যদিও আমি কখনো পুরস্কার দিয়ে কোনো কাজের মূল্যায়ন করি না, তারপরও ১৯৮৯ সালে শ্রেষ্ঠ স্ক্রিন প্লে লেখার জন্য পাওয়া জাতীয় পুরস্কারটি অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, দেশের ফিরিয়ে দেওয়া পুরস্কারের তালিকায়। একই সঙ্গে আমি এটাও পরিষ্কার করতে চাই—আমার পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ বর্তমান সরকারের সময়ে দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা কারণে নয়। সবার আগে বলব, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ‘অসহিষ্ণুতা’ শব্দটি যথোপযুক্ত নয়।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান সরকার যখন ব্যাপক ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে, তখনই আমাদের কাছে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, সে বার্তা বোধগম্য ছিল, ফলে এমন পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে ‘আতঙ্কিত’ হওয়ার বিষয়টিও বেমানান। তৃতীয়ত, ব্যাপকহারে যে গণহত্যা হচ্ছে সেটি কেবল আমাদের আরও বড় ধরনের কোনো বিপদের আসনি সংকেত হিসেবে বিবেচনা করা যায়। জীবন-ধারণ প্রতিনিয়ত সহ্যসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। লাখ-লাখ দলিত, আদিবাসী, মুসলমান ও খ্রিস্টানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে আতঙ্ক। আবার কখন, কোথা থেকে হবে হামলা!
আজ আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি, যেখানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীরা ‘অবৈধ হত্যা’ নিয়ে কথা বলছে। যেখানে মুখ্য হয়ে উঠেছে, তাদের কল্পনার গোহত্যা, কিন্তু নির্দোষ মানুষ হত্যা নয়। তারা যখন ঘটনার তদন্তের প্রমাণ সংগ্রহের কথা বলছে, গুরত্ব দেওয়া হচ্ছে মৃত মানুষটির ফ্রিজে রাখা খাবার, কিন্তু মৃত মানুষটির মৃতদেহটি কোনো গুরুত্ব বহন করছে না তাদের কাছে।
আমরা বলি যে, আমাদের ‘উন্নয়ন’ হয়েছে, কিন্তু যখন দলিতদের হত্যা করা হয় এবং তাদের সন্তানদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়, যেটি বর্তমানে লেখকেরা প্রকাশ্যে বলতে পারেন, যেমন দাবসাহেব আমবেদকার একবার বলেছিলেন,‘অস্পৃশ্যদের কাছে হিন্দুত্ববাদ একটি আতঙ্ক।’ যেটি লেখকেরা এখন লিখতে পারেন, যেমন সাদাত হাসান মন্টো লিখেছিলেন তার ‘লেটার টু আঙ্কেল স্যাম’ বইটিতে।তবে এগুলোর কিছুই এখন আর গুরুত্ব বহন করে না, যদি আমরা এই মতাদর্শকে সমর্থন করি বা না করি। আমাদের যদি স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার না পাই, তাহলে আমাদের সমাজটি হয়ে উঠবে পুষ্টিহীন বুদ্ধিজীবী ও একটি বোকার দেশ।
আমি আমার পদকটি ফিরিয়ে দিতে পেরে খুবই সন্তুষ্ট, কারণ এর মধ্যদিয়ে এ দেশের লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং অ্যাকাডেমিকসরা যে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে অংশ নিতে পেরেছি। কারন এই প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে তারা মতাদর্শগত অনৈতিকতার বিরুদ্ধে একটি অবস্থান তৈরি করেছে। আর এ পদক্ষেপটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, সেটি না হলে আমাদের মৈলিক চেতনাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে। নিজস্বতা কবরস্থ করবে। আমি বিশ্বাস করি শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা অভূতপূর্ব একটি কাজ করছে, যেটি এর আগে কখনো হয়নি। আমি এতে অংশ নিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি এবং একই সঙ্গে দেশজুড়ে যা হচ্ছে, সে বিষয়ে লজ্জিত।
আর একটি কথা—আমি ২০০৫ সালে কংগ্রেস সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালীন সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তাই দয়া করে আমাকে কংগ্রেস-বিজেপি রাজনৈতিক বির্তকের মধ্যে আনার চেষ্টা করবেন না।
অনুবাদ : উপল ইমাম