(যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর)
বলিছে সোনার ঘড়ি, টিক টিক টিক্
যা কিছু করিতে আছে, করে ফেল ঠিক
সময় চলিয়া যায়-নদীর স্রোতের প্রায়,
যে জন না বুঝে তারে ধিক শত ধিক
বলিছে সোনার ঘড়ি, টিক টিক টিক
আমি কে? কোথা থেকে এসেছি কিংবা কোন কাজে? সেটা জরুরি নয় বরং আমি যে কথাগুলো বলতে এসেছি সেটা জরুরি। অন্তত আমার কাছে।
আমাকে ঘড়িওয়ালা বলতে পারেন। ঘড়ি, গোলাকার চাকতিতে ঘণ্টা, মিনিট আর সেকেন্ডের নির্দেশক কাঁটা, সেইসঙ্গে দাগওয়ালা সময়ের ঘর। ঘুরছে কেবল ঘুরেই চলেছে, টিক টিক টিক টিক। এমন এক একটা ঘড়ির পাঁজর খুলে তার হৃদযন্ত্রের ধুপপুকানি আমি অনুভব করতে পারি। বাবার কাছ শিখেছিলাম সেই বিদ্যা। বেশ ভালো ছাত্র কিন্তু, এখনো একনাগাড়ে বলে যেতে পারি সেসব চকমদার নাম- অ্যা লেইন অ্যান্ড শউন, অ্যা লঞ্জ অ্যান্ড সোহনি, প্যাতেক ফিলিপ্পি, ভ্যাচেরন কনস্টানটিন, রজার দুবেরিস, ক্যাসিও, রোলেক্স। আরো নাম শুনতে চান? হা হা। আমার বাবা ছিলেন আসলে একটা কাঁটা ভাঙা ঘড়ি। আমাদের গ্রামে একটা বট গাছের নিচে ছাতা পেতে তিনি মন দিয়ে ঘড়ির কলকব্জা দেখতেন। কখনো কখনো আমিও বলতাম- বাবা আমাকেও দেখাও।
বাবা:
দেখবি, অবশ্যই দেখবি। সব সময় ঘড়ি দেখবি। কাঁটা তিনটে দেখ, কী আদিম সুশৃঙ্খল! সাড়ে
পাঁচ হাজার বছর আগে মিসর আর ব্যাবিলনে সূর্য ঘড়ি যে সময় বলতো, আজো সেই সময় টিকে
আছে একই মহিমায়। আজো সময় করে সূর্য ওঠে, ডোবে। অসময়ের পাত্রেও রাখা থাকে সময়ের খাদ্য। ভাবতে পারিস, সেই হাজার হাজার বছর আগে ব্যাবিলনে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সূর্য দেখে কোনো হিট্টাটাইট বা অ্যাসেরীয় যে সময় ভেবে নিত, আমরা তার যন্ত্রের নাম দিয়েছি ঘড়ি। যন্ত্রটা কথা বলতে পারে না, কিন্তু প্রতিটা কাঁটায় কাঁটায় ইতিহাসের সময় লিখে রাখে। বুঝতে পারছিসরে ব্যাটা?
বাবার সেসব কথা আমি কিছু বুঝতাম, বেশিরভাই লাগতো দুর্বোদ্ধ। তবে আর যাই হোক শুধু এটুকু বুঝতাম বাবা ঘড়ির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আকাশ দিয়ে যেবার ভিম বেগে উড়ে গেল যুদ্ধবিমান অথবা ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় চলছে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল, লাঠির মাথায় পতাকার মতো নড়ছে আসাদের শার্ট, কিংবা উপকূলে সেই জলের গর্জন, যা এক রাতে প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ৫ লাখ মানুষের। বাবা এই ইতিহাসের মুহূর্তগুলোয় এক মনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। আমি জানি, তিনি সেসব ইতিহাস লিখেছেন ঘড়ির কাঁটায়। তাইতো সেই পরম্পরায় আমিও আজ ঘড়ির লিখিয়ে।
আচ্ছা থাক, তার চেয়ে বরং আমার সেই জরুরি কথাগুলো বলি। কিন্তু জানেন, ঘড়ির প্রসঙ্গ এলেই না আমি মুখ সামলাতে পারি না। ইচ্ছে করে ঢাকা শহরের মধ্যখানের কোনো উঁচু বেদিতে উঠে ঘড়ি নিয়ে একটা ভাষণ দেই। ওই যে আমার বাবার কথা বললাম, এই বিদ্যাই যে আমাকে এক সময় মস্ত একটা ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে বেঁধে দেবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। এখন আমার সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, নিশিথ সবই ওই বিরাটাকার ঘড়ির সঙ্গে বাঁধা। ঘড়ির কাঁটা ঘুরলে আমিও ঘুরতে থাকি, ঘুরতে থাকি, ঘুরতেই থাকি…
আচ্ছা আপনারা কী কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছেন? ভালো মতো খেয়াল করুন, কান পাতুন। টিক টক, টিক টক, ছন্দময় আর নিয়মমাফিক। শোনারই কথা। আমার বাবার মতো আমিও প্রায়ই একটা খোলা মাঠে গিয়ে ঘাসের মধ্যে ছেলেকে নিয়ে শুয়ে থাকতাম। ছেলেটাকে আমি আকাশ দেখাতাম। আকাশের গাঢ় চাদরের আবরণে আমরা কাল্পনিক ঘড়ির দুটো কাঁটা আঁকতাম।
ছেলে: এটা অনেক বড় একটা ঘড়ি তাই না বাবা।
হ্যাঁ এটাই সত্যিকারের গ্রান্ড ফাদার ক্লক।
ছেলে: ঘড়িটা কত বড়?
মহাকাল জুড়ে এর বিস্তৃতি, অপরিসীম এর সময় নির্ধারণ ক্ষমতা।
ছেলে: তাহলে এই ঘড়িই কি সৃষ্টি? এই ঘড়িই কি শুরু?
ঈশ্বরের শূন্যতে যখন কিছুই ছিল না, তবুও ছিল টাইম ও স্পেস। যাiহ, আমি তোর প্রাণ এই ঘড়ির কাঁটায় বেঁধে দিলাম। যেমন করে পাতালপুরির গুহার সুরম্য কৌটায় লুকিয়ে থাকে দৈত্যের পরান ভোমরা। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে গেলে ইতিহাসের বয়স বেড়ে যায়, কিন্তু মানুষের বয়স কমে। তাই প্রতিটি সেকেন্ড, মিলি সেকেন্ড, ন্যানো সেকেন্ড মূল্যবান। সময়টাকে তুই দেখে রাখিস।
হ্যাঁ, এভাবেই ঘড়ির সঙ্গে বড় হয়ে উঠেছিল আমার ছেলেটা। সেকেন্ড এগিয়েছে, ইতিহাস তার রূপ পাল্টেছে, বয়স বেড়েছে ছেলেটার। মিনিট এগিয়েছে, ইতিহাসের মুখগুলো ঘুরে দাঁড়িয়েছে পেছন ফিরে, ছেলেটা বেড়ে উঠেছে আরেকটু। ঘণ্টা এগিয়েছে, পুরনোকে পেছনে ফেলে নতুন সওয়ার হয়েছে পাগলা ঘোড়ায়, আর আমার ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়েছে বিপুল বিক্রমে।
ছেলে:
মৃত্যু যত আঁকড়ে ধরতে চেয়েছে মানুষকে, বাঁচার সংগ্রাম তত বেশি জোর নিয়ে ঠেকিয়ে
দিয়েছে লুপ্ততা। আমি এবং আমরা সেই লুপ্ততার বিরুদ্ধেই লড়বো। হে মানুষ, কণ্ঠে তুলে
নাও নতুন গান, মস্তকের গভীরে জ্ঞানের অনুরণ, সর্বপ্রাণ বোধ। আমি সূর্য ছুঁতে চাই। স্পর্শ করে দেখতে চাই সূর্য ঘড়িটা সত্যিই আমাদের উন্মেষ ঘণ্টা নির্দেশ করতে পারে কিনা।
আমি ওকে রুখতে পারিনি, আর কেনোই বা রুখবো। তবে বিশ্বাস করুন আমি প্রতিটি সময় মুহূর্ত ঠিক ঠিক দেখে রেখেছি ঘড়িতে। পরম্পরা মেনে ঘড়ির কাঁটায় লিখে রেখেছি সব। কি বিশ্বাস হয় না? এই দেখুন, আমার পকেট ভর্তি এখনো সব ঘড়ি। ছোট বড় মাঝারি কত রকম। আমি এক একটি ঘটনার সময় নিখুঁতভাবে দেখে ঘড়ির কাঁটায় সেগুলোকে বন্দি করেছি। যুদ্ধ, হত্যা, ধ্বংস, জন্ম, উৎসব, শোক, সান্নিধ্য, প্রেম, যৌবন সব।
আমার আয়ু কমছে কিন্তু ইতিহাসের বয়স তো বাড়ছে। যে জাতি ইতিহাস মনে রাখে না তারা কেবলই পিছিয়ে পড়ে যোজন যোজন। আপনারা নিজেদের ঘড়িগুলো দেখুন, সময় চলে যাচ্ছে আর প্রতিদিন কত শত নাম, মিথ্যা, অনাচার, পাপ যুক্ত হচ্ছে ভুলে যাওয়ার ইতিহাসে।
আচ্ছা বলুন তো, গত বসন্তে পাতা ঝরা প্রথম শুরু হয়েছিল ঠিক কবে আর কোন সময়ে? না থাক তারচেয়ে বলুন দেখি, হাসতে হাসতে ফাঁসিতে ঝুলে পরা খুদিরামের দেহ ঠিক কটার সময় নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল? বড্ড বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে না। আচ্ছা তাহলে বলতে চেষ্টা করুন, হ্যালির ধূমকেতু শেষ কবে ঠিক কটায় দেখা গিয়েছিল? নাহ বড় কঠিন সব প্রশ্ন। এত দূরে না গিয়ে এই বাংলাদেশ নিয়েই প্রশ্ন করি। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঠিক কয়টায় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে চলে গিয়েছিলেন? বলতে পারছেন না? এই যে এই ঘড়িটা দেখুন। আমি ঠিক ঠিক সময়টা তুলে ঘড়িটা বন্ধ করে দিয়েছি দেখুন। রাত ১২টা ২০ মিনিট। ঠিক আছে বরং এটা বলুন ১৬ ডিসেম্বর ঠিক কয়টায় পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পন করে। ওমা এটাও পারছেন না? এই যে এই ঘড়িটা দেখুন। ঠিক বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে ঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া আছে। না হয় এটা অন্তত বলুন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঠিক ক’টায় এক ঝাঁক তপ্ত বুলেট ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল বাংলাদেশের হৃদয়। সিড়ি বেয়ে বেয়ে নেমে এসেছিল রক্তের ধারা। চারপাশ আচ্ছাদিত হয়ে গিয়েছিল বারুদ গন্ধে। আহ কী যন্ত্রণা, ওহ কী দৃঃসহ, ওহ কী…
(দুর্ভিক্ষের ছবি, রক্তাক্ত বঙ্গবন্ধু, সামরিক টুপি, তাক করা বন্দুক, সানগ্লাস, জিন্নাহ টুপি)
আমার এই ঘড়িগুলো প্রতিটি ইতিহাসের সাক্ষী, সেই সঙ্গে আমিও। ঋতু বদলের মতো আমি বদলে যেতে দেখেছি মানুষকে, ইতিহাসকে, ঘটনাকে। একমুঠো ভাত, এক টুকরো রুটির আশায় হাড্ডিসার শিশু কোলে মা ঘুরেছে কুকরের মতো। যে বা যারা যুদ্ধে গিয়েছিল অপার স্বপ্ন নিয়ে, তাদেরই অনেকে এক সময় লুটেপুটে খেয়েছে সব। অস্ত্র আর বুট জুতোওয়ালাদের যেমন দেখেছি বিপ্লব পাল্টা বিপ্লবের নামে ক্ষমতার টেনিস খেলতে, তেমনি কালো সানগ্লাসের জেনারেলকে দেখেছি জননেতার ভেকে ইতিহাসকে বদলে দিতে। খুনিদের উল্লম্ফনও দেখেছি, দেখেছি পুরনো পাপের পুনর্বাসন। রাস্তায় রাস্তায় বিকিয়ে যেতে দেখেছি মানবতা, মূল্যবোধ, গণতন্ত্র। হায় ঈশ্বর হায় ঈশ্বর,
পাপীরা দীর্ঘজীবি হয়
সুযোগসন্ধানীরা থাকে দুধে ভাতে
অজ্ঞানতা আর কুসংস্কার নয়
চিন্তকরাই বরং হাড়-হাভাতে
(তিন প্রজন্ম এক বিন্দুতে এসে দাঁড়ায়)
ছেলে: স্বৈরাচারটাও কিন্তু কম দেখোনি বা দেখছ না।
প্রথম বাবা: হত্যা, গুম, ক্ষমতার চর্চা, সুবিধাবাদ, স্বেচ্ছাচার সবই আছে আগের মতো, শুধু রূপ
পাল্টেছে। বোতলটা পুরনো হলেও তার ভেতরে নতুন মদ। শুধু ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড নিয়ে অবিকৃত রয়ে গেছে মহাকালের ঘড়ি।
ছেলে: রুদ্র ঠিকই বলেছেন-বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে, রাজনীতিকের ধমনী শিরায়
সুবিধাবাদের পাপ। বুদ্ধিজীবীর রক্তে স্নায়ুতে সচেতন অপরাধ। চেয়ে দেখো সব ঘড়ির কাঁটায় বন্দি এইসব নিশ্চিত ইতিহাস।
দ্বিতীয় বাবা: ইতিহাস চলে তার গতিতে। তুমি তার লাগাম ধরতে ছুটছো কেবল ছুটছো। এখানে আমি
এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে। একবার পেছনে ফিরে তাকাও।
ছেলেটা এসব মানতে রাজি নয়। ছোটবেলা ওকে যে মহাজাগতিক গ্রান্ডফাদার ক্লক দেখিয়েছিলাম, ও সেটা উপেক্ষা করে সময়টাকে চেয়েছে নিজের হাতে নিতে।
ছেলে: বাবা সবকিছু ঘড়ি মেনে চলে না। এই অসময়টাকে যদি উপেক্ষার স্পর্ধা নাই দেখালাম
তাহলে মাথা তুলে দাঁড়াবার স্বার্থকতা কোথায়? আমি আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে চাই।
লড়াই করতে চাই অসময়টার বিরুদ্ধে। আমি আমরা রুখে দাঁড়াতে চাই অসময় নামের এই দানবের সামনে।
ছেলেটা চলে গিয়েছিল, মিশে গিয়েছিল ওর মতো আরো স্বপ্নবাজ অসংখ্য তরুণের ভিড়ে। একবার নয়, বারবার। আমি সে সময়গুলোও দেখে রেখেছি ঘড়িতে, এই দেখুন। ছেলেটা একসময় আর ফেরেনি। কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না জানি না। সময় ঘড়ির কাঁটা এত দ্রুত ঘুরবে আমি কল্পনা করতে পারিনি। এখন সেকেন্ডের সঙ্গে মিনিটের সঙ্গে ঘণ্টার সঙ্গে দৌঁড়েও আমি এখন আর তার লাগাম ধরতে পারছি না। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে গেলে বর্তমান ইতিহাস হয়, আর শেষে পৌঁছাবার তাড়া মানুষের আরেকটু বাড়ে।
আজ এক একটি ঘটনা ঘটে, ঘড়ির কাঁটা দ্রুত এগিয়ে যায়। আমি কী করবো বলুন, গ্রান্ডফাদার ক্লকটার সঙ্গে চূড়ান্ত সীমান্তে পৌঁছানোর তাড়াতো আমাকেও দেওয়া হচ্ছে। ঘড়ির কাঁটায় ইতিহাস লিখে লিখে আমি ক্লান্ত। আমার কাছে তো এত ঘড়ি নেই যে এখন দ্রুত ঘটে চলা ঘটনাগুলোকে বন্দি করে ফেলবো।
আমি আসলে বলতে এসেছি, আপনারা আমার ছেলেটাকে দেখেছেন? নাকি ও মিশে গেছে আরো অসংখ্য এমন তরুণের ভিড়ে, যারা অসময়কে অস্বীকার করে সূর্যকে ছুয়ে দেখতে চেয়েছিল?
(নূর হোসেন, ডা. মিলন, অভিজিত রায়, রাজীব আহমেদ, অনন্ত বিজয়, দীপনের নাম লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে সাদা কাফন পড়া ছেলেরা।)
আমি আর পারছি না, আমার ঘড়িটা বন্ধ হয়ে গেছে। এর কাঁটাগুলো আর চলছে না, কিন্তু ইতিহাসতো প্রবাহমান। আমি কোনটা ছেড়ে আমি কোনটা ধরি! কখনো অট্টালিকা ধসে শত শত মানুষ স্যান্ডউচের মতো চাপা পড়ে মরছে, পরক্ষণেই অগ্নি হল্কায় পুড়ে কাবাবে পরিণত হচ্ছে রক্ত মাংসের শরীর। গণতন্ত্রের নামে এই চলছে আগ্রাসন গুলি বোমা, তো ধর্মের আফিম আসক্তরা নিরীহের রক্তে স্নান করে চাইছে বেহেস্তে যেতে। কোনটা ছড়ে কোনটা ধরি। মায়ের পেটে থাকতেই গুলিবিদ্ধ হচ্ছে শিশু, কুপিয়ে পিটিয়ে লাশ বানানো হচ্ছে কাউকে। কখনো বা রাক্ষস খোক্কসেরা উদ্ধত শিশ্ন সহকারে খুবলে খামচে নিচ্ছে নারী শরীর। ওহ কী যন্ত্রণা! অথচ বিস্মৃতি পরায়ন এই অসময়ের পিচ্ছিল ইতিহাস সময়ের খাতায় তুলে রাখা যাচ্ছে না কিছুতেই।
আমার আয়ু কমছে কিন্তু ইতিহাসের বয়স তো বাড়ছে। যে জাতি ইতিহাস মনে রাখে না তারা কেবলই পিছিয়ে পড়ে যোজন যোজন। আপনারা নিজেদের ঘড়িগুলো দেখুন, সময় চলে যাচ্ছে আর প্রতিদিন কত শত নাম, মিথ্যা, অনাচার, পাপ যুক্ত হচ্ছে ভুলে যাওয়ার ইতিহাসে। আমার এই বন্ধ ঘড়িটা সেই ভুলে যাওয়ার ইতিহাসেরই সাক্ষ্য দেয়। আমার ছেলেটাকে যদি কেউ দেখেন, ওকে বলবেন আমি অপেক্ষায় আছি ঘড়ির পরম্পরার। বন্ধ এই ঘড়িটা চালু যে করতে হবে ওকেই। ওদেরকে বলবেন–
পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম নদীটিও আসলে
রপ্ত করে রোজকার জলীয় অভ্যাস
আর মানুষের কাছে সমস্ত বন্ধ ঘড়ির কৈফিয়ৎ
নিঃশ্বাস অবধি
দীর্ঘ হতে থাকে…
দীর্ঘ হতে থাকে…
দীর্ঘ হতে থাকে…