সাহিত্য সম্পাদকের কী কাজ হওয়া উচিত—সে সম্পর্কে কথা বলার আগে সম্পাদনার প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন। সাহিত্য সম্পাদনার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে সাহিত্যবোদ্ধাদের নিকট যিনি সুপরিচিত সম্পাদক, তিনি হলেন ম্যাক্সওয়েল ইভার্টস পার্কিনস্। সম্পাদনার ইতিহাসে তিনি এক উজ্জ্বল নাম। মূলত সাহিত্যসম্পাদনা যে একটি পেশা হতে পারে বা সাহিত্যসম্পাদনা পেশাদারদের কাজ, তিনি তা প্রমাণ করে গেছেন। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিকদের লেখার ঘষামাজা করে আলোকবিচ্ছুরিত করেছেন। তাঁর পরশ পাথরের ছোঁয়ায় যেসব সাহিত্যিক খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছেন, তাঁরা হলেন, ফ্রান্সিস, স্কট ফিৎজেরাল্ড, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ও থমাস ওলফ। তার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ, এখানে শুধু সাধারণ ধারণা দেওয়া হলো।
ম্যাক্সওয়েল ইভার্টস পার্কিনস্ পেশা হিসেবে সাহিত্য সম্পাদনার অভিজ্ঞা থেকে লিখেছেন এডিটর টু রাইটার নামে একটি জগদ্বিখ্যাৎ পুস্তক। পশ্চিমা বিশ্বে ভালো সব সাহিত্যকর্মই সম্পাদকের হাতের স্পর্শ পেয়ে আসতে হয়—এটি তাদের রেওয়াজ ও বিধান। প্রকাশক কখনোই বিনিয়োগের ঝুঁকি নেন না। এ কারণেই আমরা মনে করি, সাহিত্য সম্পাদনা একটি পেশাদারিত্বের কাজ, দায়িত্বশীল ও ভালো মানের সাহিত্য সৃষ্টির জন্য সম্পাদকের ভূমিকা অপরিসীম।
কথা হলো সাহিত্য সম্পাদকের কাজ হওয়া উচিত?
প্রথমেই বলতে হবে, সাহিত্য সম্পাদকের কাজ হলো—সাহিত্যকে ভালো মানের তৈরি করা, প্রুফরিডিং করা ও বানান-বাক্য-তথ্য নির্ভুল করা। অনেক সময় একটি বাক্যের শব্দের এদিক-ওদিক হলেই বাক্যটির মাধুর্য বেড়ে যায়। এই কাজগুলো সাহিত্য সম্পাদক নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে করে থাকেন। কারও লেখা ভালো হয়, আবার কারও লেখায় ত্রুটি থাকে। সাহিত্য সম্পাদক ত্রুটিপূর্ণ লেখাগুলো ঠিক করতে পারেন যদি যুক্তিযুক্ত মনে করেন। তবে এক্ষেত্রে লেখকের সঙ্গে আলোচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি নির্ভর করছে সাহিত্য সম্পাদক কতটুকু প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ তার ওপর। সব লেখাতেই যদি নিজের পারসেপশন থেকে কাঁচি চালান, তা ঠিক হবে না। হতে হবে আলোচনা সাপেক্ষে।
সব লেখকের লেখা হুবহু প্রকাশ করার সুযোগ নেই। কারও কারও লেখা হুবহু প্রকাশ করা যেতে পারে, তবে অবশ্যই প্রুফরিডিং করতে হবে। বানানসহ বাক্যের গঠন ও লেখার গতিধারা ইত্যাদি বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কোনো কোনো লেখকের ইগো প্রবলেম আছে, তাদের কোনো লেখা যদি সংশোধন করতে হয় তাহলে আলোচনা করা প্রয়োজন। আমি মনে করি সম্পাদক ও লেখক যদি পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে কোনো সংশোধন করেন, তাহলে সেটি অধিকতর মানসম্পন্ন হবে।
অনেক লেখক আছেন সম্পাদকের ওপর কিছুটা নির্ভর করেন। তাদের লেখা সম্পাদনার জন্য সাহিত্য সম্পাদক দায়িত্ব নিতে পারেন। এতে তারা খুশিই হন।
সাহিত্য সম্পাদকের পদ ও পেশা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পরিশ্রমের। সাহিত্যের সব বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা, চর্চা করা, শব্দ ও ভাষার ব্যবহার সম্পর্কে তার শুধু ধারণা নয় বরং গভীর জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সর্বোপরি বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কেও তার সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।