নিঃসঙ্গতা
মাঝে মাঝে একা থাকুন, একা হয়ে যান। অন্তত ভেতরে ভেতরে নিঃসঙ্গতা পুষে রাখুন। কারণ, একাকিত্বই অন্তিম আরাধ্য আমাদের। আপনি এসেছেন একা, যাবেনও। মধ্যিখানে কিছুদিন কোলাহলে ছিলেন। মানুষের মিছিলে হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিয়েছি আমি, আমরা। এমনকি আপনিও তাই দেবেন। আসলেই মানুষ একা। আজ যে মানুষটি খাটিয়া বহন করে নিয়ে যাচ্ছে কবরে, তিনি কি আদৌ ভাবেন, তাকেও একদিন এমনই খাটিয়ায় শুতে হবে!
একাকিত্বের একটা সুর আছে। যা ভীষণ করুণ। শীতের শিরশিরে হাওয়ার মতো সেই সুর হাড়ে গিয়ে লাগে। যে উপভোগ করতে জানে, তার কাছে সেই সুরই মধুর সংগীত। বিদগ্ধজনেরা অন্তত তা-ই বলেন।
একাকিত্বের আরও একটি বিশেষ দিক আছে। তা হলো, সৃষ্টিশীল মনন তৈরি করা। এ কারণেই সৃষ্টিশীল মানুষ মাঝে মাঝে নির্জন ঝরনা খোঁজেন মনে মনে। জনাকীর্ণ পরিবেশ চিন্তাকে সংকীর্ণ করে। একটি অদৃশ্য আড়াল তৈরি করে। স্বপ্নময়, আনন্দময় জীবনের কথা ভুলিয়ে দেয়। পার্থিব প্রতিষ্ঠার পেছনে ছুটতে গিয়ে ব্যক্তি হারিয়ে ফেলে তার জীবন উদযাপনের সক্ষমতা। আত্মসমর্পণ বা সমঝোতা মানে হেরে যাওয়া নয়। একরকম জিতে যাওয়া। জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। শুধু কিছুটা ইতিবাচক হোন। দেখবেন জীবন আপনাকে আনন্দঘন মুহূর্ত উপহার দেবে।
সুন্দর
সুন্দর দেখে মুগ্ধ হোন। বিস্মিত হোন। কিন্তু সুন্দরের ওপর বল প্রয়োগ করবেন না। সুন্দরের ওপর আপনার ভাগ ততটুকুই, যতটুকু স্বাভাবিকতায় আপনার কাছে ধরা দেবে। সুন্দর একরকম মরীচিকা। ধরতে গেলেই অধরা হয়ে যায়। বরং ধীরলয়ে তাকান সুন্দরের দিকে। দেখবেন খুব আপসে সে আপনার দরজায় কড়া নাড়বে। মায়াময় খরগোশের মতো সুন্দর নিজে এসে আপনার পায়ের কাছে সবুজ ঘাস খুটে খাবে। বল প্রয়োগে সুন্দরকে ছুঁতে গেলে সুন্দরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। সুন্দর বরাবরই জবরদস্তির পরিপন্থী।
সুন্দর কতটা আকর্ষণীয় হলো, তা নির্ভর করছে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। আর আপনার দৃষ্টিঙ্গি কতটা সুন্দর, তা নির্ভর করছে পঠন-পাঠন, স্বভাব-চরিত্র, অভিজ্ঞতা তথা অন্তর্গত ব্যক্তিত্বের ওপর। তাই অন্তর্জগৎকে আলোকিত করুন, উন্মোচিত করুন সত্যভাষণে। আপনার অন্তর্জগৎ যত বেশি উর্বর হবে প্রেম ও সততায়, আপনার সুন্দরের খেয়াল তত বেশি তীক্ষ্ণ হবে। নিখাদ সুন্দরের তীর্থ গমনে খুব অল্প মানুষই যেতে পারে।
প্রয়োজনে আপনি যেকোনো অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যাবেন। অতিমাত্রায় প্রয়োজন সচেতন মানুষ আচরণে হয় সংকীর্ণ। তাদের কাছে জীবন রঙহীন। হা-হুতাশ তাদের নিত্যসঙ্গী।
স্বচ্ছ জলের স্রোতে ঝাঁক বেঁধে মাছের সাঁতার দেখে থাকবেন নিশ্চয়? কী সেই দুর্লভ দৃশ্য! যে কখনো দেখেনি, তাকে কখনোই আপনি বর্ণনায় সেই নিখাদ সুন্দরের দৃশ্য কি দেখাতে পারবেন? পারবেন না। সুন্দরের মোহ আছে। সুন্দর কখনো কখনো একটা গহ্বর। সেখানে পতিত হলে নিস্তার নেই। পৃথিবীতে তা-ই সুন্দর, যা আপনি সুন্দর দেখেন।
কান্না
কান্না একটা অবলম্বন। স্রষ্টা প্রদত্ত পুরস্কারও বটে। পৃথিবীতে খুব অল্প মানুষই পাওয়া যাবে, যারা কান্নাকে সাদরে বরণ করেছে। কান্না মানেই পরিত্যাজ্য। কান্না মানেই বিরহ সংগীত। এরকম ধারণা কাঁচা মাংসে শিকের মতো গেঁথে আছে। প্রাণমাত্রই কান্নার অনুগামী। অথচ আমাদের মাঝে কান্নাকে স্বীকার করে নেওয়ার যথেষ্ট অনীহা। পৃথিবীতে এমন সফল মানুষ কে আছেন, যিনি কান্নাকে মান্য করেননি? সফলতার ইতিহাস মানেই পশ্চাতে হাজার বছরের কান্নার গান। কান্নার বহিঃপ্রকাশ কেবল অশ্রু নয়। অনুশোচনাও একধরনের উচ্চমার্গীয় কান্না। কান্নাই মানুষকে যথার্থ জীবনের সন্ধান দেয়। যিনি কাঁদতে জানেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিনিই কেবল নিরাপদ সড়কের সন্ধান পেয়ে থাকেন। কান্নার গান পৃথিবীর সেরা সংগীত। যাকে হারিয়েছে ভেবে একাই বিলাপে মেতেছে পথিক। বেলা শেষে পথই তার জন্যে এনে দেয় চূড়ান্ত পুরস্কার।
প্রয়োজনীয়তা
প্রয়োজনীয়তাই সব নয়। পৃথিবীতে প্রয়োজনের বাইরে দেখুন কত কিছু হয়। আপনার সব আয়োজন যদি প্রয়োজন নির্ভর হয়। তবে ধীরে ধীরে স্বার্থপরতা আপনাকে ঘিরে ধরবে। ‘প্রয়োজন নীতির ধারধারে না’ ঠিক এই অবস্থায় অচিরেই আপনি পতিত হবেন। নিজেকে হঠাৎ নীতিহীন মানুষের আস্তানায় খুঁজে পাবেন। প্রয়োজনের আধিক্যে থাকে লোভের হাতছানি। প্রয়োজনে আপনি যেকোনো অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যাবেন। অতিমাত্রায় প্রয়োজন সচেতন মানুষ আচরণে হয় সংকীর্ণ। তাদের কাছে জীবন রঙহীন। হা-হুতাশ তাদের নিত্যসঙ্গী। তারা একচুলও ছাড় দিতে রাজি নন। তারা অন্যের মাথায় আঘাত করে হলেও নিজের স্বার্থ পূরণ করবেন। আচরণে নিষ্ঠুর হতে দ্বিধা নেই তাদের। দেখুন, মানুষ হিসেবে আপনি নিজেকে স্থির করুন। আপনার প্রয়োজন আপনাকে যেন স্বার্থপর না করে দেয়। প্রয়োজন একান্ত ব্যক্তিকেন্দ্রিক হলেই কুৎসিত দেখায়। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বোপরি মানুষের প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করতে পারলে এক অনির্বচনীয় আনন্দের উৎস দুয়ার খুলে যাবে আপনার অন্তর্গত ভুবনে।
সুখ ও সন্তুষ্টি
কতটা সুখে আছেন, তা নির্ভর করে আপনার সন্তুষ্টির ওপর। বিশ্বাস করুন, যেই মুহূর্ত থেকে আপনি লোভী এবং পরশ্রীকাতর হয়ে উঠেছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে আপনার দীর্ঘশ্বাস বেড়ে যাবে। হা-হুতাশ শান্তির ঘুম কেড়ে নেবে। এভাবে আপনার মন খারাপের পাশাপাশি শরীরও খারাপ হবে। অসুখ-বিসুখ শরীরে বাসা বাঁধবে। মেজাজ খিটখিটে হবে। সংসারে শান্তি বিনষ্ট হবে। আপনার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়বে। ক্রমশ কাছের মানুষের প্রতি আপনি উদাসীন হয়ে যাবেন। ফলে ঝগড়া-ঝাটি অনিবার্য হয়ে উঠবে। শান্তি পেতে হলে মনকে উদার করুন।
যারা সবসময় বাস্তব নিয়ে থাকে, তারা গতানুগতিক। তারা সীমাবদ্ধ ভুবনের বাসিন্দা। গুরুজনেরা বাগধারায় যাকে বুঝিয়ে থাকেন ‘কুয়োর ব্যাঙ’ বলে, তাদের চোখ ঘুরেফিরে নাকের ডগার নিকটবর্তী।
অন্যের অনিষ্ট করার আগে মৃত্যুর কথা ভাবুন। আমরা অহরহ কটু কথা দিয়ে অন্যকে হেয় করি। কষ্ট দেই। এতে মূলত নিজেকেই গর্তে ফেলার পথ আবিষ্কার করি। অন্য মানুষের সফলতা অর্জনে হিংসা না করে মন খুলে প্রশংসা করুন। আনন্দের ভাগিদার হোন। হেসে উঠুন প্রাণ খুলে। এখানেই শান্তি। বড় স্বপ্ন দেখুন। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে নিজের বর্তমান শান্তি যেন বিনষ্ট না হয়। যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যাশা করুন। যোগ্যতার বাইরে বড় পদ বা আসনে বসে পড়লে আপনি হাসির পাত্র হবেন। মানুষ আপনাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে। গায়ের জোরে যোগ্য হওয়া যায় না। যোগ্যতা একদিনে অর্জিত হয় না। ধীরে ধীরে যোগ্য হয়ে উঠতে হয়। আপনাকে এমন কোনো পদ-পদবি দেওয়া হলো, যে পদের জন্যে আপনি যোগ্য নন, তবে বিনয়ের সাথে সেই পদ পদবি ফিরিয়ে দেওয়াই উত্তম। পৃথিবীতে সম্মানের সঙ্গে বাঁচুন। কারণ আপনি মানুষ। সম্মানহীন মানুষ কতটুকু মানুষের কাতারে পড়ে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
তুলনা করা ভালো—যদি সে তুলনায় আত্মশুদ্ধি থাকে। কিন্তু অন্যের উন্নতি কিংবা সফলতার সঙ্গে নিজের দীনতা বা কমতি নিয়ে তুলনা করলে মনের সঞ্চিত সর্বশেষ সুখটুকু উবে যায়। সুখী হতে চাইলে ভালোবাসুন। স্বার্থের পরিপন্থী হলেই আমরা অপ্রয়োজনীয় বলে চিৎকার চেঁচামেচি শুর“ করি। যা কিছু আমার কাছে মূল্যহীন তৃণলতা সম। অন্য কারো কাছে তার গুর“ত্ব অনেক বেশিও হতে পারে। দাম্পত্য জীবন যদি দায়িত্ব পালনে পরিণত হয়. তবে সেই জীবন যাপন না করাই ভালো।
ডানা
‘ডানা’—একটি শব্দ। অথচ এর ভর ও ভারের ব্যাখ্যা সীমাহীন। তুমি চাইলেই কল্পনার ডানা মেলে স্বাধীন হতে পারো। অসম্ভব অনেক কিছুই কল্পনার দান। অনেকেই কল্পনাকে অর্থহীন মনে করেন। আপনি কল্পনার শরীরে অবয়ব দিন। যদি অবয়ব দিতে সক্ষম হন। তবে নতুন কিছু আবিষ্কার করলেন। আপনি একজন সফল মানুষ। যারা সবসময় বাস্তব নিয়ে থাকে, তারা গতানুগতিক। তারা সীমাবদ্ধ ভুবনের বাসিন্দা। গুরুজনেরা বাগধারায় যাকে বুঝিয়ে থাকেন ‘কুয়োর ব্যাঙ’ বলে, তাদের চোখ ঘুরেফিরে নাকের ডগার নিকটবর্তী।
কারণ ‘আমরা প্রত্যেকেই ভেতরে ঐশ্বরিক আগুন নিয়ে জন্মাই। আমাদের চেষ্টা করা উচিত এই আগুনে ডানা যুক্ত করার এবং এর মঙ্গলময়তার আলোয় জগত পূর্ণ করা।’ (উইংস অব ফায়ার/ এপিজে আব্দুল কালাম)।
অভিযাত্রিক: প্রাণ ও প্রকৃতি
অভিযাত্রা, মানে সম্মুখ পানে যাত্রা। এটা জীবনের চিরন্তন ধর্ম। কেবল অভিমুখে ধাবমান।
জন্মলগ্ন থেকে এই অভিযাত্রিক অভিধাকে কশিরোধার্য করে ক্রমাগত সবকিছু ছুটছে তো ছুটছেই। কোথায় ছুটছি? কিসের উদ্দেশ্যে, কোন আলোকবিন্দুর ইশারায় নিরন্তর এই হয়রানি! উদয়াস্ত খাটুনি! এর উত্তর এককথায় পাওয়া মুশকিল। এই জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজতে গেলে এক দুর্বোধ্য এবং দুর্জ্ঞেয় দার্শনিক প্রশ্নের গহ্বরে পড়ে যেতে হয়। কখনো কখনো ব্যক্তিজীবন স্থবির কিংবা অচল মনে হলেও প্রকৃতি সচল রয় আপন অভীপ্সায়। কারণ ব্যক্তিজীবনের স্থবিরতা কখনোই বৃহত্তর জীবন ও প্রকৃতিকে স্থবির করতে পারে না।
গতিই প্রকৃতি ও জীবনের আরাধ্য দেবতা। প্রকৃতির পরতে পরতে রয়েছে স্বতন্ত্র পর্বান্তর। এই পর্বান্তর, গতিশীল অভিযাত্রারই বৈচিত্র্যময় রূপ। সময় ঋতুবর্তী হয়ে বয়ে যায় অবিরাম। বদলায় প্রকৃতি। বদলায় অভিযাত্রিকের মন। গ্রীষ্মের তাপদগ্ধ পথিক বর্ষার বর্ষণে হয় সিক্ত সতেজ। শরৎঋতুর শারদীয় কাশবন আর সাদা মেঘের নন্দনে অবগাহন শেষে অভিযাত্রিকের তনুমনে হেমন্তের রিক্ততা জমা হয়। শীত আসে ধূলিবসন নিয়ে। শুরু হয় পাতাঝরার হাহাকার। তাই নিয়ে মলিনবিধুর দিনযাপন শুরু হয় অভিযাত্রিকের। বসন্তের জন্যে অপেক্ষার অন্ত নেই। অবশেষে আসে বসন্ত। সবুজের সমারোহ আর বাহারি ফুলের বর্ণিল সাজ। এভাবেই ঋতুচক্রে বিরামহীন পরিভ্রমণ চলে অভিযাত্রিকের।
নদীর স্রোত, প্রবাহিত বাতাস, উড়ে যাওয়া মেঘমালা, বৃষ্টিধারা, আলোর নাচন, ফসলের ক্ষেত, জন কোলাহলসহ প্রকৃতির শতসহস্র চিত্রময় সৌন্দর্যরূপ পথিকের চিন্তালোককে প্রণোদনা দেয়
সীমাবদ্ধ জীবনযাত্রায় অভিযাত্রিকের অবলম্বন আসলে কী—এমন প্রশ্ন চকিতে উদয় হয় পথিকের মনে। কখনো কোলাহল কখনো নীরবতাই অভিযাত্রিকের একান্ত চলন; বিশেষ অবলম্বন। চলতে চলতে আচমকা থেমে গিয়ে পরক করে নেয় তার ডানার বিস্তার। কতটা আকাশ উড়ে এসে কতটা খসে গেছে ডানার পালক। কিছুটা খসে যাওয়া ডানার শোকাকুল পথিক আবারও মনোবল সঞ্চয় করে। পুনরায় শুরু হয় তার অভিযাত্রা। প্রকৃতি ও বস্তুজগতের নানাবিধ ব্যূহ ভেদ করে অগ্রসরমান জীবনই অভিযাত্রিকের আকাঙ্ক্ষা। জীবনের দায়ভার কাঁধে নিয়ে ঘর্মাক্ত মুখাবয়ব যেন অভিযাত্রিকের পরিশেষ আনন্দ। অনাগত অজানার অন্বেষায় কী এমন ঘোর আছে, যা অভিযাত্রিকের বোধকে অবশ করে রাখে? আমন্ত্রণ জানায় অন্তহীন অভিমুখে?
জীবনপলাতক হয়ে কিংবা জীবনবিমুখ হয়ে যিনি বিপরীত স্রোতে পাল তোলেন, তারও অভিমুখ আছে, আছে গন্তব্যের তাড়া। ভিন্ন পথের এই অভিযাত্রী খুজঁতে চান স্বতন্ত্র কোনো উৎসদেশ। মূলত চেতনে-অবচেতনে অভিযাত্রিকের অজানা কোনো গন্তব্য অবশ্যই থাকে। রূপ-অরূপের তত্ত্বকথায় সর্বশেষ সন্ধান মেলে অদেখা অস্তিত্ব কিংবা বিস্ময়ের। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে কখনো অভিযাত্রিকের চলন মন্থর হয় বৈকি! তবে অভিযাত্রিকের চলনে ভিন্ন একটা নেশা থাকে। আর তা হলো, পরিপার্শ্বকে ছুঁয়ে যাওয়া। গমনকালে নিজের অস্তিত্বের জানান দেওয়া। ‘এই দেখ, আমি ছিলাম, আমি আছি। হে আমার উত্তরপ্রজন্ম, তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি করুণ নিঃশ্বাস।’ অমরতার লোভ অভিযাত্রিকের পথ চলায় বিশেষ প্রণোদনা দেয়। অভীষ্ট লক্ষ্য অজানার পরও কোথাও যেন মিলিত হওয়ার তাড়া!
এই তাড়ার নামই মৃত্যু।
তবে কি মৃত্যুই অভিযাত্রিকের শেষ ঠিকানা? না। বিশ্বাস ভেদে মৃত্যু সম্পর্কে নানামুনির নানা ব্যাখ্যা রয়েছে। মূলত মৃত্যু একরকম পরিভ্রমণ। আত্মা কিংবা প্রাণবায়ুর পরিভ্রমণ। আর এই বোধে উদ্বোধিত হয়ে অভিযাত্রিকের নিরন্তর ছুটে চলা।
প্রত্যেক পথিকের রয়েছে স্বতন্ত্র সড়ক। নিজস্ব চলার ঢং। এই নিজস্বতা তৈরি হয় প্রকৃতির প্রবাহ থেকে। নদীর স্রোত, প্রবাহিত বাতাস, উড়ে যাওয়া মেঘমালা, বৃষ্টিধারা, আলোর নাচন, ফসলের ক্ষেত, জন কোলাহলসহ প্রকৃতির শতসহস্র চিত্রময় সৌন্দর্যরূপ পথিকের চিন্তালোককে প্রণোদনা দেয়। যার যার গন্তব্য তৈরি হয় এই বৃত্তের মধ্যে। শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে পৃথিবীর তাবৎ প্রাণ এই পথেরই অনুগামী। প্রাণের ধর্মই হলো জানা-অজানায় বিরামহীন অভিযাত্রা।