২০১৭ সালের আগস্টে সপরিবারে প্যারিসে গিয়েছিলাম। প্যারিস প্রেমের শহর। ফুলের শহর। শিল্পের শহর। সেখানে আমরা যে হোটেলে ছিলাম, তার সামনেই একটি বড় বাগান ছিল। আমি প্রাতঃরাশ সেরেই সেই বাগানের লনে গিয়ে বসতাম। দেখতাম প্রতিদিন নতুন ফুল ফুটছে। তন্ময় হয়ে বসে প্রজাপতির ওড়াওড়ি দেখতাম। কবিতার প্লট খুঁজতাম। পরাগায়নের একটি পূর্বশর্ত থাকে। কী সেটা! ভাবতাম তা নিয়ে। জন্মেরও তো কিছু পূর্বশর্ত থাকে। থাকে কবিতার, প্রেমের, দুঃখের, বিরহের, জীবনের। আমি এই কবিতায় এসব নিয়েই ভাবতে চেয়েছি। এই কবিতাটি অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০১৮ সালের একুশে বইমেলায় আমার একটি কবিতার বই বের হয়েছে ‘তিউড়ি প্রকাশন’ থেকেই। নাম পরাগায়নের পূর্বশরত।
যারা পলিমাটি নিয়ে খেলেন প্রতিদিন। কিংবা পলিতে গুঁজে দেন একটি আমন ধানের চারা, তারাই বাংলার প্রধান শক্তি। তারা কৃষক। তারা চাষ করেন মাটিতে। যে মাটি সর্বময় ক্ষমতা রাখে, মানুষের জীবনে। সেই পলিপুত্রকেই আমি কিছু কথা বলতে চেয়েছি, ’পলিপুত্রের প্রতি’ কবিতায়। জানিয়েছি আমার ভালোবাসা।
আচ্ছা পৃথিবী কবে জন্মেছে! কে দিয়েছে এই নাম! যারা বিপ্লবী-তারা তো বদলেই দিতে চেয়েছেন এই নাম, এই সীমানা। পেরেছেন কি? আজন্মই শুনে আসছি বিবর্তনের কথা। অস্ত্রে চে গুয়েভারা কিংবা কবিতায় কাহলিল জিবরান! আমাদের রাহমান, মাহমুদ, সুনীল, শক্তিরাও। কতটা বদলেছে পৃথিবী। কতটা হয়েছে প্রেমযোগ্য ভালোবাসার বসতি! ভেবেছি। উত্তর পাইনি। সেই আশার পালক ছড়াতে চেয়েছি-আগামী প্রজন্মের করকমলে।
পরাগায়নের পূর্বশর্ত
হিম হয়ে থাকি। থাকি হেমন্ত হয়ে।এখনও
শীত আসে’নি, তবু বরফজলে মেশানো মেঘ
উড়ে যায়। পাতায় পাতায় জমা হয় রোদ।
জমা হয় বিশ্বাসের পরাগায়ন,বোধের বাতিগ্রন্থ-
বপনের ব্যাপৃত বিনয়।
বিচিত্র ভালোবাসা নিয়ে যারা মায়ালোক সাজায়
তাদের অভিজ্ঞতায় জমা থাকে কিছু পূর্বশর্ত।
বিমূর্ত সমুদ্রের মাঝখানে যে ছায়া জেগে থাকে-
একদা তারও নিজস্ব ঠিকানা ছিল,
একথা ভেবে ঢেউগুলো কাঁদে।
আর পাখিরা কাঁদে, মানুষের অপারগতা দেখে।
ঋতুতে ঋতুতে পরাগের বিবর্তন জানিয়ে যায়,
সকল কুসুমজীবনেই লেগে থাকে রঙ,
অধিগ্রহণ শেষ হলে-
সেই রঙ মিশে যায় প্রতিটি
প্রাণের প্রভায়।প্রতিটি স্পর্শের মুগ্ধ করতলে।
পলিপুত্রের প্রতি
একটি চিঠি লিখছি।লিখছি দীর্ঘদিন থেকে কিছু মানুষের নাম।
যারা বেঁচে থাকবে এবং যারা বেঁচে নেই- সকলের
সম্মিলিত বংশতালিকা।
জানি এই তালিকা সম্পূর্ণ নয়।কারও নাম বাদ পড়তে পারে।
যুক্ত হতে পারে নতুন কোনও অচেনা নাম।
তবুও লিখে যাচ্ছি, মাটিদাগে-
লিখছি একটি পুঁথি,
পলিপুত্রের প্রতি।
ছায়াকন্যা হয়ে,তার জন্যে নিবেদন করে যাচ্ছি ভালোবাসা-
ফুল,প্রদীপ,প্রান্তর। একদিন এই ভূমি সমৃদ্ধ হবে
নতুন রঙে রঙে-
এই প্রত্যাশায় ধরে রাখছি হাতের কলম।
পৃথিবীর জন্মসন
বিপ্লব মানেই আগুন,বিপ্লব মানেই ঝড়
বিপ্লব মানেই,তামা’র তাঁতে পোড়ানো কিছু খড়
হাত উঁচু করা সূর্যের দিকে,তাকিয়ে দেখা ভোর
শিল্পীর তুলিতে নভেম্বরের ঘুম জাগানিয়া দোর
বিপ্লবী চাঁদ বুকে নিয়ে যারা বাজায় মনের বাঁশি
তাদের পক্ষেই ঝরতে দেখেছি হেমন্ত রাশি রাশি
ফসলে ও ফুলে ভরিয়ে দু’কূল যে নদী বয়ে যায়
মজুরের ঘাম সেই মাটিতেই- প্রজন্ম খুঁজে পায়
প্রতিরোধের পতাকা হতে মানুষই করবে জয়
খণ্ড খণ্ড সবুজের মাঝেই পাবে তারা আশ্রয়
নতুন করেই লিখিত হবে পৃথিবীর জন্মসন
অভিভূত হয়ে চাঁদও দেখবে বিপ্লবের মায়াকানন।