বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে
অন্নদাশঙ্কর রায়
নরহত্যা মহাপাপ, তার চেয়ে পাপ আরো বড়ো
করে যদি যারা তাঁর পুত্রসম বিশ্বাসভাজন
জাতির জনক যিনি অতর্কিত তাঁরেই নিধন।
নিধন সবংশে হলে সেই পাপ আরো গুরুতর,
সারাদেশ ভাগী হয় পিতৃঘাতী সে ঘোর পাপের
যদি দেয় সাধুবাদ, যদি করে অপরাধ ক্ষমা।
কর্মফল দিনে দিনে বর্ষে বর্ষে হয় এর জমা
একদা বর্ষণ বজ্ররূপে সে অভিশাপের।
রক্ত ডেকে আনে রক্ত, হানাহানি হয়ে যায় রীত।
পাশবিক শক্তি দিয়ে রোধ করা মিথ্যা মরীচিকা।
পাপ দিয়ে শুরু যার নিজেই সে নিত্য বিভীষিকা।
ছিন্নমস্তা দেবী যেন পান করে আপন শোণিত।
বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! থেকে নাকো নীরব দর্শক
ধিক্কারে মুখর হও। হাত ধুয়ে এড়াও নরক।
অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়া
যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা
গৌরী যমুনা বহমান
তত দিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।
দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা
রক্তগঙ্গা বহমান
নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান।
পনেরো আগস্ট
সৈয়দ শামসুল হক
এখনও রক্তের রঙ ভোরের আকাশে।
পৃথিবীও বিশাল পাখায় গাঢ় রক্ত মেখে
কবে থেকে ভাসছে বাতাসে।
অপেক্ষায়-শব্দের-শব্দেই হবে সে মুখর-আরো একবার
জয় বাংলা ধ্বনি লয়ে যখন সূর্যের আলো তার
পাখায় পড়বে এসে
ইতিহাস থেকে আরো কিছুক্ষণ পরে।
মানুষ তো ভয় পায় বাক্হীন মৃত্যুকেই,
তাই ওঠে নড়ে
থেকে থেকে গাছের সবুজ ডাল পাতার ভেতরে।
পাতাগুলো হাওয়া পায়,
শব্দ করে ওঠে আর খাতার পাতাও
ধরে ওঠে অস্থিরতা-কখন সে পাবে স্বর-
জয় বাংলা ঝড়-তাকে দাও
জন্মনাভি! বোঁটা থেকে দ্যাখো আজও
অভিভূত রক্ত যায় ঝরে
বাঙালির কলমের নিবের ভেতরে।
স্তব্ধ নয় ইতিহাস! বাংলাও সুদূরগামী
তেরোশত নদীর ওপরে ওই আজও তো নৌকোয়
রক্তমাখা জনকের উত্থান বিস্ময়!
হন্তারকদের প্রতি
শহীদ কাদরী
বাঘ কিংবা ভালুকের মতো নয়
বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা হাঙরের দল নয়
না, কোন উপমায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাবেনা।
তাদের পরনে ছিল ইউনিফর্ম,
বুট, সৈনিকের টুপি,
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের কথাও হয়েছিল,
তারা ব্যবহার করেছিল
এক্কেবারে খাঁটি বাঙালির মতো
বাংলাভাষা। অস্বীকার করার উপায় নেই ওরা মানুষের মতো
দেখতে, এবং ওরা মানুষই
ওরা বাংলার মানুষ
এর চেয়ে ভয়াবহ কোন কথা আমি আর শুনব না কোনোদিন।
এই সিঁড়ি
রফিক আজাদ
এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে,
সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে-
বত্রিশ নম্বর থেকে
সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে
অমল রক্তের ধারা ব’য়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে।
মাঠময় শস্য তিনি ভালোবাসতেন,
আয়ত দু’চোখ ছিল পাখির পিয়াসী
পাখি তার খুব প্রিয় ছিল-
গাছ-গাছালির দিকে প্রিয় তামাকের গন্ধ ভুলে
চোখ তুলে একটুখানি তাকিয়ে নিতেন,
পাখিদের শব্দে তার, খুব ভোরে, ঘুম ভেঙে যেতো।
স্বপ্ন তার বুক ভ’রে ছিল,
পিতার হৃদয় ছিল, স্নেহে-আর্দ্র চোখ-
এদেশের যা কিছু তা হোক না নগণ্য, ক্ষুদ্র
তার চোখে মূল্যবান ছিল-
নিজের জীবনই শুধু তার কাছে খুব তুচ্ছ ছিল :
স্বদেশের মানচিত্র জুড়ে প’ড়ে আছে
বিশাল শরীর…
তার রক্তে এই মাটি উর্বর হয়েছে,
সবচেয়ে রূপবান দীর্ঘাঙ্গ পুরুষ :
তার ছায়া দীর্ঘ হতে-হ’তে
মানিচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে, আদরে!
তার রক্তে প্রিয় মাটি উর্বর হয়েছে-
তার রক্তে সবকিছু সবুজ হয়েছে।
এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে,
সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে-
স্বপ্নের স্বদেশ ব্যেপে
সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে
অমল রক্তের ধারা ব’য়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে।
বঙ্গবন্ধু
শাহনাজ পারভীন
বঙ্গবন্ধু ধান হতে পারেন মিটানো সুপ্তক্ষুধা
কিংবা তিনি তো গান হয়ে যান পাখির কণ্ঠসুধা।
তাহাকে আমরা নদী বলি যদি ক্ষুরধার স্রোতধারা
বয়ে চলা কোন ঝরনাপ্রপাত কুলু-কুলু গতিহারা।
তিনি যদি ফের পাহাড় হয়ে যান হিমালয় চূড়ামাখা
কিংবা সুনীল সাগর আবার যায় কি তাহাকে রাখা?
যদি তাকে কেউ আকাশ ডাকেন কাটে না কভু যে রেশ
অবশেষে তাকে ভালোবেসে বেসে দেখি যে বাংলাদেশ!
শেখ মুজিবুর রহমান
শারমিন সুলতানা রীনা
এক মুজিবের রক্ত থেকে
লক্ষ মুজিব ফোটে
স্বাধীনতার গান গেয়ে তাই
ভোরের সূর্য ওঠে।
সেই সুরেতে বাংলা মায়ের
বুকে ওঠে দোল
মায়ের কোলে শিশুর প্রথম
মুজিব মুজিব বোল।
ফাগুনেরই হাওয়ায় হাওয়ায়
কতনা সুখ জোটে।
আকাশ বাতাশ নদীর জলে
তারই স্মৃতি বহমান
স্বাধীনতা মানেই বুঝি
শেখ মুজিবুর রহমান।
সেই হাসির পরশমাখা
নীল আকাশের ঠোঁটে।
জাতির পিতা
আশরাফুজ্জামান বাবু
পিতাহীন মিতাহীন
ছিলাম এতোদিন।
নেতা, তুমি ফিরলে যখন দিল্লি হয়ে ঢাকা
তক্ষুনি শেষ হলো এই আমার চেয়ে থাকা।
নেতা, তোমার দেহ ছিলো রুদ্ধ কারাগারে
জানি তোমার পুড়ছিলো মন বোবা হাহাকারে।
কারন তোমার মনে ছিল বঞ্চিতদের ঘর
নিরন্নদের কথা তোমার ভাবতো যে অন্তর।
সেই মনটা আটকে রাখে সাধ্য আছে কার?
তাই সারাক্ষণ সাথেই ছিলে কোটি জনতার।