করোনার এই প্রকোপের সময় বিনিয়োগ নিয়ে ভাবছেন? তিন থেকে ছয় মাসের মাসিক খরচ রেখে বাকি জমানো টাকা বিনিয়োগ করুন। কোথায় করবেন, তা ভেবে না পেলে প্রয়োজনে স্টক মার্কেটে করুন। এর আগে প্রাথমিক কিছু পড়াশোনা করে নিতে পারেন। প্রথম কিছু মাস হয়তো লস হবে, ব্যালান্স শিট খারাপ দেখাবে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটাই আপনার তুরুপের তাস হবে। ২০০৮ সালে যারা স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা হয়তো আমার সঙ্গে একমত হবেন। এই বিনিয়োগের ব্যক্তিগত স্বার্থের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থও হাসিল হবে।
সিভি, রিজিউমি ঘষামাজা করুন
অর্থনৈতিকভাবে বিনিয়োগ না করতে চাইলে বা সামর্থ্য না থাকলে নিজের ওপর বিনিয়োগ করুন। ভাবুন গত তিন-চার মাস সময় কিভাবে কাজে লাগিয়েছেন, কী করতে পারতেন? স্বাভাবিকভাবেই জাতীয়, বৈশ্বিক চাহিদার কারণে অনেকেরই চাকরি থাকবে না। তারই কোপ আপনার-আমার সবার ওপর পড়তে পারে। এজন্য নিজেকে ঢেলে সাজানোর সময় এখনই। বাজারে এমনিতে কোয়ালিফাইড মানুষের অভাব, মহামারীর পরে সেটা আরও জটিল আকার ধারণ করবে। খুব কম্পিটিটিভ না হলে আমার-আপনার ভাগ্যে একটা ভালো চাকরি নাও জুটতে পারে, যদি চাকরি চলে যায়, তার প্রস্তুতি এখনই নিন।
কিভাবে? কিছু ফ্রিল্যান্স কোর্স করুন, কিছু প্রোগ্রামিং সফটওয়ার শিখে ফেলুন, ইংরেজিটা ভালো করে রপ্ত করুন, অফিস ম্যানেজমেন্ট, বিগ ডাটা, SAP শিখুন। আপনার বস যা যা পারেন, আপনি তার চেয়েও বেশি কিছু শিখে ফেলুন। চাকরি গেলে বসের যাবে আপনার নয়, আর চাকরি না গেলেও প্রমোশন পাবেন।
Jac না হয়ে mastar হোন
‘Jack of all trades, master of none’ না হয়ে ‘master of one thing’ হোন। আশেপাশে একটু তাকালেই দেখা যায় আমি-আপনি যা জানি, অনেকেই সেগুলো জানে। কিন্তু একটা বিষয়ে এক্সপার্ট পাওয়া কঠিন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, কোন বিষয়ে আপনি এক্সপার্ট? হোক সেটা সুন্দর করে কথা বলা, মানুষকে বুঝানোর ক্ষমতা, কৃষিকর্ম অথবা একজন খেলোয়াড়। তাই এখনই সময় নিজের শক্তির, পছন্দের জায়গাটাকে ঝালাই করে এক্সপার্ট বনে যাওয়ার। নিজের একটি শখ বানান: আমার মনে হয় দেশের অধিকাংশ মানুষেরই কোনো নির্দিষ্ট শখ নেই।
কোনোকিছু ‘এড়ানো’ এবং কিছুর ‘মুখোমুখি’ দাঁড়ানো হলো দুটি কৌশল, যা আপনি এখনই অনুশীলন করতে পারেন। এই মুহূর্তে সম্পূর্ণরূপে অধিষ্ঠিত হওয়া বা মননশীলতার অনুশীলন এএনটির জন্য কোনো স্থান রাখবেন না।
জিজ্ঞাসা করলে দেখা যাবে, এটা-ওটা কতগুলো শখের নাম বলবে কিন্তু আদৌ এগুলো তার শখ নয়। তাই, একটা শখ তৈরি করে ফেলুন। এটার দুটি লাভ আছে। এক. করোনার সময় ভালো কাটবে। দুই. এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের কোনো একটি নির্দিষ্ট জিনিসের প্রতি শখ বা আকর্ষণ থাকে, তারা জীবনে সুখী হয়। আবার তাদের সফলতার সম্ভাবনাও বেশি। কে জানে হয়তো আপনার শখের জিনিসটাই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। হতে পারে সেটা মানসিক, হতে পারে আর্থিকভাবেও। যদি কিছুই না পারেন, বই পড়া শুরু করে দিন। তাও না করলে নতুন-পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হোন। এটা দিয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। মানসিক, ব্যক্তিগত ও পেশাগত ক্ষেত্রে সেটা খুবই কাজে আসবে।
মেডিটেশন বা ফোকাস শক্তি বাড়ান
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অথবা ব্যক্তিগত কর্মক্ষেত্রের অনেক স্বপ্নই স্বপ্ন থেকে যায়, ফোকাস শক্তি কম থাকার কারণে। আপনি হয়তো বিদেশে পড়াশোনা করতে যেতে চান, অথবা ফ্রিলান্সিং কোর্স শিখতে চান, মনের কোণে সুপ্ত বাসনা, বড় ব্যবসা করবেন। কিন্তু পারেন না। কারণ, এসব কিছুই অঙ্কুরে বিনষ্ট হয় এই ফোকাস শক্তি না থাকার কারণে। এ কারণে মেডিটেশন করতে পারেন বিক্ষিপ্ত চিন্তা-ভাবনাগুলোকে জমাট বাঁধার জন্য। But don’t dismiss meditation as a spiritual gimmick. মেডিটেশন শুধু আত্মিক, ধর্মীয় কিছু নয়। এটি খুবই শক্তিশালী মানসিক টুল, যা ফোকাস লেভেল ও আউটপুট বাড়াতে সাহায্য করে। দুই-তিন মাস করে দেখুন, ফল অবশ্যই পাবেন।
ANT কমিয়ে ফেলুন
Automatic Negative Thought (এএনটি) বা স্বয়ংক্রিয় নেতিবাচক চিন্তাধারা হলো নিজের সম্পর্কে এলোমেলো নেতিবাচক চিন্তা, যা আপনার মনকে দিনে একাধিকবার অতিক্রম করে। এগুলো বাড়তি চাপ, সামাজিক উদ্বেগ; এমনকী হতাশাগ্রস্তও করে দেয়। এভাবে কমিয়ে দেয় সুখ-কর্মক্ষমতাও। দুর্বল করে দেয়। কোনোকিছু ‘এড়ানো’ এবং কিছুর ‘মুখোমুখি’ দাঁড়ানো হলো দুটি কৌশল, যা আপনি এখনই অনুশীলন করতে পারেন। এই মুহূর্তে সম্পূর্ণরূপে অধিষ্ঠিত হওয়া বা মননশীলতার অনুশীলন এএনটির জন্য কোনো স্থান রাখবেন না। বিপরীত কৌশলটিতে, যখনই আপনার কোনোকিছুতে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা রয়েছে, সময় নিন বিরতি দিন, প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করুন।
Last but not the least চ্যালেঞ্জ নিন। ছোটো বা বড় যাই হোক। এই ছোটখাটো চ্যালেঞ্জগুলোই একদিন অভ্যাসে পরিণত হতে হতে গড়ে দিতে পারে নিজেকে, সমাজকে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক গুয়াংডং ইউনিভার্সিটি অব ফাইনান্স অ্যান্ড ইকোনমিকস, চীন