কবির কাজ হলো রাজনীতি, মিথ, প্রকৃতি প্রেম, রোমান্টিকতা, গ্রামীণ, লোকায়ত ভাবনা প্রভৃতিকে কবিতার অনুষঙ্গ করে তোলা। কবিতার গঠনকৌশল, আঙ্গিক, শব্দবিন্যাস, উপমা, এমনকি ভাব ও রসবোধে কবিকে হতে হয় নতুন দিগন্তের স্রষ্টা। রকিবুল হাসানের কবিতা পাঠ করলে তার প্রজ্ঞা, কবিত্বশক্তি, সম্মোহনী জাদু স্বাক্ষর মেলে।
এই কবির উন্মেষকাল ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর। ওই সময়ের রক্তঝরা রাজপথের স্লোগানধর্মিতার সমান্তরালে তিনি সৌন্দর্যচেতনায় নির্মাণ করলেন নতুন কাব্যভুবন। সমকালীন কবিদের দলে থেকেও তিনি কাব্যভাষা, বিষয়, স্বরে নিজকে আলাদা করে নির্মাণ করলেন। কাব্যকলার নবতর আবেশ ও ব্যঞ্জনায়, স্বদেশের লোকায়ত জীবন ছেঁকে-ছেনে ঐতিহ্য-প্রীতির চিত্রায়ণ যেমন করেন, তেমনি নারীপুরুষের মধ্যকার যে লিবিডো ভাবনা, সেটি প্রেম নামক যে অনুষঙ্গ তার নবতর রূপটি এমনভাবে করলেন যে, সমকালীন কাব্যবৈশিষ্ট্য উৎরে দ্রুত তিনি কাব্যপ্রকরণকৌশলের নবতর কুশীলব হয়ে উঠলেন।
‘ধূলোমাটির ঘ্রাণ’ কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতাটিতে দেশপ্রেম বা জন্মভূমি প্রতি অগাধ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হলেও ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি তার গভীর অনুরাগ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পূর্বপুরুষের জীবনাখ্যানের কথা বলতে গিয়ে শব্দের পর শব্দ এমনভাবে সাজিয়েছেন যে, সবমিলিয়ে একটা আবেশময় ঘোরের মধ্যে পাঠক মুগ্ধ না হয়ে পারে না। কবিতাটির শুরুতেই আমরা দেখতে পাই:
মাটিপুত্র : ভিজে মাঠে এসে দাঁড়ালে রোদের ঘ্রাণ পরাণের বন্ধু
পদ্মাপায়ে- রমণীমাঠের বুকজুড়ে ফুটে আছে কী সুন্দর
যৌবনা শরীরে কলমিফুল অষ্টাদশী ঠোঁটের হাসি
সকালের রোদ যেনো গিনিসোনা প্রথম যৌবন
শরমের ঘোমটার মতো গেঁথে নিলে খোঁপায় শাপলা
তারপর প্রণয়মুগদ্ধতা মেখে তাকালে আমার দিকে
তোমার খুবই কাছে খেলা করছিলো একঝাঁক মাছরাঙা
তোমার জন্যেই যেনো জেগেছে নতুন করে সুন্দরেরা
মা-ছেলের যেমন সম্পর্ক, কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে যে হার্দিক আর্কষণ, সে রকম ভাবাবেগ আছে এই কবিতাটিতে। মাটিপুত্র আর মৃত্তিকা। মাটির সন্তানই মাটিপুত্র। মা তার পুত্র পেলে যেমন আত্মহারা, প্রেমিক তার প্রেমিকা পেলে যেমন দিশেহারা, তেমনি মাটি ও মাটিপুত্র পরস্পরের সহাবস্থানে সুন্দরের দৃশ্যপট এভাবে ফুটে উঠেছে।
মৃত্তিকা : পাখি আর ফুলে আমি যেন আনমনা হয়ে যাই
আর যদি তুমি থাকো পাশে আমি যেনো তখন আমার
ভেতর নতুন আমি-লালনের গানে নিশিজাগা পাখি
লুকানো অচেনা বন্দি ডাহুকী আবেগে নির্লজ্জ সুন্দরে
মাটিপুত্র : তোমার দু’চোখে তখন বসতি বাঁধে যেনো এক বুনোসুখ
কবিতার মতো জ্বলে মধ্যরাতে স্নিগ্ধতার জ্যোৎস্না
এই কবিতার মধ্যে কবি অজস্র মাটিপুত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। যুগে যুগে যাদের শিল্পসুষমায় ঋদ্ধ হয়েছে বাংলা সাহিত্য, যাদের কর্মে ও প্রেমে পরিপূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, যারা আলোর পথ দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের, তাদের কথা কবি বলেছেন অবলীলায়। লালন-রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ-জসীমউদ্দীন ও ওমর আলীসহ অনেক ঋদ্ধ পুরুষের কথা বলেছেন এই কবিতায়। তারা তো এই মাটিরই সন্তান। এসব সন্তানের মা মৃত্তিকা যেমন আত্মগৌরবের উন্মনা, সন্তানরাও যেমন এই উর্বরা স্নেহময়ী মা কিংবা প্রেমজ হৃদয় পেয়ে আত্মহারা। ধূলোমাটির ঘ্রাণে ধরাতলে যেমন স্বর্গবতী ফুলের নিকেতন।
মৃত্তিকা : জীবনানন্দ পড়ে দেখো, জসীম উদ্দীন পড়ে দেখো
মাটির নিখাদ ঘ্রাণে ভরে যাবে বুক
হারাবে নিজেকে কলমিলতার ভেতর যেভাবে নিজেকে
হারায় ডাহুক
মাটিপুত্র : ওমর আলীও কিন্তু কিছু কম নয়
শ্যামল রঙ রমণী কীযে অদ্ভুত সুন্দর
মাটি দিয়ে বুনানো কাপড়ে জড়ানো শরীর
হৃদয়ে গ্রামের ছবি যেনো অবিকল কথা কয়ে ওঠে
মাটিপুত্র : জানো আমরা যেখানে রয়েছি দাঁড়িয়ে-
চোখের টর্চ আর একটু দূরে ঠেলে দিলেই দেখা যায়
রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ- বকুলতলার ঘাট
যেনো এখনো ভীষণ দাপটে রাজসিক ঔজ্জ্বল্যে
দিব্যি হেঁটে বেড়াচ্ছেন কবিতার রাজপুত্র
এই কবিতাটি নাট্যকাব্যের আদলে লেখা। সংলাপধর্মী আঙ্গিক আরোপ করে কবি মাটি ও মানুষের মধ্যকার অন্তর্গত টান প্রতিফলিত করেছেন। মূলত তথাকথিত আভিজাত্যে ও আধুনিকতায় মানুষ যে নিজের শিকড়কে ভুলতে বসেছে, ভুলতে বসেছে পূর্বপুরুষের জীবনধারা এবং শিকিড়বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষের মননে যে অসুন্দরের প্রাদুর্ভাব; সেটি থেকে পরিত্রাণের জন্য কবি মানুষের কবি সত্য ও সুন্দরের গান শোনান। যে গান তার রক্ত চেতনায় নিত্য ফল্গুধারায় বয়ে যায়। মানুষ যদি শিকড়কে ভুলে যায়, তবে তার জন্মটাই বৃথা, সেটি মনে করিয়ে দিতে কবি মৃত্তিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। মাটি ও মানুষের ধূলোমাখা আটপৌরে সুন্দর জীবনের জয়গাথা রচনা করে কবি শেষ পর্যন্ত সুন্দরের গানে জাগার আহ্বান করেছেন।
মৃত্তিকা : এই সত্য-সুন্দরে জাগুক পৃথিবী-মাটিপুত্র বন্ধু তুমি
তোমার গড়াই নদীকে চুম্বনের রেখা করে দিলাম
জবাফুল যৌবনে তোমার-
কান পেতে শোনা স্রোতের গহিনে
যেভাবে প্রণয়ীস্রোত জেগে থাকে মৌতাত সুন্দরে
হাওর-বাঁওড় নদী-নালা পীর-মুর্শিদের ধূলামাটি এই গ্রাম-নগর
মুগ্ধতায় নিয়েছি বেঁধে জীবন-আঁচলে-ভালোবসি বন্ধু তোমাকে
মা, মাতৃভাষা, মাতৃভূমি এই তিনটি প্রতিটি মানুষেল জন্য পরমবস্ত। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ তাই বলেছেন।মানুষ জীবন ও জীবিকার জন্য পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাক তার মাতৃভূমিকে ভুলতে পারে না। মাতৃভূমিকে যেমন ভুলতে পারে না, তেমনি মাকে তো না পারারই কথা। মা ছোট্ট একটি শব্দের মধ্যে যে কত মধুমাখা সেটা তো শুধু অনুভবময় উপলব্ধি। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণিই মায়ের আদরে লালিত।কবিও তাই।‘মাকে ছেড়ে কেমন আছি’ কবিতাটি মূলত মাহীন জীবনের কথকতা।
আমরা জানি কবি রকিবুল হাসান মাকে ছোটবেলাতেই হারিয়েছেন। মা থাকতে তার জীবন কেমন ভরপুর ছিল। বাড়িময় কত আনন্দ ছিল, প্রকৃতির মধ্যে ছিল যেন মেলবন্ধন। গাছপালা, শিশিরভেজা সকাল, আঙিনা-জানালা সবকিছুর মধ্যে যেন কেমন হৃদ্যতা। মাহীন আজ সব যেন অতীত কাহন। কবির স্মৃতিচারণের দুছত্র কবিতা উদ্ধৃত করা যায়:
আকাশটা ভেঙে গেছে- খসে গেছে
পুঞ্জ পুঞ্জ ছেঁড়া ছত্রাক মেঘের মতো,
স্বপ্নবুনন রমণীখোঁপা বেলি জুঁই রক্তজবা
টিনের দোচালা চারচালা ঘর
ঘাসফুল উঠোন শিশির ভেজা,
এখন তো এসব পুরনো গল্পের জীবন!
রান্নাঘর ঘেঁষে সজনে ডুমুর গাছ
মানকচুর যৌবনা ডাগর শরীর,
মাথা নিচু করে মমতা ছড়ানো
ঝাঁকড়া চুলের মতো আমগাছ,
দক্ষিণের জানালা ছুঁয়ে দাঁড়ানো
বেলগাছটি দু’চোখে মুগদ্ধতার ছবি,
এসব এখন যেনো অতীতকাহন!
মায়ের আদরভরা শৈশব ও কৈশোরে কবি যেমন দুরন্ত ও চঞ্চল ছিলেন। হাওর-বাঁওড় বিল-ঝিল ঘুরে বেড়াতেন মনের আনন্দে। কণ্ঠভরা মুর্শিদি বাউলা গান গাইতেন। আজ মাহীন কবি বড় বেদনাবিধুর। জলহীন গড়াই নদী যেমন কাঁদে, কবিও আজ অশ্রুপাত করছেন জলহারা গড়াই নদীর মতোন।
তৃষ্ণার অনলে পোড়ে
শরমে জড়নো যেন নববধূ।
হাওর-বাঁওড় বিল-ঝিল
মাঠভর্তি থৈ থৈ পানি,
বর্ষারযৌবনে কলার ভেলায় গ্রামের পর গ্রাম
গলায় জড়ানো লাল শাপলার মালা
কণ্ঠভরা মুর্শিদী বাউলা গান
এখন তো সব বুকপোড়া দুঃখভূমি
স্বপ্নহীন বিধবাশরীর;
নতুন প্রাসাদ তোলে মাথা
আমার গড়াই নদীটি যেভাবে কাঁদে
নিজেকে হারিয়ে নদীহীন হয়ে।
কবি নাগরিক জীবনের সীমাহীন জৌলুসের মধ্যে আনন্দহীন, আধুনিক জীবনেও সে আজ বিমর্ষ, রাজার রাজপ্রাসাদ তার কাছে কোনো আবেদন নিয়ে আসে না। তার কাছে পল্লীর পুরনো পুকুর, শিশিরভেজা দুর্বাঘাস, হাওর-বাওর প্রভৃতিই কাম্য। মায়ের কথা মনে হলে কবির মাতৃভূমির কথাই মনে হয়। কারণ মা-রূপ মাতৃভূমি, কিংবা মাতৃভূমি রূপ মা তার কাছে আবিচ্ছেদ্য সত্তা। মাতৃভূমিজুড়ে মায়ের উপস্থিতি। সবকিছুতেই কবি মায়ের উপস্থিতি লক্ষ করেছেন। স্মৃতিবিধুরতা কবিকে এমনভাবে অবসন্ন করেছে যে, মাহীন কবির কাছে সবকিছু বৃথা। মাকে ছেড়ে কবি একটুও ভালো নেই।
পল্লিকে ছেড়ে কেমন যে আছি
পুরনো পুকুর
শাপলা খোঁপার প্রিয়তমা রমণী
একতারা সুর
শিশিরভেজা দুর্বাঘাস ছেড়ে কেমন যে আছি
কেমন যে থাকি
হাওর-বাঁওড় নদীহীন হয়ে
মাকে ছেড়ে কেমন যে আছি
মন কাঁদে
ভালো নেই-
মাকে ছেড়ে একটুও ভালো নেই।
‘নদী’অনুষঙ্গ হিসেবে বাংলা কবিতায় বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। শুধু কবিতায় নয়, সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও বিশেষভাবে রূপায়িত হয়েছে। মানুষের আনন্দ বেদনা প্রকাশের অনুষঙ্গ হিসেবে নদীর ভূমিকা অনবদ্য। এছাড়া নদীবন্দরগুলো মানুষের অর্থনৈতিক আয়েরও উৎস। আবার নদী যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবেও অন্যতম। নদীর জলরাশি, নদীর জলজগুল্ম, নদীর মাছ সবকিছু মানুষের জন্য কল্যাণকর। ফলে দেখা যায় নদীর মানুষের অপরিহার্য একটি উপাদান। শিশু-কিশোরবেলার দিনগুলোতে নদীতে সাঁতার কাটা নস্টালজিক ভাবনার মানুষকে বিধুর করে তোলে।
তিনি কিছু লেখার আগে সেটা নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হন, সেটাকে ধারণ করেন, হৃদয়ে মন্থন করান, এরপর আবেগের রূপ দেন ভাষায়। সেখানে গেঁথে দেন উপমা-চিত্রকল্পের মালা।
রকিবুল হাসানের কবিতায় নদী এসেছে ভিন্ন অনুষঙ্গে-অনুভবে। তার কবিতায় গড়াই নদীর প্রসঙ্গ এসেছে বারবার। তিনি এই গড়াই নদীকে যেন ভুলতে পারে না। নদীর কথা বলতে গিয়ে এই নদীর তীরে বেড়ে ওঠা জনপদ, স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব, ইতিহাস ঐতিহ্য সবকিছুই চিত্রায়ণ করেন।
আমার যৌবনবতী জননী নদীটি কোথায়
আমার যৌবনবতী গড়াই নদীটি কোথায়
নদীস্তন পানে একদিন জেগে উঠতো সবুজ ফসলের মাঠ
নদীমুখ মুগ্ধতায় ভেসে বেড়াতো কাব্যভেলা গ্রাম-নগর
আমার স্বপ্নপাঁপাড়ি পানসি নৌকার ঢেউখেলা নদীটি কোথায়
খোঁপাভাঙা রমণীর মতো ঢেউবতী পরমা নদীটি কোথায়
(গড়াই নদী)আধুনিক যুগযন্ত্রণা ও প্রযুক্তির অভিঘাতে নদীরা আজ মরে গেছে। কলকারখানার বর্জ্য, নদী গতিপথরোধ ও নদীভরাটের কারণে আগের স্রোতস্বতী যৌবনবতী নদী আর নেই। যে নদী মানুষের জীবন ও জীবিকার আশ্রয়, যে নদী জলের অভাব পূরণের পাশাপাশি মানুষের মনন গঠনে সহায়ক, সেই নদী মানুষের কুকীর্তির তোড়ে আর হারিয়ে যেতে বসেছে। কবি তাই বেদনাদগ্ধ কান্নায় কাতর।
আমার নদীটি যেনো যৌবনেই যৌবনহারা বুকপোড়া সরলারমণী
আমার নদীটি যেনো দুগ্ধহীন শুকনো বুকের কঙ্কালসার জননী
আমার নদীটি যোনো যৌবনবতী মায়ের যৌবনপোড়া দুঃখকথা
আমার দু’চোখ ভরে থাকা বর্ষাসুখের কেবলি মৃত্যু উৎসব
আমার যৌবনবতী জননী নদীটি কোথায়
আমার যৌবনবতী গড়াই নদীটি কোথায়
আমার উন্মত্ত মাতাল ঢেউখেলা নদীটি কোথায়
ভরাট লোমশ বুকে দাপিয়ে বেড়ানো বাঘা যতীনের
নদীটি কোথায়
শরৎ-শশীর জীবনআঁচলে বাঁধা শিশুর সাথে খরস্রোতা প্রবল যুদ্ধ
‘তোমাকে ব্রিটিশ তাড়াতে হবে- যুদ্ধ করো যুদ্ধ শেখো’
ব্রিটিশ তাড়ানো যুদ্ধযৌবন তৈরির সাহসিকা নদীটি কোথায়
আমার যৌবনবতী জননী নদীটি কোথায়
আমার যৌবনবতী গড়াই নদীটি কোথায়
(গড়াই নদী)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা গানে নদীর প্রসঙ্গটি এসেছে তুমুলভাবে। কবির ছিন্নপত্রে গড়াই নদীটি পাতায় পাতায় চিত্রিত হয়েছে।এই নদীকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক গান রচনা করেছেন।কবি রকিবুল হাসানও এই নদীকে মায়ের মতোন ভালোবাসেন।কিন্তু নদী আজ নেই।নদীর বুকে আজ ইট পাথরের সড়ক। বেদনাবিধুর কবি সেই নদীটি খোঁজেন স্মৃতির পাতায়।
ঋষিকবি রবি ঠাকুরের মুগ্ধবতী বিচিত্ররূপ গড়াই নদীটি কোথায়
‘ছিন্নপত্রে’ পাতায় পাতায় ছড়ানো মুক্তোজ্জ্বল গড়াই নদীটি কোথায়
যে নদীর বুকে ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর’
যে নদীর বুকে ‘ভজন পূজন সাধন আরাধনা’ ঘরের কোণে মুক্তি
সেই নদীটি কোথায়- ইট পাথরের সড়ক কোনো নদীর বুকে
আমার যৌবনবতী জননী নদীটি কোথায়
(গড়াই নদী)
কবি শেষ পর্যন্ত গড়াই নদীকে জননী হিসেবে কল্পনা করেন। মায়ের অভাবে মানুষ যেমন মরিয়া হয়ে ওঠে, তেমনি কবি গড়াই নদী বিহনে অমন বেদনাদগ্ধ হয়ে উঠেছেন। গড়াই নদীর প্রাচুর্য ও সৌন্দর্য স্মৃতিমন্থনে কবি বিভোর হয়ে স্বপ্ন দেখছেন সেই স্বপ্নের নদীর। কিন্তু সেই স্বপ্নরাণী নদীটি তো কাল ও কুজনের ধাবায় নশ্বর। কবি শেষাবধি আশাহত হন না। তিনি স্বপ্ন দেখেন গড়াই নদী তার অতীত ঐতিহ্য নিয়ে আবার জেড়ে উঠবে। নদীহারার অসীম শূন্যতার মধ্যে কবির স্বপ্ন গড়াই নদীটি আবার যৌবনবতী হয়ে উঠবে।
আমার যৌবনবতী জননী নদীটি কোথায়
আমার যৌবনবতী গড়াই নদীটি কোথায়
শিলইদহ কুঠিবাড়ির চিঠি হাতে নদী তীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে
স্রেতের মতো হেঁটে যায় আপন মনে বাঁধা
‘আমার মনের মানুষ যে রে’ মায়াবী কণ্ঠে গগন হরকরা
আমার এমন মধুর কণ্ঠভরা জননী নদীটি কোথায়
আমার দলিলে কেবলি একটি রহস্যস্বাক্ষর জেগে থাকে-
আমার গড়াই নদীটি আবার যৌবনবতী হয়ে উঠবে…
(গড়াই নদী)
অন্ধকারে শুধুই অন্ধকার মিশে থাকে কবিতায় কবির অতলান্ত প্রেমের স্বরূপ ব্যক্ত হয়েছে। রাত ও অন্ধকার অনন্তের সন্ধান দেয়। স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের যেমন অনুপম অনুষঙ্গ তেমনি প্রেমের মৌতাতে নিজের স্বপ্নভূমি।অন্ধকার ছেঁকে ছেনেই প্রেমের অমীয় সুধার স্বরের সন্ধান করতে হয়। এই কবিতার মধ্যে কবির অসীম অনন্ত প্রেমের অনুষঙ্গ চিত্রিত। কবিতাটির অন্তের পঙ্ক্তিমালার উদ্ধৃত করা যায়।
আমি তো গহিন অন্ধকারে চলে গেছি- যে পথ দিয়েছো তুমি
সুন্দরের শিরোনামে একদিন- সেই সুন্দরে জড়নো জীবনঘাতি
শাণিত ছুরি-চুম্বনের থেকেও মায়াবী-তোমার কণ্ঠধ্বনি থেকেও
আবেগী ঢেউয়ে কাঁপা মুগ্ধতা-অথচ জীবনের অংকে কুড়ালে
ক্ষত-বিক্ষত করো প্রেমের শরীর-অন্ধকারে আমিও নিজেকে
খুন করে নিজের রক্তকে মদ করে পান করতে শিখেছি
তুমি ভালো আছো-ভালো থেকো-আমিও ভালো আছি
কুঁচিদেয়া লালশাড়ি অন্ধকারে শুধুই অন্ধকার হয়ে মিশে থাকে
(অন্ধকারে শুধুই অন্ধকার মিশে থাকে)
মুক্তির সনদকণ্ঠ কবিতাটি স্লোগানধর্মী কবিতা। কবিতাটি বাংলার অকুতভয়ের সূর্য সন্তানের কথা হয়েছে এবং বাংলার হাজার বছরের কথা মনে করে দিয়ে কবি বলতে চান আজকের যে স্বাধীনতা, মুক্তি, মুক্তিসনদ এমনিতেই আসেনি।এর পিছনে যেমন আছেন হাজার বছরের সংগ্রাম তেমনি আছে অজস্র বীরের রক্ত, শ্রম ও ঘাম। তাদের আত্মদান ও ত্যাগের বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ।অত্যন্ত সাবলীল সহজ ভঙ্গিতে কবি সেই বীরপুরুষের কথা অনায়াসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেছেন এই কবিতায়।
এই দেশ হাজার বছর ইতিহাস-গাথা- মাথা উঁচু চিরকাল
জীবন-মৃত্যু-সম্ভ্রমে বুক পেতে বুকে ধরে পলিমাটি উর্বর জমিন।
এই দেশ রবীন্দ্র নজরুল জীবনানন্দ জসীম উদ্দীনের
এই দেশ বাঘা যতীন ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকীর
এই দেশ তিতুমীর মজনু শাহের
এই দেশ সিধো কানহো বিরসার
এই দেশ সূর্য সেন প্রীতিলতা কল্পনা দত্তের
এই দেশ সালাম রফিক বরকত জব্বার ভাষাশহীদের
এই দেশ লক্ষ শহীদের রক্তে স্নাত স্বপ্নবুনন সবুজ ফসলের মাঠ
এই দেশ পদ্মা মেঘনা যমুনা গড়াই সহস্র নদীর প্রাণের সংহতিসুর।
এই দেশ হাওর-বাঁওড় পাখিদের কণ্ঠ
আউল-বাউল পীর-মুর্শিদ হাছন লালন
এই দেশ অধিকারের অগ্নিগল্প মুক্তির সনদকণ্ঠ শেখ মুজিবুর রহমান
(মুক্তির সনদকণ্ঠ)
নির্মাণের গল্প কবিতাটি প্রেমের কবিতা। কবিতাটি সহজবোধ্য মনে হলে এই কবিতার মর্মমূলেও আছে প্রেমের বাঁধভাঙা স্রোতের তেজদীপ্ত প্রবলতা। কবি প্রেমিকাকে পেতে কোনোকিছুই শুনতে চান না। তিনি নদীর স্রোতের মতো প্রিয়াকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চান। প্রবল বর্ষণে ভাসাতে চান প্রেমের মাঠ। বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পুলকে সয়লাব করে দিতে চান তার হিসাবের খাতা। নদীর গল্প জানেন। নদীর গল্পে ভরিয়ে দেবেন প্রেমাস্পদকে। কবি অজস্র ভাঙনের পর আবার জীবনকে নির্মাণ করতে চান। নির্মাণের গল্প কবিতায় মূলত কবি জীবনকে নবধারায় সাজাতে চান।
ভাঙনের গল্প তো পড়েছো উপন্যাসে
কবিতায়
সিনেমায়
দেখেছো ভূমিকম্প দীঘল প্রাসাদের ধ্বংসস্তূপ
তারপর দেখেছো প্রাণের করুণ আকুতি
দেখেছো বন্যাপ্লাবিত মানুষের দুঃখস্রোত
নতুন মাটিতে দেখেছো সেখানে
নতুন সফল জীবনের উৎসব
পাড়ভাঙা নদীর মতো তোমাকে আমি
টেনে নেবো বুকের গহিনে
নিয়ে যাবো স্রোতের তোড়ে বন্যার মতো
কোনো কথা শুনবো না
আমাকে দু’হাতে ধরো শক্ত করে
তোমাকে নিয়েই বাঁধবো জীবন নির্মাণের গল্প
(নির্মাণের গল্প)
‘নদী বৃষ্টি চাই’ কবিতাটিও নিরেট প্রেমের কবিতা। কিন্তু রকিবুল হাসানের প্রেমের কবিতায় শুধু প্রেম থাকে না। থাকে জীবন। প্রেমের মধ্য দিয়ে তিনি মূলত জীবনকে চিত্রায়িত করেন। জীবন ও প্রেম যে কত সুন্দর হতে পারে, সেটা তার কবিতা পড়লেই বোঝা যায়। এই কবিতায় কবি নদী ও বৃষ্টিকে একাকার করেছেন। প্রকৃতির মোহন এই দুই অনুষঙ্গ আলোচ্য কবিতার প্রেমের স্বরূপকে প্রতিফলিত করেছে। নদী ও বৃষ্টির মতোন প্রেম সর্বজনীন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রেম এক অমোঘ অলঙ্ঘনীয় বোধের আখর। প্রেমের পতাকাতলে তিনি কোনো ভেদ মানেন না।
নন্দিত পতন কবিতায় কবি এক শহরে আগুন্তক একজন মাটিপুতের কথা ব্যক্ত হয়েছে। কয়া গ্রাম থেকে আসা সেই মাটিপুত্র যখন শহরে আগমন করেন, তখন তাকে কেউ চেনে না। গ্রামীণ জীবন প্রকৃতির অপরূপ রূপ ফেলে, হাওর-বাওর গ্রাম-গঞ্জ পার হয়ে সে জীবনের কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের জন্য শহরে আসে। কিন্তু শহরে তাকে কেউ চেনে না, জানে না, কেউ তাকে প্রশ্রয় দেয় না। ফলে সে দুঃখের শিরোনাম লেখে জীবনকাব্যে।
রকিবুল হাসান অনেক যত্ন নিয়ে কবিতা দেখেন। তার মতে, জীবনের গতিই কবিতা। জীবনহীন তিনি কোনো কবিতা যেমন কল্পনা করেন না, তেমনি যে জীবনের গতি নেই, তাকেও কবিতা মনে করেন না। এ কারণে আমরা দেখি, তিনি ব্যক্তি জীবনের যত সব কাজ, যত গতি ও প্রগতি; এসবের মধ্যে নিজকে জড়িয়ে রাখেন। তিনি কিছু লেখার আগে সেটা নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হন, সেটাকে ধারণ করেন, হৃদয়ে মন্থন করান, এরপর আবেগের রূপ দেন ভাষায়। সেখানে গেঁথে দেন উপমা-চিত্রকল্পের মালা। যুতসই শব্দ, উপমা, উৎপ্রেক্ষা প্রভৃতি উপকরণ না পেলে তিনি কবিতা লেখেন না। কবিতাকে কবিতা হতে হবে। কবিতার জন্য তিনি শব্দ নির্বাচনকে প্রথমত প্রাধান্য দেন। তার কবিতার শব্দগুলো নবান্নের নতুনভাতের টাটকা ঘ্রাণের মতো ঝরেঝরে অনুভবময়। শব্দচয়ন ও বাক্যবিন্যাস দেখেই তার কবিতাকে চিনে নেওয়া যায়।
কবিতা প্রসঙ্গে রকিবুল হাসান বলেছেন, ‘কোনো কিছু লেখার আগে তা আমার মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকে—তাকে কিভাবে ধরবো—সেটা একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আমি তাতে সম্পূর্ণ নিমগ্ন হওয়ার চেষ্টা করি। বলতে পারি ধ্যানী হয়ে উঠি। কখনো তা ধরতে পারি—কখনো পারি না। যা বলতে চেয়েছি, তা যদি শব্দ-ছন্দ-গতি—সবকিছুর সমন্বয়ে শৈল্পিক করে স্পষ্ট করে বলতে পারি, ভালো লাগে—স্বস্তি অনুভব করি। কিন্তু সবসময় তা পারি না। পারা যায় না। তখন এক অস্বস্তি ও যন্ত্রণা আমাকে ভীষণভাবে তাড়া করে ফেরে। অন্য আর কিছুতে মন বসাতে পারি না।
রকিবুল হাসান প্রিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন, কোনোদিন কামুক রোদ্দুর ঝলসানীতে বিমোহিত করেননি। তিনি আজ মাটিপোকার চুম্বন ভালোবাসেন। কারণ তিনি জানেন মাটিই সবকিছুই অবসান করে দেয়।
অধরা কবিতা আমার ভেতর বিক্ষুব্ধ ঝড়ের মতো হয়ে ওঠে। ভেতরে ভেতরে আমি বিধ্বস্ত হতে থাকি। হতে পারে এ আমার অপারগতা। আমার মাথার ভেতর কবিতা হয়ে উঠবে বলে যা কিছু ঘুরপাক খায়, তা আমার সবসময় ধরা হয়ে ওঠে না।এটা খুব যন্ত্রণার।আবার অনেক সময় যুতসই শব্দ না পেলে কবিতাকে কবিতা মনে হয় না।শব্দের ব্যবহারের ওপর কবিতার গতি অনেকখানি নির্ভর করে।গতিই তো কবিতা। ফলে একটা ভালো কবিতা হয়ে উঠতে গতির ব্যাপক প্রয়োজন রয়েছে।
গতির সঙ্গে ছন্দ মাত্রা অলঙ্কারের সফল সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ। কোনোটার একটু এদিক-ওদিক ঘটলেই কবিতা হয়ে ওঠার সম্ভাবনারও অপমৃত্যু ঘটে যায়।আমার কাছে কবিতা পুরো সাধনার মতো।ফলে কবিতা সাধারণ কোনো ব্যাপার নয়। নিজের ভেতর-বাইরের আপন-প্রকাশ। আত্মাই যদি হয় আমার সর্বস্ব বা আমার সত্তাই যদি হই আমি—তাহলে আমার কবিতা তো আমিই।হয়তো সেটা সব সময়ই এই সত্য পুরোটা ধারণ করে না।বিষয় এখানে বড় একটা ভূমিকা রাখে।আয়নার সামনে নিজেকে যেভাবে দেখা যায়, কবিতায় সেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়—ভাবের ভেতর দিয়েই নিজেকে কবিতায় স্থাপন করতে হয়।আর এটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল।এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।কবিতার ক্ষেত্রেও তাই ঘটে।ফলে আগের কবিতা আর পরের কবিতা এর মধ্যে অনেক পার্থক্য ঘটে যায়। নিজেকে—নিজের চিন্তাকে—নিজের ভাবকে—নিজের প্রেমকে সর্বজনীন করে তুলতে পারা একজন কবির বড় শক্তি। এটা আমাকে ভাবায়।’ (সূত্র : চিন্তাসূত্র)
‘প্রত্নমেঘপুরাণ’ কবিতায় কবির মাতৃবিয়োগজনিত হাহাকার ফুটে উঠেছে। যে মা তাকে পৃথিবীতে এনেছেন, স্নেহের শিশিরে পরিপুষ্ট করেছেন তার চেতনালোক, আদরে সোহাগে বড় করেছেন, সেই মা আজ নেই। মা বিহনে কবি বেদনাতুর রাতজাগা পাখি। সবকিছুইে মায়ের উপস্থিতি দেখতে পান তিনি। প্রত্যেকের মা তো প্রত্যেকের কাছে পৃথিবীর সেরা উপহার।কিন্তু কবিদের মা অন্যরকম।মনে হয় কবির মা-দের বিধাতা অন্যরকম করে সৃষ্টি করেছেন। তা না হলে কবিদের মা এমন স্নেহশীলা হবেন কেন। কবির মা নেই। কিন্তু তার মাথার ওপর মায়ের হাত সব সময় জাগরূক।
কতদিন পর চৈত্রের পোড়া এক রোদে মার কবরের পাশে দাঁড়াই। মাথার
উপর হাত রাখি।পরম মমতায় মা যেনো আমার হাতটি জড়িয়ে ধরে।
আমার ভেতরে চৈত্র যেনো মুহূর্তে বৈশাখ হয়ে ওঠে।বৃষ্টি ঝড় একসঙ্গে
প্রবল হয়ে ওঠে।মা যেনো কবর দেশের ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে।বলে,
এতোদিন কোথায় ছিলি বাপ? পাগলের মতো না খেয়ে পথে পথে ঘুরে
চেহারার এ কি হাল করেছিস? কতোদিন পেট ভরে ভাত খাস নি ক তো?
আমি কোনো কথার উত্তর না দিয়ে মাকে দেখি, দেখতেই থাকি, আহারে
আমার সোনা মা! কবর দেশের ঘুম পাগলীনি মা আমার!
(প্রত্নমেঘপুরাণ)
‘মাটি পোকার ঘ্রাণ’ কবিতাটি মৃত্যুচেতনা বিষয়ক। এই কবিতায় অভিমানী কবি প্রিয়ার উদ্দেশে তার প্রস্থানের কথা ব্যক্ত করেছেন। পৃথিবীর কোনোকিছুই চিরস্থায়ী নয়। একদিন সবকিছু মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। কিন্তু চলে গেলেও পৃথিবীর কিছুই যাবে না আসবে না। পূর্ববৎ জগৎ চলমান থাকবে। জীবনানন্দ দাশ তার ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় যে ভাব ব্যক্ত করেছেন, সেটি ‘মাটি পোকার ঘ্রাণ’ কবিতায় প্রতিভাত। জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় বলেছেন ব্যক্তিমানুষের দুঃখেসুখে পৃথিবীর কিছুই আসে যায় না, জগত চলমানতার বিষয়টিই কবিতার সারবস্তু। রকিবুল হাসান প্রিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন, কোনোদিন কামুক রোদ্দুর ঝলসানীতে বিমোহিত করেননি। তিনি আজ মাটিপোকার চুম্বন ভালোবাসেন। কারণ তিনি জানেন মাটিই সবকিছুই অবসান করে দেয়।
আমার মৃতচোখে একদিন মাটিপোকদের নিশ্চিন্ত বসতি হবে
বরফঠাণ্ডা ঠোঁটে চুমু খাবে পিপিলিকা কিংবা সুমসৃণ সাপেরা
আমি তো চলে যাবো- আমাকে নিয়ে তোমার সব জিদ অভিমান
গোলাপের সুগন্ধি পাপড়ি হয়ে ফুটে থাকবে এই রূপসী নগরে
আমি তো চলে যাবো আমার মতো করে ঝরাপাতা মাটিঘরে
কীভাবে আমাকে ছোঁবে জিদের আগুন- আমার দুঠোঁটে
মাটিপোকার চুম্বন ভালোবাসি- জাগেনি কখনো কামুক রোদ্দুর
জীবননগরে আমি যেনো থেকে গেছি মৃত মানুষ নিজের ভেতর
(মাটি পোকার ঘ্রাণ)
এভাবে রকিবুল হাসানের কবিতায় আমরা অনবদ্য জীবনকেই অনুপুঙ্খ চিত্রিত হতে দেখি। তার কবিতায় যাপিত জীবন, জীবনের বহুমাত্রিক রসায়ন ও সৌন্দর্যের মিলন ঘটেছে।