স্ফটিক চোখ
ঘোর! মোহমন্ত্রের ঘোর লাগা সংশয়। ওখানে বাস করে একজন কবির অদেখা শহরের নীলনকশা। সেই শহরের অলিগলিতে সে হেঁটে বেড়ায় খালি পায়ে, কখনো বুকে হিঁচড়ে লক্ষ যুগের ওপার থেকে। কখনো বা এযুগের অসহনীয়তায়। তার অব্যক্ত-ভাষা নিয়ে আসে মাতাল নেশা কিংবা দুর্বার নির্বাসন ।
আমি এমনই কিছু পাই তার কবিতায়। খুব ভুবনমোহিনী হাসি হেসেও কবি মুনিরা চৌধুরীর কবিতাগুলো, ঠা ঠা রোদ্দুরে কেমন যেন শীত শীত তাচ্ছিল্য আর ব্যথা-বন্দনার আরাধনা করে।
এই ভাঙ্গা ভাঙ্গা কুয়াশার সড়ক
কার্ডিফ নগর হতে চলে গেছে মথুরা বৃন্দাবনের দিকে
প্রতিপথে কাঠফুল, কাঁটার কঙ্কাল…
ব্যক্তি মুনিরাকে চিনলেই যে কবি মুনিরা চৌধুরীর কবিতাকে চেনা হয়ে যাবে, তা নয়। একজন হাসিমুখ মানুষকে কী করে খুঁজে পাবে এই মহা-বিস্ময় কাতর লেখনীগুলোতে! সব পরিচয় শেষে তিনি যে একজন কবি, সৃষ্টিশীল। কত শত চেনাজন চারপাশে, কত কত ভালোবাসা, গান গাওয়া, সবকিছু এক-নিমেষে পেছনে ফেলে, কবি হেঁটে গেছে তার নির্ধারিত গন্তব্য! কবিতার হাত ধরে, কবিতার চালচিত্র এঁকে। এইযে এতদিন ধরে সে যা কিছু লিখেছে, তা সবই ছিল বুঝি তার যাত্রা-নকশা। বেহালায় ছড়টানা একাগ্রতায় নোটেশনগুলো খুব যত্নে, একটি একটি করে বসিয়েছে সুরতন্ত্রের বুকে। এ তার একার অর্কেস্ট্রা, সে-ই একমাত্র যন্ত্রী। খুব বেছে বেছে সুর বেঁধেছে গোপন অগোপন নতুন স্বরলিপি ধরে। এত প্রস্তুত হয়ে, এত রয়ে রয়ে খুব কম শিল্পীই পারে তার সৃষ্টিকে প্রস্থান নকশায় পরিণত করতে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, মুনিরার কবিতায় বিশাল এক প্রস্থানের প্রস্তুতি এভাবেই আগাগোড়া লেপটে আছে:
এমন নরম রাত্রিতে চাঁদকে ডাকলাম ছাদের উপরে
তারাগুলো সাজিয়ে রাখলাম পাহাড়ে পাহাড়ে।
চাঁদ-সূর্যের পাহারাদার আমি শেষরাতে নদীর নিচে ঘুমোতে যাই।তুমি শঙ্কিত হয়ো না ঈশ্বর
আমি শুধু জল বিন্দুকে ভ্রমরা বানিয়ে দিয়েছি।
ধনাঢ্য কলমে বর্ণাঢ্য উচ্চারণে মুনিরা চৌধুরী একুশ শতকে, যতিচিহ্ন এঁকে যাওয়া এক পরম বিস্ময়! এমন বিষয়ে এতটা গভীর চাষাবাদ কি খুব দেখতে পাওয়া যায়! কেমন করে এই কবি সেই সংক্ষিপ্ত, সংরক্ষিত, ইন্দ্রজালে প্রবেশ করিয়েছিল নিজেকে, সে খবর কাব্যদগ্ধ কজন রেখেছি! তারপরও সে যখন লেখে—‘এই আগুনের দেশে একদিন মুনিরানগরী হয়ো, প্রতিদিন সবুজ হয়ো’
আহা কী পরিণত প্রত্যাশা, কী পবিত্র আশীর্বাদ! সবুজ ভুলে যাওয়া পৃথিবীকে, সবুজের সুষমা মেখে দিতে যে হৃদয় এত উন্মুখ উদার, সে-ই কিনা খুব নির্জন চোখে দেখে ফেলে মানুষের দংশন, ক্লেদ কিংবা হিংস্রতা—
নরকের নয় দরজা খুলে বসে আছি আমি আর একটা অন্ধ হরিণী…
দু’চোখ ছিদ্র করে
গলিত চোখের রঙে চন্দ্রের পিঠে এঁকে দিয়েছি গাছের ছবি
এই গাছ স্বর্গের গাছ
এক একটা শিশু মৃত্যুর পর সেই গাছে একটা করে ফুল ফোটে।
প্রশ্ন জাগে মনে—কেমন করে মুনিরা এমন করে দেখেছিল! উত্তর ঘুরে মরে নিঃশব্দ শব্দে। এই কবি স্বপ্নের পেছনে থাকা স্বপ্ন তৈরির কাঁচামাল মগজে নিয়ে ফিরত, এই কবি দৃশ্যের ওপারে চুপটি করে লুকিয়ে থাকা দৃশ্যকে সংকেত কলমে আঁকত।
সংকেত চিহ্ন
অবরুদ্ধ সময়। উত্তেজনা চারদিকে। সামান্যকে অসামান্য পরিচয় দিয়ে বোতলে বোতলে বিক্রি করা হচ্ছে, দেশের আঙিনা ছাড়িয়ে সারাবিশ্বময়। তুমি তার মাঝে অকৃত্রিম খুঁজে পাবে কী করে! কী করে জানবে, কেউ কেউ ছিলে দগ্ধযুগের বিদগ্ধ একেকটি পঞ্চকোষ। সাথে করে নিয়ে এসেছিলে পৃথিবীর বাগান থেকে হারিয়ে যাওয়া গোলাপ কিংবা অপসৃত বাগানের মাটি।
এসব ভাবনার আবর্তে ঘুরপাক খেতে খেতে, কবি মুনিরা চৌধুরীকে সেভাবেই খুঁজে পাই। কবিতাগুলো ছাড়িয়ে যায় মানুষ মুনিরা থেকে অসমাপ্ত মুনিরার দিকে। একজন কবি, প্রেমী, কর্মী, দিগন্ত মেলে ধরা উদাস ব্যথী, কুয়াশাচ্ছন্ন ডকইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সিগন্যাল। কী জানাতে চাচ্ছে সে! কীই বা পৌঁছে দিতে চাচ্ছে এই ক্ষয় কাতর পৃথিবীকে! যাকে হারিয়ে ফেলার পর গালে হাত রেখে অনবরত ভাবছি—কোথায় হারালো সেই মানুষটি, কোথায়ইবা ডুব দিলো মুনিরা চৌধুরী নামে একজন কবি। আর কেনইবা সে নিজেই চলে যেতে যেতে বলে—
কষ্ট
একজন মৃত মুনিরা চৌধুরীর গোপন নাম!
…………
সখা হে, মমি হয়ে শুয়ে আছি অগ্নিঝর্ণার নিচে…
বহু-কৌণিক কষ্টঝোরার মাঝে একটু একটু করে ধাবিত হলেই কি উচ্চারিত হয় এমন কথা! আহা কবি মুনিরা চৌধুরী, আজ ক’মাস তোমার কবিতায় তোমাকে দেখছি হৃদোদ্ধারের আয়োজন করার নামে, ক্রমশ আরও বিপুল কোনো হৃদ-পাতালে তলিয়ে যেতে। তাই বুঝি অগ্নি-ঝরনার নিচে ঘুমিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হয়!
চক্ষু খুলে দেখি—কোথাও চক্ষু নেই, ছায়া নেই, বিম্ব-প্রতিবিম্ব নেই
শূন্য কুঠরিতে পড়ে আছে
মৃত সব মুনিরামায়া আমার অগ্নিমায়া…
ওপারকে কী করে দেখেছিল সে, কী করে মৃত মুনিরামায়ায় জড়িয়ে দেওয়ার আয়োজন করেছিল! মধ্যাহ্ন থেকে রাত্রি নামিয়ে আনা কবি মুনিরা চৌধুরী ভালোবাসার জন্য মৃত্যুনামা লিখে গেছে প্রতিবার। কেঁপে উঠি তার এই প্রবল প্রস্তুতিতে! যেন শুধু ভালোবাসার জন্যই কলম তুলে নিয়েছিল। তাকে প্রেম এবং পৌরাণিকতা বারবার ডাক দিয়ে গেছে। কাঙ্ক্ষিত সেই পৃথিবীর জন্য কী আকুলতা নিয়ে লিখেছে এক একটি কবিতা। তারপর পাখিদের কাটা ডানা হয়ে গহন কষ্টগুলো রেখে গেছে নস্টালজিক অ্যালবামে।
কৈশোরে কাগজের নৌকা ভাসিয়েছিলাম পুকুরে…
ভেবেছিলাম—নৌকাগুলো বড় হবে একদিন, দেখা হবে মেহেকসমুদ্রে…আমার পাখিরা আর উড়াল দিলো না…
দূর অতীতে পাখিদের ডানা কেটে দিয়েছিলাম
পাখিদের ডানা রেখে দিয়েছিলাম ছোটবেলার অ্যালবামে…
নয় দরজা ওপার থেকে তীব্র বাতাস আসে। মেহকানন্দা নামের ওই নদীটা কি নদী, নাকি অন্যকিছু! অথচ কবি সেদিকেই বারবার বয়ে যেতে চেয়েছে। মৃতের মাতৃমঙ্গলে কোন মঙ্গল কামনায় মুনিরা মুনিরা বলে, ছুটে চলছে জল-পৃথিবীর আন্দোলন! অবশেষে ডুবে যায় মেহেকসমুদ্রে। যে-সমুদ্র ছিল কবির নিজের সৃষ্টি, যার শরীর জুড়ে বয়ে গেছে মুনিরামায়া।
হাতখানি যে রক্তে ডুবে আছে…
কী করে লিখি কথা ও মুনিরাকথা, নদী ও মেহেকানন্দার জল
তবু-
স্ফটিকের পাখি প্রত্নকলম তুলে দিচ্ছে হাতে
গভীরে আঁকো
ঢং! ঢং! ঢং!
তিনটে ঘণ্টা কে বাজিয়ে গেলো মাথার ভেতর!
ঘুম ভেঙে আজও প্রায় মনে হয়, মুনিরা কি তাহলে সত্যি সত্যি চলে গেছে! অবচেতন মন বলে, হয়তো আজই কোনো ফোন আসবে সুদূর কার্ডিফ নগর থেকে! ব্যক্তিগত পরিচয়ের ঘনত্ব দিনে দিনে জানিয়েছে, আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি। মুনিরার ডাক এখনো ঘুরে বেড়ায় টরন্টোর বাতাসে।
এইবার চলো মেহেকানন্দার তীরে যাই, নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রামে
আমি পাখির শরীরে কুয়াশার ডানা জুড়ে দিয়েছি।
একটা টেলিফোন, সুদূর কার্ডিফ নগর থেকে আমার শহরে এসে পৌঁছাত, কখনো পায় আবার পায় না। কখনোবা আমিও পৌঁছানোর চেষ্টা করে ক্লান্ত। আমরা কেউ কাউকে ধরতে পারছি না। ছয় ঘণ্টার আগ-পিছ। কিন্তু ভালোবাসা একসময় ঠিকই সংযোগ ঘটিয়ে দেয় পরস্পরের কণ্ঠ, মায়া এবং গভীরতা। আমি মুনিরার ‘দিদি’ ডাক শুনেই বুঝে যাই আকুল খোঁজ কাকে বলে, সেও হয়তো তাই। জমে থাকা কথাগুলো পাথরচাপা পড়ার আগেই গলিয়ে তাতিয়ে নিতে চাই পরস্পর উষ্ণতায়।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ। কবিতা নিয়ে কথা, জীবন নিয়ে হেসে ওঠা। কিছুদিন পর পর অনেক প্ল্যান। এই যেমন, সামনের যে কোনো গ্রীষ্মে আমার এখানে বেড়াতে আসবে সে। তারপর দুজন টইটই চষে বেড়াবো সারা টরন্টো শহর। চায়না টাউনের গ্রাফিতি চিত্রগুলো দেখা, অন্টারিও লেকের নীলজলে ভেসে বেড়ানো, মোহ-মাতাল উদ্দীপনায় আকণ্ঠ পান করা হবে সুধারস। দুজনে মিলে সোমরস বিতান থেকে নিয়ে আসব একরাশ তরল আগুন। তারপর আকণ্ঠ ঢক ঢক! বলেই সেকি হাসি। যেন দারুণ আনন্দকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। এমনই তো কথা হতো, এমনই তো হেসে উঠতাম দুজন।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে উত্তর আমেরিকার আকাশ পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি। সেই আকাশ ছুঁয়ে দেখার সাধ কবি মুনিরা চৌধুরীর। বহুতল অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দায় বসে, তরল আগুনের দোলনায় দুলতে দুলতে রাতের আকাশ দেখা হবে।এভাবে কাছ থেকে উত্তর আমেরিকার আকাশ দেখার পরিকল্পনাও হয়ে গেলো।
—দিদি তোমার কফিশপে নিয়ে যাবে না?
—যাব তো। বাড়ির কাছেই কফিশপ, যতবার ইচ্ছে চলে যাব।
ঘরের জানালা কিছুতেই বন্ধ হয় না
আমাদের জানালায় আটকে রয়েছে নদীর দরজা।
…………
আমি দিন রাত নদী খনন করছি
টেনে হিঁচড়ে জীবনের কাছে নিয়ে যাচ্ছি এক মেহেকানন্দা নদী।
মুনিরার নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দেয়া অনুষঙ্গগুলো আমার খুব ভালো লাগত। মুনিরামায়া, মুনিরাহেনা, মুনিরাআগুন এসব শব্দগুলো একজন কবির একান্ত নিজস্ব হয়ে ওঠে যখন, তখনই বুঝতে পারা যায় তার মানসিক গতিপ্রকৃতি। কোন পথে হাঁটছে সে, কীইবা ভাবছে একান্ত গহনে।
অনেক কটা নদী এসেছে তার কবিতায়, মাতামুহুরি, আড়িয়াল খাঁ, যমুনা। তারপরও সে খনন করে বইয়ে দিয়েছে আরেকটি নদী, যার নাম রেখেছে মেহকানন্দা। সেই নদী যখন সাগর হয়ে ওঠে, তখন তার নাম হয়ে যায় মেহেকসমুদ্র। একদিন জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় তোমার মেহেকানন্দা নদী? সাবলীল কণ্ঠে বলেছে- এসো, তোমাকে দেখাতে নিয়ে যাব। .
সাধ ছিল নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কাছে যাওয়ার, রাতের নায়াগ্রা দেখার জন্য রাত্রিবাস করার। নায়াগ্রার শব্দে কি ঘুমানো যায় দিদি, না ঘুমালেইবা কী!- আচমকা প্রশ্ন করেছে সে। তারপর! একদিন জলাধারেই ঘুমিয়ে পড়লো মেয়েটি। সেদিন যদি একবার বলতো- আর না ঘুমালেইবা কী!
মুনিরা চেয়েছিল, আগামী মথুরানন্দার অনুষ্ঠানে আমাকে থাকতেই হবে। আমার কার্ডিফে যাওয়া নিয়ে খুব আগ্রহ তার। টিকিট পাঠাবার জন্য পাসপোর্টের ফটোকপি চেয়েছিল। প্রায়ই আফসোস করে বলতো, ঈশ তোমার সাথে কেন আমার আরও অনেক আগে দেখা হলো না দিদি!
আজ মুনিরাহীন দিনে ওর কবিতার দিকে চেয়ে বারবার মন বলে- আমাদের তো কোনো দিনই দেখা হলো না মুনিরা! অথচ এই দেখা না হওয়া যে, কত শত দেখা হওয়ার চেয়েও বেশি, তা আমরা দুজনেই বুঝেছিলাম।
যেভাবে কবিতা খুঁজে বেড়াই, ঠিক সেভাবেই কবি মুনিরা চৌধুরীর কবিতা খুঁজে পেয়েছিলাম। ব্লগে এবং অনলাইনে প্রকাশিত লেখা দিয়ে চিনতে শুরু করেছিলাম। তখন পর্যন্ত কেউ সেভাবে তার কথা বলেনি। কিন্তু মুনিরার কবিতা আমাকে টেনেছিল। ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, ফেসবুকে আমার ধারাবাহিক ‘পছন্দের কবিতা’ সিরিজে পোস্ট করেছিলাম তার ‘মুনিরাকথা’ কবিতাটি। পরদিন সে লজ্জিত হয়ে ইনবক্সে বলেছিল, দিদি তুমি কী করেছ? যা লজ্জা লাগছে…!
সেই কবিতাটি—
চোখের জানালা বন্ধ করলে চোখের দরজা খুলে যায়
দরজার ভেতর দরজা আর অজস্র পাথরের খাঁচা…
গর্তগুলো ভরাট করছি এক’শ বছর ধরে…
এই ভাঙ্গা ভাঙ্গা কুয়াশার সড়ক
কার্ডিফ নগর হতে চলে গেছে মথুরা বৃন্দাবনের দিকে
প্রতিপথে কাঠফুল, কাঁটার কঙ্কাল…
ঘুমহীন মাকরশা এক
ঘর বুনছি, কাঁটা কুড়াচ্ছি…
জন্মের আগ থেকেই জেগে আছি…
ঈশ্বর, তুমি কি তোমার নিঃশ্বাসে এক মিনিট ঘুমোতে দেবে না!
মৃত্যুকে এত ভালোবেসেছে যে, নিজেকে নিয়ে গিয়েছে কুয়াশার উড়ালমাখা অন্ধকার জলের গভীরে। কেন এই মৃত্যু ভালোবাসা, কেন নক্ষত্র বিন্দু হয়ে দূর আকাশে স্থায়ী হবার আকাঙ্ক্ষা! সব উত্তর লেখা আছে তার কবিতার পঙক্তিতে। অনাগত সময়ের পথ দিয়ে, কবির কবিতা হেঁটে যাবে বুনো বাতাসের সত্যবদ্ধ পরিভ্রমণ সঙ্গে করে। পরিচয় করিয়ে দেবে মুনিরা চৌধুরীর কবিতার সেই মৃত্যু মাতোয়ারা আলিঙ্গনকে। একদিন হয়তো এমন প্রস্থান মিথ হয়ে ‘মুনিরামৃত্যু’ প্রতিশব্দে পরিণত হবে। আর এমন হলে একটুও অবাক হব না কিছুতেই।
দূর নক্ষত্রে এক একটি কুয়াশাবিন্দু উড়িয়ে দিচ্ছি
তৈরী হচ্ছে ঝিনুক
মুক্তোর মতো জ্বল জ্বলে আমাদের মিলন ও মৃত্যু…
আজ কবি মুনিরা চৌধুরীর কবিতা হয়তো অনেকেই খুঁজে খুঁজে পড়ছেন, পড়বেন। এমন আনন্দ ভাগ করে নেবার জন্য সে কি তবে নেই! কবি আছে, থাকবে, তার কবিতার অভিজাত ভঙ্গিমায়, প্রেম পুরাণ ও সমকালের যৌথ-যাত্রায়। একজন মানুষের প্রস্থান থাকতে পারে, কিন্তু একজন প্রকৃত কবির মৃত্যু হয় না কখনো। কষ্টের চৌখুপী ঘরে সে ঘুরতে থাকে, বারবার উচ্চারণ করে পৃথিবীর সবচেয়ে বিদীর্ণ অনুভবের একবিন্দু ধ্বনি, উফ! আর সেখানেই মুনিরা সাহসী, মুনিরা আধুনিক, মুনিরা সৎ। রাখঢাকের আবরণ ফেলে দিয়ে, সাহসের মাস্তুলে উড়িয়ে দিয়েছে তার তীব্র পতাকা, বলিষ্ঠ উচ্চারণে জানিয়েছে—
ঈশ্বর হও
তুমি কবি হও
পৃথিবীর যত গান, এইসব কবিতাবলী
গীত হোক, গীত হোক মৃতের সন্মানে…