ইশকুলের বাইরেও মাস্টার থাকে—এটা প্রথম জানলাম রেডিওতে সিনেমার বিজ্ঞাপন শুনতে-শুনতে। সেই মাস্টারের নাম শাকিল। ছবিটার নাম ‘ডুমুরের ফুল’। ডুমুরের আবার ফুল হয় নাকি? হয় না বলেই অমন নাম। সেই ছবিতে মাস্টার শাকিল গাইছেন, ‘আপায় কইছে আমারে বাল্যশিক্ষা কিনা দিতে’। সে সময়ে তি হিট গান! ‘কেউ আয়বো, কেউ যাইবো/ আমি যামু না, বেড নম্বর ফটিন আমি কাউরে দিমু না’। শাকিল দারুণ হিট অভিনেতা। তখনতো আমাদের সিনেমায় নায়ক এবং নায়িকা বলে ‘দূর আকাশের তারা’ নামের একটা বস্তু ছিল, সেই তারাদের ছাপিয়ে শাকিল হয়ে উঠেছিলেন অন্য এক ‘তারা’। কি একটা সিনেমায় তিনি গাইলেন, মানে গানের দৃশ্যে অভিনয় করলেন। গানটা ছিল—‘আমার মা নেই, বাপ নেই/এতিম আমি এই দুনিয়ায়’। এই গান এক সময় সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ফিরত।
মাস্টার শাকিল কয়টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, আমি ঠিক জানি না। তবে এটা জানি, তিনি এখন এ জগত থেকে দূরে বহু দূরে। কেন? দুদিন আগে ঘটনাচক্রে তার সঙ্গে ফোন সংযোগ হয়ে যায় আমার। আমি বলি, আপনি কিন্তু আমাদের সুপারস্টার। আমি তার হাসির শব্দ পাই। সে শব্দের সঙ্গে একটু বেদনার সুরও কানে এসে ধাক্কা দেয়। তারপর শাকিল বলেন, আমি কেন এখন এজগতে নেই, আমি মনে করি, আপনারা তা জানেন। সত্যি-ই তো কারণটা আমরা জানি। ‘মুখ ও মুখোশ’ দিয়ে এদেশে যে সিমেনার যাত্রা শুরু, যে ইন্ডাস্ট্রিতে এক সময় ‘বেহুলা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘আলোর মিছিল’, ‘নীল আকাশের নিচে’ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে একদা ‘দানব’ ছোবল হানল। ‘খাইছি তোরে’, ‘মারমো তোরে’, ‘মানদার পুত’ ঢুকে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। কিছু নষ্ট মোনাফাখোর মানুষ দখল করে নিল সব। এক দুপুরে এটিএন বাংলায় একটা সিনেমা চলতে দেখলাম। তার একটি দৃশ্য। চম্পার বুকের ওপর বসে ডিপজল বলছেন, ‘বর্ডারে গরু পার হওয়ার সময় যেমন সিল মাইরা দেয়, তেমনি তরে সিল দিয়া দিমু।’ ভাবা যায়! এভাবে ডিপজল এবং আরও কিছু মানুষ আমাদের চলচ্চিত্রকে নষ্ট করলেন, অপমান করলেন দিনের পর দিন। কেউ কিছু বলল না! তো সে নষ্ট সময়ে, নষ্ট সব কিছু থেকে মাস্টার শাকিল দূরে থেকেছেন, ভালোইতো করেছেন। বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসে বাংলা সিমেনার সকল মাস্টারকে শ্রদ্ধা জানাই।
দেখুন, এই শিল্পীর অভিনীত উল্লেখযোগ্য একটি ছবি ‘পুরস্কার’