এবারের বইমেলায় আপনার বই প্রকাশিত হচ্ছে? প্রকাশক কে? প্রচ্ছদ কে করেছেন? প্রকাশিত বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
না। আমার কোনো বই বেরুচ্ছে না। প্রথম ও একমাত্র বইটি বেরিয়েছিল ১৯৯৯ সালে—নেমে আসে সন্ধ্যার স্বর (বিদ্যাপ্রকাশ)। পরবাসে থাকি। সমাজ-সংসার করে সময় বের করা বড় কঠিন কাজ। নিজেকে গুছিয়ে আনছি। বের হবে আগামী বইমেলায়—সে আশা করছি।
সারাবছর লেখক প্রকাশক বই প্রকাশ না করে এই একুশে বইমেলা এলেই বই প্রকাশের প্রতিযোগিতায় নামেন। বইমেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশকে আপনি কিভাবে দেখেন?
বই—বছরজুড়ে পড়ার বিষয়। বিদেশে অনেকে যাত্রাপথেও বই পড়েন। এই ধারা বাংলাদেশেও এককালে ছিল। এখন কমে গেছে। মানুষ ব্যস্ত থাকে হাতের সেলফোনে। বই বছরজুড়েই প্রকাশিত হওয়া দরকার। বিক্রি হওয়া দরকার। বিশেষ উপলক্ষে বই বের করার প্রবণতা প্রকাশক-পাঠক কারও জন্যই স্বস্তির নয়। কারণ পাঠক সময় নিয়ে বই পছন্দ করবেন, প্রকাশক সময় নিয়েই তা প্রকাশ করবেন; সেটাই হওয়া দরকার।
একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?
একটা প্রভাব তো ফেলছেই। ইতিবাচক-নেতিবাচক দুটোই আছে। মেলাকে উপলক্ষ করে অনেক লেখক ঘোষণা দিয়ে বই বের করছেন। ফেসবুক বইয়ের প্রচ্ছদে সয়লাব। প্রচারের বাজার তো ভালোই। কিন্তু বইয়ের মান কি বাড়ছে? ফেসবুকে প্রতিদিন কবিতা লিখে সেগুলো এডিট ছাড়াই ছাপিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা—এর প্রভাব নিয়েই এগোচ্ছে বইমেলা। এর প্রবণতা বাড়ছে। বিষয়টি শঙ্কার। একুশের বইমেলা থেকে ভালো বই কিনবেন পাঠকরা—সেটাই হোক বড় পাওয়া।
একুশে বইমেলা প্রকাশনা শিল্পে তরুণদের উৎসাহিত করার ব্যাপারে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
আগেই বলেছি—একুশে বইমেলা এখন অনেক তরুণের টার্গেট। প্রস্তুতি ছাড়াই তারা টার্গেট পূরণে আসছেন। মেলার আমেজটা পজিটিভ ধারায় কাজে লাগানো যেত। সেটা হচ্ছে কি? তরুণদের অনেকে নিজ খরচে বই বের করছেন। তা বাজারজাত করে প্রতিষ্ঠা চাইছেন। এর পাশাপাশি লেখাগুলো লেখা হয়ে উঠছে কি না—এই বিবেচনায় গেলেই অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। কিছু মেধাবী তরুণের লেখাও ম্লান হয়ে যাচ্ছে ওই অন্ধকারের কাছে। বিষয়টি আমাকে পীড়া দেয়।
প্রকাশনা উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বই প্রকাশ করতে পারেন। এতে বছর বছর বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মান বৃদ্ধি ঘটছে না বলে অনেকেরই অভিযোগ; বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট নীতিমালার প্রয়োজন আছে কি?
আমি দেখি সমানুপাতিক হারে। আগে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ কম ছিল। এখন জনসংখ্যা বেড়েছে। সেই অনুপাতেই লেখক-কবি বেড়েছে। একটা উদাহরণ দিই। আমি যে শহরে থাকি—এই নিউইয়র্ক শহরে গেল কয়েকবছরে অনেক নতুন ‘কবি’র জন্ম হয়েছে। কোনও-কোনও কবিতা পাঠের আসরে দেখি, মঞ্চ ভেঙে পড়ার উপক্রম। এরা কী কবিতা লেখেন? তা নিজেও বোঝেন না। এর একটি কারণ আছে। কারণ হলো—গান গাইতে হলে রেওয়াজ করতে হয়। নাটক করতে হলে অভিনয় শিখতে হয়। গল্প লিখতে হলে অনেক সময় লাগে। তাই কবিতাই হলো তাদের কাছে স্বল্পসময়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সিঁড়ি। এটাই হচ্ছে। নীতি হলো মানুষের মননের পরিধি। আইন প্রয়োগ করা যায়। নীতি প্রয়োগ করা যায় না। নীতির প্রতি মানবিক শ্রদ্ধাবোধ বিবেক থেকেই জাগ্রত হতে হয়। না—নীতিমালা করে আজে বাজে বই বের করা বন্ধ করা যাবে না। বরং পাঠককেই গ্রহণ ও বর্জনের পরিধি বাড়াতে হবে। মানুষের জীবনের সময় খুব বেশি নয় কিন্তু! তাই যারা পড়বেন, তাদের বেছে বেছেই পড়া দরকার।অনেক বই সেখানেই ছাটাই হয়ে যাবে।