বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে শ্রেষ্ঠ প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রকৃতি-প্রেম রবীন্দ্রদর্শনের অন্যতম বিষয়। সমস্ত দিক বিবেচনায় রবীন্দ্রনাথ সর্বদাই সমসাময়িক। আধুনিক বাংলা কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব সস্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন-‘রবীন্দ্রনাথে কোনো বাধা নেই, আর এইখানেই তিনি সবচেয়ে প্রতারক-তিনি সব সময় দু-হাত বাড়িয়ে কাছে টানেন, কখনো বলেন না সাবধান! তফাৎ যাও!’ বিশ্বজিৎ ঘোষ তাঁর নিরীক্ষণ থেকে বলেন, ‘কোনো কোনো সাহিত্যিক রবীন্দ্র প্রভাবলয় থেকে কখনোই মুক্তি পাননি, আবার কেউ-বা নির্মাণ করে নিয়েছেন নিজস্ব ভুবন।’ যুগে-যুগে বহু সাহিত্যিক রবীন্দ্রপ্রভাবিত হয়েছেন। তাঁর জীবদ্দশায় যারা রবীন্দ্রানুসারী হিসেবে বিবেচিত ছিলেন, সেই সব লেখক, সাহিত্যিক পেয়েছিলেন তাঁর উদারতা-সহযোগিতা। তিনি সেই সব লেখকে লিখেছেন বেশি কিছু পত্রও। আমরা রবীন্দ্রনাথের সেই পত্রাবলির লেনদেনের আংশিক খোঁজখবর জানার প্রয়াস করছি এ লেখা পাঠের মাধ্যমে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে তাঁর মহাপ্রয়াণের আগ পর্যন্ত ঊনচল্লিশ জনকে কবি মোট বাহান্নটি পত্র লিখেছিলেন। সেই সমস্ত পত্র ১৯১৩ এর পর থেকে ৭ আগস্ট ১৯৪১ সময়ের মধ্যে লেখা। সেই চিঠিপত্রে রবীন্দ্র-মানসের বিচিত্র ও বিশিষ্ট প্রবণতার পরিচয় মেলে। রবীন্দ্রনাথের চিঠি পাওয়ার সময়ে যারা ছিলেন তরুণ ও প্রায় অখ্যাত তাঁদের অনেকেই পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিত্বরূপে প্রতিষ্ঠা ও খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনজন ভারতের ও একজন বাংলাদেশের মন্ত্রী ও উপাচার্য, দু’জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক, একজন বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক, একজন বাংলাদেশের জনশিক্ষা পরিচালক (জিপিআই) ও অতিরিক্ত সচিব, একজন যুগ্মসচিব ও একজন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সেই পত্র নিয়ে সতেরোটি বাংলা, একটি ইংরেজি গ্রন্থ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ তাঁর মন্তব্য প্রকাশ করেন। কবি এসব বইয়ে মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী, নূর নবী, কাজী ইমদাদুল হকের আবদুল্লাহ, আনোয়ারুল কাদীরের আমাদের দুঃখ, কাজী আবদুল ওদুদের নদী বক্ষে ও রবীন্দ্রকাব্য পাঠ, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বাঙ্গালা ব্যাকরণ এবং ভাষা ও সাহিত্য, বন্দে আলী মিয়া ময়নামতিরচর/মহীউদ্দীনের মহামানবের মহাজাগরন। জসিমউদ্দীনের সোঁজনবাদিয়ার ঘাট, রেজাউল করীমের নয়া ভারতের ভিত্তি, কাজী মোতাহার হোসেনের সঞ্চরন, আবদুল কাদিরের দিলরুবা, মইনুদ্দীনের মুসলিম বীরাঙ্গনা, হুমায়ন কবিরের অষ্টাদশী, মীর আজিজুর রহমানের মাস্তানা আবুল ফজলের চৌচির এবং মোহাম্মদ আজিজুল হকের লাঙলের পেছনের মানুষটি। এছাড়া শামসুন্নাহার মাহমুদ ও হাবীবুল্লাহ বাহার সম্পদিত ‘বুলবুল চতুর্মাসিক’ শহীদুল্লাহকৃত দীওয়ান-ই-হাফিজ-এর কাব্যনুবাদ, শামসুন্নাহার রচনাদি, গোলাম মোস্তাফার প্রবন্ধ ‘ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ’ সুফিয়া কামালের কবিতা, আলতাফ চৌধুরী রূপরেখা পত্রিকায় প্রকাশিত একটি চিঠি এবং নাজিরউদ্দীন আহমেদ মহীউদ্দীন ও আমিনুদ্দীন আহমদের কবিতা ও বই সম্পর্কে তাঁর অভিমত জানিয়েছেন। একটি চিঠিতে মগরাহাটের জনৈক আবদুল মজিদকে কবি লিখেছেন, ‘তোমার পত্রে তোমার রচনা শক্তির যে আভাস পাই, তাতে আমার বিস্ময় লাগে।’ আ. ন. ম বজলুর রশীদ কবিকে বন্দনা করে কয়েক কিস্তিতে (১৯৩৮-৪১) বেশ কয়েকটি কবিতা পাঠিয়ে কবির অভিমত জানতে চান। শেষ পর্যন্ত কবি মৃত্যুর আড়াই মাস আগে ২৫ মে ১৯৪১ তারিখে জলপাই গুড়ির ঠিকানায় একটি বাক্যে কবি যশোপ্রার্থীকে তাঁর বার্তা লিখেছেন, ‘তোমার সাহিত্য সাধনা সার্থক হোক এই আমার আশীর্বাদ।’
পত্রপ্রাপকদের মধ্যে এয়াকুব আলী চৌধুরী, কাজী আবদুল ওদুদ, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, সুফিয়া কামাল, ডাক্তার আর. আহমেদ, বন্দে আলী মিয়া, কাজী মোতাহের হোসেন, রেজাউল করীম, আবদুল কাদির, খান মোহাম্মদ মঈমুদ্দীন, হুমায়ুন কবির, শামসুন্নাহার মাহমুদ, জসীমউদ্দীন, কাজী নজরুল ইসলাম, স্যার আজিজুল হক ও আবুল ফজলের মতো খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব যেমন আছে, তেমনি সাড়ে পাচঁ বছরের শিশু মামুন মাহমুদ, বগুড়া ভি.এম গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী বারো বছরের জেব-উননিসা, চট্টগ্রামের পনোরো বছরের বয়স্ক স্কুল ছাত্র ফেরদাউস খান, ময়মনসিংহ জেলার স্কুলের চৌদ্দ বছর বয়সের ছাত্র আশরাফ সিদ্দিকী ও সদ্য পরিণীতা কিশোরী ফিরদৌস করিমও রয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ এই সমস্ত পত্র জোড়াসাঁকো, শান্তিনিকেতন, বেলাঘরিয়া, সংপু, কালিস্পং ও আলমোড়া থেকে লিখেছেন। একটি চিঠি কলকাতা যাওয়ার পথে ট্রেনে থেকে, একটি চন্দন নগর থেকে লিখেছেন। কলকাতা হাওড়া, ফরিদপুর, ঢাকা, পাবনা, জলপাইগুড়ি, চট্টগাম, বর্ধমান, মালদা, বগুড়া, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বিলাসপুর ও মগরাহাটের ঠিকানায় প্রাপকদের কাছে পৌঁছায়। পত্রপ্রাপকদের মধ্যে অন্তত ষোল সতেরো জনের সঙ্গে কবির সাক্ষাৎ ও পরিচয় হয়েছিল। দু’জনকে কবি শান্তিনিকেতনে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন। কয়েকজন নিজেদের রচনা বা বই সম্পর্কে কবির আশীর্বচন প্রার্থনা করেন, তেরোজন তাঁদের বই উপহার পাঠিয়েছিলেন কবিকে। একজন কবির আশ্রয় প্রার্থনা করে লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ উত্তরে লিখেছেন, ‘আমার আশ্রয় নিতে ইচ্ছা করছে- সে শক্তি আমার নেই। তোমার দায়িত্ব নিতে পারি, সে রকম ব্যবস্থা আমার দ্বারা সম্ভব হবে না।’ তবে রবীন্দ্রনাথ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চিঠি লিখেছিলেন মাত্র দুজনকে। একজন দন্ত্য চিকিৎসক ডাক্তার আর আহমদ, অন্যজন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ও কলকাতার বিশ্ববিল্যালয়ের উপাচার্য স্যার আজিজুল হককে। চিঠির উত্তরের অন্যান্যের কাছে লিখেছিলেন কবি। ডাক্তার আর. আহমেদ ১৯৩০-এর গোড়ার দিকে কবির দাঁতের চিকিৎসা করে তাঁকে সুস্থ করে তোলেন। এ সম্পর্কে কবি পত্রে লেখেন, ‘খুব ভালো করেই সারানো হয়েছে।’ জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতেই ডাক্তার তাঁর চিকিৎসা করেন। কবি ১৯১৯ সালে সিলেট ভ্রমণে এসেছেন জানতে পেরে চৌদ্দ বছরের ছাত্র সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রনাথকে একটি চিঠি লেখেন। পরে সিলেট থেকে আগরতলা গিয়ে কবি মুজতবা আলীকে প্রতি উত্তর লেখেন। কিন্তু বরিশালের ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদউদ্দীনকে দু’টি চিঠি লেখেন। এই দু’টি পত্রের নমুনা সংরক্ষণ সম্ভব হয়নি এবং সওগাত সম্পাদক নাসিরউদ্দীনকে লেখা চিঠিটিও পাওয়া যায়নি।
রবীন্দ্রনাথের পত্র-প্রাপকদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কবির দেখাও হয়েছে। এর মধ্যে আজিজুল হক ১৯৩৫ সালের ১০ আগস্ট শান্তিনিকেতন যান। তার আগে ২৪ জুলাই কবি তাকে একটি চিঠি লেখেন। কবির স্বহস্তে লেখা আহ্বান পেয়ে আজিজুল হক শান্তিনিকেতন গিয়েছিলেন। কাজী আবদুল ওদুদ ১৯৩৫-এর ২৬-২৮ মার্চ শান্তিনিকেতনে যান এবং কবির সাক্ষাৎ লাভ করেন। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯২১সালে নজরুলকে সঙ্গে নিতে শান্তিনিকেতনে পূজাবকাশ যাপন করেন। এসময় কবির সঙ্গে দেখা করেন। পরে আবার ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র নিয়ে শান্তিনিকেতনে কবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সুফিয়া কামালের সঙ্গে ১৯২৮ সালে পরিচিত হন কবি। কবি জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে সুফিয়া কামালকে নিমন্ত্রণ করেন। প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনসহ সুফিয়া কবির সঙ্গে দেখা করেন। পরে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ‘গোরা’ উপন্যাসের এক কপি উপহার দেন। কবি আলমোড়া থেকে সুফিয়া কামালকে একটি চিঠি লিখেছেন পদ্যে। আর সব চিঠি গদ্যে। সুভাষ চন্দ্র বসুর মাধ্যমে লোকমান খান কবির সাক্ষাৎ লাভ করেন।
আবদুল কাদির ১৯৩২-এর ১০ এপ্রিল বরাহনগর কবির সঙ্গে পরিচেত হন বন্দেআলী মিয়ার মাধ্যমে। নুরুল আলমও কবির সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন তখন। আমিনুদ্দীন আহমদ ১৯৩৮ সালে শান্তিনিকেতন যান এবং স্বরচিত কয়েকটি কবিতা রেখে এসেছিলেন কবির জন্য। পত্রপ্রাপকদের মধ্যে নুরুল আলম ও মোহাম্মদ এয়াকুব আলী কবির আগেই মৃত্যুবরণ করেন।
পত্রপ্রাপকদের মধ্যে মঈনুদ্দীন, ফেরদাউস খান, আবুল হোসেন, আ. ন. ম. বজলুর রশীদ, আবদুল কাদির, সাহালম (আশরাফসিদ্দিকী) প্রমুখ পরবর্তীকালে বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখকরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনজন পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তা হন, যারা পরে রবীন্দ্র সঙ্গীত বিরোধী পদক্ষেপে সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিবৃতিতে স্বাক্ষর দান করেন।
উদ্ধৃত পত্রাবলির ১৯৩২ এর ২৯ জুলাই পর্যন্ত চিঠিতে কবির স্বাক্ষর ‘শ্রী’ যুক্ত আবার একই মাসের ২৬ জুলাই থেকে লেখা পরবর্তী সময়ের সব চিঠিতে কবি ‘শ্রী’ হীন লেখেন। জেবউননিসাকে লেখা চিঠিতে (৫আষাঢ় ১৩৪৫) কবি স্বাক্ষর করেছেন ‘দাদু’। মামুন মাহমুদকে সম্মোধন করেছেন ‘বৎস’ বলে। আর আবদুল মজিদকে লেখা ছোট কার্ডের নিচে কবি শুধু ‘রবীন্দ্রনাথ’ স্বাক্ষর করেন। স্থানাভাবে ঠাকুর পদবি যুক্ত করেননি। অন্যসব চিঠিতে কবি ঠাকুর পদবি যুক্ত করেন। নাজির উদ্দীনকে লেখা চিঠির শেষে ‘শুভৈষী’ লিখে স্বাক্ষর করেন। নজরুলকে লেখা চিঠিতে লিখেছেন ‘স্নেহরত’। কবি নজরুলকে শান্তিনিকেতনে আমন্ত্রণ জানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য তিনি শান্তিনিকেতন, কলকাতা ও দার্জিলিংয়ে কবির সঙ্গে দেখা করেন। কবি ‘বসন্ত’ উৎসর্গ করেন নজরুলকে, নজরুল ‘সঞ্চিতা’ উৎসর্গ করেন রবীন্দ্রনাথকে। কবি আর একজনকে শান্তিনিকেতনে স্থায়ীভাবে বসবাসের আমন্ত্রণ জানান, তিনি জসীমউদ্দীন। কিছু কাল তিনি শান্তিনিকেতনে বসবাস করেন। এবং একমাত্র আলতাফ চৌধুরী শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয়ের ছাত্রছিলেন।
মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরীকে লেখা চিঠির অংশ উদ্ধৃত হয়েছে ‘এয়াঅকুব আলীর গ্রন্থাবলী’তে। কাজী আবদুল ওয়াদুদকে ১৫ বৈশাখ ১৩২৬ তারিখে লেখা রবীন্দ্র হস্তাক্ষরের মূল চিঠির প্রতিলিপি ‘নদীপক্ষ’ উপন্যাসে রয়েছে। ১১ জানুয়ারি ১৯৩৫ এর সে চিঠির অংশ বুলবুল পত্রিকায় আবদুল্লাহ শিরোনামে মুদ্রিত হয়। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে লেখা পত্র চারটে দেশ পত্রিকাতে (১৩৮৬) প্রকাশিত হয়। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশপায় মোহাম্মদ মোজাম্মেল হককে লেখা চিঠি কার্তিক সংখ্যা ১৩২৯ সালে। সুফিয়া কামালকে লেখা পত্র জয়শ্রী (শারদীয় সংখ্যা ১৩৫৫) প্রকাশিত হয়। বন্দেআলী মিয়াকে লেখাপত্র ‘ময়নামতির চর’ কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে মুদ্রিত। শামসুন্নাহারের পত্র ‘বুলবুল’ এবং দ্বিতীয়পত্র ‘শিশু-শিক্ষা’ গ্রন্থে প্রশস্তি শিরোনামে মুদ্রিত এবং চিঠির চিত্রানুলিপি পরে দেশ সাহিত্য সংখ্যা (১৩৯১) পুনর্মুদ্রণ করা হয়। জসীমউদ্দীনকে লেখা চিঠি উদ্ধৃত হয়েছে ‘ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়’ গ্রন্থে। এম. এ. আজান ও আলতাফ চৌধুরীকে লেখা চিঠি দুই কবি নিজেই ‘প্রবাসী’তে (পৌষ ১৩৪২) প্রকাশ করেন। মহীউদ্দিনকে লেখা চিঠি ‘গ্রামের কথা’ পত্রিকা (১৯৬৬) থেকে উদ্ধৃত। মামুন মাহমুদের চিঠি শিশু সওগাতে ছাপা হয়। নজরুলকে লেখা চিঠি ছাপা হয় নজরুলের জীবনীতে। স্যার আজিজুলের চিঠি ছাপা হয়- ‘রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা চিন্তা’ সংকলনে। জাহানারা চৌধুরীকে লেখা চিঠি ‘বর্ষাবাণী’ পত্রিকায় (১৩৪৬) প্রকাশিত হয়। রেজাউল করীমকে লেখা চিঠি প্রকাশিত হয় ‘কাফেলা’ পত্রিকায় (১৩৮৮) সালে। কাজী মোতাহার হোসেনকে লেখা পত্র ‘ড. কাজী মোতাহের হোসেন সংবর্ধনা’ গ্রন্থেত্রে মুদ্রিত হয়। আ. ন. ম. বজলুর রশীদকে লেখা ২৫ মে ১৯৪৯ সালে ’সাহিত্যশিল্পী বজলুর রশীদ’ গ্রন্থে মুদ্রিত। আবদুস সাত্তারকে লেখা ‘কাফেলা’ পত্রিকায় (১৩৮৮) তে মুদ্রিত। এই পত্র পরে সাত্তার স্মৃতিতে ও প্রকাশিত হয়। জেব-উননেসা জামালকে লেখা চিঠি সচিত্র সন্ধানী পত্রিকায় উদ্ধৃত হয়েছে। ডা. মীর আজিজুর রহমানকে লেখা চিঠিটি ‘উপেক্ষিত সাহিত্য সাধক: সাতজন’ বইতে প্রকাশিত। সাহলমকে লেখা পত্র ড. আশরাফ সিদ্দিকীর ‘রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন’-এ মুদ্রিত। আবুল ফজলকে লেখা চিঠির প্রতিলিপি- ‘সাহিত্য সংস্কৃতি জীবন’ গ্রন্থে মুদ্রিত হয়। এর আগে সওগাত পত্রিকায় (১৩৪৮) উদ্ধৃত হয়েছে। এই চিঠির মূলকপি জাতীয় জাদুঘরে (ঢাকা) সংরক্ষিত। ডা. আর আহমেদ, আবুল মনসুর এলাহী বক্স, কাজী আহমদ, মোহাম্মদ ফেরদাউস খান, আবদুল মজিদ, মোহাম্মদ লোকমান খান, নুরুল আলম, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন, হুমায়ুন কবির, আমিনুদ্দীন আহমেদ, মুহাম্মদ মনসুর ও আবুল হোসেনকে লেখা রবীন্দ্র পত্রাবলি দেশ সাহিত্য সংখ্যায় (১৩৯১) প্রকাশিত হয়। ডা. আর আহমদ তাকে লেখা পত্র বিশ্বভারতিকে দান করেন। নাজিরউদ্দীন আহমদ, আ.ন.ম.বজলুর রশীদকে লেখা (৬ জানুয়ারী ১৯৩৮) লেখা চিঠিগুলো কোথাও প্রকাশিত হয়নি।
রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য রচনার মতো তাঁর ব্যক্তিগত পত্রের সম্ভারও বিপুল, বিশ্বভারতির উদ্যোগে সেই সমস্ত পত্রের অনেকগুলো ‘চিঠিপত্র’ নামে খণ্ডেখণ্ডে ছাপা হচ্ছে। আবার অনেক গবেষক নিজেদের প্রয়োজনে রবীন্দ্রনাথের পত্রাবলী সংগ্রহ করে টীকাসহ প্রকাশ করছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। কলকাতার ‘দেশ’পত্রিকার ১৩৯১ সালের সাহিত্য সংখ্যায় ‘রবীন্দ্রনাথের ৬৫টি চিঠি আছে। চিঠিগুলো ১৯১৩ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে ৫০ জনকে লেখা। প্রাপকদের সবাই মুসলমান। তাঁদের মধ্যে সাহিত্যিক ও অধ্যাপক আছেন, আছেন রাজনীতিবিদ ও গৃহবধূ, সাহিত্য যশপ্রার্থী তরুণ ও কবিভক্ত শিশু। অনেকের লেখা পড়ে অভিমত দিয়েছেন। কখনো গুরুতর আলোচনার মাধ্যমে, কখনো সিগ্ধ সৌজন্যে। প্রায় সবার লেখারই প্রশংসা করেছেন। বাংলা সাহিত্যে মুসলমান জীবনের চিত্র দেখতে আগ্রহ বোধ করেছেন তিনি, তেমনি উৎকণ্ঠিত হয়েছেন বাংলাভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার নিয়ে। তবে তাঁর ক্ষোভ ও উত্তেজনা প্রকাশ পেয়েছে বিশেষ করে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকাতা সম্পর্কে। এসব ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ রেখে-ঢেকে কথা বলেননি।
ঋণস্বীকার
১। সাম্প্রতিক দৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথ (সম্পাদক: শামসুজ্জামান খান)
২। রবীন্দ্রনাথের একগুচ্ছপত্র (ভুঁইয়া ইকবাল)
মন্তব্য