আমি খাস ক্ল্যাসিক্যাল ফরাসি ভাষায় লিখি—সাহিত্যে ১০৭তম নোবেলজয়ী প্যাত্রিক মোদিয়ানো তাঁর ১৯৭৫ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন। তিনি আরও বলেছেন, কারণ এই ফর্মটা আমার উপন্যাসের জন্য একান্ত জরুরি, বিশেষত ঝাপসা, ভাসমান, সিদ্ধান্তহীন পরিবেশ ইত্যাদি রূপায়নের ক্ষেত্রে। আমি চেয়েছিলাম এইসব যেন থাকে—আমার এটাকে সবচেয়ে স্বচ্ছ, সম্ভাব্য সবচেয়ে ট্র্যাডিশনাল ভাষার শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে হয়েছে। আমরা যদি মোদিয়ানো পড়ি, আমরা আশ্চর্যান্বিত হই তাঁর বাক্যের স্পষ্টতা ও সরলতার বৈপরীত্যে, আর বিষয়ের ঘোলা ও বিজড়িত চরিত্র দেখে।
২০১৪ সালে সুইডিশ একাডেমি সাহিত্যে নোবেল ঘোষণা দিলো ফরাসি ঔপন্যাসিক প্যাত্রিক মোদিয়ানোকে, যা অনেক মার্কিনীর মাথা চুলকানোর কারণ হতে পারে। তাই প্রশ্ন জাগে মনে, কেন এমন মনে হচ্ছে যে, ইংরেজিভাষী জগৎ বাস্তবেই তাঁর সম্পর্কে খুব কমই জানে? অনেকেই মনে করছেন যোগ্য লোক বোধ হয় বাদ পড়ে গেলো। যদিও ৩০ এর অধিক বই ও চিত্রনাট্য রয়েছে তাঁর। আধ-ডজনের মতো ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে, এমনকি তার অনেকগুলো এখন দুষ্প্রাপ্য।
সুইডিশ একাডেমির এহেন ইংরেজি ব্যতীত ভিন্ন ভাষায় লেখকদের পুরস্কৃত করা নতুন কিছু নয়। ২০০৯ সালে পুরস্কার দেওয়া হয়, রুমানিয় বংশোদ্ভূত জার্মান লেখক হেরেটা মুলারকে, যার সম্পর্কেও লোকে তেমন একটা জানতো না। সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সচিব পিটার ইংডাল বলেন, ফ্রান্সের বাইরে অধিকাংশ লোক মোদিয়ানো ও তাঁর কাজের সাথে পরিচিত নন। এটা ইংরেজি ভষার পাঠকদের প্যাত্রিক মোদিয়ানো সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলবে। এই সম্ভাবনা মোদিয়ানোর ভক্ত পাঠকদের উল্লসিত করেছে যে, এখন থেকে ইংরেজি ভাষার পাঠকেরাও মোদিয়ানো পাঠ করবে, তিনি আরও খ্যাতির শিখরে উঠে যাবেন। মোদিয়ানোর একটা গ্লোবাল প্রোফাইল তৈরি হবে।
প্যাত্রিক মোদিয়ানো বিখ্যাত তাঁর আত্মপরিচয় ও হারানোর দক্ষ অন্বেষণেরর জন্য। নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরাসি ভাষার অধ্যাপক জর্ডান স্টাম্প ১৯৯৬ সালে প্যাত্রিক মোদিয়ানোর উপন্যাস ‘Out of the dark’ ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। এই উপন্যাসের প্লট ছিলো, মধ্যবয়সী এক লেখকের উপর। তিনি অতীত প্রেম ভালোবাসাকে তুলে ধরেন এবং অনেক বছর পড়ে তিনি প্রাক্তন শিখার পানে ছুটে যান। স্টাম্প যখন স্নাতক পর্বের ছাত্র, তখন থেকে প্যাত্রিক মোদিয়ানোকে লেখক হিসেবে পান। আর ইলিনয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক তাঁকে একটা প্যাত্রিক মোদিয়ানোর বই পড়তে দেন, যা সাথে সাথেই স্টাম্পকে গেঁথে ফেলে, আলোড়িত করে। নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে স্টাম্প মোদিয়ানো অনুবাদের সিদ্ধান্ত নেন। ইংরেজি অনুদিত ‘আউট অব দি ডার্ক’ (অন্ধকারে) এর ফরাসি নাম অনুবাদ-অসম্ভব। ফরাসি শিরোনামে যা বোঝায় ‘ফ্রম থে ফারদেস্ট পয়েন্ট অব ফরগটেননেস’ (বিস্মৃতির সুদূর বিন্দু থেকে), দেখা যায় ফরগটেননেস শব্দটি ইংরেজি হয় না। তাই, ইংরেজি ভাষায় স্টাম্পকে নতুন শিরোনাম বসাতে হয়।
প্যাত্রিক মোদিয়ানো সম্পর্কে বলা হয় যে, তাঁর স্টাইল প্রায়শঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও পরিস্কার। স্টাম্পের ভাষায়, এটা অনুবাদের ক্ষেত্রে এক মারাত্মক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এ নেহাৎ নিস্তরঙ্গ নয়, আবার অতি-কাব্যিকও নয়। এর ভেতরে এক ধরনের কাব্যময়তা রয়েছে, কিন্তু তা বেশ ছড়ানো-ছিটানো। ফলে তাঁকে খুব সরলভাবে কিংবা খুব কাব্যময়তার সাথে অনুবাদ করলে, তাঁর স্বরটি সম্পূর্ণ বিলোপ পায়। তাঁর স্বর খুবই রহস্যময়, অধরা। একে সামলানো কষ্টসাধ্য; তবে, এটা সোজা-সাপ্টা। আর এর ভেতরে এমন এক গূঢ০ অর্থের অনুরণন চলতে থাকে যা বাহ্যিক দেখা যায় না।
স্টাম্পের মতে, অন্য লেখকদের চেয়ে প্যাত্রিক মোদিয়ানোর অনুবাদ এর ক্ষেত্রে জটিলতা কম। কারণ, তিনি প্রায়শঃ আভাঁ-গার্দের লেখা অনুবাদ এর কাজ করেন, যা খুবই খামখেয়ালীপনায় ভরা। তবে মোদিয়ানো পুরোপুরি তো আর আভাঁ-গার্দ লেখকদের মতো নন। তিনি তুলনায় অনেক শান্ত লেখক, আবার তেমন তেমনভাবে দুঃসাধ্যও বটে!
মজার ব্যাপার হচ্ছে, মোদিয়ানো কখনো স্টামের চিঠির জবাব দেন নি। তিনি কিছুটা নিজস্ব একাকিত্ব পছন্দ করেন। অন্য লেখকেরা যেমনটা অনুবাদকের সাথে কথা বলতে চায়, প্রশ্নের উত্তর দিতে আগ্রহ দেখায়, প্যাত্রিক মোদিয়ানো তেমনটা কখনো করেন নি। এমনকি ১৯৯৭ সালে, যখন কিনা ইমেইল পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা ছিলো না, অধ্যাপক স্টাম্প, যিনি মোদিয়ানোর একজন ভক্তও, তিন তিনটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু সাক্ষাৎ পাননি।
প্যাত্রিক মোদিয়ানো পাঠের ক্ষেত্রে স্টাম্প বলেন, “যদিও খুব কমই অনুবাদ হয়েছে, একটা অনুদিত ভালো বই দিয়ে শুরু করা যায়; তা হচ্ছে– ‘মিসিং পারসন’ (নিখোঁজ ব্যক্তি)। এতে মোদিয়ানো প্রবলভাবে রয়েছেন। এটা ৭০ এর দশকের শেষ দিকের একটা বই, আর তা মোদিয়ানোর সারাংশ বলা যায়। এটা ডিটেকটিভ এজেন্সিতে চাকরি করা এক লোককে নিয়ে, যার স্মৃতি লোপ পেয়েছে এবং সে তার অতীত পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, যা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে পেশা আর ২য় বিশ্বযুদ্ধের মাঝে। সেই অন্ধকার, অত্যাচারিত অতীতের থিম (মূলভাব) সবসময় তাঁর বইয়ে ফিরে ফিরে আসে কোনো না কোনোভাবে। সেই সর্বত্র বিরাজমান ভয় ও হারানোর অনুভূতিপ্যাত্রিক মোদিয়ানোর প্রতিটি গ্রন্থেই পাওয়া যায়। পুরস্কার পাওয়ার পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “ আমার মনে হয়, আমি গত ৪৫ বছর ধরে যেন একই বই লিখে যাচ্ছি”।
তাঁর লেখা ২য় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক হত্যাকান্ডের সময় সাধারণ ফরাসিদের দ্বৈত ভূমিকা নিয়েও কাজ করেছে, এমনকি নাজি ক্যাম্পে ইহুদীদের নির্বাসিত করার বা ধরিয়ে দেয়ার ভূমিকাও।প্যাত্রিক মোদিয়ানোর বাবা ইতালীয় ইহুদী পরিবারে জন্মেছিলেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার ঠিক পরে পরেই প্যারিসে জন্ম নেয়া প্যাত্রিক এখন ৬৯ বছর বয়সী। লিখেছেন ২ ডজনেরও বেশি উপন্যাস, তার সাথে শিশুদের জন্য বই ও চিত্রনাট্য। কিন্তু খুব কমই তার অনুবাদ হয়েছে। তাই ফ্রান্সে জনপ্রিয় হয়েও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্বল্প-পরিচিত। মোদিয়ানোর প্রথম উপন্যাস ‘La Place de l’e’toile’ প্রকাশিত হয়েছে ১৯৬৮ সালে। আর তা’ও ছিলো এক ইহুদীকে নিয়ে, যে কিনা ছায়াময় কর্মকান্ডে লিপ্ত হয় নাজি দখলের প্রাক্কালে।
তিনি ১৯৭৪ সালে বহুল প্রশংসিত ‘ল্যাকোম্বে, লুসেইন’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যেরও সহ-রচয়িতা। এখানেও তিনি ফোকাস করেছেন এক যুবককে, যে নাজি বিরোধী প্রতিরোধীদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে যোগ দেয় নাজিপন্থী ফরাসি কোলাবরেটরদের (গেস্টাপো) সাথে। কিন্তু এদিকে সে এক ইহুদী মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ‘ডোরা ব্রুডার’ এক মেয়ের জীবনকে অনুসরণ করে যাকে নাজিদের কাছে ধরিয়ে দেয়া হয়েছিলো এবং মেরে ফেলা হয়েছে। ছবিটি মূল চরিত্রের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ন্যায্যতার অভাবের কারণেবিতর্কের ঝড় তোলে।
কিছু সময়ের জন্য মোদিয়ানো গানের লিরিক লেখার কাজও করেছেন এবং তাঁর রচিত ‘Etonnez-moi Benoit’ ১৯৬৮ সালে ফ্রাঙ্কোইস হার্ডলি-র মাধ্যমে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলো। খুব অল্প সময়ের জন্য তিনি চিত্রাঙ্কনেও মনোনিবেশ করেন। তিনি ফরাসি ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের ব্যক্তিক ও জাতীয় স্মৃতির ঝাপসা খাঁজগুলোকে আঁকার চেষ্টা করেন, যা এখনো পুরোপুরি আলোর মুখ দেখে নি। তাঁর কল্পিত প্রশ্ন হচ্ছে যে, আদৌ কি এতে আলো ফেলা সম্ভব? নাকি, বস্তুতঃ সবচেয়ে ভালো হয়, ছায়াগুলোকে উপলব্ধি করা।
একজন অবসরপ্রিয় ও প্রচার-বিমুখ লোক হিসেবে মোদিয়ানো খুব কদাচিৎ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাই তিনি সবসময় প্যারিসের সাহিত্য দৃশ্যপটের কোলাহল ও চাকচিক্যের বাইরে, যা তিনি চাইলেই পেতে পারতেন। তাঁকে আবিস্কার করেন ভবঘুরে লেখক ও সম্পাদক রেমন্ড কুয়েনু, যিনি ‘যাজিই ডানস লে মেট্রো’ এর লেখক, যিনি ফ্রান্সের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রকাশনা গালিমার্ড এর পাঠক ছিলেন। মোদিয়ানোর প্রথম উপন্যাস খুব দ্রুতই ক্ল্যাসিকে পরিণত হয় এবং তিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সে লাভ করেন প্রিক্স রজার নিমিয়ার এবিং প্রিক্স ফেনকন। তাঁর পরবর্তী উপন্যাস ‘রাউন্ডে দ্য নুইট’ বের হয় পরের বছরে। আর, তারও তিন বছর পরে ‘লেস বুলেভার্ডস দ্য সিইনচার’ ফিকশনের জন্য অর্জন করে ‘দি গ্রান্ড প্রিক্স দ্য লা’আকাদেমি ফ্রান্সেইজ’। ফ্রান্সের অতি সম্ভ্রান্ত লেখক এখনো দাবি করেন যে, তিনি লেখা ব্যাপারটা উপভোগ করেননা। তিনি মনে করেন, “কারণ আমি দেখি লেখা খুবই বেদনাদায়ক।তাই আমি চেষ্টা করি যতো দ্রুত সম্ভব এর থেকে বের হয়ে আসা। কিন্তু আমি প্রতিদিন লিখি, নতুবা আমি সূত্র হারিয়ে ফেলি”।
মোদিয়ানোর কাজ ততোটা জটিল নয়, যদিও তাঁর বিষয়বস্তু প্রায়শঃ তা-ই। তাঁর উপন্যাস গুলোর গল্প ভরা থাকে সাসপেন্স, বিবরণ, নাটকীয়তা এবং পরিবেশ দিয়ে। আর যদিও প্লটগুলো জট-পাকানো থাকলেও তাতে রয়েছে গতি ও থ্রিলারের চলমানতা; কিন্তু কোথাও স্বস্তিদায়ক পরিসমাপ্তি মিলবে না।
জাঁ প্যাত্রিক মোদিয়ানো জন্মেছিলেন ১৯৪৫ সালের ৩০ জুলাই, প্যারিসের পশ্চিম শহরতলীর একটি কমিউন বুলগনে-বিলানকোর্ট এলাকায়। তাঁর বাবা আলবার্ট মোদিয়ানো (১৯১২-১৯৭৭, প্যারিসে জন্ম) ছিলেন ইহুদি বংশোদ্ভূত, সালোনিকার বিখ্যাত সেফার্ডিক পরিবারের উত্তরসুরী। তাঁর মা, লুইসা কল্পিইন, ছিলেন বেলজিয়ান ফ্লেমিশ অভিনেত্রী। মোদিয়ানোর মা বাবা একে অন্যের দেখা পান অবরুদ্ধ প্যারিসে ২য় বিশ্বযুদ্ধকালে।
মোদিয়ানোর শৈশব এক চমৎকার পরিবেশে কাটে। প্রথমে তাকে তার নানা-নানী প্রতিপালন করে আর তার প্রথম ভাষা ফ্লেমিশে শিক্ষিত করে তোলে। পিতার অবর্তমানে, সরকারী খরচায় স্কুল শিক্ষা শেষ করেন। এর মধ্যে মা বাবার ঘন ঘন সফরের ফলে তিনি ছোটো ভাই রুডি-র সাথে ঘনিষ্ট হয়ে উঠেন, যে ১০ বছর বয়সে রোগে ভুগে মারা যায়। মোদিয়ানো তাঁর ১৯৬৭ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত কাজগুলো এই ভাইটিকে উৎসর্গ করেন। তাঁর বিখ্যাত স্মৃতিকথা আন-পেডিগ্রি (২০০৫)-এ এই দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “আমি আত্মজিবনী লিখতে পারিনা, তাই এর নাম রেখেছি একটি পেডিগ্রি। এটা এমন এক বই, যাতে আমি কি করেছি তা অনেক কম রয়েছে, বরং বেশি রয়েছে অন্যদের কাজ, প্রধানতঃ আমার মা-বাবা আমার প্রতি যা করেছেন। ছোট ভাইয়ের এই বিদায় লেখকের শৈশবের সমাপ্তি ঘটায়, যিনি এই সময়টার জন্য এক ব্যাপক নস্টালজিয়া ধারণ করেন। উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ভূগোল শিক্ষা নেন তাঁর মায়ের বন্ধু লেখক রেমন্ড কুয়েনু-র কাছে।
মোদিয়ানো বিয়ে করেন ১৯৭০ সালে। ২০০৩-এ এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্মৃতিচারণ করেন এভাবে, “আমাদের বিয়ের দিন আমার জন্য এক সর্বনাশা স্যুভেনির। বৃষ্টি হচ্ছিলো, এক সত্যকার দুঃস্বপ্ন যেন। আমাদের নিতবর ছিলেন কুয়েনু, যিনি প্যাত্রিককে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত দীক্ষা দিয়েছেন। আর ছিলেন আমার বাবার বন্ধু মালরক্স। তারা ক্রমাগত ঝগড়ায় লিপ্ত ছিলো। যে একমাত্র লোকটির ক্যামেরা ছিলো, সে ফিল্ম আনতে ভুলে গিয়েছিলো। আমাদের একটিই ছবি আছে যা আমাদের পিছন থেকে তোলা আর আমরা ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে। মোদিয়ানোর দুই মেয়ে এই সংসারের ফল: জিনা (১৯৭৪) ও ম্যারি (১৯৭৮)।
কুয়েনু-র সান্নিধ্যে আসাটা মোদিয়ানোর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুয়েনুই প্রথম মোদিয়ানোকে সাহিত্য জগতে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি মোদিয়ানোকে সুযোগ করে দেন তাঁর ভবিষ্যত প্রকাশক গালিমার্দ এর দেয়া ককটেল পার্টিতে যোগ দেবার। ১৯৬৮ সালে যুদ্ধকালীন সময়ের উপর লেখা ‘La Place de l’etoile’ এর বিষয়বস্তু ইহুদী কোলাবরেটর প্রসংগ দেখে মোদিয়ানোর বাবা এতো অসন্তুষ্ট হন যে, তিনি বইটির সবগুলো কপি কিনে নিতে চেষ্টা করেন।
২০১০ সালে জার্মানীতে অনুদিত ‘La Place de l’etoile’ সক্ষিণ পশ্চিম বেতারের সর্বোৎকৃষ্ট তালিকায় পুরস্কৃত হন মোদিয়ানো। এখনো এ বইটি ইংরেজিতে অনুদিত হয়নি।
মোদিয়ানোর উপন্যাসের সবগুলোই ব্যক্তি পরিচয়ের ধোঁয়াসার উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়। কিভাবে একজন অনুসরণ করবে একজনের অস্তিত্বের সাক্ষ্যকে অতীতের চিহ্ন খুঁজে খুঁজে। জবরদখলের দিনের সমস্যাসঙ্কুল ও লজ্জাকর সময়ের অবসেশন, যে সময়ে তাঁর পিতাও জড়িত ছিলেন কিছু ছায়াচ্ছন্ন কর্মকান্ডের সাথে –মোদিয়ানো সকল উপন্যাসেই ফিরে ফিরে আসেন তাঁর বিষয়বস্তুতে উল্লেখযোগ্যভাবে একই ধরনের কাজের ভেতর দিয়ে। তিনি বলেন, প্রতিটি উপন্যাস শেষে, আমার ধারণা হয় যে, আমি সব কিছুই পরিস্কার করতে পেরেছি। কিন্তু আমি জানি, আমি ফিরে আসবো বারবার সেই ছোট্ট বিবরণ, ছোট্ট বিষয়, আমি যার অংশ মাত্র। সবশেষে, আমরা সকলেই স্থান ও সময় নির্ধারিত, যার ভেতরে আমরা জন্ম নিয়েছি”। তিনি প্রতিনিয়ত লিখে যান প্যারিস শহর নিয়ে, এর রাস্তার বিবর্তন, তার আচরণ এবং এর মানুষ সম্পর্কে। যেন মোদিয়ানোর সব লেখা সৃষ্টি হয় ম্যানিয়া থেকে।