বিক অবস্থানকে অতিক্রম করে নিতে হয়। মুজিবের কবিতায় এই এক অসম্ভব রকমের প্রাণচাঞ্চল্য, সহজাত প্রবৃত্তিও যেন! ফলে তাকে এ সবের ধার ধারতে হয় না। ঝরনাধারার মতো মিহি সুরে ঢেউ তুলে কবিতার রঙ-রূপ-রস এসে মিলে যায় ধীরে, দীর্ঘ সরোবরে।
কিছু অনির্ণীত আত্মবিরোধের মুখোমুখি পাঠককে হতেই হয় সর্বদা যা কিনা আমাদের চেতন এবং অবচেনত মনের এক চিরায়ত সংঘাতের করুণ রকমের বিভ্রান্তি। যার মধ্যে দিয়েই যেতে হয় পাঠককে। বিশেষ কিছু উল্লম্ফন এবং নিরঙ্কুশভাবেই তা প্রতিভাজাত তো বটেই। ব্যক্তিগত-সমাজগত এমনকি রাষ্ট্রগত স্ববিরোধের দোলাচলের মধ্যে দিয়েই যার চূড়ান্ত রকমের প্রকাশ ঘটে থাকে। ওই ঘোর কেবল ব্যক্তি বিশেষেই নয় অধিকন্তু সমষ্টিকেও আচ্ছন্ন করে তোলায় সমান সক্রিয়। মুজিব তার কবিতায় এই সব সংঘাত ও বিভ্রান্তির চমৎকার সমম্বয় ঘটিয়েছেন। ফলে তার কবিতা একটা বিশেষ আকর্ষণীয় চরিত্র হয়ে উঠেছে। পাঠক প্রতিনিয়তই সেই যোগফলের মুখোমুখি হয়ে থাকেন এবং তা কোন অর্থেই বিয়োগান্তক না। যা একাধারে কৌতূহলোদ্দীপক সরল এবং অবশ্যই বর্ণাঢ্য মাত্রায় উত্তীর্ণ।