হঠাৎ ইমনের ঘুম ভেঙে গেলো। কিরে এতে ঘুমালে হবে? বেড়াতে কখন যাবি বাবা? সেই কখন থেকে নাস্তা নিয়ে বসে আছি।
হুম। যাই মা, ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ইমনের বাবা বিদেশে চাকরি করতো। রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। মা-মিতু অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করে। তাদের ছোট্ট সুন্দর বাড়িতে মা ছেলের বসবাস। ছেলেকে নিয়েই তার অনেক স্বপ্ন। ছেলে বাবার মতে ইঞ্জিনিয়ার হবে।
ইমন পিকনিকে যায় বন্ধুদের সঙ্গে। নানা বৈচিত্র্যের রূপে সমৃদ্ধ রাঙামাটি। সবার কাছে রূপ কথার গল্পের মতো পরিচিত।
পাহাড়ের এত রূপ লুকিয়ে আছে, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যেতো না। পাহাড়ের পর পাহাড়, লাল লাল মাটি। কখনো গিরিখাত, কখনো উঁচু-নিচু, কখনো সমতল, কোথাও মসৃণ, আবার, আঁকা-বাঁকা নদী। প্রকৃতি যেন উজাড় করে দিয়েছে নিজেকে।
অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর পার্বত্যাঞ্চল।
নীল আকাশের মেঘের ভেলায় ভাসতে থাকে পাহাড়। মেঘগুলো যেন ছুঁই ছুঁই সন্ধ্যার, আকাশে গোধূলির রঙ ছড়াতেই ঝাঁক বেঁধে আসে বনের পাখিরা। তাদের খুনসুটি দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা ।
এখানে হয় পাহাড়, নদী,আর ঝর্ণার হৃদয়ের মিলন। কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গেলে ঝুলন্ত সেতু ডুবে যায়। তলিয়ে যায় একফুট পানির নিচে। পর্যটকদের মন ভরে ওঠে নীল, আসমানি-সবুজ, হলুদ নানান রকম রঙে। বাহারি রঙে সারি সারি ফুল গাছপালা, সঙ্গে সবুজের আড়ালে প্রকৃতির মাঝখানে নদীকে বিধাতা যেন দারুণ মমতা দিয়ে তৈরি করেছেন অপার সৌন্দর্য।
ইমন ও তার বন্ধুরা মুগ্ধতা অনুভব করে।
ইমন দু’চোখ ভরে দেখছিল মনে হচ্ছে, আকাশে ছড়ানো মেঘের কাছাকাছি তাদের যেন ছুঁয়ে যায়। আহা কী যে আনন্দ প্রকৃতির দিকে তাকাতে, ঘাসের ওপর নেচে বেড়ায় ঘাস ফড়িঙরা কী চমৎকার লাগছে দেখে। যেখানে সবুজের পশরা বসিয়ে রেখেছে। চারিদিকে কাঁঠালচাঁপার গন্ধ।
সারি সারি কাঁঠাল ঝুলে আছে গাছে, ছোট, বড় কাঁঠাল। যাওয়ার সময় কিছু কাঁঠাল মায়ের জন্য নিতে হবে।
মরা জিন। দুই ভাই। আমরা আগুনের তৈরি। তুমি আমাদের ছুঁয়ে দেখো। না হলে, আমরা দুই ভাই তোমাকে ছুঁয়ে দেবো
ইমন বলে সজীব ইচ্ছে হয়ে যায় স্বপ্নডানা পাখি হতে তাহলে, আকাশ মেঘের লুকোচুরি দেখতাম।
ইমন: ঠিক বলেছিস বন্ধু।
সজীব: রাঙামাটি এত সুন্দর জানতাম না তো।
ইমন: বাবা বেঁচে থাকতে বাবা মায়ের সঙ্গে এসেছিলাম বেড়াতে। দেখ বৃষ্টি হবে।
মেঘলা দিনে, আকাশে এক অনাবিল ঝিমধরা সৌন্দর্যের মেলা। প্রকৃতি বড় রহস্যময়।
চোখে মুখে বিস্ময় ফুটিয়ে খানিকটা চেঁচিয়ে ওঠে। বৃষ্টির ঝাপটায় তাদের কাপড় ভিজে যায়।
এখানকার প্রতিটি পাহাড়ে লুকিয়ে, আছে অদেখা ভুবন। নদীতে নৌকা করে পাড় হয়ে চাকমা বাড়ির পুরনো মাঠির ঘরে তারা ডুকে যায়।
হঠাৎ দেখতে পায় কালো ছায়া।
ছায়াটা বারবার সরে যায়। তখন তাদের কেমন একটা সন্দেহ হলো। এবার দেখে এক বৃদ্ধা। খাবার তৈরি করে। ভূত ও রাক্ষসরা বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। এভাবে মানুষের কাছে আসে।
বৃদ্ধা-বাচারা কিছু রুটি খাবে? খুব খিদে তাই না? সজীব খিদে সহ্য করতে পারে না। রুটিগুলো দেখে তার লোভও হচ্ছিল। সে রুটি খেতে খেতে বলে, আহা দারুণ মজাদার রুটি। যত খায় পেট ভরে না।
সজীব: ঠাকুরমা আর কয়েকটা খাবো রুটি।
ঠাকুরমা: আরে খা-খা। তোদের জন্য তো অমৃত রুটি আমার।
সজীব: ইমন তুই খাবি না?
ইমন: সজীব আর খাস না ভাই।
সজীব: খেয়ে দ্যাখ যত খাবি পেট ভরবে না।
ইমন: ঠাকুরমা তুমি বৃদ্ধা হয়ে এতে রুটি কিভাবে তৈরি করলে?
ঠাকুরমা: ধূর বোকা ছেলেরা, আমার গায়ে এখনো প্রচণ্ড শক্তি। জানিস?
তোদের মতো জোয়ান চোকরাদের, আমি চিবিয়ে এক নিমিষে খেতে পারি। তুই কী খাবি?
না, ঠাকুরমা। আমার খিদে নেই।
ঠাকুরমা, আমি জানি তোর খুব খিদে।
খিদেতে তোর পেট চুঁচুঁ করছে।
সজীব: খুব ভয় করে, আমরা যাবো কোনদিকে পথটা তো হারিয়ে ফেলেছি। ঠাকুরমা, আমরা বাইরে যাবো, একটু পথটা দেখিয়ে দেবে?
ঠাকুরমা: এখানে বাচারা যে একবার আসে, আর ফিরো যেতে পারে না। হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ। এই দ্যাখো, কংকাল সব মানুষের। পূর্ণিমার রাতে রক্ত চুষে চুষে খায়। হেঁ হেঁ, আমার গুহায় যে একবার আসে সে ,আর ফিরে যায় না।
সজীব ও ইমনের মাথাটা দ্রুত গুলিয়ে যাচ্ছে। ওরা বুঝতে পারছে তারা মহাবিপদে পড়ে গেছে। ঠাকুরমা আসলে কোনো মানুষ নয়। মানুষরূপী ভূত। ওদের হাতে সময় কম। এ মুহূর্তে একটা কিছু না করলে তাদের আর রক্ষে নেই।
: ঠাকুরমা,সজীব ডাকলো।
: কী বলবি জলদি বল।
: তোমাকে আমাদের পরিচয়টা দিতে ভুলে গেছি।
: তোদের আবার পরিচয় কী। তোরা মানুষ। রক্তমাংসের মানুষ।
: না, আমরা মানুষ নই,
: তাহলে তোরা কী?
: আমরা জিন। দুই ভাই। আমরা আগুনের তৈরি। তুমি আমাদের ছুঁয়ে দেখো। না হলে, আমরা দুই ভাই তোমাকে ছুঁয়ে দেবো।
মুহূর্তে ভয়ে কুঁকুড়ে গেলো ঠাকুরমা। দ্রুত অদৃশ্য হয়ে গেলো।
ইমন খুশিতে সজীবকে জড়িয়ে ধরলো। তার বুদ্ধির প্রশংসা করতে থাকলো।