সেটা সম্ভবত ১৯৮৬/৮৭ সাল। সাহিত্য, দর্শন, রাজনীতি, থিয়োলজি সবকিছুই গোগ্রাসে গেলার একটা নেশায় পেয়ে বসে। একদিন বন্ধু মাসুদ জামান আমাকে এনে দেয় একটি মোটাসোটা উপন্যাস। মাসুদ, আবুহেনা আর আমি সেই স্কুল থেকেই এক ধরনের ত্রিচক্র পাঠশালার শিক্ষার্থী। কিছুদিন মাত্র হলো জর্জ অরওয়েলের এনিম্যাল ফার্ম পড়তে দিয়ে সে আমাকে ভড়কে দিয়েছিল। আশৈশব লালিত সমাজতন্ত্রে সুগভীর আস্থায় কষে এক লাথি মারার মতো সে আঘাত সয়ে ওঠার আগেই ধুম করে হাতে এলো এ আবার কোন্ সে ‘চিলেকোঠার সেপাই’!
তখন হুমায়ূন আহমেদের জয়জয়কারের সূচনাযুগ। আমরা যারা অপ্রচলবইয়ে আগ্রহী, তারা সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, রশীদ করীম—এমন অনেক নামের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছি এরমধ্যেই। এমনকী হাসান আজিজুল হকের ‘পাতালে হাসপাতালে’ আমাদের হৃৎপিণ্ডে অনেক অনুরণন করেছে। সৈয়দ শামসুল হকের ‘প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান’ আর ‘স্তব্ধতার অনুবাদ’ও কি এর মধ্যে পড়া হয়ে যায়?
ঠিক করে মনে পড়ছে না, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নামে কারও কথা এর আগে শুনেছিলাম কি না। যাই হোক, ইলিয়াস পাঠের এ সুযোগ আমি ছাড়িনি। তাই ১৯৬৯ সালের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ডামাডোলের অস্থিরতার বিষম জোয়ারে খড়কুটো-তুল্য ভেসে যাওয়া গ্রামাঞ্চলে চলমান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মতো আমরাও ভেসে যাই—ওসমান কী হাড্ডি খিজিরের বেশে। হ্যাঁ, সেই জাতীয়তাবাদী জোয়ারের যুগে সব বাঙালি ভাই ভাই বিবেচিত হওয়ায় কত অত্যাচারী জমিদার জোতদার সমাজতন্ত্রীদের আন্দোলনের আঁচ থেকে বেঁচে যায়, এবং পুনরায় মহাবলশালীরূপে আবির্ভূত হয়ে প্রজাসাধারণে নিপীড়নে মহাউৎসাহে পুনঃপ্রবৃত্ত হয়, যা এখনো ভিন্ন ভিন্নরূপে বলবৎ রয়েছে। তাই সেদিনের সে হাড্ডি খিজির এখনো উদ্ভিন্ন উন্মাদনায় পতঙ্গের মতো ছিটকে পড়ে মরে থাকে কত রূপে কত নামে কত ঘটনার ছলনায়। কত স্বপ্নচারী ওসমান পাঠ্যবই ছেড়ে আন্দোলনের নামে পঁইপঁই ঘোরে মাঝরাস্তায়, বাঙালি জাতীয়তাবাদের আন্দোলনে মহাসমারোহে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলমান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সর্বকর্ম ভেস্তে যায় মধ্যমাঠে। এসব ইত্যাকার ভাবতে ভাবতে পাঠ করতে থাকি—নিজেই হাড্ডি খিজির হয়ে যাই, নিজেই ওসমান।
এদিকে সুশান্ত মজুমদারসহ অনেকের লেখা হাতে এসে গেলো। আমরাও লেখা কম্পোজ করতে দিয়েছি অধুনালুপ্ত ‘অক্ষর’-এ। এরমধ্যে একদিন দেখা গেলো সুশান্ত মজুমদারের লেখাটি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।
চিলেকোঠার সেপাই পাঠের পরে আমার ভেতরে তৃষ্ণা যেন মেটে না। সেই তেষ্টা সংবরণহেতু পাঠ করতে হয় অন্যঘরে অন্যস্বর, খোঁয়ারি। প্রবন্ধের সংকলন ‘সংস্কৃতির ভাঙাসেতু’ ও লেখক শিবিরের কাগজটির কল্যাণে কয়েকটি নিবন্ধও গোচরীভূত ততদিনে। আমার মনে হলো যেন বহুকাল পরে এক অন্যস্বরের কথাকার ঔপন্যাসিক কথাসাহিত্যিকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে গেলো—যার লেখা পাঠ শেষ হ’লে আরও আরও পাঠের আগ্রহ জন্ম নেয়।
কত জনের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হই, ইলিয়াসকে এ-সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাকার হিসেবে বলতে গিয়ে। এর মধ্যে ‘দুধভাতে উৎপাত’ আর ‘দোজখের ওম’ আমাদের অনেককেই তাক লাগিয়ে গিয়েছে। ১৯৯০ সালে একদিন আমাদের ক’জনকে ডেকে লিরিক সম্পাদক কবি এজাজ ইউসুফী বললেন, তিনি লিরিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সংখ্যা বের করতে চান, তাই আমাদের সংশ্লিষ্টতা দরকার। এভাবেই আমরা লিরিকের সম্পাদনা পরিষদে যুক্ত হলাম মহাউৎসাহে। এদিকে এজাজ ভাই জানালেন, ইলিয়াসকে তিনি চিঠি লিখেছেন, তবে তার সম্মতি মেলেনি। কয়েকবার চিঠি লেখার পরও সম্মতি না মিললে লিরিক সম্পাদক তাকে এই মর্মে পত্র দেন যে, আপনি সম্মতি দেন বা না দেন, আপনার প্রকাশিত লেখার ওপরে আমরা কাজ করবোই—একাজে আপনিও বাধা দিতে পারবেন না। তবে, সম্মতি পেলে কাজটি আরও সুন্দর হওয়ার সুযোগ থাকে। অগত্যা তিনি নিমরাজি হলে ১৯৯১ সালে আমরা সদলবলে ঢাকা যাই। তিনি তখন ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করেন। সেখানেই গিয়ে হাজির হলাম। ক্লাস শেষে তিনি দেখা করলে তার টিকাটুলির বাসায় আমাদের আমন্ত্রণ জানান। সসংকোচে হাজির হলাম তার ছোট্ট ছিমছাম বাসায়।
একজন চিকিৎসকের টিনশেড বাংলো টাইপের বাড়ির পেছনের অংশে ভাড়া থাকেন ইলিয়াস। স্কুলছাত্র বাচ্চারা আর ভাবিকে নিয়ে সাধারণ আটপৌরে মধ্যবিত্ত সংসার। কিন্তু প্রাণোচ্ছ্বাসে ভরপুর। আর একমাত্র আভিজাত্য হাতে ধরে থাকা বনেদি পাইপ। একটি পাইপ থেকে কথার ফাঁকে ফাঁকে ধূমপান চলছে, আরেকটি পরিচ্ছন্নতার কাজে মগ্ন। এভাবে আরাম কেদারায় দুলতে দুলতে চলে কথার ফুলঝুরি। সেই যে তার ঘরে গিয়ে ঢুকেছি, তারপর বহুবার সে ঘরে আমাদের যাওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে রাতের বাসে চড়ে ঢাকায় পৌঁছেই সরাসরি চলে যেতাম তার বাসায়। সকালের নাস্তা দিয়ে আড্ডাবাজি শুরু হতো, সারাদিনমান তা সমানতালে চলতো—রাতের খাবার খেয়ে বের হতাম ফিরতি বাসের জন্যে অথবা রাত কাটানোর আশ্রয়ের খোঁজে। আমাদের মধ্যে কবি সোহেল রাববি ছিলেন সার্বক্ষণিক ধূমপায়ী। তার উসখুস লক্ষ করে ইলিয়াস ভাই নিজে থেকেই তার সামনে ধূমপানে উৎসাহ দেন। আর আড্ডা আলাপ হতো যেকোনো বিষয় নিয়েই সমান বয়সীর মতো। বলতে থাকেন গল্পের চরিত্রের কোনো কোনো সত্যিকার ঘটনা থেকে কোনো কোনো চরিত্রের যৌন বিকৃতির স্বরূপ নির্ধারণ পর্যন্ত। আমি তার গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের ভেতর যেসব পারভারশন ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন করলে, তিনি বলতেন, এসব সমাজে আছে। তিনি বিভিন্ন মানুষের মধ্যে এসব লক্ষণ দেখেছেন বলেই সেসব অনুষঙ্গ তার চরিত্রগুলোর মধ্যে সঞ্চারিত করেছেন। আমার যেহেতু এ সংক্রান্ত কিছু পড়ালেখা আছে অ্যাকাডেমিক কারণে, তাই আমার কাছে তিনি বিশেষ করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইতেন সাইকোসেক্সুয়াল ডিজঅর্ডারের বিভিন্ন নাম নিয়ে। তিনি তুলে ধরতেন কিছু ঘটনা। কী সুন্দর করেই না সেসব বর্ণনা দিতেন! তারপর বলতেন এটার কী নাম হবে? কিছু কিছু পারতাম। কিছু পারতামও না। তবে তিনি বারবার উচ্চারণ করে সেসব নাম মুখস্থ করে রাখতেন।
আমরা সেসময় সোহেল ভাইয়ের বাবার এমপি হোস্টেলে রাত্রে আশ্রয় নিয়ে সারাদিন ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছুটে যেতামইলিয়াস বিষয়ে লেখা সংগ্রহ করার জন্যে। কায়েস আহমেদ, মঞ্জু সরকার, সুশান্ত মজুমদারসহ বহুজনের সঙ্গে সে যাত্রায় দেখা করেছিলাম। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলাগুলির ভেতরে পড়ে প্রাণ নিয়ে পালানোর ঘটনাও ঘটে। কেউ কেউ লেখা দিলেন, আবার কারও কারও লেখা মেলেনি। অন্যদিকে রাত জেগে এজাজ ভাই, সোহেল ভাই আর পুলকের সঙ্গে মিলে তৈরি করছিলাম সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন। সেসব প্রশ্নের মধ্যে ইলিয়াসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বিতর্কিত বক্তব্য প্রসঙ্গেও প্রশ্ন ছিল—মূলত এজাজ ইউসুফীই এসব প্রশ্ন আগে থেকেই নোট করেছিলেন। লিখিত প্রশ্নগুলো ইলিয়াস ভাইয়ের কাছে যখন আমরা দিয়ে ফিরে এলাম, একদিন ক্যাম্পাসে শাহাদুজ্জামানের সঙ্গে দেখা। শাহাদুজ্জামান এবং আমি একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলাম। তাকে জানালাম আমাদের কর্মকাণ্ডের কথা। এর মধ্যেই তিনি হাসান আজিজুল হকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কারণে সুপরিচিত হয়েছেন। পরে এজাজ ইউসুফীর সঙ্গে শাহাদুজ্জামানের আলাপ হ’লে তিনি সাক্ষাৎকার নেবেন সাব্যস্ত হয় এবং ইলিয়াস ভাই একটি সাক্ষাৎকারে আগ্রহী বিধায় আমাদের প্রশ্নোত্তরের সাক্ষাৎকারটি আর আলোর মুখ দেখেনি। জানাও হলো না গান্ধী প্রসঙ্গসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর।
এদিকে সুশান্ত মজুমদারসহ অনেকের লেখা হাতে এসে গেলো। আমরাও লেখা কম্পোজ করতে দিয়েছি অধুনালুপ্ত ‘অক্ষর’-এ। এরমধ্যে একদিন দেখা গেলো সুশান্ত মজুমদারের লেখাটি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে এজাজ ইউসুফী সুশান্ত দাকে তার লেখাটি দৈনিক সংবাদ-এ প্রকাশিত হওয়ায় লিরিক-এ ছাপানো যাবে না মর্মে পত্র মারফত জানিয়ে দেন, লেখাটি খুবই ভালো ও বিশ্লেষণমূলক ছিল যদিও। পরে অবশ্য সুশান্ত দা’ দুঃখপ্রকাশ করে একটি চিঠি দেন, যাতে আমরা জানতে পাই ঘটনাটির জন্যে এক লিটলম্যাগ সম্পাদক দায়ী। তিনি লেখকের অজ্ঞাতে ফটোকপি করে সংবাদ অফিসে পাঠিয়ে দেন। যাই হোক, সুশান্ত মজুমদার আরও একটি লেখা আমাদের পাঠালেন। এতে আমাদের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে গেলো। আমরা দুটো লেখাই ছাপালাম।
ইলিয়াস ভাইয়ের সঙ্গে আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে জানা গেলো তিনি নতুন যে উপন্যাসটি লিখছেন, তার পরিবেশ ও চরিত্রগুলো ধারণের প্রয়োজনে প্রায়ই গ্রামে বগুড়ায় যেতে হয়। উপন্যাসটি লেখার কাজ চলছে, কবে শেষ হবে জানেন না। লিরিক সম্পাদকের অনেক অনুনয়ে তিনি অর্ধসমাপ্ত খসড়া লেখাটিও আমাদের দেন। কিছু কবিতাও তিনি লেখার চেষ্টা করেছিলেন প্রথম জীবনে। আমরা কবিতাও চেয়ে নিলাম। পত্রিকার কাজ চলছে, তবে এত বেশি সংশ্লিষ্টতার কারণে, এরমধ্যে আমার অ্যাকাডেমিক ফল বিপর্যয় ঘটে। কিন্তু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। আমরা আগের মতোই কাজে মগ্ন। অবশ্য ৪ মাস পরেই আমি অ্যাকাডেমিক বৈতরণী পার হয়ে পেশা জগতে পা দিতে সক্ষম হই। ইন্টার্ন চলাকালে প্রায় সব রাতের ডিউটিতে অবসরগুলো প্রুফ দেখার কাজে ব্যস্ত থাকতাম। পুলকও অনেক রাত আমার সঙ্গে রাতের ডিউটিতে সঙ্গ দিয়ে বানান সংশোধনীতে সহায়তা করে।
অনেকেই এটাকে তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস মনে করেন, কিন্তু আমি এখনো সেই হাড্ডি খিজিরের ঘোর কাটাতে পারিনি। এ খোঁয়াড়ি কাটবার নয় বোধ করি—পারবেও না কেউই, যারা নিজেদেরই ভাবে চিলেকোঠার সেপাই।
এর মধ্যে একদিন ঢাকায় ইলিয়াস ভাইয়ের বাসায় গেলে তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, আমি তার প্রসঙ্গে লিরিকের এই সংকলনে কী লিখছি। আমি জবাবে বললাম, আমি তো কবিতা লিখি। তাই এ যাত্রা আমার কোনো লেখা যাবে না। তখন ইলিয়াস ভাই বললেন, আমি তার গল্পের চরিত্রগুলোর সাইকোসেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার নিয়ে যেন একটা গদ্য লিখি। যদিও ব্যাপারটা দুঃসাহস দেখানোর সামিল, তবে সে বয়সটা তো দুঃসাহসেরই ছিল। তাই লিখে ফেললাম ‘যৌন বিকৃতি, অবদমনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ইলিয়াসের চরিত্রগণ’। বিভিন্ন পাঠকের মিশ্রপ্রতিক্রিয়া থাকলেও ইলিয়াস এ লেখার ভূয়সীপ্রশংসা করে আমাকে উৎসাহ জোগান।
যাই হোক ১৯৯২ সালে লিরিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সংখ্যা প্রকাশিত হলে সারা বাংলায়, এমনকী পশ্চিমবঙ্গেও সাড়া পড়ে যায়। ১৯৯৩ সালে এই বিশেষ সংখ্যাটি সর্বভারতীয় লিটল ম্যাগাজিন সম্মেলনে পুরস্কৃত হয়। ততদিনে অবশ্য আমি পেশাগত ব্যস্ততায় ডুবে যাই। ১৯৯৫ সালে পিজি হাসপাতালে উচ্চশিক্ষার্থে ঢাকায় গেলেও দীর্ঘদিন ইলিয়াস ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় না। ১৯৯৬ সালে এক সকালে হঠাৎ দেখা মেলে তার সঙ্গে পিজি হাসপাতালের করিডোরে। লাঠিতে ভর করে হাঁটছেন। বোনস্ক্যান করতে এসেছেন। তার হাঁটুতে অস্টিওসারকোমা নামক ক্যান্সার হয়। পরদিন ছুটে গেলাম সেই বাসায়। হাস্যরসে ব্যাঙ্গাত্মকভঙ্গিতে তিনি যেভাবে নিজের রোগের ইতিহাস বর্ণনা করতে লাগলেন, মনে হলো যেন ভয়াবহ দোজখের ওম অনুভূত হলো সমস্ত শরীর মনে। কিছুদিন পরে সিদ্ধান্ত মতো হাঁটুর ওপরে পা কেটে ফেলা হলো। ঘরে ফিরে আসার খবর পেয়ে সোহেল ভাইকে সঙ্গে নিয়ে দেখতে গেলাম প্রিয় লেখককে। কেটে ফেলা পা নিয়েও তার রসিকতা থামে না। আমার চোখ অশ্রুসিক্ত হলেও তিনি পায়ের অনুভূতি নিয়ে মজা করেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু বেশিদিন তাকে আর আমরা পেলাম না। তবে এর মধ্যে খোয়াবনামা প্রকাশিত হয়ে গেছে। লিরিকে যে অংশটি ছাপা হয়েছিল তার অনেকাংশেই পরিবর্তন করা হয়েছে। অনেকেই এটাকে তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস মনে করেন, কিন্তু আমি এখনো সেই হাড্ডি খিজিরের ঘোর কাটাতে পারিনি। এ খোঁয়াড়ি কাটবার নয় বোধ করি—পারবেও না কেউই, যারা নিজেদেরই ভাবে চিলেকোঠার সেপাই।