পাখি-পল্লি
এবার সত্যি সত্যি বিদ্যুৎ চমকায়
খাঁচা থেকে পাখিগুলো বেরিয়ে আসে
বিদ্যুতের ছিদ্রে পাখিগুলো ঘুমিয়ে পড়ে আবার জেগে ওঠে।
ক্রমে পালক ঝরছে, পাতা ঝরছে, শিশির ঝরছে…
কতিপয় মানুষ পাখিদের শরীরে প্লাস্টিকের পালক লাগিয়ে দিয়ে যায়
পৃথিবীতে আবার ঝড় আসে
আর প্রতিটি ঝড়ের শেষে ভোর বেলা দেখি
ধর্ম বিদ্যালয়ের আলখাল্লা পরা সেই ছাত্রদের মতো
পাখিগুলো আমার উঠোনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ভবানীপুরের কবিতা
রক্তের ভেতর একটা নদী থেকে আরও একটা নদী
বিস্মৃতির ভবানীপুরে বৃষ্টি দিচ্ছে…
বৃষ্টি দিচ্ছে
বৃষ্টি দিচ্ছে
চোখ-ফাটা বৃষ্টির কান্না কোলে নিয়ে বসে আছি
আমার সিতানের বালিশের টুকরোগুলো এলোমেলো
ঘুম আসে…
ঘুম দাঁড়াতে পারে না কোথাও
ঘুম দৌড়াতে পারে না কোথাও
ঘুম বসতে পারে না কোথাও
ঘুম ঘুমুতে পারে না কোথাও
অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকে এলোমেলো আয়নার মুখ…
দিনান্তে
এ-যে কবিতা এক, চম্পাবতী নদীতীরে কেশর উড়িয়ে দেওয়া
বোবার না-বলা কথাগুলো টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসা, তারপর
পাখিদের ঠোঁটে তুলে দেওয়া…
হায়!
শব্দ বদল হতে হতে পাখির সঙ্গে পাখা বদল করে কবিতা…
নদীতীরে বটগাছের গর্তে কাঁচা-পাকা সময় বেড়ে উঠছে ধীরে
দুলছে শীর্ণ তরুলতা, সাপের বাচ্চা
দিনান্তে পাখি উড়ে যায়
নদীতীরে পড়ে থাকে মানুষের পালক।
নাইওরি
বৃষ্টির সাথে কোনো এক নাইওরি এসেছিল মেঘে-ঢাকা গ্রামের ঐ পাড় থেকে
ভেজাচুলের বন্ধন খুলে বসেছিল
আমার বারান্দায়…
উপরের দিকে তাকিয়ে বললো
সিন্ধু মা, আকাশের গর্তগুলো ঝরে পরছে কেন, খসে পড়ছে কেন নরম নাভীগুলো
আমি তবে কোথায় গিয়ে থাকবো!
তারপর সে নিমিষে নাই হয়ে যায়
দিন যায়
বছর যায়
নাইওরি আর আসে না…
আর আমার বুকের বারান্দায়
চিরদিনের জন্য লেগে থাকে নাইওরির গন্ধ, মৃত্যুর মতো…
নয় দরজার নদী
১.
তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল নয় বছর আগে
এই নয় বছরে নয়-দরজার-নদী তৈরি করেছি
তুমি কি একবার সময় করে আসবে
জলের জানালাগুলো লাগিয়ে দিয়ে যাবে!
২.
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ছিপছিপে এক মাতামুহুরী নদী
নদী পেরিয়ে যাচ্ছে সময়
হাতের নীলবর্ণ রেখায় এ-কার ছায়া দেখা যায়!
ছাদের উপর বৃষ্টির গুঞ্জন থামছে না কিছুতেই
তানপুরার হৃৎপিণ্ডে আঙুল ফেটে গেলে বুঝতে পারি না
এ-কান্না উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের নাকি মাতামুহুরীর
ঘরের জানালা কিছুতেই বন্ধ হয় না
আমাদের জানালায় আটকে রয়েছে নদীর দরজা।
৩.
চাঁদের শরীর থেকে বের হচ্ছে ধূয়া ও শিশির
দুই হাজার বছর আগেকার রাত ছাই হবে দুই হাজার সতের সালে
দু’চোখের অন্ধ ছায়া উড়ে যাচ্ছে অন্ধকারে
পাখিরা নৌকা চালায় বাতাসের নদে
নিঃশ্বাস ফেটে যাচ্ছে ধীরে
গাছের
মানুষের…
ফাটা-নিঃশ্বাসে তুমি কি একবারও আত্নহত্যা করতে আসবে না!
৪.
বিষ পান করছি নাকি বিষের নিঃশ্বাস নিচ্ছি
পান করছি পরমায়ু
প্রজাপতির ডানা লাগিয়ে দিয়েছি
ধীরে চলো
ধীরে চলো
নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রাম যে বহু দূর
ঐ দূরত্বে
নিভে যাচ্ছে অতলান্ত এক আত্মার ছায়া…
৫.
কে যেন আমার কন্ঠস্বর থেকে
নিদ্রাতুর কিছু শব্দ লুণ্ঠন করে নিয়ে যায় নিধুয়া পাথারে
অতঃপর কাচের করাত দিয়ে শব্দগুলো কুচি কুচি করে ভাসিয়ে দেয়
আড়িয়াল খাঁ’র বুকে
ভাসে গলাকাটা নদী
ভাসে নারী
ভাসে গলাকাটা নক্ষত্র
শকুনের ডানায় চিৎকার ভাসে জল ও স্থলভূমে…
মৃত্যুর গন্ধ চৌদিকে
দূরে যাই
দূরে যাই
পৃথিবীর কোনো এক রান্নাঘরে আলু-পটল কাটতে ভুলে যাই
আমি আমাকে কেটে ফেলতে ভুল করি না
ওহ পাখি, পরমাত্মা…