হিসাবের খাতিরে অনেকগুলো বছর, কিছুটা কাল, জন্মের বিপরীতে ততধিক মৃত্যু, সমাজ, সন্ত্রাস, স্নিগ্ধতার বিচিত্র রূপ দেখা হলো। বিন্দু-বিন্দু সময় পেরিয়ে আজ এই ভাষ্যে যা কিছুই লিখছি, সেটা বর্তমানে দাঁড়িয়ে। তাহলে বিগত বিপুল এক অতীতের আততায়ী নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ বাস করে আমার এ-মনে। সে রয়ে যায় ফোঁটায়-ফোঁটায় রক্তে মিশ্রিত হয়ে। ঘাপটি মেরে বসে থাকে কোষের কমনীয় দ্বারে।
অতীত—কখনো আচমকা চুমুর মতো লজ্জিত বালিকার খুলে যাওয়া বেণী। না-চেনা ফুলের অচেনা গন্ধের হাতছানি। অতীতে বালক ছিলাম। কিশোর হয়েছিলাম। অতীতে যুবক হতে হতে যন্ত্রণা পেয়েছিলাম। যাতনা সয়েছিলাম। জগৎকে এই ছিন্ন তো এই যুক্ত করেছিলাম। অতীত বড়ই আনন্দের, অতীত বড়ই তামসিক। অতীতের শত-কোটি আঁচড়ে লিপিবদ্ধ এই দেহ-মন মগজখানি।
প্রায় প্রতিটি মানুষের মতো এই দেশে আমারও গ্রাম ছিল। তথা গরিব আর গর্বিত মানুষ ছিল। মাত্রাভেদে তাদের মন, মানসিকতা, ম্যানার ছিল। যেমন ধরুন, চৌকো-চৌকো দু-একটি মাঠ ছিল। মাঠে-মাঠে ফসলের সন্ত্রাস ছিল। অথচ চিরকালই আমি কখনো বৃত্ত, কখনো ত্রিভুজ, কখনো বা চতুর্ভুজরূপে দেখেছি সে সব সাধের ক্ষেত্রফল।
বলি, এমনটা কেন? যে ভূমিতে, বেলে-বেলে দোআঁশ মাটিতে ফুটেছে সমূহ ঋতুর সম্ভারে বিচিত্র ফুল আর ফলের কথন; সেখানে আমি কী করে দেখেছিলাম পাইন কিংবা পপির প্রতিফলন?
খুবই ছোট, ক্ষুদ্র সে সময়ে দলবেঁধে গিয়েছি তো পাঠ নিতে পাঠশালাতে। গিয়েছি বৃষ্টিতে ভিজে-ভিজে কুয়াশাস্নাত হতে-হতে। গিয়েছি গর্বিত সর্ষেফুলের বিস্তারিত বুক চিরে মনকে অলিখিত মনের কাছে বন্ধক রেখে। গিয়েছি তপ্ত, স্মার্ট, ঝাঁঝানো লাল মরিচের বাগানের একান্ত পাশ দিয়ে। ফাগুনে-চৈত্রে কড়া-কড়া রৌদ্রের মাঝে নিজস্ব নৌকা বেয়ে। অথচ খুব মনে পড়ে সেইসব যাওয়াগুলো, ফেরাগুলো কেমন আলো-আঁধারির, অস্পষ্ট ডুবোচরের মতো, হতে পারে জোস্নাবাহিত মধ্যরাতের মতো মনে হতো।
আমারও বন্ধু ছিল। হাতেগোনা এবং সীমিত আপন। তারাসব ভাতৃসম। তাদের গণদেহে এই আমি নিজস্ব দেহখানি কত কত সম্মেলনে রেখেছি বাঁধিয়া। আমরা মাটি নিয়ে, ধূলি নিয়ে, কাদা নিয়ে খেলেছি কত। হয়তো তারা দেখেনি। দেখেছি আমি মাতাল করা গন্ধের কালো, ভেজা-ভেজা মাটির ওপরে অবাঞ্চিত রক্তের ছোঁয়ায় মুহূর্তে সে-মাটি মনখারাপ করা মেরুণ রঙে ডাইভার্ট হয়ে যায়। সেই তো ধূলি, আমি কেন হীরকখণ্ড কিংবা সিলিকনে আঁকি তারে প্রভু!
প্রচলিত সমস্ত গ্রামই থাকে নদীর দুইপারে। আমাদের গ্রাম নদী থেকে বহুদূরে। ফলে আমি সাঁতার শিখিনি। এই গ্রাম বন্যাদূষিত নয়। তবু আমি কাল্পনিক নদীর কিনারে হেঁটেছি রাত্রি-দিন। তোমারই আলিঙ্গনে হে নদী! হে যাত্রাপথ— তোমার বাঁকে-বাঁকে কুড়িয়ে পাওয়া রেঞ্চ দিয়ে খুলেছি আমি কতনা রহস্যের বাগ্ধারা। নিয়েছি তাদের আদরে-আপ্যায়নে। বাক্সে ভরেছি পরশ আর পশমে আবৃত করে।
সেইসব মীন, শঙ্খ-শামুকের নিঃসৃত ভাষা, গন্ধ, বাহার, কী চমক আর চটকদারি! আহা, মরি মরি!
সেইসব মাঝির মনোলোভা মাতৃভাষা। জলে-মাছে থাকতে-থাকতে কেমন লোম ঝরে সারাদেহে গজে ওঠা আঁশ, আঁশটে গন্ধ। হঠাৎ নাবিক বলে ভ্রম হয় যেন।
সেকালে তুষার দেখিনি, দেখিনি পাহাড়। না খনি, না আগ্নেয়গিরি। দেখিনি সাগর, আপেলের বনে হাঁটিনি জানি। হে ভয়ঙ্কর বিদেশ! ফাঁকি দেওয়া রাখালের রাজত্বমনি। তবু তুমি কী করে গেঁথেছিলে এই ধ্যানে, সেকি জামের জলসায় চুরি করে ঢুকেছিলে আঙুরের আহ্বানে? সরল গৃহিণীর ভুলে—ভুল করে জ্বলে ওঠা লেলিহান শিখায় মধ্যরাত্রির সেইসব গৃহের গর্জনে, তাপে, চিৎকার, শীৎকারে তুমি কি দিয়েছো ধরা ওগো আগ্নেয়গিরি, নির্লিপ্ত লাভা!
গণিত শিরোনামে ॥ শিবলী মোকতাদির
বোনের হাতে গণিত খাতা বৃত্তে জড়সড়ো
শিশুর মেধা ভাষার-ভারে কাঁপছে থরোথরো
অভিমানের বৃষ্টি এলো শ্রেণীর ধারাতলে
আজ ভূগোলে দৃশ্যজুড়ে অংক ভাসে জলে।এবার তুমি ছাত্রীহীনা, বিদ্যাবিনা ডাকে;
যুক্ত করো শ্রাবণ দিয়ে বর্ষা নামে তাকে
ছিট্কে পড়া রঙের গতি বিস্তারিত কোনে
সম্পাদিত বাল্যস্মৃতি বালক রাখে মনে।বন্ধু ভেজে জটিল জলে, সূত্রসহ ক্রোধে
দলীয় মেঘ, যথা ঋতুর সরল অনুরোধে
দুলছে দূরে মুগ্ধ-ঝড়ে ভীতি দুর্বলতা
বেণীর চুলে ব্যাখ্যা জমে পাচ্ছে নীরবতা।পূর্ব হতে পশ্চিমে সে দৃশ্যে তুমি ছাড়া
জগৎ থাকে জলীয় দোষে মহানিদ্রা দ্বারা
সংখ্যা যত উধাও তারা জাদুর সাদা খাতা
এক আকাশে উড়িয়ে নিলো পাঠ্যসহ ছাতা।এবার তুমি ভগ্নি নহে মাতার অধিকারী
অথচ নও লাস্যময়ী বলছি তাকে নারী
দিবস দিয়ে রাত্রী আঁকি বোন-যে অভিনীত
সম্প্রদানে কী নাম দেব বালক প্রচলিত।আবার মেঘ পাঠাও তুমি পত্রভরা খামে
সূচক দিয়ে গ্রহণলাগা জ্বলছে দেহ কামে
বালিকা তার দেহে বকুল ফুটন্ত কদমে
ভুলবশত ভিজতে ডাকে গণিত শিরোনামে।
আমি ছোট থেকে বড় হই। বড় থেকে মাঝারি। এই দেহে জাগতিক, শুদ্ধ-অশুদ্ধ, কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত, চাওয়া না পাওয়ার, বেদনা-সুখের, শুভ-অশুভর বেঢপ ধাক্কা এসে লাগে। সকালে-দুপুরে-গোধূলী, রাত্রীকালে।
গতকাল যে ঘুঘুর ডিম করেছি চুরি, যে চারা মাড়িয়েছি দুই পায়ে, পরদিনই বুঝি সেইঘুঘু একটানা কী করে অভিশাপ দিচ্ছে আমায়। যন্ত্রণায় কী করে সোজা হওয়ার অপূর্ব কৌশলে ফের উঠে দাঁড়াচ্ছে লিকলিকে ওই লাউয়ের ডগাখানি। আমাকে আশাঙ্কায় আবৃত করে। বুঝি আমি মায়ার ছেলেখেলা। এ মায়া কোথায় ছিল? কোথা থেকে লাগল এর ছটা? এত মায়া, এত প্রেম, এত মান-অভিমান, এত ঘেমে ওঠা, এতটা ফেড়েফেড়ে দেখা, বিচ্ছেদের বন্দনায় নত হওয়া। ও সময়, কোথায় লুকিয়ে ছিলে তুমি?
বড় মানেই বসন্ত। বড় মানেই বৃহৎ। বড় মানেই বাস্তবতা। বড় হচ্ছি আমি। এক-পা মাটিতে রেখে অন্য পায়ে এগিয়ে যাওয়ার যে ধ্বনি—দেখি আমি, বাস্তবে মানি আমি। অথচ মানুষ বলে দু’পায়ে হাঁটি।
বড় মানেই গ্রামছাড়া। গঞ্জ ঠেলে শহরে প্রবেশ করা। বড় মানেই মাটি আর কংক্রিটের বোঝাপড়া। বড় মানেই ছোটরে ছিন্ন করা। নানান রূপ আর রসায়নের মাত্রা খুলে-খুলে দেখা। সেখানে নানান চালাকি, নানান ভদ্রতা, সেখানে হিংসা, ক্লেদ, প্রতিহিংসার পথচলা।
দেখেছি গ্রাম কী করে বিলুপ্ত হতে চায় শহরের বুকে। শহর কী করে পালাতে চায় রাজধানীর পানে। এ এক অদ্ভুত সাপলুডু খেলায় অংশ নেওয়া প্রতিটি প্রাণ, প্রতিটি ঘ্রাণ কী করে উঠছে নামছে নিত্যদিন, সকাল-বিকাল। এ দৌড়ে রাজা থেকে রাজমিস্ত্রি, মাঝি থেকে মহাজন, কৃষক থেকে করপোরেট পিছিয়ে নেই কেউ। একদিকে মিডিয়ার ঝঙ্কার অন্যদিকে মাদকের হাতছানি। একদিকে কঠিন ফাঁপড় অন্যদিকে ফড়িয়ার ফরমানি।
এ সবই ঘটছে। ভেঙে যাচ্ছে গ্রাম। আলগা হচ্ছে শহর। স্থুল হচ্ছে প্রেম, নিভে যাচ্ছে মায়া, কায়ার কাঁপুনি। রাজা আসছে রাজা যাচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে রাজনীতি। শুকনো পাতার মতো ফলে তো হবেই ওহে অর্থনীতি।
ওই মানুষ। ওই স্নিগ্ধ আজান আর শঙ্খের ধ্বনি, ওই সব রাখালের মুচকি হাসির মাঝে কী ছিল অর্থ, তাহা আজও না জানি। আর কী সম্ভব হবে কোনওদিন?
এই যে এতসব লিখছি, খুবই লজ্জা করে, অতীত আমাকে অঢেল দিয়েছে। বৈচিত্র্যে মোড়ানো এই দেশের অপূর্ব সব ঋতুর ক্যারিসম্যাটিক কারসাজিতে আজও আমি অন্ধ, বাকহারা হয়ে যাই। আজও আমি মুক্ত আকাশের পানে চেয়ে সদ্য তৈরি করা সেদিনের শিক্ষানবিস ঘুড়ির সামান্য উড়েই ডিগবাজির আস্ফালন স্পষ্ট দেখতে পাই। সেই সুতো, সেই আঠার গন্ধ। চোরা শীতের মাঠে-মাঠে কুয়াশার হাহাকারে জোস্নায় নিজেকে দেখার আবিষ্কারের মুহূর্ত, আজও সেই নামতা পড়ার ধ্বনি—আমি না পরি ভুলিতে মহাজন। সেই পথ, সেইসব ভূতের ভাতৃভূমি। ও আমার শিমুল, ও আমার চোরকাঁটা, ভ্যাঁটফুলে নিবেদিত প্রেমের পরশখানি। ও আমার চালতা, চড়ুই, নির্বোধ শালিকের চাহনি। আমি তো ব্যাকুল গন্ধে তোমার ওগো ছাতিম, বট। শ্যাওলায় জেগে থাকা পরী আর পেত্নির ভালোবাসায়।
প্রবচন ॥ শিবলী মোকতাদির
একটি গ্রামে একুশটি পাগল তৎসংখ্যক বাঁকে
বিচিত্র ফুল হয়ে ফুটে আছে।
এই তথ্য দৃকপাত করতে—এমনকি পাশ্চাত্য থেকে উড়ে আসা
ভিন্ন ভিন্ন পাখি, পরিচিত পোকা ও পতঙ্গ সমবেত হয়েছে।
বিষণ্ন এই বসন্তে। কৌতূহলের কাহারবায় নেচে নেচে
অমাত্রিক ফুটেজ তৈরি করছে তারা।
আর পাঠিয়ে দিচ্ছে বিকশিত তরঙ্গ-তারে।সকল প্রাণীই শৃঙ্খলে, সুবচনে, সুর ও শান্তির শামিয়ানার নিচে
উল্লাস আর উপঢৌকন নিয়ে ছুটে যাচ্ছে।
পাগলের প্রাপ্তধর্ম অবলোকন করতে। কেবল আজাইরা অজুহাতে,
কর্মহীন কর্মসূচির ব্যাখ্যা টেনে মানুষই যাচ্ছে না তাদের নিকটে।
ওজুর তোয়াক্কা না করে পাদ মেরে
অবিরাম বলে যাচ্ছে—পাগল কি আর গাছে ধরে!
তবু সে বাস্তব পিছু ছাড়ে না। আমি আরও বড় হই। মনে আর দেহে যন্ত্র আর যুগের ঝাপ্টা এসে লাগে। দেশ ছেড়ে এবার বিদেশ তোমারে চিনি। চিনি প্রদেশ, চিনি মহাদেশ। চিনি রীতি, ঢং আর বাহানা। ধীরে-ধীরে বিশ্বের বাঁকে-বাঁকে আমার এ-মন তোমারে ছাড়তে থাকি। তুমি বুঝতে শেখো, তুমি ভাবতে শেখো। তুমি ডুবে-ডুবে যতটাই ডুবন্ত, উড়তে-উড়তে ততটাই উড়ন্ত। তুমি কাল হতে কালান্তরে, এই আজ বর্তমানে, ফের অতীতে, মুহূর্তেই ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করি। কখনো বাস্তব কখনো বা অলীকের লক্ষ্যে গ্রহ-নক্ষত্রের নিকট আত্মীয়ের আচরণে আমারে শুধাও ভবিতব্যের কথাখানি।
এ রকমই জীবনের প্রায় পূর্ণাঙ্গ চালচিত্রের অপূর্ব আখ্যান তৈরিতে যেখানে যখন যা কিছু দেখেছি, শুনেছি তখনই বিরাট এক প্রশ্নবোধকের কাছে বারবার নত হয়েছি আমি। কেন, কোথায়, কিভাবের দল ধেয়ে এসেছে আমাকে বধ করতে। ঠাণ্ডা মাথায় অযথায় আগুন জ্বালিয়েছে তারা। আর আমি উত্তরের জন্যে শুধুই মরেছি। মেরেছি নিজেকেই বারবার।
এরে শুধাই, তারে শুধাই কেউবা হালকা স্নেহে কিছুটা পরশ দিয়ে, কেউবা ধমক আর ঠাপে তাড়িয়ে দিয়েছে যথারীতি। অথচ দিনে-দিনে আমার প্রশ্নে বাড়ে চঞ্চলতা। আমার পাঁচ ইন্দ্রিয় পাঁচ হতে পঞ্চাশ দিকেই ছুটেছে অযথাই। জগতের বিবিধ স্বার্থকথার বিবিধ ব্যর্থতাকে কী করে সাজাই আমি, কী করে মেলে ধরি স্রোতের শর্করায়।
সেই যে আমার হারিয়ে যাওয়া পিকনিকের খাতা, সেই যে বর্ষার প্রথম পানিতে তোমাকে চেনা। এক চোখে শিউলি ফুল অন্য চোখে হাসা। কী করে ব্যক্ত করি এত গান, এত সুর এত-এত গন্ধের বৈভবে নিসর্গের কূটভাষা! উঁকিঝুঁকি দেওয়া চির রহস্যের এমন বেঢপ মুহূর্তে। ফলে, ক্রমেই কবিতায় নিয়েছি ঠাঁই। নানা সংবেদনে অন্তরঙ্গ ঘনত্বে রঙিন সুতোয় বুনতে চেয়েছি তাকে। কখনো সত্যের সঙ্গে মিহি তুলোর মতো সামান্য মিথ্যাকে জড়িয়ে, গড়তে চেয়েছি তাকে বাস্তবে, কখনো বা অদৃশ্য অলীক অন্য উপহাসে। সাজিয়ে তুলতে চেয়েছি চালতা কিংবা ভাঁটফুলের মসৃণ সুবাসে। নয়তো পাটপঁচার বিদঘুটে অবাঞ্চিত গন্ধের সমাহারে।
চিহ্নমেলা-২০১৬॥ শিবলী মোকতাদির
পথের দুপাশে ফুটে আছে ভাঁটফুল চেতনায় চিন্তা করো আগে
তেলে-জলে মিশে চলেছি যখন বিকেলের গন্ধ এসে লাগে।এ তবে ফগুনের কাল। বসন্তবাহিত ততধিক চেনা-চেনা পথ
হঠাৎই বৃষ্টি নামে, যেমন— কলা বেচা সাঙ্গ হলে পড়ে থাকে রথ।কী মধুর বৃষ্টি এমন অচেনা মরশুমে। লজ্জায় আরও হচ্ছে লাল
পলাশের পদ বুঝি যায়! হুমকিতে শিমুল। হায় রে বেহায়া সাল।আমরা তখন নিজেরাও ভিজে ভিজে হয়েছি পার বনলতা সেন
দেখছি রাস্তা বরাবর পড়ে আছে গাছ। কেউবা বলছে ক্রেন।তখনই কোথা হতে ভেসে এলো ঝড়। সাথে নিয়ে শিলাবৃষ্টি
দেখি ওই দিকে কুঁড়েঘর। কে থাকে? দেখে বলো পুরো দৃষ্টি।কেন যে অন্ধকার, চেনা জনপদ ডুবে দিলো ধূর্ত ধোঁয়া ও ধূসরে
ভেবে একজনা বারবার কপালে দিচ্ছে হাত। পড়েছে কী জ্বরে?এমনই মধুর যাত্রা ছিলো। তুমি যাচ্ছো ট্রেনে আর আমি বাসে
যদিও সমান্তরাল, তবু পথ বেঁকে যায় তোমাকে সঙ্গে নিয়ে কাছে।আলোকলতার মতো আমরা এগিয়ে যাই আলেখ্য উদযাপনে
চিহ্নমেলায় এসেছি তখন চিহ্নিত হতে, বসন্ত রেখো গো মনে।
কবিতা কখনো সে ঝিলিক দেয় নিত্য কিরিচের মতো। কখনো বা জং-ধরা ভিখিরির থালার ন্যায় পড়ে থাকে অচেনা ধুলোয়। নানান ম্যাজিক আর মেঘ এসে ভর করে আমার এইসব কবিতার পথে। আমার দেখা, না-দেখা, বোঝা, না-বোঝার ত্রিশঙ্কু এই ভুবনে তবু সে প্রবেশ করে। কাজেই অজাত সতীনের মতো সে এসে হানা দেয় রোজ। নানান উস্কানিতে, নানান মস্করাতে নিষিদ্ধ প্রলোভনে সে কেবলই ডাকে। তারে রচিতে বলে। আমি লিখি, কাটি। গ্রহণে, প্রত্যাখ্যানে অস্থির এক ঝড় বয়ে যায় মগজে, মনে, কোষে, কণিকায়, হাড়ের অভ্যন্তরে। কখনো সে জিতে যায়। কখনো বা হারে। আমি ঘুমিয়ে পড়ি সদ্য লেখা কবিতার আশেপাশে। প্রতিটি পঙ্ক্তিকে সজোরে সাপটে ধরে।